ব্যবসায়ীদেরও আসতে হবে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে
মঙ্গলবার ‘ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার আলোচনা সভায় এসেছে, বাংলাদেশে রাজনীতি এখন মুনাফার হাতিয়ার। ফলে ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতির দিকে ঝুঁকছেন ব্যবসায়ীরা। ওই আলোচনাতেই বলা হয়েছে, বর্তমান সংসদের ৬৯ শতাংশ সদস্য ব্যবসায়ী রাজনীতিক। ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে আসা নতুন কিছু নয়। তবে আগে তা ছিল সংখ্যায় অতি অল্প। স্বৈরাচারী এরশাদের আমলে রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের নাম লেখানোর প্রবণতা বৃদ্ধির ধারা নব্বই-পরবর্তী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ব্যাপক মাত্রা পায়। যেনতেনভাবে নির্বাচনে জেতার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রাসী মনোভাবের কারণে দলের নেতৃত্বের বিকাশ ও আদর্শিকতার দিকটি এখন হয়ে পড়েছে গৌণ। এটা কোনো লোকোছাপা বিষয় নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর বিপুল টাকার উৎস মূলত ব্যবসায়ীরা। নির্বাচনী বাজেটেরও সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের জোগানদার তারা। আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থিকে হারাতে চায় প্রচুর টাকা। সেটা কালো কি সাদা বড় কথা নয়। ফলে প্রকৃত রাজনীতিবিদ অর্থ-বৈভবের কাছে বাদ পড়ে যান। এখন অর্থ যার মনোনয়ন তার। ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থায়নে স্বচ্ছতা আনয়নে জন-তহবিলের বিধান প্রবর্তন’ শীর্ষক ওই আলোচনায় একজন বক্তা তো বলেছেনই, রাজনীতিবিদ, ব্যবসা ও মুনাফা একাকার হয়ে গেছে; এগুলোর মধ্যে রয়েছে সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক। তার সঙ্গে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, রাজনীতি ও ব্যবসা একাকার হয়ে যাওয়ায় দিন দিন আমাদের রাজনীতি তার গণতান্ত্রিকতা হারাচ্ছে। ক্ষমতা ও স্বার্থের সংঘাত অনিবার্যণ হয়ে উঠেছে। রাজনীতির নিয়ামক হয়ে উঠছে অর্থ। এ থেকে বেরোতে হলে সবার আগে দরকার দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চার অনুশীলন। যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলে জনসমর্থন বাড়ানো। তা হলে নির্বাচনে জেতার জন্য ব্যবসায়ীদের অর্থের দিকে তীর্থের কাকের মতো হাঁ করে থাকতে হবে না দলগুলোকে। তবে কোনো ব্যবসায়ী রাজনীতিতে আসতে পারবেন না, এটা আমরা বলছি না। কিন্তু তাকে আসতে হবে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। রাজনীতিকে যেন তারা ব্যবসার হাতিয়ার করতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে।
No comments