বাংলাদেশের চার দশক : গণমাধ্যম পরিস্থিতি by সৈয়দ আবদাল আহমদ
যুক্তরাষ্ট্রের সূচনাপর্বে গণতন্ত্রের প্রাণপুরুষ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন থমাস জেফারসন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, গণতন্ত্রকে সফলভাবে কার্যকর করতে হলে সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনগণকে সর্বপ্রথম সচেতন রাখতে হবে এবং সংবাদপত্রগুলোকে এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হবে যেন তা জনপদের সব জনগণের কাছাকাছি চলে যেতে পারে। জেফারসন এ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘যেহেতু আমাদের সরকারের ভিত্তি হলো জনমত, তাই আমাদের প্রথম ল্য হওয়া উচিত সেই অধিকারের সংরণ এবং আমার কাছে যদি সংবাদপত্র ছাড়া সরকার অথবা সরকার ছাড়া সংবাদপত্র এমন বিকল্পের মধ্য থেকে একটিকে বাছাই করার সুযোগ আসত তাহলে আমি দ্বিতীয়টি বেছে নিতে এক মুহূর্তও দেরি করতাম না।’ যুক্তরাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাফল্যের মূলে রয়েছে জেফারসনের মতো ব্যক্তিত্বদের এমন অবদান। জেফারসন আমলে সুস্থ প্রেস বলতে শুধু সংবাদপত্রকেই বোঝাত। এখন দিন বদলেছে। প্রযুক্তির েেত্র অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে এবং বিশ্বময় তা বিস্তৃতও হয়েছে। গণমাধ্যম এখন শুধু সংবাদপত্র বা প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। আজকের তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেট যুগে গণমাধ্যম বলতে প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদপত্র এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার রেডিও-টেলিভিশন ছাড়াও অনলাইন নিউজ পেপার, ই-মেইল, এসএমএস, ব্লগ, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউভ এসব সামাজিক ওয়েবসাইটকেও বোঝায়। যেকোনো সমাজে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে জীবনঘনিষ্ঠ করতে চাইলে মুক্ত গণমাধ্যম অপরিহার্য। অর্থাৎ গণমাধ্যমের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ চলবে না। সমাজে গণতান্ত্রিক চেতনা বিকাশের প্রথম বুদ্ধিবৃত্তিক শর্তই হলো এটি। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। স্বাধীনতার চার দশক পার করলেও বাংলাদেশ নামক এই ভূখণ্ডের গণমাধ্যমের ইতিহাস আরো অনেক বছরের পুরনো। এই ইতিহাস কত বছরের পুরনো? বর্তমানে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের অবস্থা কী, চলছে কেমন? গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য যে মুক্ত গণমাধ্যম প্রয়োজন, সেটা কি আমাদের আছে? নাকি মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনেক বাধা আমাদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে? এ বিষয়গুলোই এখানে সংপ্তিভাবে আলোচনার চেষ্টা করব।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ইতিহাস এবং বর্তমান অবস্থা
ভারতবর্ষে প্রথম সংবাদপত্র বেঙ্গল গেজেট প্রকাশিত হয় ১৭৮০ সালে। এর ৩৮ বছর পর ১৮১৮ সালে বাংলা সংবাদপত্র ‘দিকদর্শন’ প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা সংবাদপত্রের যাত্রা শুরু হয়। তবে যে ভূখণ্ড নিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠিত, তার সংবাদপত্রের ইতিহাস ১৬৬ বছরের। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের গণমাধ্যমের এ ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, এ অঞ্চলের প্রথম পত্রিকা ‘রঙ্গপুর বার্তাবহ’ প্রকাশিত হয় ১৮৪৭ সালে। ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র ‘কবিতা কুসুমাবলী’ প্রকাশিত হয় ১৮৬০ সালে। উনিশ শতকে বর্তমান বাংলাদেশে অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে সাপ্তাহিক, পাকি, মাসিকসহ মোট সংবাদপত্র ও সাময়িকী বেরিয়েছে ২৪০টির মতো। সেগুলোর অধিকাংশই এত ুদ্র, ণজীবী ও গৌণ যে পূর্ববঙ্গের বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাসে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি। তবে উল্লেখ করার মতো এ অঞ্চলের প্রথম সাময়িকী ছিল কাঙাল হরিণাথ সম্পাদিত ‘গ্রাম বার্তা প্রকাশিকা’। কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে প্রকাশিত পত্রিকাটিতে গ্রামবাংলার কৃষক প্রজাদের দুর্দশা ও জমিদারদের অত্যাচার সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন ছাপা হতে থাকলে ওই এলাকার প্রভাবশালী জমিদার মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ভীষণ চটে গিয়েছিলেন। তিনি কাঙাল হরিণাথকে দমাতে লাঠিয়াল বাহিনী পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু লালন ফকিরের নেতৃত্বে প্রতিরোধের মুখে লাঠিয়ালরা সুবিধা করতে পারেনি। ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রাম থেকে কিরণ শংকর দাসের সম্পাদনায় আবদুল হক দোভাষের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় ‘জ্যোতি’ নামে একটি পত্রিকা বেরোত। অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্য সমাদৃত এই পত্রিকাটি বেশি দিন টেকেনি। সেই তুলনায় চট্টগ্রাম থেকে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা অন্বিকা দাসের সম্পাদনায় ব্রিটিশ আমলে প্রকাশিত ‘পাঞ্চজন্য’ পত্রিকা পাকিস্তান আমলেও কয়েক বছর টিকে ছিল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র যখন আত্মপ্রকাশ করে, তখন পাঞ্চজন্যই ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র দৈনিক। আমাদের সংবাদপত্রের মাধ্যম মূলত বাংলা, তবে প্রথম থেকেই ইংরেজিতেও সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান যুগে ঢাকা এবং কোনো কোনো জেলা শহর থেকে উর্দুতেও সংবাদপত্র বেরিয়েছে। যেমনÑ’৪৭ পূর্বকালে হাকিম হাবিবুর রহমান প্রকাশ করেন ‘আল মাশরেখ’ ও ‘যাদু’ নামের পত্রিকা। একই সময় ঢাকা থেকে প্রকাশিত হতো দুটো উর্দু দৈনিক ‘পাসবান’ ও ‘ওয়াতান’।
১৯৪৭ সালে যখন উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে, তখন পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা থেকে একটিও দৈনিক প্রকাশিত হতো না। চট্টগ্রাম থেকে মাস কয়েক অর্ধ-সাপ্তাহিক রূপে প্রকাশের পর বজলুল হকের সম্পাদনায় ‘জিন্দেগী’ পত্রিকা বের হয়। ঘোষণা দেয়া হলো, এটা পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র। অবশ্য মওলানা আকরম খাঁর দৈনিক আজাদ পাকিস্তান হওয়ার পর কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসে। ১৯৪৭ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রাম থেকে আবদুস সালামের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘দৈনিক পূর্ব পাকিস্তান’। তারপর একে একে বেরোয় চট্টগ্রাম থেকে দৈনিক জয়গান (আগস্ট ১৯৪৭), ঢাকা থেকে মোহাম্মদ মোদাব্বেরের সম্পাদনায় অর্ধ-সাপ্তাহিক পাকিস্তান (১৫ আগস্ট, ১৯৪৭), মওলানা ভাসানীর সম্পাদনায় সাপ্তাহিক ইত্তেফাক (১৯৪৯), মহীউদ্দিন আহমদ সম্পাদিত দৈনিক ইনসাফ (১৯৫০), নূরুল আমীনের মালিকানাধীন দৈনিক সংবাদ (মে ১৯৫১), মোহাম্মদ মোদাব্বের সম্পাদিত মোহন মিয়ার মালিকানাধীন দৈনিক মিল্লাত (১৯৫২), মহীউদ্দিন আহমদ সম্পাদিত ‘দৈনিক আমার দেশ’ (১৯৫২), তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সম্পাদিত মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত দৈনিক ইত্তেফাক (ডিসে¤¦র ১৯৫৩) এবং কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিছ সম্পাদিত দৈনিক ইত্তেহাদ (১৯৫৫)। একইভাবে হামিদুল হক চৌধুরীর মালিকানাধীন ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে। আবদুস সালাম সম্পাদিত এ পত্রিকা তখন কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার মুখপত্রে পরিণত হয়।
পাকিস্তান আমলেই সরকারি উদ্যোগে এরপর আত্মপ্রকাশ করে প্রথমে মর্নিং নিউজ এবং পরে দৈনিক পাকিস্তান পরবর্তীতে যার নাম হয় দৈনিক বাংলা। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে মূলত রাজনৈতিক প্রয়োজনে দৈনিক পত্রিকার আবির্ভাব ঘটে। বিভিন্ন দৈনিকের মধ্যে আদর্শগত লড়াই মাঝে মধ্যে তীব্র রূপ নিলেও পাঠকের জন্য সেটা আকর্ষণীয় ছিল। ঠোকাঠুকি মাঝে মধ্যে তুঙ্গে উঠত। সাংবাদিকদের মধ্যে আদর্শবাদী চেতনা জোরালো ছিল। মতপ্রকাশে নির্ভীক অনেক সাংবাদিকের চারণত্রে ছিল ঢাকায়। কারো লাশের ছবি, বিশেষ করে বিকৃত লাশের ছবি না ছাপানোর ব্যাপারে একটি অলিখিত মতৈক্য ছিল পত্রিকাগুলোর মধ্যে। দৈনিক আজাদ এ ব্যাপারটা কঠোরভাবে মেনে চলত।
আইয়ুব খানের সামরিক শাসন শুরু হলে ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে দেশে রাজনীতিচর্চা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তখন বিদেশী খবর এবং বিদেশের ঘটনাবলিকে ধরে কলাম লেখা হতে থাকে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলেও বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রে রাজনৈতিক খবর ও মন্তব্য প্রকাশে লিখিত বা অলিখিত বিধিনিষেধ ছিল। সংবাদপত্র ও সাংবাদিক দলনের মধ্যেও সাহসী সাংবাদিকতার নজির আমাদের গর্বিত করে। পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে অবজারভার ভবন থেকে ‘পূর্বদেশ’ নামের একটি দৈনিক পত্রিকা বের হয়। আঙ্গিক ও উপস্থাপনার বিচারে এটাকে দৈনিক পাকিস্তানের (পরে দৈনিক বাংলা) পর ঢাকার ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রথম আধুনিক পত্রিকা বলা যায়।
১৯৪৭-এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে একাত্তরে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং সেই থেকে আজ ২০১৪ সাল এক অত্যাশ্চর্য সময়। এ সময়ের মধ্যে বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্টের শাসন, আইয়ুব খানের সামরিক শাসন, বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, স্বাধীনতা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক সংগ্রাম প্রবল হয়েছে, সাংস্কৃতিক বিকাশের আকাক্সা পুষ্পিত হয়েছে। আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে উঠে দাঁড়িয়েছি।
স্বাধীনতার পরের ৪২ বছরেও নানা তোলপাড় ঘটেছে। সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ের মতো একানব্বইয়ের ঘূর্ণিঝড়, চুয়াত্তরের দুর্ভি এবং ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যার মতো বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে। তেমনি একদলীয় শাসন, সামরিক শাসন ও গণতান্ত্রিক শাসনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে দেশ। বিশেষ করে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদের স্বৈরশাসনের পতনের পর দেশে যে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা শুরু হয়, তা ২০০৭ সালের এক-এগারোর জরুরি শাসনের ফলে কিছুটা ছন্দপতন ঘটলেও অব্যাহত আছে। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের যে ধারা সৃষ্টি হয়েছে, তা অব্যাহত থাকুকÑ সেটা সবাই চাচ্ছে। এসময় ‘শত ফুল ফোটা’র মতো অগণিত সংবাদপত্র ও টেলিভিশন মিডিয়ার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। সংবাদপত্র ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর প্রভাব দিন দিন বেড়ে চলেছে। গণমাধ্যম যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ, তা বাংলাদেশে পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান। এর জন্য গণমাধ্যমকে অনেক বিরুদ্ধ স্রোতের মোকাবেলা করতে হয়েছে। এখনো হচ্ছে। নির্মোহভাবে সত্য প্রকাশ করা গণমাধ্যমের দায়িত্ব। সত্য প্রায় সময়ই কারো না কারো বিপে যায়। সত্য প্রকাশে যারা বিব্রত হন তারা সমাজের শক্তিশালী অংশ। ফলে ‘প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধ’ প্রকাশ করতে গিয়ে স্বাধীন গণমাধ্যমকে বারবার বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এই বাধা এখনো তীব্র। তবুও গণমাধ্যমের অগ্রযাত্রা থেমে নেই। সরকারি হিসাবে দেশে বর্তমানে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ২৫৪টি। এর মধ্যে ঢাকায় ৭৪টি এবং মফস্বলে ১৮০টি। প্রথম আলো, আমার দেশ, যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইনকিলাব, নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম, সমকাল, জনকণ্ঠ, কালের কণ্ঠ, মানবজমিন দেশের অন্যতম বাংলা দৈনিক পত্রিকা। তেমনি এক সময়ের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ অবজারভার, মর্নিং নিউজ, বাংলাদেশ টাইমস বন্ধ হয়ে গেলেও এখন আছে ডেইলি স্টার, ইনডিপেনডেন্ট, নিউএজ, নিউ নেশন, ডেইলি সান, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের মতো ইংরেজি দৈনিক। সাপ্তাহিক হলিডে দেশের প্রভাবশালী ইংরেজি সাপ্তাহিক অনেক বছর ধরেই। স্বাধীনতার পর দৈনিক বাংলা প্রকাশনী থেকে বেরোত সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন বিচিত্রা। প্রভাবশালী ও অত্যাধুনিক এই ম্যাগাজিনটি এখন সেভাবে নেই। নেই সাপ্তাহিক যায়যায়দিন। তবে সাপ্তাহিক ২০০০ এবং সাপ্তাহিক নামে দু’টি ম্যাগাজিন এখন বেশ পত্রিকা আলোচিত।
১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই মহিলাদের সচিত্র ‘বেগম’ কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল নারীর সর্বাঙ্গীণ উন্নতি তথা নারীর মতায়ন। নূরজাহান বেগমের সম্পাদনায় ‘বেগম’ ১৯৫২ থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে ঢাকা থেকে। এরপর লায়লা সামাদের সম্পাদনায় ‘অনন্যা’ (১৯৫৫), বেগম জেবউন-নিসা আহমদের সম্পাদনায় ‘খেলাঘর’ (১৯৫৫), কামরুন্নাহার লাইলীর সম্পাদনায় সাপ্তাহিক ‘অবরুদ্ধা’ (১৯৫৮) নারী সাংবাদিকতার পথ নির্মাণ করে। আজ সাংবাদিকতা পেশায়ও নারীরা গভীরভাবে সম্পৃক্ত।
এ ছাড়াও কিছু বিষয়ভিত্তিক পত্রিকা যেমন চলচ্চিত্র ও বিনোদন, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক, ক্রীড়া ও অপরাধবিষয়ক এবং ব্যঙ্গ পত্রিকাও দেশে প্রকাশিত হচ্ছে।
আধুনিক সংবাদপত্রের সহোদর সংবাদ সংস্থা। ষাট বছরেরও বেশি ধরে বাংলাদেশে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থা সমান্তরালভাবে অবস্থান করছে। ১৯৪৭-পরবর্তী অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান (এপিপি), পাকিস্তান প্রেস ইন্টারন্যাশনাল (পিপিআই) এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), বাংলাদেশ প্রেস ইন্টারন্যাশনাল (বিপিআই), ইস্টার্ন নিউজ এজেন্সি (ইএনএ বা এনা) এবং ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি) প্রভৃতি আধুনিক বার্তা সংস্থা দেশের সংবাদ প্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রযুক্তিগত কারণে এতকাল সংবাদ সংস্থার মাধ্যম ছিল ইংরেজি, বর্তমানে যুক্ত হয়েছে বাংলাও। বর্তমানে বিডিনিউজ ২৪ ডট কম, বাংলা নিউজ ২৪ ডট কম. নতুন বার্তা ২৪ ডট কম-এর মতো অসংখ্য অনলাইন সংবাদ সংস্থা এবং পত্রিকাও বের হয়েছে। প্রতিটি দৈনিক পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ বের করছে। মুহূর্তে এগুলো আপডেটও করা হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে বেসরকারি টেলিভিশনের সংখ্যা ২৩টি। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সম্প্রচারের অনুমতি পায় আটটি চ্যানেল। বাকিগুলো মহাজোট সরকারের আমলে। উল্লেখযোগ্য টিভি চ্যানেলের মধ্যে রয়েছে চ্যানেল আই, এনটিভি, বাংলাভিশন, একুশে টিভি, দিগন্ত টিভি (বর্তমানে বন্ধ), আরটিভি, এটিএন বাংলা, সময়, একাত্তর, মাছরাঙা টেলিভিশন। তেমনি বেসরকারি ৪টা রেডিও এখন বেশ আলোচিত।
পাকিস্তান আমল তো বটেই, বাংলাদেশ আমলের প্রথম দিকেও ঢাকা থেকে মফস্বলে পত্রিকা যেত এক দিন পর। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিকেলের আগেই পত্রিকা পৌঁছে যায়। তেমনি দুর্গম এলাকায়ও কিছু ঘটলে তার খবর তাৎণিক চলে আসছে মিডিয়ায়। ফলে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দর্শক যেমন বেড়েছে, তেমনি পত্রিকার পাঠক এবং বিক্রিও বেড়েছে। জাতীয় ও আঞ্চলিক মিলিয়ে এখন প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ কপি পত্রিকা বিক্রি হয়। দেশের সারতার হার বিবেচনায় নিলে এ সংখ্যাকে কম বলা যায় না। আশির দশকের গোড়ার দিকেও মফস্বল থেকে খবর আসত ডাকযোগে অথবা টেলিগ্রাম মারফত। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ খবর থাকলে সংশ্লিষ্ট সংবাদদাতা ট্র্যাংকল বুকিং করে টেলিফোনে খবর পাঠাতেন। কানে রিসিভার ঠেকিয়ে এমন খবর টুকে নেয়ার জন্য সব পত্রিকা অফিসে আলাদা সাব-এডিটর থাকতেন। এখন আর সেটা নেই। বেসরকারি খাতে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার আবির্ভাবও গণমাধ্যমের চেহারার আমূল পাল্টে দিয়েছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাধাবিপত্তি
এটি ঠিক যে, স্বাধীন বাংলাদেশ গণমাধ্যম শিল্পের জন্য নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসে। সংবাদপত্র প্রকাশ ও পাঠকদের মধ্যে এই প্রত্যাশা জন্মে যে, স্বাধীন দেশে নানা মত ও পথের পত্রিকা প্রকাশিত হবে। পাকিস্তান আমলের মতো কোনো নিয়ন্ত্রণ, সেন্সর ও বিধিনিষেধের জাল গণমাধ্যমের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে না। কিন্তু স্বাধীনতা-পূর্ব এবং স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে রাষ্ট্রের মাধ্যমেই গণমাধ্যম সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ব্যাহত হয়েছে গণমাধ্যমের বিকাশ। বাধাগ্রস্ত হয়েছে স্বাধীন সাংবাদিকতা। স্বাধীন দেশে গণমাধ্যমের ওপর সবচেয়ে বড় বাধা আসে বাকশাল আমলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার মাত্র চারটি পত্রিকা রেখে সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে শত শত সাংবাদিককে বেকার জীবনে ঠেলে দেয়। দেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে এটি ছিল এক কালো অধ্যায়। সেই থেকে সাংবাদিক সমাজ ১৬ জুনকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এ সময় হলিডে সম্পাদক এ জেড এম এনায়েতুল্লাহ খান, গণকণ্ঠ সম্পাদক কবি আল মাহমুদকে গ্রেফতার করে জেলে বন্দী করা হয়। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে গণমাধ্যমের ওপর থেকে বাকশাল আমলের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়াসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করায় গণমাধ্যমের বিকাশের পথ সুগম হয়। তবে সাংবাদিকদের তখনো নানা বাধা মোকাবেলা করতে হয়েছে। স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনামলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বিকাশ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। তথ্য অধিদফতরের (পিআইডি) প্রেস অ্যাডভাইসের আওতায় চলতে হয়েছে গণমাধ্যমকে। এ সময়টিতে কথায় কথায় সংবাদপত্রের প্রকাশনার ওপর নেমে আসে সরকারি খড়গ। ১৯৭৪ সালের বিশেষ মতা আইনের সংবাদপত্রসংক্রান্ত বিধি আরোপ করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অসংখ্য সংবাদপত্র। শুধু তা-ই নয়, বিবিসিতে সাহসী প্রতিবেদন করার কারণে প্রখ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদসহ অনেক সম্পাদক এবং সাংবাদিককে লেখালেখির জন্য জেল-জুলুমের শিকার হতে হয়েছে। ডা: মিলন হত্যার পর সাংবাদিক-সমাজ দেশের সব মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। টানা কয়েক দিন দেশে কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়নি। সাংবাদিকদের এ আন্দোলনে এরশাদের মতার ভিত নড়ে গিয়েছিল। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদের পতনের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের অস্থায়ী সরকারের সময় সংবাদপত্রের ডিকারেশন বন্ধ করা সংক্রান্ত বিশেষ মতা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাটি (দি প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্সÑ ডিকারেশন অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট) অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বিলোপ করা হয়। ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকার মতায় এসে সংসদে ওই অর্ডিন্যান্সটি আইন আকারে পাস করে। ফলে কথায় কথায় সংবাদপত্র বন্ধের খড়গটি অকেজো হয়ে যায়। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া নতুন উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে থাকে। নতুন নতুন সংবাদপত্র প্রকাশে বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় আকাশ সংস্কৃতিও উন্মুক্ত করা হয়। উদ্যোক্তারা নতুন নতুন টেলিভিশন চ্যানেল চালু করতে থাকেন। গণমাধ্যমের জন্য সৃষ্টি হয় একটি সুবর্ণ সুযোগ। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় স্বাধীন মতপ্রকাশ অব্যাহত হতে থাকে। তবে ওই সময়টিতেও মতাসীনদের হামলা-মামলা এবং চোখরাঙানির শিকার হয়েছেন অনেক সাংবাদিক। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকার মতায় আসে। ওই সময় দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমস, বিচিত্রা ও আনন্দ বিচিত্রা বন্ধ করে দিয়ে প্রায় পাঁচ শ’ সাংবাদিক-কর্মচারীকে বেকার করা হয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ অব্যাহত থাকলেও সাংবাদিকদের মতাসীনদের পেশিশক্তির শিকার হতে হয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ও কোনো কোনো েেত্র সাংবাদিকেরা হয়রানির শিকার হন। ওয়ান-ইলেভেনের জরুরি সরকারের সময় গণমাধ্যমকে অলিখিত আদেশে চলতে হয়েছে। ওই সময় বেশ কিছু গণমাধ্যমের ওপর নেমে আসে খড়গ। বন্ধ হয়ে যায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সিএসবি। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার মতায় আসার পর গণমাধ্যম নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। এ সময়ে সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী ২৩ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডটি ঘটে রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে সাগর-রুনির বাসার বেডরুমে। তাদের হত্যার বিচারের দাবিতে সাংবাদিকেরা আন্দোলন করছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হয়নি। সরকার এ নিয়ে নানা টালবাহানা করছে। তেমনি এ সময়ে চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যমুনা টিভির লাইসেন্স দেয়া হয়নি। বন্ধ করা হয়েছে দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টেলিভিশন। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা দুই দফায় বন্ধ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে প্রথম দফা বন্ধের পর পত্রিকাটি বের হয়। এ সময়ে বেশ কয়েকজন সম্পাদকও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাসহ এ পর্যন্ত ৬৮টি মামলা দেয়া হয়েছে। আমার দেশ অফিসে চার মাস ধরে অবরুদ্ধ জীবনযাপন করার পর ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল তাকে পত্রিকা অফিস থেকে কমান্ডো স্টাইলে গ্রেফতার করে ১৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। বিচারপতির স্কাইপ কেলেঙ্কারি তিনি পত্রিকায় প্রকাশ করেছিলেন। সভ্য দেশে এ ধরনের সাহসী রিপোর্টিংয়ের জন্য সাধারণত সম্পাদক বা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে পুরস্কৃত করা হয়। কিন্তু তার ভাগ্যে জুটেছে কারাগার। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো গ্রেফতার হন এবং দেড় বছর ধরে বন্দী আছেন। তেমনি আমার দেশ পত্রিকা বন্ধের প্রচেষ্টা চলছে। পত্রিকাটির প্রেস বেআইনিভাবে সিলগালা করা হয়েছে। পত্রিকা বন্ধ রয়েছে দেড় বছর ধরে। বর্তমান সরকার তথ্য অধিকার নামে নতুন একটি আইন করেছে। এ আইনটি মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য সহায়ক হলেও এর সুফল সাংবাদিকেরা এখন পর্যন্ত পাননি। এ দিকে সরকার বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিয়ন্ত্রণের জন্য সম্প্রচার নীতিমালা নামে কালো আইন তৈরি করেছে। তেমনি জারি হচ্ছে অনলাইন আইন। দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর টকশো এখন বেশ আলোচিত। টকশোর আলোচনা সরকারের বিরুদ্ধে যায় বলে মাঝে মধ্যেই অদৃশ্য শক্তির হস্তেেপর শিকার হচ্ছে টিভি টকশোগুলো।
গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের দায়
তবে সমাজের অন্য সব েেত্রর মতো আমাদের গণমাধ্যমও মোটা দাগে দু’টি শিবিরে বিভক্ত। গণমাধ্যম দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। এমন অবস্থা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। গণমাধ্যমের সাথে এখন বিপুল অর্থ জড়িয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়িক স্বার্থে সরকারকে না চটানোর একটা প্রবণতা লণীয়। এতে সরকারের ভেতর এমন একটা বোধ ক্রমেই জোরদার হচ্ছে যে, গণমাধ্যমগুলো নিজেদের স্বার্থে সরকারকে সমঝে চলতে বাধ্য। এর ব্যতিক্রম ঘটলে কর্তৃপ মেজাজ হারিয়ে যা করার নয়, তাই করে বসছে। এই বাস্তবতায় যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য কার দায় কতটুকু সে মূল্যায়ন অবশ্যই এক দিন হবে। তবে এখন যা অবস্থা সে সম্পর্কে একবাক্যে বলা যায়, সার্বিকভাবে গণমাধ্যমের গ্লামার বেড়েছে, মর্যাদা কমেছে।
আমাদের গণমাধ্যমে এখন যে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এসেছে, তা উন্নত দেশের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। উন্নত দেশের সংবাদপত্রের মতোই আমাদের সংবাদপত্রও দেখতে সুন্দর, ঝকঝকে। সাংবাদিকতা পেশার মর্যাদাও বেড়েছে। করপোরেট হাউজগুলো গণমাধ্যমে বড় ধরনের পুঁজি বিনিয়োগ করছে। ফলে সাংবাদিকদের পারিশ্রমিক, সম্মানী ও সামাজিক মর্যাদার েেত্র উন্নতি হয়েছে। গণমাধ্যম শিল্প হিসেবে দাঁড়াচ্ছে। নতুন নতুন পুঁজি আসছে এ শিল্পে। তবে এত কিছুর পরও সংবাদপত্র নিয়ে, টিভি চ্যানেল নিয়ে, রেডিও নিয়ে এক ধরনের হতাশাও সমাজে প্রবলভাবে বিরাজমান। প্রশ্ন উঠছে সংবাদপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে। বলা হচ্ছে আমাদের সংবাদপত্র পাঠকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। পাঠক যে খবর চান, সেই খবর সংবাদপত্র দিতে পারছে না। পাঠক যে তার চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এটি একেবারে অসত্য নয়। একটি ঘটনা জানার জন্য একজন পাঠককে এখন একটিমাত্র সংবাদপত্রের ওপর নির্ভর করলে চলে না। দুর্ভাগ্য যে, ওই খবরটি জানার জন্য পাঠককে অনেক সংবাদপত্র খুঁজতে হয়। এ জন্য মিডিয়ার মালিকেরাই শুধু দায়ী নয়, সাংবাদিকেরাও দায়ী। সাংবাদিকদের মধ্যে দলাদলি এখন প্রবল। দলীয় রাজনীতি প্রাধান্য পাচ্ছে। তা ছাড়া সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজনও এ েেত্র দায়ী। সাংবাদিকদের ইউনিয়ন দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। সাংবাদিকদের কাছে মানুষ অনেক কিছু আশা করে। সাংবাদিকেরা সত্যকে তুলে ধরবেন, মানুষের আকাক্সাগুলো প্রতিফলিত করবেন, সরকারের ভুল পদপেগুলোর সমালোচনা করবেন ইত্যাদি। এগুলো কখনো সম্ভব হবে না যদি না সাংবাদিকদের বিভাজন দূর হয়। তাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য, মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য এবং বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যমের জন্য সাংবাদিকদের ঐক্য জরুরি। তাহলেই তারা নিজেদের নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত করতে পারবেন, তেমনি মিডিয়ার নিরাপত্তা, তথ্য প্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠা এর নিজেদের মর্যাদা বাড়াতে পারবেন।
লেখক : জাতীয় প্রেস কাবের সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ইতিহাস এবং বর্তমান অবস্থা
ভারতবর্ষে প্রথম সংবাদপত্র বেঙ্গল গেজেট প্রকাশিত হয় ১৭৮০ সালে। এর ৩৮ বছর পর ১৮১৮ সালে বাংলা সংবাদপত্র ‘দিকদর্শন’ প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা সংবাদপত্রের যাত্রা শুরু হয়। তবে যে ভূখণ্ড নিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠিত, তার সংবাদপত্রের ইতিহাস ১৬৬ বছরের। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের গণমাধ্যমের এ ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, এ অঞ্চলের প্রথম পত্রিকা ‘রঙ্গপুর বার্তাবহ’ প্রকাশিত হয় ১৮৪৭ সালে। ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র ‘কবিতা কুসুমাবলী’ প্রকাশিত হয় ১৮৬০ সালে। উনিশ শতকে বর্তমান বাংলাদেশে অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে সাপ্তাহিক, পাকি, মাসিকসহ মোট সংবাদপত্র ও সাময়িকী বেরিয়েছে ২৪০টির মতো। সেগুলোর অধিকাংশই এত ুদ্র, ণজীবী ও গৌণ যে পূর্ববঙ্গের বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাসে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি। তবে উল্লেখ করার মতো এ অঞ্চলের প্রথম সাময়িকী ছিল কাঙাল হরিণাথ সম্পাদিত ‘গ্রাম বার্তা প্রকাশিকা’। কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে প্রকাশিত পত্রিকাটিতে গ্রামবাংলার কৃষক প্রজাদের দুর্দশা ও জমিদারদের অত্যাচার সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন ছাপা হতে থাকলে ওই এলাকার প্রভাবশালী জমিদার মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ভীষণ চটে গিয়েছিলেন। তিনি কাঙাল হরিণাথকে দমাতে লাঠিয়াল বাহিনী পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু লালন ফকিরের নেতৃত্বে প্রতিরোধের মুখে লাঠিয়ালরা সুবিধা করতে পারেনি। ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রাম থেকে কিরণ শংকর দাসের সম্পাদনায় আবদুল হক দোভাষের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় ‘জ্যোতি’ নামে একটি পত্রিকা বেরোত। অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্য সমাদৃত এই পত্রিকাটি বেশি দিন টেকেনি। সেই তুলনায় চট্টগ্রাম থেকে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা অন্বিকা দাসের সম্পাদনায় ব্রিটিশ আমলে প্রকাশিত ‘পাঞ্চজন্য’ পত্রিকা পাকিস্তান আমলেও কয়েক বছর টিকে ছিল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র যখন আত্মপ্রকাশ করে, তখন পাঞ্চজন্যই ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র দৈনিক। আমাদের সংবাদপত্রের মাধ্যম মূলত বাংলা, তবে প্রথম থেকেই ইংরেজিতেও সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান যুগে ঢাকা এবং কোনো কোনো জেলা শহর থেকে উর্দুতেও সংবাদপত্র বেরিয়েছে। যেমনÑ’৪৭ পূর্বকালে হাকিম হাবিবুর রহমান প্রকাশ করেন ‘আল মাশরেখ’ ও ‘যাদু’ নামের পত্রিকা। একই সময় ঢাকা থেকে প্রকাশিত হতো দুটো উর্দু দৈনিক ‘পাসবান’ ও ‘ওয়াতান’।
১৯৪৭ সালে যখন উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে, তখন পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা থেকে একটিও দৈনিক প্রকাশিত হতো না। চট্টগ্রাম থেকে মাস কয়েক অর্ধ-সাপ্তাহিক রূপে প্রকাশের পর বজলুল হকের সম্পাদনায় ‘জিন্দেগী’ পত্রিকা বের হয়। ঘোষণা দেয়া হলো, এটা পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র। অবশ্য মওলানা আকরম খাঁর দৈনিক আজাদ পাকিস্তান হওয়ার পর কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসে। ১৯৪৭ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রাম থেকে আবদুস সালামের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘দৈনিক পূর্ব পাকিস্তান’। তারপর একে একে বেরোয় চট্টগ্রাম থেকে দৈনিক জয়গান (আগস্ট ১৯৪৭), ঢাকা থেকে মোহাম্মদ মোদাব্বেরের সম্পাদনায় অর্ধ-সাপ্তাহিক পাকিস্তান (১৫ আগস্ট, ১৯৪৭), মওলানা ভাসানীর সম্পাদনায় সাপ্তাহিক ইত্তেফাক (১৯৪৯), মহীউদ্দিন আহমদ সম্পাদিত দৈনিক ইনসাফ (১৯৫০), নূরুল আমীনের মালিকানাধীন দৈনিক সংবাদ (মে ১৯৫১), মোহাম্মদ মোদাব্বের সম্পাদিত মোহন মিয়ার মালিকানাধীন দৈনিক মিল্লাত (১৯৫২), মহীউদ্দিন আহমদ সম্পাদিত ‘দৈনিক আমার দেশ’ (১৯৫২), তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সম্পাদিত মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত দৈনিক ইত্তেফাক (ডিসে¤¦র ১৯৫৩) এবং কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিছ সম্পাদিত দৈনিক ইত্তেহাদ (১৯৫৫)। একইভাবে হামিদুল হক চৌধুরীর মালিকানাধীন ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে। আবদুস সালাম সম্পাদিত এ পত্রিকা তখন কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার মুখপত্রে পরিণত হয়।
পাকিস্তান আমলেই সরকারি উদ্যোগে এরপর আত্মপ্রকাশ করে প্রথমে মর্নিং নিউজ এবং পরে দৈনিক পাকিস্তান পরবর্তীতে যার নাম হয় দৈনিক বাংলা। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে মূলত রাজনৈতিক প্রয়োজনে দৈনিক পত্রিকার আবির্ভাব ঘটে। বিভিন্ন দৈনিকের মধ্যে আদর্শগত লড়াই মাঝে মধ্যে তীব্র রূপ নিলেও পাঠকের জন্য সেটা আকর্ষণীয় ছিল। ঠোকাঠুকি মাঝে মধ্যে তুঙ্গে উঠত। সাংবাদিকদের মধ্যে আদর্শবাদী চেতনা জোরালো ছিল। মতপ্রকাশে নির্ভীক অনেক সাংবাদিকের চারণত্রে ছিল ঢাকায়। কারো লাশের ছবি, বিশেষ করে বিকৃত লাশের ছবি না ছাপানোর ব্যাপারে একটি অলিখিত মতৈক্য ছিল পত্রিকাগুলোর মধ্যে। দৈনিক আজাদ এ ব্যাপারটা কঠোরভাবে মেনে চলত।
আইয়ুব খানের সামরিক শাসন শুরু হলে ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে দেশে রাজনীতিচর্চা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তখন বিদেশী খবর এবং বিদেশের ঘটনাবলিকে ধরে কলাম লেখা হতে থাকে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলেও বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রে রাজনৈতিক খবর ও মন্তব্য প্রকাশে লিখিত বা অলিখিত বিধিনিষেধ ছিল। সংবাদপত্র ও সাংবাদিক দলনের মধ্যেও সাহসী সাংবাদিকতার নজির আমাদের গর্বিত করে। পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে অবজারভার ভবন থেকে ‘পূর্বদেশ’ নামের একটি দৈনিক পত্রিকা বের হয়। আঙ্গিক ও উপস্থাপনার বিচারে এটাকে দৈনিক পাকিস্তানের (পরে দৈনিক বাংলা) পর ঢাকার ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রথম আধুনিক পত্রিকা বলা যায়।
১৯৪৭-এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে একাত্তরে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং সেই থেকে আজ ২০১৪ সাল এক অত্যাশ্চর্য সময়। এ সময়ের মধ্যে বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্টের শাসন, আইয়ুব খানের সামরিক শাসন, বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, স্বাধীনতা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক সংগ্রাম প্রবল হয়েছে, সাংস্কৃতিক বিকাশের আকাক্সা পুষ্পিত হয়েছে। আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে উঠে দাঁড়িয়েছি।
স্বাধীনতার পরের ৪২ বছরেও নানা তোলপাড় ঘটেছে। সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ের মতো একানব্বইয়ের ঘূর্ণিঝড়, চুয়াত্তরের দুর্ভি এবং ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যার মতো বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে। তেমনি একদলীয় শাসন, সামরিক শাসন ও গণতান্ত্রিক শাসনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে দেশ। বিশেষ করে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদের স্বৈরশাসনের পতনের পর দেশে যে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা শুরু হয়, তা ২০০৭ সালের এক-এগারোর জরুরি শাসনের ফলে কিছুটা ছন্দপতন ঘটলেও অব্যাহত আছে। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের যে ধারা সৃষ্টি হয়েছে, তা অব্যাহত থাকুকÑ সেটা সবাই চাচ্ছে। এসময় ‘শত ফুল ফোটা’র মতো অগণিত সংবাদপত্র ও টেলিভিশন মিডিয়ার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। সংবাদপত্র ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর প্রভাব দিন দিন বেড়ে চলেছে। গণমাধ্যম যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ, তা বাংলাদেশে পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান। এর জন্য গণমাধ্যমকে অনেক বিরুদ্ধ স্রোতের মোকাবেলা করতে হয়েছে। এখনো হচ্ছে। নির্মোহভাবে সত্য প্রকাশ করা গণমাধ্যমের দায়িত্ব। সত্য প্রায় সময়ই কারো না কারো বিপে যায়। সত্য প্রকাশে যারা বিব্রত হন তারা সমাজের শক্তিশালী অংশ। ফলে ‘প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধ’ প্রকাশ করতে গিয়ে স্বাধীন গণমাধ্যমকে বারবার বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এই বাধা এখনো তীব্র। তবুও গণমাধ্যমের অগ্রযাত্রা থেমে নেই। সরকারি হিসাবে দেশে বর্তমানে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ২৫৪টি। এর মধ্যে ঢাকায় ৭৪টি এবং মফস্বলে ১৮০টি। প্রথম আলো, আমার দেশ, যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইনকিলাব, নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম, সমকাল, জনকণ্ঠ, কালের কণ্ঠ, মানবজমিন দেশের অন্যতম বাংলা দৈনিক পত্রিকা। তেমনি এক সময়ের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ অবজারভার, মর্নিং নিউজ, বাংলাদেশ টাইমস বন্ধ হয়ে গেলেও এখন আছে ডেইলি স্টার, ইনডিপেনডেন্ট, নিউএজ, নিউ নেশন, ডেইলি সান, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের মতো ইংরেজি দৈনিক। সাপ্তাহিক হলিডে দেশের প্রভাবশালী ইংরেজি সাপ্তাহিক অনেক বছর ধরেই। স্বাধীনতার পর দৈনিক বাংলা প্রকাশনী থেকে বেরোত সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন বিচিত্রা। প্রভাবশালী ও অত্যাধুনিক এই ম্যাগাজিনটি এখন সেভাবে নেই। নেই সাপ্তাহিক যায়যায়দিন। তবে সাপ্তাহিক ২০০০ এবং সাপ্তাহিক নামে দু’টি ম্যাগাজিন এখন বেশ পত্রিকা আলোচিত।
১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই মহিলাদের সচিত্র ‘বেগম’ কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল নারীর সর্বাঙ্গীণ উন্নতি তথা নারীর মতায়ন। নূরজাহান বেগমের সম্পাদনায় ‘বেগম’ ১৯৫২ থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে ঢাকা থেকে। এরপর লায়লা সামাদের সম্পাদনায় ‘অনন্যা’ (১৯৫৫), বেগম জেবউন-নিসা আহমদের সম্পাদনায় ‘খেলাঘর’ (১৯৫৫), কামরুন্নাহার লাইলীর সম্পাদনায় সাপ্তাহিক ‘অবরুদ্ধা’ (১৯৫৮) নারী সাংবাদিকতার পথ নির্মাণ করে। আজ সাংবাদিকতা পেশায়ও নারীরা গভীরভাবে সম্পৃক্ত।
এ ছাড়াও কিছু বিষয়ভিত্তিক পত্রিকা যেমন চলচ্চিত্র ও বিনোদন, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক, ক্রীড়া ও অপরাধবিষয়ক এবং ব্যঙ্গ পত্রিকাও দেশে প্রকাশিত হচ্ছে।
আধুনিক সংবাদপত্রের সহোদর সংবাদ সংস্থা। ষাট বছরেরও বেশি ধরে বাংলাদেশে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থা সমান্তরালভাবে অবস্থান করছে। ১৯৪৭-পরবর্তী অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান (এপিপি), পাকিস্তান প্রেস ইন্টারন্যাশনাল (পিপিআই) এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), বাংলাদেশ প্রেস ইন্টারন্যাশনাল (বিপিআই), ইস্টার্ন নিউজ এজেন্সি (ইএনএ বা এনা) এবং ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি) প্রভৃতি আধুনিক বার্তা সংস্থা দেশের সংবাদ প্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রযুক্তিগত কারণে এতকাল সংবাদ সংস্থার মাধ্যম ছিল ইংরেজি, বর্তমানে যুক্ত হয়েছে বাংলাও। বর্তমানে বিডিনিউজ ২৪ ডট কম, বাংলা নিউজ ২৪ ডট কম. নতুন বার্তা ২৪ ডট কম-এর মতো অসংখ্য অনলাইন সংবাদ সংস্থা এবং পত্রিকাও বের হয়েছে। প্রতিটি দৈনিক পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ বের করছে। মুহূর্তে এগুলো আপডেটও করা হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে বেসরকারি টেলিভিশনের সংখ্যা ২৩টি। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সম্প্রচারের অনুমতি পায় আটটি চ্যানেল। বাকিগুলো মহাজোট সরকারের আমলে। উল্লেখযোগ্য টিভি চ্যানেলের মধ্যে রয়েছে চ্যানেল আই, এনটিভি, বাংলাভিশন, একুশে টিভি, দিগন্ত টিভি (বর্তমানে বন্ধ), আরটিভি, এটিএন বাংলা, সময়, একাত্তর, মাছরাঙা টেলিভিশন। তেমনি বেসরকারি ৪টা রেডিও এখন বেশ আলোচিত।
পাকিস্তান আমল তো বটেই, বাংলাদেশ আমলের প্রথম দিকেও ঢাকা থেকে মফস্বলে পত্রিকা যেত এক দিন পর। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিকেলের আগেই পত্রিকা পৌঁছে যায়। তেমনি দুর্গম এলাকায়ও কিছু ঘটলে তার খবর তাৎণিক চলে আসছে মিডিয়ায়। ফলে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দর্শক যেমন বেড়েছে, তেমনি পত্রিকার পাঠক এবং বিক্রিও বেড়েছে। জাতীয় ও আঞ্চলিক মিলিয়ে এখন প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ কপি পত্রিকা বিক্রি হয়। দেশের সারতার হার বিবেচনায় নিলে এ সংখ্যাকে কম বলা যায় না। আশির দশকের গোড়ার দিকেও মফস্বল থেকে খবর আসত ডাকযোগে অথবা টেলিগ্রাম মারফত। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ খবর থাকলে সংশ্লিষ্ট সংবাদদাতা ট্র্যাংকল বুকিং করে টেলিফোনে খবর পাঠাতেন। কানে রিসিভার ঠেকিয়ে এমন খবর টুকে নেয়ার জন্য সব পত্রিকা অফিসে আলাদা সাব-এডিটর থাকতেন। এখন আর সেটা নেই। বেসরকারি খাতে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার আবির্ভাবও গণমাধ্যমের চেহারার আমূল পাল্টে দিয়েছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাধাবিপত্তি
এটি ঠিক যে, স্বাধীন বাংলাদেশ গণমাধ্যম শিল্পের জন্য নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসে। সংবাদপত্র প্রকাশ ও পাঠকদের মধ্যে এই প্রত্যাশা জন্মে যে, স্বাধীন দেশে নানা মত ও পথের পত্রিকা প্রকাশিত হবে। পাকিস্তান আমলের মতো কোনো নিয়ন্ত্রণ, সেন্সর ও বিধিনিষেধের জাল গণমাধ্যমের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে না। কিন্তু স্বাধীনতা-পূর্ব এবং স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে রাষ্ট্রের মাধ্যমেই গণমাধ্যম সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ব্যাহত হয়েছে গণমাধ্যমের বিকাশ। বাধাগ্রস্ত হয়েছে স্বাধীন সাংবাদিকতা। স্বাধীন দেশে গণমাধ্যমের ওপর সবচেয়ে বড় বাধা আসে বাকশাল আমলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার মাত্র চারটি পত্রিকা রেখে সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে শত শত সাংবাদিককে বেকার জীবনে ঠেলে দেয়। দেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে এটি ছিল এক কালো অধ্যায়। সেই থেকে সাংবাদিক সমাজ ১৬ জুনকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এ সময় হলিডে সম্পাদক এ জেড এম এনায়েতুল্লাহ খান, গণকণ্ঠ সম্পাদক কবি আল মাহমুদকে গ্রেফতার করে জেলে বন্দী করা হয়। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে গণমাধ্যমের ওপর থেকে বাকশাল আমলের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়াসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করায় গণমাধ্যমের বিকাশের পথ সুগম হয়। তবে সাংবাদিকদের তখনো নানা বাধা মোকাবেলা করতে হয়েছে। স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনামলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বিকাশ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। তথ্য অধিদফতরের (পিআইডি) প্রেস অ্যাডভাইসের আওতায় চলতে হয়েছে গণমাধ্যমকে। এ সময়টিতে কথায় কথায় সংবাদপত্রের প্রকাশনার ওপর নেমে আসে সরকারি খড়গ। ১৯৭৪ সালের বিশেষ মতা আইনের সংবাদপত্রসংক্রান্ত বিধি আরোপ করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অসংখ্য সংবাদপত্র। শুধু তা-ই নয়, বিবিসিতে সাহসী প্রতিবেদন করার কারণে প্রখ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদসহ অনেক সম্পাদক এবং সাংবাদিককে লেখালেখির জন্য জেল-জুলুমের শিকার হতে হয়েছে। ডা: মিলন হত্যার পর সাংবাদিক-সমাজ দেশের সব মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। টানা কয়েক দিন দেশে কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়নি। সাংবাদিকদের এ আন্দোলনে এরশাদের মতার ভিত নড়ে গিয়েছিল। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদের পতনের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের অস্থায়ী সরকারের সময় সংবাদপত্রের ডিকারেশন বন্ধ করা সংক্রান্ত বিশেষ মতা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাটি (দি প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্সÑ ডিকারেশন অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট) অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বিলোপ করা হয়। ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকার মতায় এসে সংসদে ওই অর্ডিন্যান্সটি আইন আকারে পাস করে। ফলে কথায় কথায় সংবাদপত্র বন্ধের খড়গটি অকেজো হয়ে যায়। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া নতুন উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে থাকে। নতুন নতুন সংবাদপত্র প্রকাশে বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় আকাশ সংস্কৃতিও উন্মুক্ত করা হয়। উদ্যোক্তারা নতুন নতুন টেলিভিশন চ্যানেল চালু করতে থাকেন। গণমাধ্যমের জন্য সৃষ্টি হয় একটি সুবর্ণ সুযোগ। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় স্বাধীন মতপ্রকাশ অব্যাহত হতে থাকে। তবে ওই সময়টিতেও মতাসীনদের হামলা-মামলা এবং চোখরাঙানির শিকার হয়েছেন অনেক সাংবাদিক। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকার মতায় আসে। ওই সময় দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমস, বিচিত্রা ও আনন্দ বিচিত্রা বন্ধ করে দিয়ে প্রায় পাঁচ শ’ সাংবাদিক-কর্মচারীকে বেকার করা হয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ অব্যাহত থাকলেও সাংবাদিকদের মতাসীনদের পেশিশক্তির শিকার হতে হয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ও কোনো কোনো েেত্র সাংবাদিকেরা হয়রানির শিকার হন। ওয়ান-ইলেভেনের জরুরি সরকারের সময় গণমাধ্যমকে অলিখিত আদেশে চলতে হয়েছে। ওই সময় বেশ কিছু গণমাধ্যমের ওপর নেমে আসে খড়গ। বন্ধ হয়ে যায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সিএসবি। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার মতায় আসার পর গণমাধ্যম নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। এ সময়ে সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী ২৩ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডটি ঘটে রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে সাগর-রুনির বাসার বেডরুমে। তাদের হত্যার বিচারের দাবিতে সাংবাদিকেরা আন্দোলন করছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হয়নি। সরকার এ নিয়ে নানা টালবাহানা করছে। তেমনি এ সময়ে চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যমুনা টিভির লাইসেন্স দেয়া হয়নি। বন্ধ করা হয়েছে দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টেলিভিশন। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা দুই দফায় বন্ধ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে প্রথম দফা বন্ধের পর পত্রিকাটি বের হয়। এ সময়ে বেশ কয়েকজন সম্পাদকও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাসহ এ পর্যন্ত ৬৮টি মামলা দেয়া হয়েছে। আমার দেশ অফিসে চার মাস ধরে অবরুদ্ধ জীবনযাপন করার পর ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল তাকে পত্রিকা অফিস থেকে কমান্ডো স্টাইলে গ্রেফতার করে ১৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। বিচারপতির স্কাইপ কেলেঙ্কারি তিনি পত্রিকায় প্রকাশ করেছিলেন। সভ্য দেশে এ ধরনের সাহসী রিপোর্টিংয়ের জন্য সাধারণত সম্পাদক বা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে পুরস্কৃত করা হয়। কিন্তু তার ভাগ্যে জুটেছে কারাগার। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো গ্রেফতার হন এবং দেড় বছর ধরে বন্দী আছেন। তেমনি আমার দেশ পত্রিকা বন্ধের প্রচেষ্টা চলছে। পত্রিকাটির প্রেস বেআইনিভাবে সিলগালা করা হয়েছে। পত্রিকা বন্ধ রয়েছে দেড় বছর ধরে। বর্তমান সরকার তথ্য অধিকার নামে নতুন একটি আইন করেছে। এ আইনটি মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য সহায়ক হলেও এর সুফল সাংবাদিকেরা এখন পর্যন্ত পাননি। এ দিকে সরকার বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিয়ন্ত্রণের জন্য সম্প্রচার নীতিমালা নামে কালো আইন তৈরি করেছে। তেমনি জারি হচ্ছে অনলাইন আইন। দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর টকশো এখন বেশ আলোচিত। টকশোর আলোচনা সরকারের বিরুদ্ধে যায় বলে মাঝে মধ্যেই অদৃশ্য শক্তির হস্তেেপর শিকার হচ্ছে টিভি টকশোগুলো।
গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের দায়
তবে সমাজের অন্য সব েেত্রর মতো আমাদের গণমাধ্যমও মোটা দাগে দু’টি শিবিরে বিভক্ত। গণমাধ্যম দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। এমন অবস্থা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। গণমাধ্যমের সাথে এখন বিপুল অর্থ জড়িয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়িক স্বার্থে সরকারকে না চটানোর একটা প্রবণতা লণীয়। এতে সরকারের ভেতর এমন একটা বোধ ক্রমেই জোরদার হচ্ছে যে, গণমাধ্যমগুলো নিজেদের স্বার্থে সরকারকে সমঝে চলতে বাধ্য। এর ব্যতিক্রম ঘটলে কর্তৃপ মেজাজ হারিয়ে যা করার নয়, তাই করে বসছে। এই বাস্তবতায় যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য কার দায় কতটুকু সে মূল্যায়ন অবশ্যই এক দিন হবে। তবে এখন যা অবস্থা সে সম্পর্কে একবাক্যে বলা যায়, সার্বিকভাবে গণমাধ্যমের গ্লামার বেড়েছে, মর্যাদা কমেছে।
আমাদের গণমাধ্যমে এখন যে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এসেছে, তা উন্নত দেশের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। উন্নত দেশের সংবাদপত্রের মতোই আমাদের সংবাদপত্রও দেখতে সুন্দর, ঝকঝকে। সাংবাদিকতা পেশার মর্যাদাও বেড়েছে। করপোরেট হাউজগুলো গণমাধ্যমে বড় ধরনের পুঁজি বিনিয়োগ করছে। ফলে সাংবাদিকদের পারিশ্রমিক, সম্মানী ও সামাজিক মর্যাদার েেত্র উন্নতি হয়েছে। গণমাধ্যম শিল্প হিসেবে দাঁড়াচ্ছে। নতুন নতুন পুঁজি আসছে এ শিল্পে। তবে এত কিছুর পরও সংবাদপত্র নিয়ে, টিভি চ্যানেল নিয়ে, রেডিও নিয়ে এক ধরনের হতাশাও সমাজে প্রবলভাবে বিরাজমান। প্রশ্ন উঠছে সংবাদপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে। বলা হচ্ছে আমাদের সংবাদপত্র পাঠকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। পাঠক যে খবর চান, সেই খবর সংবাদপত্র দিতে পারছে না। পাঠক যে তার চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এটি একেবারে অসত্য নয়। একটি ঘটনা জানার জন্য একজন পাঠককে এখন একটিমাত্র সংবাদপত্রের ওপর নির্ভর করলে চলে না। দুর্ভাগ্য যে, ওই খবরটি জানার জন্য পাঠককে অনেক সংবাদপত্র খুঁজতে হয়। এ জন্য মিডিয়ার মালিকেরাই শুধু দায়ী নয়, সাংবাদিকেরাও দায়ী। সাংবাদিকদের মধ্যে দলাদলি এখন প্রবল। দলীয় রাজনীতি প্রাধান্য পাচ্ছে। তা ছাড়া সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজনও এ েেত্র দায়ী। সাংবাদিকদের ইউনিয়ন দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। সাংবাদিকদের কাছে মানুষ অনেক কিছু আশা করে। সাংবাদিকেরা সত্যকে তুলে ধরবেন, মানুষের আকাক্সাগুলো প্রতিফলিত করবেন, সরকারের ভুল পদপেগুলোর সমালোচনা করবেন ইত্যাদি। এগুলো কখনো সম্ভব হবে না যদি না সাংবাদিকদের বিভাজন দূর হয়। তাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য, মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য এবং বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যমের জন্য সাংবাদিকদের ঐক্য জরুরি। তাহলেই তারা নিজেদের নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত করতে পারবেন, তেমনি মিডিয়ার নিরাপত্তা, তথ্য প্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠা এর নিজেদের মর্যাদা বাড়াতে পারবেন।
লেখক : জাতীয় প্রেস কাবের সাধারণ সম্পাদক
No comments