পদমর্যাদায় ঝুলে আছে উচ্চশিক্ষা কমিশন
দেশের উচ্চশিক্ষা দেখভালকারী
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) ভেঙে
উচ্চশিক্ষা কমিশন (হাইয়ার এডুকেশন কমিশন-হেক) নামে নতুন একটি সংস্থা গঠনের
উদ্যোগ নেয়া হয় ছয় বছর আগে। সে অনুযায়ী মহাজোট সরকারের প্রথম থেকেই
চেষ্টা-তদবির চলছে। এমনকি বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকেও একদফা উত্থাপিত হয়।
কিন্তু প্রস্তাবিত এ সংস্থার গঠন প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, পদমর্যাদার কাছে ঝুলে আছে প্রস্তাবিত উচ্চশিক্ষা কমিশন। হেক গঠনের যে খসড়া আইন প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে চেয়ারম্যানের পদমর্যাদাকে একজন পূর্ণমন্ত্রীর সমতুল্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে ঘোর আপত্তি শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বলছে, পদমর্যাদা প্রদানের বিষয়টি উন্মুক্ত রেখে প্রস্তাবিত হেক গঠন করা হোক। তাদের মতে, সরকার চাইলে নিয়োগকালে চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা ঠিক করে দেবে, যেভাবে বর্তমান চেয়ারম্যানকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেয়া হয়েছে। কেননা হেক যেহেতু সাংবিধানিক সংস্থা নয়, তাই এভাবে পদমর্যাদা নির্ধারণ করে আইন প্রণয়ন উচিত হবে না।
বিপরীত দিকে আইনটির খসড়া প্রস্তাবকারী ইউজিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা না দিয়ে নতুন সংস্থা গঠন করা হলে প্রকারান্তরে তা উচ্চশিক্ষার জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে। তাই চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা প্রস্তাবনা অনুযায়ীই রাখতে হবে।
সূত্রগুলো বলছে, এ নিয়ে দর-কষাকষির কারণেই ছয় বছর ধরে ঝুলে রয়েছে হেক। জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত করার প্রয়োজনে এবং একটি কার্যকর সংস্থা গঠন করার লক্ষ্যে চেয়ারম্যানকে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে প্রস্তাবিত কমিশনকে ক্ষমতায়িত করতে হবে। এ ধরনের সংস্থা দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। এ ধরনের কমিশন গঠনের কোনো বিকল্প নেই।’
ইউজিসি বর্তমানে চলছে ১৯৭৩ সালের একটি অধ্যাদেশ অনুযায়ী। এ অধ্যাদেশে সরকার থেকে অর্থ এনে তা মঞ্জুরি আকারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাঝে বণ্টনের এখতিয়ার রয়েছে সংস্থাটির। তখন দেশে মাত্র ৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। এর মধ্যে ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ শুরু হয়। আইনে এসব বিশ্ববিদ্যালয় দেখভালের এখতিয়ার তেমন একটা নেই। এ অবস্থার মধ্যে দেশে বর্তমানে ৮১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বিপরীত দিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও বেড়ে ৩৫টিতে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় শক্তিশালী ও কার্যকর কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ইউজিসির পরিবর্তে উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠনের বিষয়ে যুগান্তর সর্বপ্রথম ২০০৪ সালে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তখনই সংশ্লিষ্ট মহল থেকে এ ব্যাপারে দাবি ওঠে। ২০০৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয় ইউজিসি থেকে।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, বিগত মহাজোট সরকারের শেষ সময়ে প্রস্তাবিত আইনটি বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে মন্ত্রিসভায় পেশ করা হয়। কিন্তু সেটি মন্ত্রিসভা যাতে নীতিগত অনুমোদন না করে, সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কেন্দ্রিক তৎকালীন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊধ্বর্তন কয়েকজন কর্মকর্তা তৎপরতা চালান। ফলে সেটি আর মন্ত্রিসভা পার হতে পারেনি। মন্ত্রিসভা থেকে কিছু মতামতসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রায় ৪ মাস আগে কিছু কোয়েরিজ (জিজ্ঞাসা) আসে মন্ত্রণালয় থেকে। আমরা সেগুলোর জবাবসহ কিছু পরামর্শ, ব্যাখ্যা, আমাদের চাহিদা ও দাবিসহ আবার মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা কিছু কিছু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তবে আমরা বলেছি উচ্চশিক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও কার্যকর কমিশন চাইলে এসব বিষয় আইনে রাখতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আর কয়েকদিন মাত্র চেয়ারম্যান আছি। এরপর আরেকজন আসবেন। পদমর্যাদা চাওয়ার বিষয়টি আমার জন্য নয়, উচ্চশিক্ষার জন্যই।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, জনপ্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর যুক্তি হচ্ছে, কেবলমাত্র সাংবিধানিক সংস্থাগুলোতে এভাবে পদমর্যাদা দেয়ার বিষয় নির্দিষ্ট থাকে। উচ্চশিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা এভাবে নির্ধারণ করতে গেলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তাছাড়া অন্য কমিশনগুলোতে বিষয়টি এভাবে নির্দিষ্ট করা নেই। এটা দেয়া না দেয়া সরকারের বিষয়। তাই এ বিষয়টি উন্মুক্ত রাখাই ভালো। তাছাড়া একজন পূর্ণকালীন সদস্যদের পদমর্যাদা রাখা হয়েছে হাইকোর্টের একজন বিচারপতির পদমর্যাদার সমান। এর ফলে একজন সদস্যকে মেয়াদ পূর্তির আগে সরাতে হলে একজন বিচারপতিকে অপসারণের প্রক্রিয়াই নিতে হবে সরকারকে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এর সঙ্গেও একমত নয়।
নামপ্রকাশ না করে ইউজিসির একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য ও ঊর্ধ্বতন স্থায়ী কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে ইউজিসি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। চেয়ারম্যানের পদ পূর্ণমন্ত্রীর পদমর্যাদার সমান হলে কমিশন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে চলে যেতে পারে। এ ধরনের আশংকা থেকেই এর ব্যাপারে অসহযোগিতা শুরু হয় মন্ত্রণালয় থেকে। যে কারণে তাদের প্রস্তাবিত আইন না রেখে একে এমনভাবে কাটছাঁট করা হয়েছে যে, এর ফলে ইউজিসি বর্তমানে যে স্বাধীনতা ভোগ করছে, হেক হলে সেটুকুও থাকবে না। ক্ষতি যা হওয়ার তা উচ্চশিক্ষার হবে এবং একশ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বৃত্তপনা বেড়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, মহাজোট সরকারের শেষে হেক গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করতে মন্ত্রিপরিষদে আইন উত্থাপিত হওয়ার পর ফেরত আসায় এটি নতুন সরকার অগ্রাধিকারে রাখে। যে কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৩ মাসের কাজের অগ্রাধিকার তালিকায় এটি রাখা হয়।
ইউজিসির জ্যেষ্ঠ সদস্য অধ্যাপক ড. আতফুল হাই শিবলী সম্প্রতি যুগান্তরকে বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লংঘনের প্রবণতা বেশি। বিশেষ করে হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা নিয়ে যাচ্ছেতাই করছে। তারা করণীয় নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ে কেবল সুপারিশ করে থাকেন। কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না। এ অবস্থায় কার্যকর উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন করা জরুরি। তাহলে শিক্ষা দুর্নীতি বন্ধে অনেক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে।
অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ইউজিসিকে ‘শাস্তি সুপারিশকারী’ প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে ‘অ্যাকশন নেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠন জরুরি। এজন্যই আইনে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষার চাহিদা নিরূপণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নীতিনির্ধারণের ক্ষমতা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পরিবর্তে এ স্বায়ত্তশাসিত, স্বাধীন ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানটি গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৯ পৃষ্ঠার খসড়া আইনে ১৯টি প্রধান ধারাসহ শতাধিক উপধারা রয়েছে। একজন চেয়ারম্যান, ৫ জন পূর্ণকালীন ও ১২ জন খণ্ডকালীন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে হেক। খণ্ডকালীন সদস্যদের মধ্যে ৩ জন সচিব (শিক্ষা, পরিকল্পনা ও অর্থ), পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের মধ্যে ৩ জন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের মধ্যে ৩ জন এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ডিনদের মধ্যে ৩ জন। এদের মেয়াদ হবে ২ বছর। স্থায়ী সদস্য ও চেয়ারম্যানের মেয়াদ ৪ বছর। যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের সব শর্ত পূরণ করে স্থায়ী সনদ লাভ করেছে, কেবল তাদের মধ্য থেকে হেকের সদস্য নেয়া হবে। কমিশনের চেয়ারম্যান ও পূর্ণকালীন সদস্যদের অপসারণের ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতিকে যেসব কারণে এবং প্রক্রিয়ায় অপসারণ করা যায়, সেসব কারণ ও প্রক্রিয়া ছাড়া অপসারণ করা যাবে না। খসড়ায় ১১ ধারায় হেকের ৩০টি কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, পদমর্যাদার কাছে ঝুলে আছে প্রস্তাবিত উচ্চশিক্ষা কমিশন। হেক গঠনের যে খসড়া আইন প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে চেয়ারম্যানের পদমর্যাদাকে একজন পূর্ণমন্ত্রীর সমতুল্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে ঘোর আপত্তি শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বলছে, পদমর্যাদা প্রদানের বিষয়টি উন্মুক্ত রেখে প্রস্তাবিত হেক গঠন করা হোক। তাদের মতে, সরকার চাইলে নিয়োগকালে চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা ঠিক করে দেবে, যেভাবে বর্তমান চেয়ারম্যানকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেয়া হয়েছে। কেননা হেক যেহেতু সাংবিধানিক সংস্থা নয়, তাই এভাবে পদমর্যাদা নির্ধারণ করে আইন প্রণয়ন উচিত হবে না।
বিপরীত দিকে আইনটির খসড়া প্রস্তাবকারী ইউজিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা না দিয়ে নতুন সংস্থা গঠন করা হলে প্রকারান্তরে তা উচ্চশিক্ষার জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে। তাই চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা প্রস্তাবনা অনুযায়ীই রাখতে হবে।
সূত্রগুলো বলছে, এ নিয়ে দর-কষাকষির কারণেই ছয় বছর ধরে ঝুলে রয়েছে হেক। জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত করার প্রয়োজনে এবং একটি কার্যকর সংস্থা গঠন করার লক্ষ্যে চেয়ারম্যানকে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে প্রস্তাবিত কমিশনকে ক্ষমতায়িত করতে হবে। এ ধরনের সংস্থা দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। এ ধরনের কমিশন গঠনের কোনো বিকল্প নেই।’
ইউজিসি বর্তমানে চলছে ১৯৭৩ সালের একটি অধ্যাদেশ অনুযায়ী। এ অধ্যাদেশে সরকার থেকে অর্থ এনে তা মঞ্জুরি আকারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাঝে বণ্টনের এখতিয়ার রয়েছে সংস্থাটির। তখন দেশে মাত্র ৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। এর মধ্যে ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ শুরু হয়। আইনে এসব বিশ্ববিদ্যালয় দেখভালের এখতিয়ার তেমন একটা নেই। এ অবস্থার মধ্যে দেশে বর্তমানে ৮১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বিপরীত দিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও বেড়ে ৩৫টিতে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় শক্তিশালী ও কার্যকর কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ইউজিসির পরিবর্তে উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠনের বিষয়ে যুগান্তর সর্বপ্রথম ২০০৪ সালে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তখনই সংশ্লিষ্ট মহল থেকে এ ব্যাপারে দাবি ওঠে। ২০০৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয় ইউজিসি থেকে।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, বিগত মহাজোট সরকারের শেষ সময়ে প্রস্তাবিত আইনটি বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে মন্ত্রিসভায় পেশ করা হয়। কিন্তু সেটি মন্ত্রিসভা যাতে নীতিগত অনুমোদন না করে, সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কেন্দ্রিক তৎকালীন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊধ্বর্তন কয়েকজন কর্মকর্তা তৎপরতা চালান। ফলে সেটি আর মন্ত্রিসভা পার হতে পারেনি। মন্ত্রিসভা থেকে কিছু মতামতসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রায় ৪ মাস আগে কিছু কোয়েরিজ (জিজ্ঞাসা) আসে মন্ত্রণালয় থেকে। আমরা সেগুলোর জবাবসহ কিছু পরামর্শ, ব্যাখ্যা, আমাদের চাহিদা ও দাবিসহ আবার মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা কিছু কিছু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তবে আমরা বলেছি উচ্চশিক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও কার্যকর কমিশন চাইলে এসব বিষয় আইনে রাখতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আর কয়েকদিন মাত্র চেয়ারম্যান আছি। এরপর আরেকজন আসবেন। পদমর্যাদা চাওয়ার বিষয়টি আমার জন্য নয়, উচ্চশিক্ষার জন্যই।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, জনপ্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর যুক্তি হচ্ছে, কেবলমাত্র সাংবিধানিক সংস্থাগুলোতে এভাবে পদমর্যাদা দেয়ার বিষয় নির্দিষ্ট থাকে। উচ্চশিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা এভাবে নির্ধারণ করতে গেলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তাছাড়া অন্য কমিশনগুলোতে বিষয়টি এভাবে নির্দিষ্ট করা নেই। এটা দেয়া না দেয়া সরকারের বিষয়। তাই এ বিষয়টি উন্মুক্ত রাখাই ভালো। তাছাড়া একজন পূর্ণকালীন সদস্যদের পদমর্যাদা রাখা হয়েছে হাইকোর্টের একজন বিচারপতির পদমর্যাদার সমান। এর ফলে একজন সদস্যকে মেয়াদ পূর্তির আগে সরাতে হলে একজন বিচারপতিকে অপসারণের প্রক্রিয়াই নিতে হবে সরকারকে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এর সঙ্গেও একমত নয়।
নামপ্রকাশ না করে ইউজিসির একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য ও ঊর্ধ্বতন স্থায়ী কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে ইউজিসি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। চেয়ারম্যানের পদ পূর্ণমন্ত্রীর পদমর্যাদার সমান হলে কমিশন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে চলে যেতে পারে। এ ধরনের আশংকা থেকেই এর ব্যাপারে অসহযোগিতা শুরু হয় মন্ত্রণালয় থেকে। যে কারণে তাদের প্রস্তাবিত আইন না রেখে একে এমনভাবে কাটছাঁট করা হয়েছে যে, এর ফলে ইউজিসি বর্তমানে যে স্বাধীনতা ভোগ করছে, হেক হলে সেটুকুও থাকবে না। ক্ষতি যা হওয়ার তা উচ্চশিক্ষার হবে এবং একশ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বৃত্তপনা বেড়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, মহাজোট সরকারের শেষে হেক গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করতে মন্ত্রিপরিষদে আইন উত্থাপিত হওয়ার পর ফেরত আসায় এটি নতুন সরকার অগ্রাধিকারে রাখে। যে কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৩ মাসের কাজের অগ্রাধিকার তালিকায় এটি রাখা হয়।
ইউজিসির জ্যেষ্ঠ সদস্য অধ্যাপক ড. আতফুল হাই শিবলী সম্প্রতি যুগান্তরকে বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লংঘনের প্রবণতা বেশি। বিশেষ করে হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা নিয়ে যাচ্ছেতাই করছে। তারা করণীয় নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ে কেবল সুপারিশ করে থাকেন। কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না। এ অবস্থায় কার্যকর উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন করা জরুরি। তাহলে শিক্ষা দুর্নীতি বন্ধে অনেক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে।
অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ইউজিসিকে ‘শাস্তি সুপারিশকারী’ প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে ‘অ্যাকশন নেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠন জরুরি। এজন্যই আইনে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষার চাহিদা নিরূপণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নীতিনির্ধারণের ক্ষমতা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পরিবর্তে এ স্বায়ত্তশাসিত, স্বাধীন ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানটি গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৯ পৃষ্ঠার খসড়া আইনে ১৯টি প্রধান ধারাসহ শতাধিক উপধারা রয়েছে। একজন চেয়ারম্যান, ৫ জন পূর্ণকালীন ও ১২ জন খণ্ডকালীন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে হেক। খণ্ডকালীন সদস্যদের মধ্যে ৩ জন সচিব (শিক্ষা, পরিকল্পনা ও অর্থ), পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের মধ্যে ৩ জন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের মধ্যে ৩ জন এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ডিনদের মধ্যে ৩ জন। এদের মেয়াদ হবে ২ বছর। স্থায়ী সদস্য ও চেয়ারম্যানের মেয়াদ ৪ বছর। যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের সব শর্ত পূরণ করে স্থায়ী সনদ লাভ করেছে, কেবল তাদের মধ্য থেকে হেকের সদস্য নেয়া হবে। কমিশনের চেয়ারম্যান ও পূর্ণকালীন সদস্যদের অপসারণের ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতিকে যেসব কারণে এবং প্রক্রিয়ায় অপসারণ করা যায়, সেসব কারণ ও প্রক্রিয়া ছাড়া অপসারণ করা যাবে না। খসড়ায় ১১ ধারায় হেকের ৩০টি কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
No comments