হাদিসে আত্মীয়তা সম্পর্ক by শাহীন হাসনাত
কারও সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করা, কাউকে
হত্যা করা যেমন বড় অন্যায় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তেমনি আত্মীয়দের মধ্যে
পারস্পরিক অধিকার হকগুলো আদায় করে দেওয়া সওয়াবের কাজ
বর্তমান
সময়ে সামাজিক অসহিষ্ণুতা আর নৈতিক অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। অনুকরণ
মোহ, কথিত আধুনিকতার ছাপ আর অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশে এসব অবক্ষয় বেড়েই
চলছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, যথাযথ প্রতিকার ও বিচারের অভাবে ছেলের হাতে বাবা,
ভাইয়ের হাতে ভাই, স্বামীর হাতে স্ত্রী-সন্তান, স্ত্রীর হাতে স্বামী-সন্তান
খুনের ঘটনা ঘটছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম,
সুনামগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ ধরনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৮ জন।
অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, তাহলে আত্মীয় কাকে
বলে, আর আত্মীয়স্বজনই যদি ঘাতক হয়, তাহলে সামাজিক নিরাপত্তা বলে আর কী বাকি
থাকে?
আত্মীয় বলতে আমরা বুঝি আপন লোকজনকে। এক বংশ ও রক্ত যার শরীরে প্রবহমান তিনি রক্ত সম্পর্কের আপনজন। তেমনি কুটুম্বিতার দরুনও আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। আত্মীয়তার সম্পর্ক আবার কাছের বা দূরের বিভাজনে বিভক্ত। সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে মোটাদাগে আত্মীয়স্বজন বলতে আমরা বুঝি, যে আমার সুখে সুখী আর দুঃখে দুঃখী হবেন, তিনি আমার আত্মীয়। যে আমার উন্নতিতে আনন্দিত হবেন, বিপদের সময় আমার পাশে থাকবেন, আমার ওপর সদা দয়াপরবশ থাকবেন, আমার কল্যাণ কামনা করবেন, আমার পেছনে অযথা বদনাম করবেন না, আমার সঙ্গে মিত্ররূপী শত্রুর মতো আচরণ করবেন না, আমার স্বার্থ ক্ষুণ্ন করবেন না, তিনিই আমার আত্মার আত্মীয়, পরম স্বজন। এককথায় যার ওপর আমি নির্ভর করতে পারি, তিনিই আমার আত্মীয়। অথচ এই আপনজনই এখন ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আত্মীয়তার ভিত্তিতে জীবনযাপনের কোনো এক পর্যায়ে এসে, স্ত্রী তার স্বামীকে নতুবা স্বামী তার স্ত্রীকে খুন করছে। ভাই তার ভাইকে খুন করছে। বোন তার বোনকে বিধবা করছে নতুবা খুন করছে। ছেলের হাতে বাবা-মা খুন হচ্ছেন। রক্তের সঙ্গে রক্ত বেইমানি করছে। একই সম্প্রদায়ের লোক, নিজ সম্প্রদায়ের লোক দ্বারা আর্থিক, কায়িক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইসলাম এভাবে রক্তপাত ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। এমনকি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীকে পবিত্র কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে সর্বস্বান্ত। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, 'যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদাকে পাকাপোক্ত করার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ যা অটুট রাখতে আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে আর পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তারাই সর্বস্বান্ত।' সূরা আল বাকারা : ২৭
মানুষের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি। বংশগতভাবে হোক কিংবা বৈবাহিক সূত্রে হোক, আত্মীয়তার সম্পর্ক এক বড় নেয়ামত। আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা ইসলামের অনন্য এক শিক্ষা। কোরআনে কারিম ও হাদিস শরিফে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার পরিণাম সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার আত্মীয়তা সম্পর্ক অটুট রাখে।' _বুখারি ও মুসলিম শরিফ
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলে কারিম (সা.) বলেছেন, 'আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্ক আরশের সঙ্গে ঝোলানো অবস্থায় রয়েছে। সে বলে, যে আমার সঙ্গে মিলিত হয় আল্লাহ তার সঙ্গে মিলিত হন; আর যে আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।' কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ইসলাম অত্যন্ত কঠোরভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার কথা বললেও আধুনিক জীবনদর্শন আত্মীয়তার সম্পর্ক সংরক্ষণের পরিবর্তে ছিন্ন করার দিকেই বেশি উৎসাহিত করছে। যৌথ পরিবার ভেঙে ছোট পরিবার গঠন, গ্রামীণ জীবন ছেড়ে শহুরে জীবন গঠন করার প্রবণতা আত্মীয়তার সম্পর্ককে নির্বাসনে পাঠাচ্ছে। স্বার্থবাদী চিন্তা আত্মীয়ের খুনের কারণ হয়ে উঠছে। ছেলেমেয়ের ব্যস্ত জীবন বৃদ্ধ মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর জন্য উৎসাহিত করছে। অথচ এই বাবা-মা আমাদের ছোটবেলার অসহায় জীবনে আদর, স্নেহ, ভালোবাসা ও ভরণপোষণ ইত্যাদির মাধ্যমে বড় করেছেন। যে ভাই-বোন এত আদর-স্নেহ দিয়ে বড় করেছেন, তাদের আর ভালো লাগে না। নিকট আত্মীয় যারা আমাদের আদর-স্নেহ দিয়ে বড় হতে সাহায্য করেছেন তারা আর আপনজনের তালিকায় থাকেন না। এমনই আত্মীয় পরিচয় ভোলা লোকদের ব্যাপারে হজরত জুবায়ের ইবনে মুতইম বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না।'- মুসলিম শরিফ
কারও সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করা, কাউকে হত্যা করা যেমন বড় অন্যায় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তেমনি আত্মীয়দের মধ্যে পারস্পরিক অধিকার হকগুলো আদায় করে দেওয়া সওয়াবের কাজ। লেখার শুরুতে যে বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে, সেখানে স্পষ্ট দুটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এক. হত্যাকাণ্ড; দুই. আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন। ইসলাম কোনো হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে না। ইসলাম সব ধরনের অন্যায়ের মূলোৎপাটনের কথা বলে। বর্ণিত অবস্থায় যেহেতু অপরিচিত বা অজ্ঞাত কারও দ্বারা অপরাধগুলো সংঘটিত হয়নি সেটাই এখানে আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের পরস্পরের হৃদ্যতা ও সুখ-দুঃখে আত্মীয়দের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতাই পারে এ অস্বস্তিকর সামাজিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি দিতে। আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষাকারী পরকালীন প্রতিদান পাওয়ার পাশাপাশি দুনিয়াতেও এর সুফল লাভ করবে। হাদিসে আছে, 'যে এটা কামনা করে, তার আয়ু বাড়ানো হোক, তার জীবিকা বেড়ে যাক আর তার থেকে দূর করা হোক অপমৃত্যুকে, তাহলে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।'
আত্মীয় বলতে আমরা বুঝি আপন লোকজনকে। এক বংশ ও রক্ত যার শরীরে প্রবহমান তিনি রক্ত সম্পর্কের আপনজন। তেমনি কুটুম্বিতার দরুনও আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। আত্মীয়তার সম্পর্ক আবার কাছের বা দূরের বিভাজনে বিভক্ত। সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে মোটাদাগে আত্মীয়স্বজন বলতে আমরা বুঝি, যে আমার সুখে সুখী আর দুঃখে দুঃখী হবেন, তিনি আমার আত্মীয়। যে আমার উন্নতিতে আনন্দিত হবেন, বিপদের সময় আমার পাশে থাকবেন, আমার ওপর সদা দয়াপরবশ থাকবেন, আমার কল্যাণ কামনা করবেন, আমার পেছনে অযথা বদনাম করবেন না, আমার সঙ্গে মিত্ররূপী শত্রুর মতো আচরণ করবেন না, আমার স্বার্থ ক্ষুণ্ন করবেন না, তিনিই আমার আত্মার আত্মীয়, পরম স্বজন। এককথায় যার ওপর আমি নির্ভর করতে পারি, তিনিই আমার আত্মীয়। অথচ এই আপনজনই এখন ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আত্মীয়তার ভিত্তিতে জীবনযাপনের কোনো এক পর্যায়ে এসে, স্ত্রী তার স্বামীকে নতুবা স্বামী তার স্ত্রীকে খুন করছে। ভাই তার ভাইকে খুন করছে। বোন তার বোনকে বিধবা করছে নতুবা খুন করছে। ছেলের হাতে বাবা-মা খুন হচ্ছেন। রক্তের সঙ্গে রক্ত বেইমানি করছে। একই সম্প্রদায়ের লোক, নিজ সম্প্রদায়ের লোক দ্বারা আর্থিক, কায়িক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইসলাম এভাবে রক্তপাত ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। এমনকি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীকে পবিত্র কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে সর্বস্বান্ত। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, 'যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদাকে পাকাপোক্ত করার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ যা অটুট রাখতে আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে আর পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তারাই সর্বস্বান্ত।' সূরা আল বাকারা : ২৭
মানুষের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি। বংশগতভাবে হোক কিংবা বৈবাহিক সূত্রে হোক, আত্মীয়তার সম্পর্ক এক বড় নেয়ামত। আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা ইসলামের অনন্য এক শিক্ষা। কোরআনে কারিম ও হাদিস শরিফে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার পরিণাম সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার আত্মীয়তা সম্পর্ক অটুট রাখে।' _বুখারি ও মুসলিম শরিফ
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলে কারিম (সা.) বলেছেন, 'আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্ক আরশের সঙ্গে ঝোলানো অবস্থায় রয়েছে। সে বলে, যে আমার সঙ্গে মিলিত হয় আল্লাহ তার সঙ্গে মিলিত হন; আর যে আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।' কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ইসলাম অত্যন্ত কঠোরভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার কথা বললেও আধুনিক জীবনদর্শন আত্মীয়তার সম্পর্ক সংরক্ষণের পরিবর্তে ছিন্ন করার দিকেই বেশি উৎসাহিত করছে। যৌথ পরিবার ভেঙে ছোট পরিবার গঠন, গ্রামীণ জীবন ছেড়ে শহুরে জীবন গঠন করার প্রবণতা আত্মীয়তার সম্পর্ককে নির্বাসনে পাঠাচ্ছে। স্বার্থবাদী চিন্তা আত্মীয়ের খুনের কারণ হয়ে উঠছে। ছেলেমেয়ের ব্যস্ত জীবন বৃদ্ধ মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর জন্য উৎসাহিত করছে। অথচ এই বাবা-মা আমাদের ছোটবেলার অসহায় জীবনে আদর, স্নেহ, ভালোবাসা ও ভরণপোষণ ইত্যাদির মাধ্যমে বড় করেছেন। যে ভাই-বোন এত আদর-স্নেহ দিয়ে বড় করেছেন, তাদের আর ভালো লাগে না। নিকট আত্মীয় যারা আমাদের আদর-স্নেহ দিয়ে বড় হতে সাহায্য করেছেন তারা আর আপনজনের তালিকায় থাকেন না। এমনই আত্মীয় পরিচয় ভোলা লোকদের ব্যাপারে হজরত জুবায়ের ইবনে মুতইম বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না।'- মুসলিম শরিফ
কারও সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করা, কাউকে হত্যা করা যেমন বড় অন্যায় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তেমনি আত্মীয়দের মধ্যে পারস্পরিক অধিকার হকগুলো আদায় করে দেওয়া সওয়াবের কাজ। লেখার শুরুতে যে বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে, সেখানে স্পষ্ট দুটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এক. হত্যাকাণ্ড; দুই. আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন। ইসলাম কোনো হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে না। ইসলাম সব ধরনের অন্যায়ের মূলোৎপাটনের কথা বলে। বর্ণিত অবস্থায় যেহেতু অপরিচিত বা অজ্ঞাত কারও দ্বারা অপরাধগুলো সংঘটিত হয়নি সেটাই এখানে আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের পরস্পরের হৃদ্যতা ও সুখ-দুঃখে আত্মীয়দের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতাই পারে এ অস্বস্তিকর সামাজিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি দিতে। আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষাকারী পরকালীন প্রতিদান পাওয়ার পাশাপাশি দুনিয়াতেও এর সুফল লাভ করবে। হাদিসে আছে, 'যে এটা কামনা করে, তার আয়ু বাড়ানো হোক, তার জীবিকা বেড়ে যাক আর তার থেকে দূর করা হোক অপমৃত্যুকে, তাহলে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।'
No comments