অনুভূতি রক্ষার অধিকার by ডক্টর তুহিন মালিক
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হঠাৎ করেই একশ্রেণীর স্বঘোষিত নাস্তিকের আবির্ভাব ঘটেছে এ দেশে। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত তাদের চরম বিদ্বেষপূর্ণ ও ধৃষ্টতামূলক মন্তব্যে সারা দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে তীব্র আঘাত লেগেছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে গত বছর বিক্ষোভের সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটেছে অনেকের। অথচ এই ঘটনায় দীর্ঘ দিন পার হলেও আজ পর্যন্ত কাউকেই আইনের আওতায় নেয়া হয়নি। কিন্তু এ দেশে শত শত নির্দোষ আলেম ওলামা জেলের ভেতর কুখ্যাত অপরাধীদের সাথে বিনাবিচারে কারাভোগ করছেন। কী বিচিত্র আইনের শাসন! এ দেশে ব্যক্তির অবমাননা বা ছবি প্রদর্শন না করলে সংবিধানে তা মারাত্মক অপরাধ বলে গণ্য হয়। দেশে আদালতের প্রতি কোনো প্রকার বেয়াদবি বন্ধে রয়েছে কঠোর আদালত অবমাননার আইন। আমাদের রাজনৈতিক দলের প্রয়াত বা জীবিত নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো কটূক্তি ছারখার করে দেয় বিরোধী পরে নেতাকর্মীদের। রাস্তাঘাট বন্ধ করে গাড়িঘোড়া জ্বালিয়ে দেয়া হয় অহরহ। হরহামেশা মানহানির অভিযোগে কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের মামলা হচ্ছে কোর্ট-কাচারিতে। কিন্তু কেবল বিচার হয় না ইসলামের অবমাননার। বিষাক্ত সাপের ফণার মতো তেড়ে আসে তথাকথিত প্রগতিশীলরা, যখন রাসূলুল্লাহ সা:, পবিত্র কুরআন ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে জঘন্য অশ্লীল কটূক্তির বিচার চাওয়া হয় এ দেশে। ধনী-গরিব, ছোট-বড় সবার জন্য আইনের আশ্রয় ও প্রতিকার লাভের সাংবিধানিক ও আইনি অধিকার রয়েছে। অধিকার শুধু নেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম অবমাননার বিচার চাওয়ার। এই অধিকার চাওয়ার জায়গাটুকু আজ মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, যুদ্ধাপরাধ, রাজাকার এসব অসংখ্য বাক্যচক্রে আবদ্ধ। আমার সৃষ্টিকর্তার অপমানের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারব না, জীবনের চেয়ে প্রিয় নবীর অবমাননাকারীদের বিচার চাইতে পারব না, এটা কোন ধরনের মানবতা?
ধর্ম অবমাননার বিষয়টি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। জামায়াত-শিবির ছাড়াও এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। তাই ইসলাম ধর্মকে গালাগালি করে নাস্তিকদের এমন দুঃসাহস সাধারণ মুসলমানদের মারাত্মকভাবে আহত করে। রাসূলের বিরুদ্ধে এত জঘন্য অপপ্রচারের সাহস পশ্চিমা বিশ্বের ইসলামবিদ্বেষীরাও কখনো দেখায়নি। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ মুসলিম দেশ। অথচ একদল নাস্তিক মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধ, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে আল্লাহ, রাসূল সা: এবং ইসলামের বিরুদ্ধে সাঙ্ঘাতিক রকমের গা শিউরে ওঠা অশ্লীল অবমাননাকর প্রচারণা চালাচ্ছে। আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ সা: আল্লাহর সর্বোত্তম সৃষ্টি। তিনি সর্বোত্তম আদর্শের অধিকারী। সমকালীন কাফির-মুশরিকরা তাঁর বিরোধিতা করে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলেও তাঁর চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করার সাহস কেউ করেনি। অথচ ইসলামবিদ্বেষীদের প্ররোচনায় বর্তমানে মুসলিম নামধারী কিছু কুলাঙ্গার নাস্তিক রাসূলে পাক সা:-এর সাথে চরম বেয়াদবির দুঃসাহস দেখাচ্ছে।
যদিও আমাদের দেশে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন থেকে শুরু করে দণ্ডবিধির ২৯৫-২৯৮ ধারা, এমনকি আমাদের সংবিধানের ৩৯, ৪১ অনুচ্ছেদে রয়েছে ধর্মীয় অধিকার রক্ষাকবচ। তবে ধর্ম অবমাননা আইনের কথা উঠলেই ব্লাসফেমি আইনের গোষ্ঠী উদ্ধার করতে গোটা পশ্চিমা বিশ্ব উঠেপড়ে লাগে। অন্যের জন্য বৈধ হলেও ইসলামের অবমাননা রোধে ব্লাসফেমি আইন রুখতে জাতিসঙ্ঘে পর্যন্ত তারা কড়া নজরদারি করে রেখেছে। প্রবল বাধার মুখে কোনো মুসলিম দেশই ১২০ কোটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতি রক্ষার কোনো আইন করতে পারেনি জাতিসঙ্ঘে। গত বছর জাতিসঙ্ঘে মিসরের স্থায়ী প্রতিনিধি মোতাজ আহমাদিন খালিল ইসলাম ধর্মের অবমাননার নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছেন, জাতিসঙ্ঘ এই জঘন্য কাজকে অপরাধ বিবেচনা করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান জারি করলে কেউ এই অন্যায় করতে সাহস করবে না। তার মতে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার অজুহাতে ধর্মের অবমাননা করা একটি অগ্রহণযোগ্য অপরাধ। তিনি আরো বলেছেন ধর্মের অবমাননা করলে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা গুরুতর হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।
এ দিকে আমাদের দেশে সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় বসে একজন শিক্ষক যখন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে কটূক্তি করলে বিদ্যুৎগতিতে তার শাস্তি হয়, শাহবাগের বিরুদ্ধে ফেসবুকে হুমকি প্রদানের অপরাধে ফারাবিকে গ্রেফতার করে পর্যায়ক্রমে রিমান্ডে নেয়া হয়। অন্য দিকে মহান সৃষ্টিকর্তা ও মহানবীকে নিয়ে অশ্লীল ব্লগের জন্য কোনো বিচারতো দূরের কথা, তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ নামক দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ায় পড়ে এটি অসহায় হয়ে পড়েছে। কই, অন্যদের ব্যাপারে এর আগে তো কোনো তদন্ত বা প্রক্রিয়ার প্রয়োজন পড়েনি। শাহবাগের বিরুদ্ধে ব্লগগুলো সরকার দ্রুত সরিয়ে নিলেও আজ অবধি কোনো আঁচড় পড়েনি কোনো একটি নাস্তিক ব্লগের গায়ে। অথচ ২০১২ সালের জানুয়ারিতে এগুলো বন্ধে হাইকোর্টে একটি রিট পর্যন্ত হয়েছে। হাইকোর্ট এগুলো বন্ধের জন্য নির্দেশ দিলেও অদ্যাবধি তা মানা হয়নি।
বর্তমান সরকার ‘কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন করা হবে না’ মর্মে নির্বাচনী ওয়াদা করে ২০০৯ সালে মতায় আসে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০০৭ সালে ধর্ম অবমাননা আইন করবে বলে ইসলামি দলগুলোর সাথে একটি চুক্তি পর্যন্ত করে। অথচ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দল আওয়ামী লীগ অশুভ রাজনীতি ও কট্টর বামদের যাঁতাকলে পড়ে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবমাননার বিচারের দাবিকে তুচ্ছ রাজনীতির হিসাব-নিকাশের মধ্যে নিয়ে এসেছে। মানুষের ধর্মীয় অধিকার তার সাংবিধানিক অধিকার। সে অধিকার নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। সরকারকে মনে রাখতে হবে যে, এটা শুধুই ১৫ বা ১৬ কোটি মানুষের অধিকার নয় বরং বিশ্বের ১৪০ কোটি মুসলমানের অধিকার। তাই সরকারকে বলি, ভাত-কাপড়-নিরাপত্তা কিংবা পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস না দিতে পারেন, অন্ততপে আমাদের মহান সৃষ্টির্কতা ও প্রিয় নবীর সম্মান রার্থে আইন করে অপরাধীদের বিচার তো করতে পারেন। এতটুকু দাবিও কি আমরা সরকারের কাছে করতে পারি না?
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান করার অপরাধে এক তরুণকে জরিমানাসহ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে সাইবার অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনটি ২০০৬ সালের। কিন্তু ২০১৩ সালের ১৯ আগস্ট তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সংশোধিত এই আইনে ন্যূনতম সাত বছর ও সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড রাখা হয়। মূল আইনে জামিনের বিধান থাকলেও তা সংশোধন করে কয়েকটি অপরাধ জামিন অযোগ্য করা হয়।
কী বিচিত্র আইন! প্রধানমন্ত্রীর অবমাননায় সাত বছরের জেল। অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্ম অবমাননার কোনো বিচার বা শাস্তি হয় না এ দেশে। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের মনের ক্ষোভ আরো প্রচণ্ড আকার ধারণ করে মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর ঘটনায়। সরকার ও সরকারি দলের ধারাভাষ্যমতে লতিফ সিদ্দিকী অপরাধ করেছেন দু’টি। প্রথমত, তিনি দলের আদর্শ ও নীতিপরিপন্থী কাজ করেছেন এবং সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে কটূক্তি করেছেন বলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বলা হয়। দ্বিতীয়ত, সরকার ও সরকারি দলের তরফ থেকেও বলা হয় তিনি হজ ও তাবলিগ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে মুসলমানের মনে আঘাত দিয়েছেন। অথচ এ ক্ষেত্রে তার বিচার ও শাস্তি হয়েছে শুধু প্রথম অপরাধের জন্য। অর্থাৎ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও জয়কে কটূক্তি করার অপরাধে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে মন্ত্রিত্ব থেকেও অপসারণ করা হয়েছে। অথচ তার দ্বিতীয় অপরাধ যা ইসলাম ধর্ম, মহানবী সা:, হজ, তাবলিগ নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে, তার কোনো বিচার বা শাস্তি হয়নি। এখন তো এ নিয়ে সরকারি দলের কেউ কোনো টুঁ-শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করে না। প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান করার অপরাধে এক তরুণকে জরিমানাসহ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অথচ ইসলাম ধর্ম, মহানবী সা:কে কটূক্তি করার জন্য তার কোনো বিচার হলো না।
সে কারণে লতিফ সিদ্দিকীর মতো নাস্তিকরা গর্বভরে বলে, ‘প্রয়োজনে ধর্মদ্রোহী হবো, তবুও ক্ষমা চাইব না।’ প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে বিনীত আবেদন, দলের বিরুদ্ধে এবং আপনার ছেলের বিরুদ্ধে কটূক্তির শাস্তি দিয়ে আপনি দলের সম্মান রেখেছেন ঠিকই। কিন্তু আমাদের পবিত্র ধর্ম ও আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীর অপমানের বিচার করে প্রমাণ করুনÑ আপনার কটূক্তির চেয়ে বেশি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হচ্ছে ইসলাম ধর্ম ও আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীর বিরুদ্ধে কটূক্তির।
লেখক : সুপ্রিম কোর্টের আইনজ্ঞ ও
সংবিধান বিশেষজ্ঞ
ধর্ম অবমাননার বিষয়টি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। জামায়াত-শিবির ছাড়াও এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। তাই ইসলাম ধর্মকে গালাগালি করে নাস্তিকদের এমন দুঃসাহস সাধারণ মুসলমানদের মারাত্মকভাবে আহত করে। রাসূলের বিরুদ্ধে এত জঘন্য অপপ্রচারের সাহস পশ্চিমা বিশ্বের ইসলামবিদ্বেষীরাও কখনো দেখায়নি। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ মুসলিম দেশ। অথচ একদল নাস্তিক মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধ, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে আল্লাহ, রাসূল সা: এবং ইসলামের বিরুদ্ধে সাঙ্ঘাতিক রকমের গা শিউরে ওঠা অশ্লীল অবমাননাকর প্রচারণা চালাচ্ছে। আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ সা: আল্লাহর সর্বোত্তম সৃষ্টি। তিনি সর্বোত্তম আদর্শের অধিকারী। সমকালীন কাফির-মুশরিকরা তাঁর বিরোধিতা করে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলেও তাঁর চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করার সাহস কেউ করেনি। অথচ ইসলামবিদ্বেষীদের প্ররোচনায় বর্তমানে মুসলিম নামধারী কিছু কুলাঙ্গার নাস্তিক রাসূলে পাক সা:-এর সাথে চরম বেয়াদবির দুঃসাহস দেখাচ্ছে।
যদিও আমাদের দেশে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন থেকে শুরু করে দণ্ডবিধির ২৯৫-২৯৮ ধারা, এমনকি আমাদের সংবিধানের ৩৯, ৪১ অনুচ্ছেদে রয়েছে ধর্মীয় অধিকার রক্ষাকবচ। তবে ধর্ম অবমাননা আইনের কথা উঠলেই ব্লাসফেমি আইনের গোষ্ঠী উদ্ধার করতে গোটা পশ্চিমা বিশ্ব উঠেপড়ে লাগে। অন্যের জন্য বৈধ হলেও ইসলামের অবমাননা রোধে ব্লাসফেমি আইন রুখতে জাতিসঙ্ঘে পর্যন্ত তারা কড়া নজরদারি করে রেখেছে। প্রবল বাধার মুখে কোনো মুসলিম দেশই ১২০ কোটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতি রক্ষার কোনো আইন করতে পারেনি জাতিসঙ্ঘে। গত বছর জাতিসঙ্ঘে মিসরের স্থায়ী প্রতিনিধি মোতাজ আহমাদিন খালিল ইসলাম ধর্মের অবমাননার নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছেন, জাতিসঙ্ঘ এই জঘন্য কাজকে অপরাধ বিবেচনা করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান জারি করলে কেউ এই অন্যায় করতে সাহস করবে না। তার মতে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার অজুহাতে ধর্মের অবমাননা করা একটি অগ্রহণযোগ্য অপরাধ। তিনি আরো বলেছেন ধর্মের অবমাননা করলে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা গুরুতর হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।
এ দিকে আমাদের দেশে সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় বসে একজন শিক্ষক যখন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে কটূক্তি করলে বিদ্যুৎগতিতে তার শাস্তি হয়, শাহবাগের বিরুদ্ধে ফেসবুকে হুমকি প্রদানের অপরাধে ফারাবিকে গ্রেফতার করে পর্যায়ক্রমে রিমান্ডে নেয়া হয়। অন্য দিকে মহান সৃষ্টিকর্তা ও মহানবীকে নিয়ে অশ্লীল ব্লগের জন্য কোনো বিচারতো দূরের কথা, তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ নামক দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ায় পড়ে এটি অসহায় হয়ে পড়েছে। কই, অন্যদের ব্যাপারে এর আগে তো কোনো তদন্ত বা প্রক্রিয়ার প্রয়োজন পড়েনি। শাহবাগের বিরুদ্ধে ব্লগগুলো সরকার দ্রুত সরিয়ে নিলেও আজ অবধি কোনো আঁচড় পড়েনি কোনো একটি নাস্তিক ব্লগের গায়ে। অথচ ২০১২ সালের জানুয়ারিতে এগুলো বন্ধে হাইকোর্টে একটি রিট পর্যন্ত হয়েছে। হাইকোর্ট এগুলো বন্ধের জন্য নির্দেশ দিলেও অদ্যাবধি তা মানা হয়নি।
বর্তমান সরকার ‘কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন করা হবে না’ মর্মে নির্বাচনী ওয়াদা করে ২০০৯ সালে মতায় আসে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০০৭ সালে ধর্ম অবমাননা আইন করবে বলে ইসলামি দলগুলোর সাথে একটি চুক্তি পর্যন্ত করে। অথচ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দল আওয়ামী লীগ অশুভ রাজনীতি ও কট্টর বামদের যাঁতাকলে পড়ে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবমাননার বিচারের দাবিকে তুচ্ছ রাজনীতির হিসাব-নিকাশের মধ্যে নিয়ে এসেছে। মানুষের ধর্মীয় অধিকার তার সাংবিধানিক অধিকার। সে অধিকার নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। সরকারকে মনে রাখতে হবে যে, এটা শুধুই ১৫ বা ১৬ কোটি মানুষের অধিকার নয় বরং বিশ্বের ১৪০ কোটি মুসলমানের অধিকার। তাই সরকারকে বলি, ভাত-কাপড়-নিরাপত্তা কিংবা পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস না দিতে পারেন, অন্ততপে আমাদের মহান সৃষ্টির্কতা ও প্রিয় নবীর সম্মান রার্থে আইন করে অপরাধীদের বিচার তো করতে পারেন। এতটুকু দাবিও কি আমরা সরকারের কাছে করতে পারি না?
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান করার অপরাধে এক তরুণকে জরিমানাসহ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে সাইবার অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনটি ২০০৬ সালের। কিন্তু ২০১৩ সালের ১৯ আগস্ট তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সংশোধিত এই আইনে ন্যূনতম সাত বছর ও সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড রাখা হয়। মূল আইনে জামিনের বিধান থাকলেও তা সংশোধন করে কয়েকটি অপরাধ জামিন অযোগ্য করা হয়।
কী বিচিত্র আইন! প্রধানমন্ত্রীর অবমাননায় সাত বছরের জেল। অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্ম অবমাননার কোনো বিচার বা শাস্তি হয় না এ দেশে। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের মনের ক্ষোভ আরো প্রচণ্ড আকার ধারণ করে মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর ঘটনায়। সরকার ও সরকারি দলের ধারাভাষ্যমতে লতিফ সিদ্দিকী অপরাধ করেছেন দু’টি। প্রথমত, তিনি দলের আদর্শ ও নীতিপরিপন্থী কাজ করেছেন এবং সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে কটূক্তি করেছেন বলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বলা হয়। দ্বিতীয়ত, সরকার ও সরকারি দলের তরফ থেকেও বলা হয় তিনি হজ ও তাবলিগ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে মুসলমানের মনে আঘাত দিয়েছেন। অথচ এ ক্ষেত্রে তার বিচার ও শাস্তি হয়েছে শুধু প্রথম অপরাধের জন্য। অর্থাৎ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও জয়কে কটূক্তি করার অপরাধে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে মন্ত্রিত্ব থেকেও অপসারণ করা হয়েছে। অথচ তার দ্বিতীয় অপরাধ যা ইসলাম ধর্ম, মহানবী সা:, হজ, তাবলিগ নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে, তার কোনো বিচার বা শাস্তি হয়নি। এখন তো এ নিয়ে সরকারি দলের কেউ কোনো টুঁ-শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করে না। প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান করার অপরাধে এক তরুণকে জরিমানাসহ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অথচ ইসলাম ধর্ম, মহানবী সা:কে কটূক্তি করার জন্য তার কোনো বিচার হলো না।
সে কারণে লতিফ সিদ্দিকীর মতো নাস্তিকরা গর্বভরে বলে, ‘প্রয়োজনে ধর্মদ্রোহী হবো, তবুও ক্ষমা চাইব না।’ প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে বিনীত আবেদন, দলের বিরুদ্ধে এবং আপনার ছেলের বিরুদ্ধে কটূক্তির শাস্তি দিয়ে আপনি দলের সম্মান রেখেছেন ঠিকই। কিন্তু আমাদের পবিত্র ধর্ম ও আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীর অপমানের বিচার করে প্রমাণ করুনÑ আপনার কটূক্তির চেয়ে বেশি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হচ্ছে ইসলাম ধর্ম ও আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীর বিরুদ্ধে কটূক্তির।
লেখক : সুপ্রিম কোর্টের আইনজ্ঞ ও
সংবিধান বিশেষজ্ঞ
No comments