জড়িতদের জবানবন্দির কপি চেয়েছে ভারত by দীন ইসলাম
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডার মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দফায় দফায় ভারতের পক্ষ থেকে নূর হোসেনের বিষয়ে নানা তথ্য চাওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ চিঠিতে ভারত সরকার নূর হোসেন সেভেন মার্ডারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত- এমন সুস্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ চেয়েছে। একই সঙ্গে সেভেন মার্ডার আসামিদের ১৬৪ ধারায় নেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সার্টিফাইড কপি চেয়েছে। গত ১৬ই আগস্ট বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস এক নোট ভারবেলে জানায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচারে দণ্ডিত হতে পারেন এমন প্রমাণ পাঠাতে হবে- যা বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে সম্পাদিত বহিঃসমর্পণ চুক্তির ১০(৩) ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য হয়। এতে বলা হয়, ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পাঁচ আসামি সেভেন মার্ডারের সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা বলেছে। এছাড়া নয়জন প্রত্যক্ষদর্শীও জবানবন্দি দিয়েছেন। তাই ১৬৪ ধারায় নেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কপি প্রয়োজন। এদিকে এখনই ১৬৪ ধারায় নেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কপি দিতে রাজি নয় বাংলাদেশ সরকার। এ নিয়ে গত ১৩ই নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে নূর হোসেনের বিষয়ে ভারত সরকারের চাওয়া তথ্যের বিষয়ে পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধের পরও কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দির অনুলিপি তাদেরকে দেয়া হবে না। তবে কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দির আলোকে নূর হোসেনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার তৈরি করা একটি প্রতিবেদন ভারতে পাঠানো হবে। এরই মধ্যে ওই প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তা ইংরেজিতে তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যে প্রতিবেদনটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদন ছাড়াও এর আগে পাঠানো সব কাগজপত্রের কপি নতুন করে ভারতের কাছে পাঠানো হবে। এটা পাঠানোর জন্য ভারতের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারত সরকার সব কাগজপত্রের ওপর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছ থেকে এফিডেভিট চেয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভায় নেয়া সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, তদন্তকারী কর্মকর্তার বক্তব্য সংবলিত প্রতিবেদন ও আনুষঙ্গিক সব কাগজপত্রের বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে এফিডেভিট করতে হবে। এফিডেভিট করা হয়নি এমন কাগজপত্রের প্রতি পৃষ্ঠায় উপযুক্ত কর্মকর্তাকে দিয়ে সত্যায়িত বা প্রত্যায়িত করতে হবে। এর আগে সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন কলকাতায় গ্রেপ্তারের আগেই গত ২৭শে মে রেড ওয়ারেন্ট জারি করে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল। ফ্রান্স ভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি ২৭শে মে বিকালে তাদের ওয়ানটেড পারসনের রেড ওয়ারেন্ট পাতায় নূর হোসেনের নাম সংযুক্ত করে। এ জন্য ২২শে মে পুলিশ সদর দপ্তরকে চিঠি দিয়েছিল নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসন। পরে পুলিশ সদর দফতর রেড ওয়ারেন্টের জন্য ইন্টারপোলকে চিঠি দেয়। ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়া ছাড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোন চেষ্টা তদবির করা হচ্ছে না। এর আগে গত ১৬ই জুন নূর হোসেনকে নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম চিঠি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মারফত ভারত সরকারের কাছে পাঠানো হয়। এটি ছিল ভারত সরকারের কাছে প্রথম অনুরোধপত্র। এরপর থেকেই চলছে চিঠি চালাচলি। গত ২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজন অপহৃত হওয়ার পর নূর হোসেনের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠলে সে তা অস্বীকার করে। পালিয়ে যায় ভারতে। নূর হোসেন সীমান্ত অতিক্রম করেছে বলে নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের সহায়তা চায় পুলিশ, সীমান্তেও জারি করা হয় সতর্কতা। এর মধ্যেই ১৪ই জুন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ কলকাতার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বাগুইআঁটির একটি বাড়ি থেকে নূর হোসেনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায়। অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ এবং অস্ত্র বহনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে মামলাসহ অভিযোগ দায়ের করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। গত ১৫ই জুন তাকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডেও নেয়া হয়। এরপর থেকে কয়েক দফা তাকে আদালতে তোলা হয়েছে। হচ্ছে সময়ক্ষেপণ। এখন নতুন করে তথ্য চাওয়া হয়েছে। ফলে বিষয়টি ঝুলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
No comments