মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার জরুরি by আসম আবদুর রব
রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষ এবং তাদের সব ধরনের শোষণ থেকে মুক্তি দেয়া। পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক বিকাশ। নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগত দূর করা। সর্বজনীন শিা ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা। জনগণের মতায়ন ও জীবন সুরা নিশ্চিত করা। বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত-জনগণের সংহতি ও সংগ্রামকে সমর্থন জানানো। মুক্তিযুদ্ধের অন্তর্বর্তীকালীন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এ তিনটিকে রাষ্ট্রের আদর্শিক ভিত্তি ঘোষণা করা হয়েছিল; কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পরপরই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিচালিত হয় স্বাধীন দেশের আদর্শকে উপেক্ষা করে ব্রিটিশ পাকিস্তানি মডেলে এবং কায়েম করা হয় ‘অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক দলীয় শাসন। গত ৪৩ বছর ধরে রাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এক দিনও পরিচালিত হয়নি। এর ফলে ক্রমাগতভাবে আমরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে আমরা ক্রমাগত আত্মসাৎ করে ফেলেছি। ফলে রাষ্ট্রে আজ সাম্যের পরিবর্তে প্রভু-ক্রীতদাসের অবস্থান নিশ্চিত হচ্ছে। আর মানবিক মর্যাদা অহরহ বিনষ্ট হচ্ছে রাষ্ট্রের দ্বারা। জনগণ যে রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য লড়াই-আত্মদান করেছিল, সে রাষ্ট্র আজ জনগণের প্রতিপক্ষ। জনগণের জীবন হরণে রাষ্ট্র নিজেই তৎপর ও উৎসাহী। আর সামাজিক সুবিচার তো নির্বাসিত। শাসকদের অহরহ ক্ষমতার লালসা মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। এ স্বপ্ন পূরণে যে ধরনের রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার দরকার তা আজো আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। দলতন্ত্র-সামরিকতন্ত্র এবং ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ব্যবস্থাপনা স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে বড় ধরনের বাধা।
বাংলাদেশ এখন মৃত্যুর উপত্যকা। এখানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডÑ অকাতরে হত্যাকাণ্ডÑ খেলার ছলে ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে নিজ দলীয় লোককে হত্যাকাণ্ডÑ জায়গা দখলের জন্য ঘরে তালা লাগিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা বা হত্যাকাণ্ড নিয়মিত চলছে। সরকার এর কোনো প্রতিকার করতে পারছে না। আর সরকার এসব নিয়ে উদ্বিগ্নও নয়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের কূটকৌশল সরকারের প্রধান করণীয় কাজ। জনগণ তাদের কাছে অপ্রয়োজন এবং মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে সস্তা মানুষের জীবন। সুতরাং অদূরভবিষ্যতে বাংলাদেশ হবে মানবিক বিপর্যয়খ্যাত দেশ। ধ্বংসগ্রস্ত মানবতার দেশ। রাষ্ট্রীয়, সিভিল, নন সিভিল ও সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে দুর্বল বা দলীয়করণ ও নিঃশেষ করা হচ্ছেÑ নৃশংস করা হচ্ছেÑ দুর্নীতিগ্রস্ত করা হচ্ছে তাতে বাংলাদেশ চরম ঝুঁকিতে পড়বে। একটি রাষ্ট্র টিকে থাকে তার নৈতিকতা দিয়ে, যেটি বর্তমান সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন এবং শাসন কাঠামোর মৌলিক পরিবর্তন। এ প্রশ্নে আমাদের দাবি হচ্ছে-
জাতীয় সংসদ হবে ‘দ্বিকবিশিষ্ট’। ‘নিম্নক’ এবং ‘উচ্চক’ নিয়ে ‘দুইক’ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। ‘উচ্চক’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পালন করবে। এক মানুষের দুই ভোট থাকবে। অঞ্চলভিত্তিক (যা এখন আছে) ও পেশাভিত্তিক।
ফেডারেল পদ্ধতির কেন্দ্রীয় সরকার থাকবে।
বাংলাদেশে ৮-৯টি প্রদেশ গঠন করতে হবে। প্রত্যেক প্রদেশের নির্বাচিত ‘প্রাদেশিক পরিষদ’ এবং ‘প্রাদেশিক সরকার থাকবে এবং একজন মুখ্যমন্ত্রীসহ সাত সদস্যের মন্ত্রিসভা থাকবে। ১৫০ সদস্যবিশিষ্ট প্রাদেশিক পরিষদ (সংসদ) গঠিত হবে। বাংলাদেশ অনেক জাতিসত্তার দেশ। অতএব ‘ুদ্র জাতিসত্তাগুলোর’ সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। একটি প্রদেশ অবশ্যই ুদ্র জাতিসত্তার নাগরিকদের নিয়ে গঠন করতে হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত ুদ্র জাতিসত্তার সদস্যদের জন্য ‘আঞ্চলিক শাসন’ এর ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও কৃষ্টির বিকাশ ঘটাতে হবে। রাষ্ট্রের সব নাগরিকের সম-অধিকার ছাড়াও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পিছিয়ে থাকা এসব মানুষকে রাষ্ট্রের সব মানুষের সমপর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।
১০-২০ বছরের জন্য ‘জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ গঠন করতে হবে।
প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ পৃথক ও সাংবিধানিক আদালত গঠন করতে হবে।
স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আর সচিবালয় ও বিচার বিভাগীয় কাউন্সিল করে বিচারক নিয়োগ দিতে হবে।
প্রবাসীদের বিনিয়োগের জন্য ‘উপজেলা শিল্প এলাকা’ বা শিল্পাঞ্চল জোন ও জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল গঠন করে। বাজেটে প্রদেশের অর্থ প্রাদেশিক সরকারে কাছে অর্পণ করতে হবে।
জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় সব সম্পদ ব্যবহার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
‘উপআঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট’ গঠন করতে হবে।
বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করাÑ ধারণ করা দরকার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক আদর্শিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা জরুরি। ক্ষমতার উন্মত্ত রাজনীতি বিদায় করতে হবে। রাষ্ট্রকে দলীয় ও ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করার অপরাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের আদর্শ ও চেতনাভিত্তিক সংবিধান প্রণয়ন করাÑ স্বাধীন দেশের উপযোগী আইন ও শাসন-প্রশাসন পদ্ধতি প্রণয়ন করা একান্ত প্রয়োজন।
বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দেশ; কিন্তু বিনষ্ট করে দিচ্ছে দল-পরিবার-গোষ্ঠী দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি তথা ক্ষমতাকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতের পচা দুর্গন্ধময়-নষ্টভ্রষ্ট পুরনো রাজনীতি। দলীয় স্বার্থকেন্দ্রিক রাজনীতি জনগণের ঐক্যকে বিনষ্ট করেÑ জনগণের সৃজনশীলতাকে দমিয়ে রাখে এবং জনগণের আকাক্সাকে উপেক্ষা করে। সুতরাং সম্পদ থাকলেও তা জনগণের কল্যাণকর কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সুশাসনের অভাবে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বর্তমান সরকার হত্যা ও ধ্বংস করে দিয়েছে। ক্ষমতা রক্ষায় ব্যতিব্যস্ত সরকার জনগণের কাছে ভোটের জন্য যাওয়ার নৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। সুতরাং সরকার জনগণ নয় অস্ত্র-সন্ত্রাস পেশি ও বিদেশী শক্তির ওপর নির্ভরশীল। সরকার তার নিজের পাপেই যেকোনো সময় অতলে তলিয়ে যাবেÑ এটি সময়ের ব্যাপার। ইতিহাসের শিক্ষা এমনই নিষ্ঠুর ও নির্মম।
ক্ষমতার উগ্র রাজনীতি মানুষের মূল্যবোধ-নৈতিকতাকে কবর দিয়ে দিয়েছে। মানুষের মনে ক্ষোভ-প্রতিহিংসা, ঘৃণা ও জিঘাংসার জন্ম দিচ্ছে। এ আত্মঘাতী রাজনীতি অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
আদর্শভিত্তিক মানবিক সমাজ গঠনের পথ অনুসন্ধান করা, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন করাÑ মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগ্রত করা উচিত। সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি ও সাহস নিয়ে অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন, ঘুষ, দুর্নীতি, নিষ্ঠুর নির্মমতা, সন্ত্রাস, দুঃশাসন, মিথ্যা, অমানবিকতার বিরুদ্ধে ৫২, ৬৯ ও ৭১-এর মতো রাজপথে নামতে হবে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাও কম দায়ী নয়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চরম ত্রুটিপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক। আমাদের শিক্ষায় ছাত্রদের অর্থমুখী-সম্পদমুখী অভিযাত্রায় শামিল করে। মানবিক বা নৈতিকতামুখী অভিযাত্রায় শামিল করতে ব্যর্থ। ফলে উচ্চশিক্ষিত একজনকে ভাড়াটে খুনি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে অতি সহজে। নারায়ণগঞ্জে একজনকে খুন করার টাকা পেলেও ভাড়াটেরা বেশি উৎসাহী হয়ে ১০ জনকে খুন করে ফেলেছে।
এসব থেকে বাঁচতে হলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের দিকে তাকাতে হবে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ যেন স্বাধীন সার্বভৌম দেশই থাকে। রাষ্ট্রক্ষমতার অতি লোভে যেন কারো অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত না হয়, যা সব আত্মদানকে ব্যর্থ করে দেবে।
যে দেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছিনতাই হয়Ñ যে দেশে মিথ্যা কৃতিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য দলীয় বা সরকারি ইতিহাস বিনির্মাণ হয়, যেখানে স্বাধীনতার রূপকার সিরাজুল আলম খানসহ মুক্তিযুদ্ধের মূলনায়কেরা উপেক্ষিত সেখানে স্বপ্ন বিনির্মাণের স্বপ্ন বলতে ইচ্ছে হয় না।
শোষণমুক্ত সমাজ, গণতান্ত্রিক অসম্প্রদায়িক উচ্চতর মানবিক সমৃদ্ধিশালী একটা সমাজ বিনির্মাণ উপযোগী রাষ্ট্র হবে বাংলাদেশ, আমি সেই স্বপ্নই দেখছি।
লেখক : রাজনীতিক
বাংলাদেশ এখন মৃত্যুর উপত্যকা। এখানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডÑ অকাতরে হত্যাকাণ্ডÑ খেলার ছলে ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে নিজ দলীয় লোককে হত্যাকাণ্ডÑ জায়গা দখলের জন্য ঘরে তালা লাগিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা বা হত্যাকাণ্ড নিয়মিত চলছে। সরকার এর কোনো প্রতিকার করতে পারছে না। আর সরকার এসব নিয়ে উদ্বিগ্নও নয়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের কূটকৌশল সরকারের প্রধান করণীয় কাজ। জনগণ তাদের কাছে অপ্রয়োজন এবং মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে সস্তা মানুষের জীবন। সুতরাং অদূরভবিষ্যতে বাংলাদেশ হবে মানবিক বিপর্যয়খ্যাত দেশ। ধ্বংসগ্রস্ত মানবতার দেশ। রাষ্ট্রীয়, সিভিল, নন সিভিল ও সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে দুর্বল বা দলীয়করণ ও নিঃশেষ করা হচ্ছেÑ নৃশংস করা হচ্ছেÑ দুর্নীতিগ্রস্ত করা হচ্ছে তাতে বাংলাদেশ চরম ঝুঁকিতে পড়বে। একটি রাষ্ট্র টিকে থাকে তার নৈতিকতা দিয়ে, যেটি বর্তমান সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন এবং শাসন কাঠামোর মৌলিক পরিবর্তন। এ প্রশ্নে আমাদের দাবি হচ্ছে-
জাতীয় সংসদ হবে ‘দ্বিকবিশিষ্ট’। ‘নিম্নক’ এবং ‘উচ্চক’ নিয়ে ‘দুইক’ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। ‘উচ্চক’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পালন করবে। এক মানুষের দুই ভোট থাকবে। অঞ্চলভিত্তিক (যা এখন আছে) ও পেশাভিত্তিক।
ফেডারেল পদ্ধতির কেন্দ্রীয় সরকার থাকবে।
বাংলাদেশে ৮-৯টি প্রদেশ গঠন করতে হবে। প্রত্যেক প্রদেশের নির্বাচিত ‘প্রাদেশিক পরিষদ’ এবং ‘প্রাদেশিক সরকার থাকবে এবং একজন মুখ্যমন্ত্রীসহ সাত সদস্যের মন্ত্রিসভা থাকবে। ১৫০ সদস্যবিশিষ্ট প্রাদেশিক পরিষদ (সংসদ) গঠিত হবে। বাংলাদেশ অনেক জাতিসত্তার দেশ। অতএব ‘ুদ্র জাতিসত্তাগুলোর’ সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। একটি প্রদেশ অবশ্যই ুদ্র জাতিসত্তার নাগরিকদের নিয়ে গঠন করতে হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত ুদ্র জাতিসত্তার সদস্যদের জন্য ‘আঞ্চলিক শাসন’ এর ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও কৃষ্টির বিকাশ ঘটাতে হবে। রাষ্ট্রের সব নাগরিকের সম-অধিকার ছাড়াও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পিছিয়ে থাকা এসব মানুষকে রাষ্ট্রের সব মানুষের সমপর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।
১০-২০ বছরের জন্য ‘জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ গঠন করতে হবে।
প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ পৃথক ও সাংবিধানিক আদালত গঠন করতে হবে।
স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আর সচিবালয় ও বিচার বিভাগীয় কাউন্সিল করে বিচারক নিয়োগ দিতে হবে।
প্রবাসীদের বিনিয়োগের জন্য ‘উপজেলা শিল্প এলাকা’ বা শিল্পাঞ্চল জোন ও জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল গঠন করে। বাজেটে প্রদেশের অর্থ প্রাদেশিক সরকারে কাছে অর্পণ করতে হবে।
জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় সব সম্পদ ব্যবহার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
‘উপআঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট’ গঠন করতে হবে।
বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করাÑ ধারণ করা দরকার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক আদর্শিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা জরুরি। ক্ষমতার উন্মত্ত রাজনীতি বিদায় করতে হবে। রাষ্ট্রকে দলীয় ও ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করার অপরাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের আদর্শ ও চেতনাভিত্তিক সংবিধান প্রণয়ন করাÑ স্বাধীন দেশের উপযোগী আইন ও শাসন-প্রশাসন পদ্ধতি প্রণয়ন করা একান্ত প্রয়োজন।
বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দেশ; কিন্তু বিনষ্ট করে দিচ্ছে দল-পরিবার-গোষ্ঠী দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি তথা ক্ষমতাকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতের পচা দুর্গন্ধময়-নষ্টভ্রষ্ট পুরনো রাজনীতি। দলীয় স্বার্থকেন্দ্রিক রাজনীতি জনগণের ঐক্যকে বিনষ্ট করেÑ জনগণের সৃজনশীলতাকে দমিয়ে রাখে এবং জনগণের আকাক্সাকে উপেক্ষা করে। সুতরাং সম্পদ থাকলেও তা জনগণের কল্যাণকর কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সুশাসনের অভাবে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বর্তমান সরকার হত্যা ও ধ্বংস করে দিয়েছে। ক্ষমতা রক্ষায় ব্যতিব্যস্ত সরকার জনগণের কাছে ভোটের জন্য যাওয়ার নৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। সুতরাং সরকার জনগণ নয় অস্ত্র-সন্ত্রাস পেশি ও বিদেশী শক্তির ওপর নির্ভরশীল। সরকার তার নিজের পাপেই যেকোনো সময় অতলে তলিয়ে যাবেÑ এটি সময়ের ব্যাপার। ইতিহাসের শিক্ষা এমনই নিষ্ঠুর ও নির্মম।
ক্ষমতার উগ্র রাজনীতি মানুষের মূল্যবোধ-নৈতিকতাকে কবর দিয়ে দিয়েছে। মানুষের মনে ক্ষোভ-প্রতিহিংসা, ঘৃণা ও জিঘাংসার জন্ম দিচ্ছে। এ আত্মঘাতী রাজনীতি অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
আদর্শভিত্তিক মানবিক সমাজ গঠনের পথ অনুসন্ধান করা, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন করাÑ মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগ্রত করা উচিত। সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি ও সাহস নিয়ে অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন, ঘুষ, দুর্নীতি, নিষ্ঠুর নির্মমতা, সন্ত্রাস, দুঃশাসন, মিথ্যা, অমানবিকতার বিরুদ্ধে ৫২, ৬৯ ও ৭১-এর মতো রাজপথে নামতে হবে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাও কম দায়ী নয়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চরম ত্রুটিপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক। আমাদের শিক্ষায় ছাত্রদের অর্থমুখী-সম্পদমুখী অভিযাত্রায় শামিল করে। মানবিক বা নৈতিকতামুখী অভিযাত্রায় শামিল করতে ব্যর্থ। ফলে উচ্চশিক্ষিত একজনকে ভাড়াটে খুনি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে অতি সহজে। নারায়ণগঞ্জে একজনকে খুন করার টাকা পেলেও ভাড়াটেরা বেশি উৎসাহী হয়ে ১০ জনকে খুন করে ফেলেছে।
এসব থেকে বাঁচতে হলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের দিকে তাকাতে হবে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ যেন স্বাধীন সার্বভৌম দেশই থাকে। রাষ্ট্রক্ষমতার অতি লোভে যেন কারো অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত না হয়, যা সব আত্মদানকে ব্যর্থ করে দেবে।
যে দেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছিনতাই হয়Ñ যে দেশে মিথ্যা কৃতিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য দলীয় বা সরকারি ইতিহাস বিনির্মাণ হয়, যেখানে স্বাধীনতার রূপকার সিরাজুল আলম খানসহ মুক্তিযুদ্ধের মূলনায়কেরা উপেক্ষিত সেখানে স্বপ্ন বিনির্মাণের স্বপ্ন বলতে ইচ্ছে হয় না।
শোষণমুক্ত সমাজ, গণতান্ত্রিক অসম্প্রদায়িক উচ্চতর মানবিক সমৃদ্ধিশালী একটা সমাজ বিনির্মাণ উপযোগী রাষ্ট্র হবে বাংলাদেশ, আমি সেই স্বপ্নই দেখছি।
লেখক : রাজনীতিক
No comments