আসামির সাথে চেয়ারম্যানের বৈঠক- দুদক প্রভাবশালীদের স্বার্থরক্ষার প্রতিষ্ঠান
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যে স্বাধীন ও
নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না, তা নিয়ে শুরু থেকেই বিভিন্ন
মহলের প্রশ্ন ছিল। দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকাণ্ডের কারণেই এসব প্রশ্ন
উঠেছে।
ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী মন্ত্রী, সংসদ সদস্য বা
আমলাদের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন নিরপরাধরূপে সার্টিফিকেট দেয়ার
প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এবার আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছে দুর্নীতি দমন
কমিশন। দুর্নীতির অভিযোগে খোদ কমিশনের দায়ের করা মামলার আসামির সাথে বৈঠক
করেছেন কমিশনের চেয়ারম্যান। বৈঠকে সে মামলা নিয়ে আসামির সাথে আলোচনা
করছেন। আবার নিজেই বলছেন এ মামলা তদন্তাধীন। যে মামলার তদন্ত চলছে, আসামি
কারাগারে থাকার পর যে মামলায় জামিনে আছেন; যখন চেয়ারম্যানের আলোচনা হয়
এর প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তির সাথে, তখন মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে। বহুলালোচিত পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি মামলায়
প্রধান আসামি হচ্ছেন সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলার এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এ অবস্থায় তিনি
দুদক চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। বলেছেন,
তাকে হয়রানি করার জন্য এ মামলা করা হয়েছে। মামলার একজন আসামি এ দাবি
করতেই পারেন। কিন্তু তিনি অপরাধী কি না তা প্রমাণিত হবে আদালতে
তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে। কিন্তু তিনি যখন অপরাধী নন দাবি করে কমিশনের
চেয়ারম্যানের সাথে মামলার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন, তখন স্বাভাবিকভাবে
এ মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পদ্মা সেতু দুর্নীতি নিয়ে এ
প্রতিষ্ঠানটি পুরো বিষয়কে লেজেগোবরে করে ফেলেছে। মনে হচ্ছে এ মামলার সাথে
জড়িতদের তাড়াতাড়ি মুক্তি দিতে পারলে যেন তারা বর্তে যায়। পদ্মা সেতু
ইস্যুতে দুর্নীতি দমন কমিশন মোটেই স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন
করতে পারেননি। আগের চেয়ারম্যানের মতো বর্তমান চেয়ারম্যানও একই পথ
নিয়েছেন। আসামির সাথে বৈঠকের পর বলছেন, এতে কোনো আইনি সমস্যা নেই। এ ধরনের
দুর্বল যুক্তি এবং ক্ষমতাসীনদের প্রতি আনুগত্যশীল মানসিকতা দিয়ে আর যা-ই
হোক কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে চলতে পারে না। দুর্নীতি দমন কমিশনকে
প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হলে প্রথমে দরকার সাহসী ও স্বাধীনচেতা
মনোভাব। এর সাথে অবশ্যই আইনগত দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা দরকার। এর আগেও
দুর্নীতি দমন কমিশন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে করা মামলা নিয়ে নানা
ধরনের নাটকীয়তা দেখিয়েছে। পদ্মা সেতু মামলার প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তি
হচ্ছেন মূলত সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন। তার কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে
পাচ্ছে না দুদক। বরং তিনি ‘নিরপরাধ’ সার্টিফিকেট পেয়েছেন। আর
প্রধানমন্ত্রী তাকে দিয়েছেন সেরা দেশপ্রেমিকের সনদ। দফতরবিহীন মন্ত্রী
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের গাড়িতে পাওয়া ৭০ লাখ টাকার সাথে এই মন্ত্রীর
সংশ্লিষ্টতা পায়নি দুদক। যেমন পায়নি তার ছেলের হঠাৎ পাওয়া কোটি টাকার
সাথে কোনো অবৈধ সম্পর্কের। দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়েছিল দুর্নীতির
সাথে জড়িত রাঘব বোয়ালদের আইনের আওতায় আনার জন্য। এর মাধ্যমে সমাজে ও
প্রশাসনের সর্বত্র যে দুর্নীতির বিস্তার ঘটছে, তার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব
হবে। কিন্তু বাংলাদেশের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো দুর্নীতি দমন কমিশনকেও
দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে স্বাধীন প্রাতিষ্ঠানিক
কাঠামো ও মর্যাদা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দাঁড়াতে পারছে না।
No comments