সময় কাউকে ছেড়ে কথা বলে না by মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক
‘সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না’ এটি অতি প্রাচীন একটি প্রবাদবাক্য। ইতোমধ্যে আমাদের মাঝ থেকে, তথা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রায় ৪৩টি বছর গত হয়ে গেছে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর অতি নিকটবর্তী। ত্যাগের মাস মহররম শুরু হয়ে গেছে। ৪৩টি বছরের স্বাধীন অস্তিত্বে, আমরা স্বাধীনতার মর্মার্থ কতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি সেটি নিশ্চিত নই। স্বাধীনতার মর্মার্থ, স্বাধীন চিন্তাচেতনা বিকাশের ক্ষেত্রে আগামী দিনগুলোতে পথ চলতে আমাদের সহায়তা করবে। এইদিকে প্রকৃতির গ্রীষ্ম, শরৎ ও হেমন্ত শেষ হয়ে শীতের আগমনী বার্তা পৌঁছাচ্ছে আমাদের ঘরে ঘরে উত্তরের জানালা দিয়ে। কিন্তু রাজনীতির আকাশে, গ্রীষ্মকাল তথা গরমের মওসুম নতুন করে শুরু হচ্ছে বলে অনুভব করছি। এই বছর শেষ হওয়ার পরপরই রাজনৈতিক উত্তাপ হঠাৎ করে বেড়ে যেতেই পারে। যে আঙ্গিকেই বলি না কেন, সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে। নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তথা আওয়ামী লীগ যেইরূপ ভদ্রজনোচিত রাজনৈতিক ওয়াদাগুলো দিয়েছিলেন, নির্বাচনের পর সেগুলো অস্বীকার করা হচ্ছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আবার প্রমাণ করতে চাচ্ছেন ওই রাজনৈতিক প্রবাদ বাক্যটি যথা : ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই’। অপরপক্ষে আমি মনে করি রাজনীতিতেও শেষ কথা বলে কিছু না কিছু থাকতেই হবে। তার ব্যাখ্যা এই কলামে একটুু পরে দিচ্ছি।
বর্তমান জামানায় যেই দিনপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার আমরা অনুসরণ করি, এখন থেকে এক হাজার বছর কিংবা দুই হাজার বছর আগে সময় দেখার জন্য এরূপ দিনপঞ্জিকা ছিল না। বড় বড় ঘটনাকে খুঁটি বা স্তম্ভ (ইংরেজি পরিভাষায় ল্যান্ডমার্ক ডেট) মনে করেই তার আগে বা পরে সময় মিলানো হতো। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা: মক্কা নগরীতে ইসলাম ধর্ম নবরূপে প্রচার শুরু করার আগে, আব্রাহা নামে একজন বাদশার বাহিনী কর্তৃক মক্কা নগরী আক্রান্ত হয়েছিল। আব্রাহার সেই বাহিনীকে পরাজিত হতে হয়েছিল। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত বিশাল একটি পাখির দলের কাছে, যেই পাখিগুলোর নাম ছিল আবাবিল। পবিত্র কুরআনের প্রায় শেষাংশে, ‘সূরা ফিল’-এ এর ইশারা পাওয়া যায়। ফিল-এর বাংলা অর্থ হাতি। আব্রাহার সেই সৈন্যবাহিনীর দলটিতে প্রচুর হাতি ছিল। প্রত্যেকটি হাতির পিঠে ছিল একাধিক লোক। সেই হাতি ও সৈন্যবাহিনী মক্কা নগরীতে প্রবেশ করার আগে এবং মক্কার বাসিন্দারা কোনো ধরনের প্রতিরোধ বা বাধা উপস্থাপন করার আগেই, আব্রাহা-বাহিনী এক অলৌকিক বাধার সম্মুখে পড়েছিল। আবাবিল পাখিগুলো তাদের প্রত্যেকের ঠোঁটে একটি ও দুই পায়ে দু’টি করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পাথরকণা নিয়ে আসমানে উড়ে আসে এবং আব্রাহার বাহিনীর ওপর ওই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পাথরকণা ওপর থেকে নিক্ষেপ করে। ওপর থেকে যখন এই পাথরকণাগুলো জমিনে পড়ে, তখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে পাথরগুলোর বেগ অতি প্রবল ও ক্ষীপ্র হয়। ফলে, ওই পাথর যে মানুষ ও হাতির ওপর পড়েছিল তার আঘাতেই অনেক সৈন্য তৎক্ষণাৎ মৃত্যুবরণ করে এবং হাতি বেসামাল হয়ে পড়ে। বেসামাল হাতিগুলো শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলে। তারা বিক্ষিপ্তভাবে ডানে-বামে এবং পেছনের দিকে ছুটতে থাকে। আব্রাহা বাহিনীর ওখানেই পরাজয় হয়ে যায়। আল্লাহ প্রদত্ত এই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার পর মক্কাবাসী ও আশপাশের লোকজন তাদের সময় কিংবা কোনো ঘটনার তারিখ নির্ণয় করার জন্য, এই হাতির যুদ্ধকে সূচক হিসেবে ব্যবহার করতেন।
ওপরের অনুচ্ছেদের ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনার অনুসরণেই বলছি, বাংলাদেশের ইতিহাসেও অনেকগুলো ঘটনা, দিন ও সময় বা কালকে বিভেদকারী বা পার্থক্যকারী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। স্বাধীনতার গুরুত্ব ও তাৎপর্য এবং বিশেষ করে বর্তমান তরুণ সমাজকে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে তাদের বাস্তব জীবনে ও চিন্তাচেতনার বিকাশ ঘটানোর কাজে এরূপ কিছু কিছু পার্থক্যকারী ঘটনা অবদান রাখে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি চরম লজ্জাকর ঘৃণিত বৈশিষ্ট্য হলো মিথ্যা প্রচার, অথবা ভদ্র ভাষায় বলতে গেলে, সত্যকে লুকানো। বর্তমানে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ ক্ষমতায় ছিল, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ ক্ষমতায় ছিল এবং সর্বশেষ কিস্তিতে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে আজ অবধি ক্ষমতায় আছে। এই তিনটি কিস্তি মিলালে সর্বমোট চার যোগ পাঁচ যোগ ছয় সমান প্রায় ১৫ বছর বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছে। এই ১৫ বছরের অনেক দুর্বলতাকে বা অপ্রিয় সত্যকে বর্তমান সরকার হয় অস্বীকার করে অথবা গোপন রাখে অথবা মিথ্যাভাবে প্রচার করে। অপরপক্ষে, এই ১৫ বছরের বাইরে অন্য সময় অন্যান্য দল ক্ষমতায় ছিল যাদের ব্যাপারে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ইচ্ছাকৃতভাবে প্রিয় সত্য কথাগুলোকে অস্বীকার করে বা বিকৃত করে এবং অপ্রিয় কথাগুলোকে অধিকতর বিকৃত করে রঙিনভাবে ফলাও করে প্রচার করে। অথচ যেকোনো একটি রাষ্ট্রের জনগণের মনমানসিকতার সঠিক বিকাশের স্বার্থে বিশেষত তরুণদের মনমানসিকতার উজ্জ্বল বিকাশের স্বার্থে ইতিহাসের সত্য অংশগুলো সবার জানা উচিত সঠিকভাবে। একটি রাষ্ট্রে বা সমাজে যখন জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তিরা মিথ্যাকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন বা অসত্য-প্রচারকে সহায়তা করেন, তখন রাষ্ট্রের কাঠামোগুলো, সমাজের স্তম্ভগুলো দুর্বল হতে থাকে। অসত্য লালনকারী বা অসত্য প্রচারকারী মনে করেন যে, তাদের মিথ্যাচার হয়তো কোনো দিন আবিষ্কৃত হবে না। কিন্তু কলামের শুরুতেই যে কথাটি লিখেছি, সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না তার সাথে এই কলামের এই স্থানে যোগ দিতে চাই, সময় কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। অতি সাম্প্রতিক ইতিহাস থেকে ছোট একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করছি।
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের কোনো একটি সময়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির সুপ্রিম কোর্টের সামনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইএসআই’-এর এককালীন প্রধান কর্মকর্তা আসাদ দুররানী একটি জবানবন্দী দেন। সেখানে তিনি কী বলেছেন বা কী বলেননি সেই কথা বাংলাদেশের রাজধানীতে গৌণ হয়ে গিয়েছিল এবং মুখ্য হয়ে উঠেছিল এই মর্মে যে, আসাদ দুররানী বলেছেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় আইএসআই বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি তথা খালেদা জিয়ার দলকে ৫০ কোটি টাকা দিয়েছে। সাথে সাথে, বিষয়টি নিয়ে সবার মধ্যে আলোচনার ঝড় উঠে এলো। এই বিষয়টির ছক যেইভাবে আঁকা হয়েছিল তা হলো এ রকম। মধ্যপ্রাচ্যের একটি জনপ্রিয় পত্রিকার নাম খালিজ টাইমস। এই খালিজ টাইমস পত্রিকার একজন সাংবাদিক যিনি দিল্লি শহরে অবস্থান করছেন। দিল্লি শহরে অবস্থানরত এই সাংবাদিক একাধিক পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকেন। আর খালিজ টাইমস হলো তার মধ্যে একটি পত্রিকা, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম আলো হলো আরেকটি পত্রিকা। উভয়টির প্রতিনিধি একই ব্যক্তি। খালিজ টাইমসে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলো এই মর্মে যে, পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের একটি আদালতে জবানবন্দী দেয়ার সময় আসাদ দুররানী বলেছেন, বিএনপিকে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আইএসআই ৫০ কোটি টাকা দিয়েছে। যেই সাংবাদিক সংবাদপত্রের জন্য প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করলেন তার নাম দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী। খালিজ টাইমসে সংবাদটি ছাপানোর পর তিনি অর্থাৎ দ্বীপাঞ্জন রায় চৌধুরী আবার দিল্লি থেকে প্রকাশিত ইন্ডিয়া টুডে নামে সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে ছাপানোর জন্য বন্দোবস্ত করলেন। একই দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম আলো পত্রিকায় একই সংবাদ ছাপানোর জন্যও ব্যবস্থা করলেন। সংবাদটি ঢালাওভাবে সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদটির ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ বিএনপির ওপর কাদা ছুড়তে শুরু করল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সব সভা-সমাবেশ-সেমিনার-প্রেস কনফারেন্স দেশী-বিদেশী অতিথিসহ টেলিভিশনের সামনে এমনকি জাতীয় সংসদেও কথাটি বলা শুরু করলেন যে, বিএনপি তথা খালেদা জিয়া আইএসআইয়ের কাছ থেকে টাকা খেয়েছে। মাননীয় শেখ হাসিনা বললেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশে বসে পাকিস্তানের দালালি করছেন। সুতরাং খালেদা জিয়ার উচিত পাকিস্তানে চলে যাওয়া, বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার খালেদা জিয়ার নেই। অথচ এটি ছিল একটি বড় রকমের রাষ্ট্রীয় ও বিদেশী ষড়যন্ত্র, যেটিকে অতি দ্রুততার সাথে বাংলাদেশে কার্যকর করা হয়েছিল। অর্থাৎ একজন ভদ্রলোক দিল্লি মহানগরীতে বসে অন্যের অনুরোধে ষড়যন্ত্রের জাল পেতেছিলেন যেন সেই অন্য অনুরোধকারী এবং সাংবাদিক ভদ্রলোক ঘটনাটিকে কাজে লাগিয়ে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিপদগ্রস্ত করে, নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে ফায়দা লুটতে চেয়েছিলন। ষড়যন্ত্রের মূল প্রকাশ্য নায়ক হিসেবে যেই ভদ্রলোকটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন, তিনি হলেন দ্বীপাঞ্জন রায় চৌধুরী। তিনি ভারতীয় নাগরিক। অছিলা হিসেবে তিনি আসাদ দুররানীর বক্তব্যের দোহাই দেন। এমন মিথ্যা প্রতিবেদনের ওপর ভর করেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিথ্যার বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শুরু করেছিলেন। এইরূপ প্রেক্ষাপটেই ২০১২ সালের এপ্রিল মাসের ১ তারিখের দু’চার দিন আগে বা পরে পাকিস্তানের সাবেক আইএসআই প্রধান দুররানী প্রকাশ্যে নিজ মুখে স্বীকার করলেন এবং প্রচার করলেন যে, তিনি এমন মিথ্যা কথা আদালতে বলেননি। দুররানী বললেন যে, তিনি তার বক্তব্যে বিএনপি তো দূরের কথা, বাংলাদেশ প্রসঙ্গেও তিনি কিছু উল্লেখ করেননি। পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছিল যে, বাংলাদেশের বিএনপিকে নিয়ে এই ধরনের অহেতুক বানোয়াট ডাহা মিথ্যা কথা তারা কেউই বলেননি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশ করল যে, দুররানীর বক্তব্যে বেলুচিস্তান ন্যাশনালিস্ট পার্টির উল্লেখ ছিল মাত্র। সম্মানিত পাঠক, খেয়াল করবেন যে, পাকিস্তানের অন্যতম প্রদেশ বেলুচিস্তানে দীর্ঘ অনেক বছরই হালকা মাত্রার সশস্ত্র জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহ চলে আসছে।
স্বাভাবিক প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন একটি মিথ্যা কথা কিভাবে নিজের মুখে প্রচার করলেন? এখন এই ঘটনা থেকে একটু পেছনের দিকে যাই। ২০১২ সালের শুরুর দিকে লন্ডন মহানগরী থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ইংরেজি ভাষার সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন দি ইকোনমিস্ট এই মর্মে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিল যে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সময় বাংলাদেশের কথিত বন্ধু রাষ্ট্র ভারত থেকে বস্তাভর্তি টাকা বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কাছে এসেছিল এবং ওই বস্তা বস্তা টাকা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। দি ইকোনমিস্ট সংবাদটির উপযুক্ত কোনো প্রতিবাদ তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় সরকার তখন দিতে পারেনি। অপরপক্ষে, ওই আলোচনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য, আওয়ামী লীগ তাদের প্রতি বন্ধুপ্রতিম বা তাদের প্রতি সহমর্মী বিদেশী ও দেশী সাংবাদিকদের দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে মানহানিকর মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছিল। এখন থেকে শিক্ষণীয় হলো এই যে, ২০০৮- এর আর্থিক সহযোগিতার কথা আওয়ামী লীগ অস্বীকার করলেও ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে আরো বড় সহযোগিতার কথা তারা অস্বীকার করতে পারছে না। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে পৃথিবীর একমাত্র দেশ যারা আন্তরিকভাবে এবং আক্ষরিকভাবে সর্বশক্তি ও সর্বকৌশল দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে জয়ী হতে সমর্থন দিয়েছিল যেই একটি মাত্র দেশ তার নাম ভারত।
লিখেছিলাম সময়ে কথা বলে এবং লিখেছিলাম সময় কাউকেই ছেড়ে কথা বলে না। ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ তৎকালীন জাতীয় পার্টিকে তথা সামরিক সরকারকে সহায়তা করেছিল। হুবহু অনুরূপ একটি মুদ্রা তথা একই ধরনের উপকার ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় পার্টি করল আওয়ামী লীগের অনুকূলে। সময় কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। সময় তার গর্ভ থেকে সব সত্য প্রত্যক্ষভাবে হোক বা আকারে ইঙ্গিতে হোক অবশ্যই উদ্গিরণ করে দেবে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কী কী হয়েছিল এবং কী কী হয়নি তার সত্য অনুসন্ধানী আলোচনা শুরু হয়েছে। ১৯৭১ এর আগে পাঁচ বা সাত বা দশ বছর কার কী ভূমিকা ছিল সেই প্রসঙ্গেও স্বীকারোক্তি জনগণের সামনে উপস্থাপিত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। সময়ের গর্ভে লুক্কায়িত অনেক অপ্রিয় কথা জনসমক্ষে আসার এই প্রক্রিয়া বন্ধ করা যাবে না।
নয়া দিগন্ত তিন বছর আগে উল্লিখিত দু’টি ঘটনা প্রসঙ্গে সত্য উদঘাটনে সচেষ্ট ছিল। নয়া দিগন্ত পেশাগতভাবেই সত্য অনুসন্ধানী এবং সত্য প্রচারে একনিষ্ঠ। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্বাভাবিক কামনা হচ্ছে এই যে, তারা তাদের এই উজ্জ্বল প্রশংসনীয় বৈশিষ্ট্য উজ্জ্বলতর করবে।
লেখক : রাজনীতিক, নিরাপত্তা বিশ্লেষক
বর্তমান জামানায় যেই দিনপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার আমরা অনুসরণ করি, এখন থেকে এক হাজার বছর কিংবা দুই হাজার বছর আগে সময় দেখার জন্য এরূপ দিনপঞ্জিকা ছিল না। বড় বড় ঘটনাকে খুঁটি বা স্তম্ভ (ইংরেজি পরিভাষায় ল্যান্ডমার্ক ডেট) মনে করেই তার আগে বা পরে সময় মিলানো হতো। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা: মক্কা নগরীতে ইসলাম ধর্ম নবরূপে প্রচার শুরু করার আগে, আব্রাহা নামে একজন বাদশার বাহিনী কর্তৃক মক্কা নগরী আক্রান্ত হয়েছিল। আব্রাহার সেই বাহিনীকে পরাজিত হতে হয়েছিল। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত বিশাল একটি পাখির দলের কাছে, যেই পাখিগুলোর নাম ছিল আবাবিল। পবিত্র কুরআনের প্রায় শেষাংশে, ‘সূরা ফিল’-এ এর ইশারা পাওয়া যায়। ফিল-এর বাংলা অর্থ হাতি। আব্রাহার সেই সৈন্যবাহিনীর দলটিতে প্রচুর হাতি ছিল। প্রত্যেকটি হাতির পিঠে ছিল একাধিক লোক। সেই হাতি ও সৈন্যবাহিনী মক্কা নগরীতে প্রবেশ করার আগে এবং মক্কার বাসিন্দারা কোনো ধরনের প্রতিরোধ বা বাধা উপস্থাপন করার আগেই, আব্রাহা-বাহিনী এক অলৌকিক বাধার সম্মুখে পড়েছিল। আবাবিল পাখিগুলো তাদের প্রত্যেকের ঠোঁটে একটি ও দুই পায়ে দু’টি করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পাথরকণা নিয়ে আসমানে উড়ে আসে এবং আব্রাহার বাহিনীর ওপর ওই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পাথরকণা ওপর থেকে নিক্ষেপ করে। ওপর থেকে যখন এই পাথরকণাগুলো জমিনে পড়ে, তখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে পাথরগুলোর বেগ অতি প্রবল ও ক্ষীপ্র হয়। ফলে, ওই পাথর যে মানুষ ও হাতির ওপর পড়েছিল তার আঘাতেই অনেক সৈন্য তৎক্ষণাৎ মৃত্যুবরণ করে এবং হাতি বেসামাল হয়ে পড়ে। বেসামাল হাতিগুলো শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলে। তারা বিক্ষিপ্তভাবে ডানে-বামে এবং পেছনের দিকে ছুটতে থাকে। আব্রাহা বাহিনীর ওখানেই পরাজয় হয়ে যায়। আল্লাহ প্রদত্ত এই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার পর মক্কাবাসী ও আশপাশের লোকজন তাদের সময় কিংবা কোনো ঘটনার তারিখ নির্ণয় করার জন্য, এই হাতির যুদ্ধকে সূচক হিসেবে ব্যবহার করতেন।
ওপরের অনুচ্ছেদের ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনার অনুসরণেই বলছি, বাংলাদেশের ইতিহাসেও অনেকগুলো ঘটনা, দিন ও সময় বা কালকে বিভেদকারী বা পার্থক্যকারী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। স্বাধীনতার গুরুত্ব ও তাৎপর্য এবং বিশেষ করে বর্তমান তরুণ সমাজকে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে তাদের বাস্তব জীবনে ও চিন্তাচেতনার বিকাশ ঘটানোর কাজে এরূপ কিছু কিছু পার্থক্যকারী ঘটনা অবদান রাখে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি চরম লজ্জাকর ঘৃণিত বৈশিষ্ট্য হলো মিথ্যা প্রচার, অথবা ভদ্র ভাষায় বলতে গেলে, সত্যকে লুকানো। বর্তমানে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ ক্ষমতায় ছিল, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ ক্ষমতায় ছিল এবং সর্বশেষ কিস্তিতে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে আজ অবধি ক্ষমতায় আছে। এই তিনটি কিস্তি মিলালে সর্বমোট চার যোগ পাঁচ যোগ ছয় সমান প্রায় ১৫ বছর বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছে। এই ১৫ বছরের অনেক দুর্বলতাকে বা অপ্রিয় সত্যকে বর্তমান সরকার হয় অস্বীকার করে অথবা গোপন রাখে অথবা মিথ্যাভাবে প্রচার করে। অপরপক্ষে, এই ১৫ বছরের বাইরে অন্য সময় অন্যান্য দল ক্ষমতায় ছিল যাদের ব্যাপারে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ইচ্ছাকৃতভাবে প্রিয় সত্য কথাগুলোকে অস্বীকার করে বা বিকৃত করে এবং অপ্রিয় কথাগুলোকে অধিকতর বিকৃত করে রঙিনভাবে ফলাও করে প্রচার করে। অথচ যেকোনো একটি রাষ্ট্রের জনগণের মনমানসিকতার সঠিক বিকাশের স্বার্থে বিশেষত তরুণদের মনমানসিকতার উজ্জ্বল বিকাশের স্বার্থে ইতিহাসের সত্য অংশগুলো সবার জানা উচিত সঠিকভাবে। একটি রাষ্ট্রে বা সমাজে যখন জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তিরা মিথ্যাকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন বা অসত্য-প্রচারকে সহায়তা করেন, তখন রাষ্ট্রের কাঠামোগুলো, সমাজের স্তম্ভগুলো দুর্বল হতে থাকে। অসত্য লালনকারী বা অসত্য প্রচারকারী মনে করেন যে, তাদের মিথ্যাচার হয়তো কোনো দিন আবিষ্কৃত হবে না। কিন্তু কলামের শুরুতেই যে কথাটি লিখেছি, সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না তার সাথে এই কলামের এই স্থানে যোগ দিতে চাই, সময় কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। অতি সাম্প্রতিক ইতিহাস থেকে ছোট একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করছি।
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের কোনো একটি সময়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির সুপ্রিম কোর্টের সামনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইএসআই’-এর এককালীন প্রধান কর্মকর্তা আসাদ দুররানী একটি জবানবন্দী দেন। সেখানে তিনি কী বলেছেন বা কী বলেননি সেই কথা বাংলাদেশের রাজধানীতে গৌণ হয়ে গিয়েছিল এবং মুখ্য হয়ে উঠেছিল এই মর্মে যে, আসাদ দুররানী বলেছেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় আইএসআই বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি তথা খালেদা জিয়ার দলকে ৫০ কোটি টাকা দিয়েছে। সাথে সাথে, বিষয়টি নিয়ে সবার মধ্যে আলোচনার ঝড় উঠে এলো। এই বিষয়টির ছক যেইভাবে আঁকা হয়েছিল তা হলো এ রকম। মধ্যপ্রাচ্যের একটি জনপ্রিয় পত্রিকার নাম খালিজ টাইমস। এই খালিজ টাইমস পত্রিকার একজন সাংবাদিক যিনি দিল্লি শহরে অবস্থান করছেন। দিল্লি শহরে অবস্থানরত এই সাংবাদিক একাধিক পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকেন। আর খালিজ টাইমস হলো তার মধ্যে একটি পত্রিকা, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম আলো হলো আরেকটি পত্রিকা। উভয়টির প্রতিনিধি একই ব্যক্তি। খালিজ টাইমসে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলো এই মর্মে যে, পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের একটি আদালতে জবানবন্দী দেয়ার সময় আসাদ দুররানী বলেছেন, বিএনপিকে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আইএসআই ৫০ কোটি টাকা দিয়েছে। যেই সাংবাদিক সংবাদপত্রের জন্য প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করলেন তার নাম দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী। খালিজ টাইমসে সংবাদটি ছাপানোর পর তিনি অর্থাৎ দ্বীপাঞ্জন রায় চৌধুরী আবার দিল্লি থেকে প্রকাশিত ইন্ডিয়া টুডে নামে সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে ছাপানোর জন্য বন্দোবস্ত করলেন। একই দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম আলো পত্রিকায় একই সংবাদ ছাপানোর জন্যও ব্যবস্থা করলেন। সংবাদটি ঢালাওভাবে সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদটির ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ বিএনপির ওপর কাদা ছুড়তে শুরু করল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সব সভা-সমাবেশ-সেমিনার-প্রেস কনফারেন্স দেশী-বিদেশী অতিথিসহ টেলিভিশনের সামনে এমনকি জাতীয় সংসদেও কথাটি বলা শুরু করলেন যে, বিএনপি তথা খালেদা জিয়া আইএসআইয়ের কাছ থেকে টাকা খেয়েছে। মাননীয় শেখ হাসিনা বললেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশে বসে পাকিস্তানের দালালি করছেন। সুতরাং খালেদা জিয়ার উচিত পাকিস্তানে চলে যাওয়া, বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার খালেদা জিয়ার নেই। অথচ এটি ছিল একটি বড় রকমের রাষ্ট্রীয় ও বিদেশী ষড়যন্ত্র, যেটিকে অতি দ্রুততার সাথে বাংলাদেশে কার্যকর করা হয়েছিল। অর্থাৎ একজন ভদ্রলোক দিল্লি মহানগরীতে বসে অন্যের অনুরোধে ষড়যন্ত্রের জাল পেতেছিলেন যেন সেই অন্য অনুরোধকারী এবং সাংবাদিক ভদ্রলোক ঘটনাটিকে কাজে লাগিয়ে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিপদগ্রস্ত করে, নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে ফায়দা লুটতে চেয়েছিলন। ষড়যন্ত্রের মূল প্রকাশ্য নায়ক হিসেবে যেই ভদ্রলোকটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন, তিনি হলেন দ্বীপাঞ্জন রায় চৌধুরী। তিনি ভারতীয় নাগরিক। অছিলা হিসেবে তিনি আসাদ দুররানীর বক্তব্যের দোহাই দেন। এমন মিথ্যা প্রতিবেদনের ওপর ভর করেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিথ্যার বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শুরু করেছিলেন। এইরূপ প্রেক্ষাপটেই ২০১২ সালের এপ্রিল মাসের ১ তারিখের দু’চার দিন আগে বা পরে পাকিস্তানের সাবেক আইএসআই প্রধান দুররানী প্রকাশ্যে নিজ মুখে স্বীকার করলেন এবং প্রচার করলেন যে, তিনি এমন মিথ্যা কথা আদালতে বলেননি। দুররানী বললেন যে, তিনি তার বক্তব্যে বিএনপি তো দূরের কথা, বাংলাদেশ প্রসঙ্গেও তিনি কিছু উল্লেখ করেননি। পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছিল যে, বাংলাদেশের বিএনপিকে নিয়ে এই ধরনের অহেতুক বানোয়াট ডাহা মিথ্যা কথা তারা কেউই বলেননি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশ করল যে, দুররানীর বক্তব্যে বেলুচিস্তান ন্যাশনালিস্ট পার্টির উল্লেখ ছিল মাত্র। সম্মানিত পাঠক, খেয়াল করবেন যে, পাকিস্তানের অন্যতম প্রদেশ বেলুচিস্তানে দীর্ঘ অনেক বছরই হালকা মাত্রার সশস্ত্র জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহ চলে আসছে।
স্বাভাবিক প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন একটি মিথ্যা কথা কিভাবে নিজের মুখে প্রচার করলেন? এখন এই ঘটনা থেকে একটু পেছনের দিকে যাই। ২০১২ সালের শুরুর দিকে লন্ডন মহানগরী থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ইংরেজি ভাষার সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন দি ইকোনমিস্ট এই মর্মে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিল যে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সময় বাংলাদেশের কথিত বন্ধু রাষ্ট্র ভারত থেকে বস্তাভর্তি টাকা বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কাছে এসেছিল এবং ওই বস্তা বস্তা টাকা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। দি ইকোনমিস্ট সংবাদটির উপযুক্ত কোনো প্রতিবাদ তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় সরকার তখন দিতে পারেনি। অপরপক্ষে, ওই আলোচনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য, আওয়ামী লীগ তাদের প্রতি বন্ধুপ্রতিম বা তাদের প্রতি সহমর্মী বিদেশী ও দেশী সাংবাদিকদের দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে মানহানিকর মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছিল। এখন থেকে শিক্ষণীয় হলো এই যে, ২০০৮- এর আর্থিক সহযোগিতার কথা আওয়ামী লীগ অস্বীকার করলেও ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে আরো বড় সহযোগিতার কথা তারা অস্বীকার করতে পারছে না। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে পৃথিবীর একমাত্র দেশ যারা আন্তরিকভাবে এবং আক্ষরিকভাবে সর্বশক্তি ও সর্বকৌশল দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে জয়ী হতে সমর্থন দিয়েছিল যেই একটি মাত্র দেশ তার নাম ভারত।
লিখেছিলাম সময়ে কথা বলে এবং লিখেছিলাম সময় কাউকেই ছেড়ে কথা বলে না। ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ তৎকালীন জাতীয় পার্টিকে তথা সামরিক সরকারকে সহায়তা করেছিল। হুবহু অনুরূপ একটি মুদ্রা তথা একই ধরনের উপকার ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় পার্টি করল আওয়ামী লীগের অনুকূলে। সময় কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। সময় তার গর্ভ থেকে সব সত্য প্রত্যক্ষভাবে হোক বা আকারে ইঙ্গিতে হোক অবশ্যই উদ্গিরণ করে দেবে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কী কী হয়েছিল এবং কী কী হয়নি তার সত্য অনুসন্ধানী আলোচনা শুরু হয়েছে। ১৯৭১ এর আগে পাঁচ বা সাত বা দশ বছর কার কী ভূমিকা ছিল সেই প্রসঙ্গেও স্বীকারোক্তি জনগণের সামনে উপস্থাপিত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। সময়ের গর্ভে লুক্কায়িত অনেক অপ্রিয় কথা জনসমক্ষে আসার এই প্রক্রিয়া বন্ধ করা যাবে না।
নয়া দিগন্ত তিন বছর আগে উল্লিখিত দু’টি ঘটনা প্রসঙ্গে সত্য উদঘাটনে সচেষ্ট ছিল। নয়া দিগন্ত পেশাগতভাবেই সত্য অনুসন্ধানী এবং সত্য প্রচারে একনিষ্ঠ। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্বাভাবিক কামনা হচ্ছে এই যে, তারা তাদের এই উজ্জ্বল প্রশংসনীয় বৈশিষ্ট্য উজ্জ্বলতর করবে।
লেখক : রাজনীতিক, নিরাপত্তা বিশ্লেষক
No comments