সত্যের সঙ্গে প্রতিদিন by আলমগীর মহিউদ্দিন
নয়া দিগন্তের জন্মক্ষণের অনুভূতি সম্ভবত শুধু কবি ফররুখ আহমদের ভাষাতেই বলা সম্ভব। ‘নতুন পানিতে সফর এবার, হে মাঝি সিন্দবাদ’ আর ‘মোরা নির্ভীক সমুদ্রস্রোতে দাঁড় ফেলি বারো মাস। ...নতুন পানিতে হাল খুলে দাও, হে মাঝি সিন্দবাদ।’ যাত্রাটা এক যুগ আগে এমন উৎসাহ, উদ্দীপনা ও প্রতিজ্ঞা নিয়ে শুরু হয়েছিল। কাফেলায় ছিল যুবা-বৃদ্ধ-প্রজ্ঞার অপূর্ব সমাবেশ। তারা কখনো হাল বেঁধে ফেলেননি। খোলা হালে হয়তোবা শক্তির জোগান কখনো শ্লথ হয়েছে। আজকে পেছন ফিরে দেখতে গিয়ে বলতেই হয়, স্বীকার করতেই হয়, ইচ্ছার অপূর্ণতা না থাকলেও, প্রকাশনায় বাধা-বিপত্তির কথা তেমনটি যেন স্মরণ করা হয়নি। তাই হয়তো বাধাগুলো শ্বাপদের মতো যখন এগিয়ে এসেছে, তখন যাত্রাকে বিঘিœত করেছে। সংবাদপত্রের যাত্রার প্রথম রসদ সত্য কথন। পাঠক এর সবচেয়ে বড় বোদ্ধা পরীক্ষক। সত্য কখনো যদি সংবাদপত্র পাঠকের বিচারে উত্তীর্ণ হয়, সেটাই তার পরম পাওয়া এবং সত্য বিচারের শ্রেষ্ঠ মানদণ্ড। নয়া দিগন্ত বারবার সে মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাই পাঠকের কাছে আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। তবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও, আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পালনে সাফল্যে সন্তুষ্ট নই। আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল, ‘সত্যের সঙ্গে প্রতিদিন’। এ দেশের প্রধান কবি আল মাহমুদ শব্দবন্ধনটি তৈরি করে দিয়েছিলেন।
তবে সব সত্যের সাথে থাকা এ যুগে বিরল। বিশেষ করে যদি জার্মানির বহুল নিন্দিত ক্ষমতাধর হিটলারের রাষ্ট্র পরিচালন নীতি স্মরণ করা যায়। হিটলারকে সবাই নিন্দা করে, অথচ তার নীতি প্রতিফলিত হচ্ছে সর্বত্র, বিশেষ করে গণতন্ত্রের দাবিদার স্বৈরাচারী ক্ষমতাবানেরা এর অসামান্য অনুসারী। হিটলারের পঞ্চদর্শনের সবক’টিই তারা সবাই নিজের মতো করে রূপদান করছে। ফলে হিটলারের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হচ্ছে সারা বিশ্বে প্রতিদিন। পঞ্চদর্শনগুলো হলোÑ প্রশাসন, সংবাদমাধ্যম, শিক্ষা, বিচার ও ধর্ম পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করো, প্রকাশ্যে এবং পরোক্ষভাবে। আর ক্ষমতায় থেকে কখনো সত্যাশ্রয়ীর পরিচ্ছদ পরিধান কোরো না। তবে কখনো ছোট মিথ্যা বলবে না, কারণ জনগণ ছোট ছোট মিথ্যা বলে। তাই ধরা পড়ে যাবে। মিথ্যা হতে হবে বিশাল, আর বলতে হবে অবিরত। কোনো আলোচনা এ বিষয়ে চলতে দেয়া যাবে না। বিশেষ করে সংবাদ-শিক্ষা-বিচার বিভাগকে বিশেষ চাতুর্যের সাথে নিয়ন্ত্রণ করলে জনগণকে নিয়ে চিন্তার কারণ থাকবে না। কেননা অবাধ তথ্যপ্রবাহে কিছু সত্য চলে আসবেই। তাই তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ হতে হবে সর্বপ্রধান কর্মপন্থা। হিটলারের এ দর্শন একবিংশ শতকে যেন আরো প্রকট ভাবে নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে শাসক ও ক্ষমতাবানেরা রূপায়িত করছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে নয়া দিগন্তের মতো সব সংবাদমাধ্যমকে অবশ্যই সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হয়। তবে আজকের যুগের পাঠকেরা অনেক সংবেদনশীল। একবার সমুদ্রতীর এলাকায় এক পাঠক টেলিফোন করে একটি ক্ষমতাসীন পরিপোষিত খবরের কাগজের এক রিপোর্ট পড়ে শোনালেন। জানতে চাইলেন, নয়া দিগন্ত কেন সে খবরের এক অংশ ছাপল না। সে অংশে সেই খবরের কাগজ ক্ষমতাবানদের মৃদু নিন্দা করেছে। পাঠক অবশ্য স্বীকার করলেন, নয়া দিগন্ত যতটুকু লিখেছে, তা সত্য এবং সে অংশটুকু ওই খবরের কাগজ দায়সারাভাবে ছুঁয়েছে মাত্র। পাঠককে বলা হলো, দিগন্ত সত্যটুকু বলতে চায়, তার প্রতিশ্রুতি অনুসারে; নিন্দা বা সমালোচনা করে যাত্রাভঙ্গ করতে চায় না। পাঠক বললেন, ‘আপনাদের সাথে একমত। অন্তত কিছু হলেও কিছু সত্যের দেখাতো পাওয়া যাচ্ছে।’ পাঠকের সংবেদনশীলতা আমাদের মুগ্ধ করল, বিশেষ করে তার সহানুভূতিশীল সমর্থন।
বিখ্যাত মার্কিন লেখক ও সাংবাদিক ক্রিস হেজেস সম্প্রতি গার্ডিয়ানে লিখেছেন, ‘বিশ্বে স্বাধীন ও মুক্ত সংবাদমাধ্যম এখন একটা পৌরাণিক কাহিনী।’ তিনি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংবাদমাধ্যমের আস্থা বর্ণনা করে এ মন্তব্য করেছেন। এসব দেশের সংবাদপত্র দেখে যদি ক্রিসের এমন ভাবনা হয়, তাহলে তিনি বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতা নিয়ে কী মন্তব্য করবেন। কারণ এখনো পশ্চিমা বিশ্বের এসব দেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ঈর্ষণীয়।
বিশ্বে দু’টি সংস্থা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করে এবং তাদের বার্ষিক স্থান নির্ণয় করে। এরা হলো যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিডম হাউজ এবং ফ্রান্সের রিপোর্টার্স উইদাউট ফ্রন্ট্রিয়ার। এদের অনুসন্ধান অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থা ‘আংশিক মুক্ত’ (পার্টলি ফ্রি’) এবং ক্রমানুসারে ১৭৯টি দেশের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে ১৪০-এর নিচে এবং কাছাকাছি রেখেছে। তবে কয়েক বছর ধরে ফিনল্যান্ড, হল্যান্ড ও নরওয়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আর তুর্কমেনিস্তান, উত্তর কোরিয়া ও ইরিত্রিয়া শেষ তিনটি স্থান দখল করে আছে। এ দু’টি সংস্থাই বলেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সারা বিশ্বে গত বছর খর্ব হয়। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই এই গতি ছিল সবচেয়ে বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রচয়িতা ও রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসন লিখেছিলেন, “The only security of all is in a free press” আর তাদের আরেক রাষ্ট্রপতি আদলাই স্টিভেনশন বলেছেন, “The free press is the mother of all our liberties and of our progress.” কেননা বিখ্যাত আইনজ্ঞ William E Borah বলেছেন, “Without unfettered press, without liberty of speech, all outward forms and structures of free institutions are a sham, a pretense_ the sheerest mockery”. নয়া দিগন্ত এই সত্য বলার চেষ্টায় সর্বদা রত।
আমাদের চেষ্টায় যে অগণিত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতা, পরিবেশক ও হকারেরা সাহায্য ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাদের সাথে আন্তরিক একাত্মতা প্রকাশ করছি, শুধু ধন্যবাদ অত্যন্ত অপ্রতুল।
তবে সব সত্যের সাথে থাকা এ যুগে বিরল। বিশেষ করে যদি জার্মানির বহুল নিন্দিত ক্ষমতাধর হিটলারের রাষ্ট্র পরিচালন নীতি স্মরণ করা যায়। হিটলারকে সবাই নিন্দা করে, অথচ তার নীতি প্রতিফলিত হচ্ছে সর্বত্র, বিশেষ করে গণতন্ত্রের দাবিদার স্বৈরাচারী ক্ষমতাবানেরা এর অসামান্য অনুসারী। হিটলারের পঞ্চদর্শনের সবক’টিই তারা সবাই নিজের মতো করে রূপদান করছে। ফলে হিটলারের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হচ্ছে সারা বিশ্বে প্রতিদিন। পঞ্চদর্শনগুলো হলোÑ প্রশাসন, সংবাদমাধ্যম, শিক্ষা, বিচার ও ধর্ম পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করো, প্রকাশ্যে এবং পরোক্ষভাবে। আর ক্ষমতায় থেকে কখনো সত্যাশ্রয়ীর পরিচ্ছদ পরিধান কোরো না। তবে কখনো ছোট মিথ্যা বলবে না, কারণ জনগণ ছোট ছোট মিথ্যা বলে। তাই ধরা পড়ে যাবে। মিথ্যা হতে হবে বিশাল, আর বলতে হবে অবিরত। কোনো আলোচনা এ বিষয়ে চলতে দেয়া যাবে না। বিশেষ করে সংবাদ-শিক্ষা-বিচার বিভাগকে বিশেষ চাতুর্যের সাথে নিয়ন্ত্রণ করলে জনগণকে নিয়ে চিন্তার কারণ থাকবে না। কেননা অবাধ তথ্যপ্রবাহে কিছু সত্য চলে আসবেই। তাই তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ হতে হবে সর্বপ্রধান কর্মপন্থা। হিটলারের এ দর্শন একবিংশ শতকে যেন আরো প্রকট ভাবে নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে শাসক ও ক্ষমতাবানেরা রূপায়িত করছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে নয়া দিগন্তের মতো সব সংবাদমাধ্যমকে অবশ্যই সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হয়। তবে আজকের যুগের পাঠকেরা অনেক সংবেদনশীল। একবার সমুদ্রতীর এলাকায় এক পাঠক টেলিফোন করে একটি ক্ষমতাসীন পরিপোষিত খবরের কাগজের এক রিপোর্ট পড়ে শোনালেন। জানতে চাইলেন, নয়া দিগন্ত কেন সে খবরের এক অংশ ছাপল না। সে অংশে সেই খবরের কাগজ ক্ষমতাবানদের মৃদু নিন্দা করেছে। পাঠক অবশ্য স্বীকার করলেন, নয়া দিগন্ত যতটুকু লিখেছে, তা সত্য এবং সে অংশটুকু ওই খবরের কাগজ দায়সারাভাবে ছুঁয়েছে মাত্র। পাঠককে বলা হলো, দিগন্ত সত্যটুকু বলতে চায়, তার প্রতিশ্রুতি অনুসারে; নিন্দা বা সমালোচনা করে যাত্রাভঙ্গ করতে চায় না। পাঠক বললেন, ‘আপনাদের সাথে একমত। অন্তত কিছু হলেও কিছু সত্যের দেখাতো পাওয়া যাচ্ছে।’ পাঠকের সংবেদনশীলতা আমাদের মুগ্ধ করল, বিশেষ করে তার সহানুভূতিশীল সমর্থন।
বিখ্যাত মার্কিন লেখক ও সাংবাদিক ক্রিস হেজেস সম্প্রতি গার্ডিয়ানে লিখেছেন, ‘বিশ্বে স্বাধীন ও মুক্ত সংবাদমাধ্যম এখন একটা পৌরাণিক কাহিনী।’ তিনি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংবাদমাধ্যমের আস্থা বর্ণনা করে এ মন্তব্য করেছেন। এসব দেশের সংবাদপত্র দেখে যদি ক্রিসের এমন ভাবনা হয়, তাহলে তিনি বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতা নিয়ে কী মন্তব্য করবেন। কারণ এখনো পশ্চিমা বিশ্বের এসব দেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ঈর্ষণীয়।
বিশ্বে দু’টি সংস্থা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করে এবং তাদের বার্ষিক স্থান নির্ণয় করে। এরা হলো যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিডম হাউজ এবং ফ্রান্সের রিপোর্টার্স উইদাউট ফ্রন্ট্রিয়ার। এদের অনুসন্ধান অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থা ‘আংশিক মুক্ত’ (পার্টলি ফ্রি’) এবং ক্রমানুসারে ১৭৯টি দেশের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে ১৪০-এর নিচে এবং কাছাকাছি রেখেছে। তবে কয়েক বছর ধরে ফিনল্যান্ড, হল্যান্ড ও নরওয়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আর তুর্কমেনিস্তান, উত্তর কোরিয়া ও ইরিত্রিয়া শেষ তিনটি স্থান দখল করে আছে। এ দু’টি সংস্থাই বলেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সারা বিশ্বে গত বছর খর্ব হয়। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই এই গতি ছিল সবচেয়ে বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রচয়িতা ও রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসন লিখেছিলেন, “The only security of all is in a free press” আর তাদের আরেক রাষ্ট্রপতি আদলাই স্টিভেনশন বলেছেন, “The free press is the mother of all our liberties and of our progress.” কেননা বিখ্যাত আইনজ্ঞ William E Borah বলেছেন, “Without unfettered press, without liberty of speech, all outward forms and structures of free institutions are a sham, a pretense_ the sheerest mockery”. নয়া দিগন্ত এই সত্য বলার চেষ্টায় সর্বদা রত।
আমাদের চেষ্টায় যে অগণিত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতা, পরিবেশক ও হকারেরা সাহায্য ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাদের সাথে আন্তরিক একাত্মতা প্রকাশ করছি, শুধু ধন্যবাদ অত্যন্ত অপ্রতুল।
No comments