আরও কিছু দিবস চাই by সাহস রতন
আজ ২৯শে অক্টোবর ২০১৪। আজ কি দিবস? দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক? হায় আল্লাহ, আজ কোন দিবস নাই কেন? কোন একটা দিবস না থাকলে কেমন যেন খালি খালি লাগে। দোকানির বেচা-বিক্রি কম। বিশেষ কোন দিবস না থাকলে বৈকালিক আলোচনা অনুষ্ঠানও থাকে না। প্রতিটি বিশেষ দিবসকে কেন্দ্র করে পত্রিকাওয়ালারা একটা বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করেন। যেদিন কোন দিবস না থাকে, সেদিন পত্রিকার স্বাস্থ্য থাকে লিকলিকে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোরও একই দশা হয়। ভাড়াখাটা মিলনায়তনগুলো থাকে দর্শকশূন্য। এভাবে কত আর্থিক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে সেটা তো ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের দিবসের কোন শেষ নাই। দেশীয় দিবসের সঙ্গে যুক্ত আছে আন্তর্জাতিক দিবস। জাতীয় দিবস যেমন, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, মে দিবস- এগুলো খুব ভাবগম্ভীর। এসব দিবসে আমরা ভাবাবেগে আপ্লুত হই। আবার পহেলা বৈশাখ, ঈদ, পূজা- এ সব বেশ উৎসবমুখর। তখন চারদিকে শুধু আনন্দই আনন্দ। এছাড়াও রয়েছে, মা দিবস, বাবা দিবস, শিশুকন্যা দিবস। আচ্ছা, শিশুপুত্র দিবস নাই কেন? শিশুপুত্রের কি কোন দাম নাই তাহলে! এটা থাকলেও মন্দ হতো না। অফুরন্ত ভালবাসার জন্য আছে ভালবাসা দিবস, ভ্যালেন্টাইন ডে। বোকা বানানো দিবসও আছে- এপ্রিল ফুল, পহেলা এপ্রিল। আছে আন্তর্জাতিক হাতধোয়া দিবস। এদিন আমরা কি শুধু হাতই ধোবো? রোগ বালাই দিবসও অনেক আছে। যেমন- এইডস দিবস, অটিস্টিক দিবস। অন্ধদের জন্য সাদাছড়ি দিবস। খেলাধুলায় আছে অলিম্পিক দিবস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু প্রাচ্যের অক্সফোর্ড কাজেই তাদের রয়েছে নিজস্ব দিবস- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। বিখ্যাত মানুষের জন্মদিবস, মৃত্যুদিবস তো আছেই। পুলিশের আবার মাত্র একটা দিবসে চলে না। পুলিশ বলে কথা। তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। সুতরাং তারা পালন করে ‘পুলিশ সপ্তাহ’। এরকম আরও অসংখ্য দিবসের নাম বলা যাবে। ৩৬৫ দিনের মধ্যে বেশির ভাগ দিনেই একটা না একটা দিবস আছেই। সারা বছরে অল্প ক’টা দিন হয়তো ‘দিবসবিহীন’। তাহলে এই দিনগুলো মাইন্ড করবে না। ওদের কি কোন মূল্য নাই?
এই যে বছরব্যাপী এত এত দিবস- এর মাজেজাটা কি? আসলে এসব দিবসে আমরা বিষয় ভিত্তিক ভাবনায় লিপ্ত হই। নানারকম অনুষ্ঠান আয়োজন করি, আলোচনা করি। আলোচনা শেষে চেক নিয়ে বিদায় হই। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্যই এ সব দিবস আমাদের ওপর নাজিল করা হয়েছে। কিন্তু কোন দিন ‘দিবস’ হবে, কোন দিন হবে না- এটা ঠিক না। সব কিছুতে গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে। কাজেই দিবসবিহীন দিনগুলোর শূন্যস্থান পূরণ করে আমরা বছরের সব দিনকে সমান গুরুত্ব দিতে পারি। বছরের সব দিনই আমাদের কাছে সমান। সে জন্যই আমি ভাবছি, বিদ্যমান দিবসগুলোর সঙ্গে আরও কিছু দিবস আমাদের থাকা উচিত। যেমন- ঋণখেলাপি দিবস, ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজ দিবস, পল্টিবাজ দিবস, কালো বিড়াল দিবস, বাবা-ছাত্র দিবস, হলুদ সাংবাদিকতা দিবস, চামচা দিবস- এ রকম আর কি। পল্টিবাজ দিবসে রাজনৈতিক পল্টিবাজ সমিতির নেতারা কি বলেন সেটা আমরা জানবো। ঋণখেলাপি দিবসে ব্যাঙ্কখোর ভাইদের কাছ থেকে আমরা শিখবো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে কিভাবে তা মেরে দেয়া যায়। আর একটা কথা। নারী অধিকার, শিশুকন্যা, বাল্যবিবাহ রোধ ইত্যাদি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দিবস আছে। সবই তো দেখি স্ত্রী জাতীর জন্য বরাদ্দ। তাহলে পুংজাতির কি হবে? এই বৈষম্য মানা যায় না। আন্তর্জাতিক না হোক, অন্তত দেশীয় পর্যায়ে শিশুপুত্র এবং পুরুষ অধিকার দিবসও থাকতে হবে। আর সব শেষে একটা থাকবে ভি.ভি.আই দিবস। ভেরি ভেরি ইম্পরটেন্ট দিবস। কানপট্টি দিবস। এই দিবসে সো কলড ম্যাংগো পিপলকে শেখানো হবে দুর্নীতিবাজ, চোর-বাটপারদেরকে কিভাবে সাইজ করতে হয়। মাননীয় মহাশয়, দ্রুত এ সব দিবস আমাদেরকে দান করুন। অপেক্ষা আর সইতে পারছি না। বিলম্বে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা দেখছি।
ঢাকা, ২৯শে অক্টোবর ২০১৪
এই যে বছরব্যাপী এত এত দিবস- এর মাজেজাটা কি? আসলে এসব দিবসে আমরা বিষয় ভিত্তিক ভাবনায় লিপ্ত হই। নানারকম অনুষ্ঠান আয়োজন করি, আলোচনা করি। আলোচনা শেষে চেক নিয়ে বিদায় হই। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্যই এ সব দিবস আমাদের ওপর নাজিল করা হয়েছে। কিন্তু কোন দিন ‘দিবস’ হবে, কোন দিন হবে না- এটা ঠিক না। সব কিছুতে গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে। কাজেই দিবসবিহীন দিনগুলোর শূন্যস্থান পূরণ করে আমরা বছরের সব দিনকে সমান গুরুত্ব দিতে পারি। বছরের সব দিনই আমাদের কাছে সমান। সে জন্যই আমি ভাবছি, বিদ্যমান দিবসগুলোর সঙ্গে আরও কিছু দিবস আমাদের থাকা উচিত। যেমন- ঋণখেলাপি দিবস, ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজ দিবস, পল্টিবাজ দিবস, কালো বিড়াল দিবস, বাবা-ছাত্র দিবস, হলুদ সাংবাদিকতা দিবস, চামচা দিবস- এ রকম আর কি। পল্টিবাজ দিবসে রাজনৈতিক পল্টিবাজ সমিতির নেতারা কি বলেন সেটা আমরা জানবো। ঋণখেলাপি দিবসে ব্যাঙ্কখোর ভাইদের কাছ থেকে আমরা শিখবো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে কিভাবে তা মেরে দেয়া যায়। আর একটা কথা। নারী অধিকার, শিশুকন্যা, বাল্যবিবাহ রোধ ইত্যাদি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দিবস আছে। সবই তো দেখি স্ত্রী জাতীর জন্য বরাদ্দ। তাহলে পুংজাতির কি হবে? এই বৈষম্য মানা যায় না। আন্তর্জাতিক না হোক, অন্তত দেশীয় পর্যায়ে শিশুপুত্র এবং পুরুষ অধিকার দিবসও থাকতে হবে। আর সব শেষে একটা থাকবে ভি.ভি.আই দিবস। ভেরি ভেরি ইম্পরটেন্ট দিবস। কানপট্টি দিবস। এই দিবসে সো কলড ম্যাংগো পিপলকে শেখানো হবে দুর্নীতিবাজ, চোর-বাটপারদেরকে কিভাবে সাইজ করতে হয়। মাননীয় মহাশয়, দ্রুত এ সব দিবস আমাদেরকে দান করুন। অপেক্ষা আর সইতে পারছি না। বিলম্বে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা দেখছি।
ঢাকা, ২৯শে অক্টোবর ২০১৪
No comments