প্রশ্ন ফাঁসের উৎস মিলে না, শাস্তিও নেই by মোশতাক আহমেদ
বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও তা বন্ধ করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। এখন পর্যন্ত প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রকৃত উৎস বের করতে পারেনি সরকার। প্রশ্নপত্র ফাঁসে সাজার বিধান রেখে আইন থাকলেও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে দিনে দিনে এই অপরাধ বেড়েই চলছে।
চলমান প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় শুরুর দিন থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠলেও বিষয়টিকে আমলেই নিচ্ছে না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষার আগে ফেসবুকে, মুঠোফোনে, ওয়েবসাইটে ও হাতে লেখা অবস্থায় প্রশ্ন দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। পরে সেগুলোই মূল প্রশ্নের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সারা দেশের লাখ লাখ অভিভাবকের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই অনেকে প্রথম আলোয় ফোন করে তাঁদের উদ্বেগ ও ক্ষোভের কথা জানান।
তবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের এত অভিযোগ উঠলেও তদন্ত কমিটি পর্যন্ত গঠন করেনি মন্ত্রণালয়; বরং তারা এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব কাজী আখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তো কথিত প্রশ্ন মিলিয়ে দেখছি, মিল পড়ছে না। তার পরও নজর রাখছি।’
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, এবার ব্যবসায়িকভাবে পরিচালিত বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে প্রশ্ন ছড়ানো হচ্ছে। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী, বাড্ডা, বগুড়া ও বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্রের নমুনা পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, বগুড়ার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুর রহিম ২৪ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠান। তাতে একটি কোচিং সেন্টারে অভিযান পরিচালনা, সেখানে পাওয়া কিছু প্রশ্ন উদ্ধার ও কয়েকজনকে সাজা দেওয়ার কথা তুলে ধরা হয়। তাতে তিনি বলেন, সাদা কাগজে হাতে লেখা সংক্ষিপ্ত আকারের প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের বেশ কিছুসংখ্যক প্রশ্নে মিল পাওয়া যায়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চলাকালে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২৫ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিটি পৌঁছেছে ২৬ নভেম্বর। অথচ ৩০ নভেম্বর পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোমলমতি শিশুদের মধ্যে যদি এখনই প্রশ্ন ফাঁসের মতো দুর্নীতি শিখিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এর ফল আরও খারাপ হবে। তাই এখনই কঠোরভাবে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার যদি বিষয়টি বারবার অস্বীকার না করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিত তাহলে এটা বন্ধ সম্ভব হতো।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ও একাধিক শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, এর আগেও অনেকগুলো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টিকে কখনো খুব বেশি গুরুত্ব না দেওয়ার কারণেই প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হয়নি। গত এপিলে অনুষ্ঠিত উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত করেছিল। তখন তদন্তে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণও মিলে। কিন্তু ওই কমিটি প্রশ্নপত্র ফাঁসের উৎস বের করতে পারেনি। তারা সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পর্যাপ্ত তদন্ত করে উৎস বের করার সুপারিশ করলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো ফল মেলেনি।
কয়েকজন শিক্ষক বলেন, দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বড় বড় ঘটনা উদঘাটন করতে পারে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা উদঘাটন করতে পারে না—এটা অবিশ্বাস্য। বিষয়টির ওপর গুরুত্ব না দেওয়ার কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে তাঁরা মনে করেন। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রকৃত উৎস বের করা উচিত বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।
গত বছরের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হয় সরকারি তদন্তে। এ জন্য ময়মনসিংহে অবস্থিত জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির কয়েকজন কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে কেবল অন্যত্র বদলি করা হয়। কিন্তু তখনো উৎস বের হয়নি।
এর আগে ২০১০ সালে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ‘ভিন্নজগৎ বিনোদন কেন্দ্রে’ পরীক্ষা নেওয়ার সময় পুলিশ ১৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। তখন তদন্তে ওই ঘটনার জন্য বিজি প্রেসের কয়েকজন কর্মচারীকে চিহ্নিত করা হয়। এরপর তদন্ত কমিটি বিজি প্রেসের নিরাপত্তা বাড়ানোসহ অনেকগুলো সুপারিশ করে। কিন্তু এখনো সেই নিরাপত্তার কথাই বলা হচ্ছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী আশির দশক থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৫টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো শাস্তি হয়নি। এ সবকিছু ঘটনায় তদন্ত কমিটিও হলেও সেগুলোর সুপারিশও কখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, মন্ত্রণালয় এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে বিদ্যমান পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) আইন, ১৯৮০, (সংশোধনী ১৯৯২) আবারও সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কার্যকর কিছু করতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
চলমান প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় শুরুর দিন থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠলেও বিষয়টিকে আমলেই নিচ্ছে না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষার আগে ফেসবুকে, মুঠোফোনে, ওয়েবসাইটে ও হাতে লেখা অবস্থায় প্রশ্ন দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। পরে সেগুলোই মূল প্রশ্নের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সারা দেশের লাখ লাখ অভিভাবকের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই অনেকে প্রথম আলোয় ফোন করে তাঁদের উদ্বেগ ও ক্ষোভের কথা জানান।
তবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের এত অভিযোগ উঠলেও তদন্ত কমিটি পর্যন্ত গঠন করেনি মন্ত্রণালয়; বরং তারা এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব কাজী আখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তো কথিত প্রশ্ন মিলিয়ে দেখছি, মিল পড়ছে না। তার পরও নজর রাখছি।’
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, এবার ব্যবসায়িকভাবে পরিচালিত বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে প্রশ্ন ছড়ানো হচ্ছে। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী, বাড্ডা, বগুড়া ও বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্রের নমুনা পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, বগুড়ার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুর রহিম ২৪ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠান। তাতে একটি কোচিং সেন্টারে অভিযান পরিচালনা, সেখানে পাওয়া কিছু প্রশ্ন উদ্ধার ও কয়েকজনকে সাজা দেওয়ার কথা তুলে ধরা হয়। তাতে তিনি বলেন, সাদা কাগজে হাতে লেখা সংক্ষিপ্ত আকারের প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের বেশ কিছুসংখ্যক প্রশ্নে মিল পাওয়া যায়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চলাকালে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২৫ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিটি পৌঁছেছে ২৬ নভেম্বর। অথচ ৩০ নভেম্বর পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোমলমতি শিশুদের মধ্যে যদি এখনই প্রশ্ন ফাঁসের মতো দুর্নীতি শিখিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এর ফল আরও খারাপ হবে। তাই এখনই কঠোরভাবে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার যদি বিষয়টি বারবার অস্বীকার না করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিত তাহলে এটা বন্ধ সম্ভব হতো।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ও একাধিক শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, এর আগেও অনেকগুলো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টিকে কখনো খুব বেশি গুরুত্ব না দেওয়ার কারণেই প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হয়নি। গত এপিলে অনুষ্ঠিত উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত করেছিল। তখন তদন্তে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণও মিলে। কিন্তু ওই কমিটি প্রশ্নপত্র ফাঁসের উৎস বের করতে পারেনি। তারা সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পর্যাপ্ত তদন্ত করে উৎস বের করার সুপারিশ করলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো ফল মেলেনি।
কয়েকজন শিক্ষক বলেন, দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বড় বড় ঘটনা উদঘাটন করতে পারে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা উদঘাটন করতে পারে না—এটা অবিশ্বাস্য। বিষয়টির ওপর গুরুত্ব না দেওয়ার কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে তাঁরা মনে করেন। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রকৃত উৎস বের করা উচিত বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।
গত বছরের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হয় সরকারি তদন্তে। এ জন্য ময়মনসিংহে অবস্থিত জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির কয়েকজন কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে কেবল অন্যত্র বদলি করা হয়। কিন্তু তখনো উৎস বের হয়নি।
এর আগে ২০১০ সালে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ‘ভিন্নজগৎ বিনোদন কেন্দ্রে’ পরীক্ষা নেওয়ার সময় পুলিশ ১৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। তখন তদন্তে ওই ঘটনার জন্য বিজি প্রেসের কয়েকজন কর্মচারীকে চিহ্নিত করা হয়। এরপর তদন্ত কমিটি বিজি প্রেসের নিরাপত্তা বাড়ানোসহ অনেকগুলো সুপারিশ করে। কিন্তু এখনো সেই নিরাপত্তার কথাই বলা হচ্ছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী আশির দশক থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৫টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো শাস্তি হয়নি। এ সবকিছু ঘটনায় তদন্ত কমিটিও হলেও সেগুলোর সুপারিশও কখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, মন্ত্রণালয় এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে বিদ্যমান পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) আইন, ১৯৮০, (সংশোধনী ১৯৯২) আবারও সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কার্যকর কিছু করতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
No comments