যানজট নিরসন- সুপারিশ ভালো, সদিচ্ছাও চাই
রাজধানীর যানজট নিরসনে স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে ডিএমপির (ঢাকা মেট্রোপলিটন
পুলিশ) পেশ করা অর্ধশত সুপারিশকে আমরা স্বাগত জানাই। যদিও স্বল্প, মধ্য ও
দীর্ঘমেয়াদি এসব সুপারিশের প্রায় সবই জনসাধারণ্যে আলোচিত।
গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক টার্মিনাল নির্মাণ, রাস্তার পাশে
নির্দিষ্ট স্টেশন স্থাপন, নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন সীমিত করা, পুরনো গাড়ি
সরিয়ে ফেলা ইত্যাদি সুপারিশ বহুল আলোচিত। কিন্তু কেবল নাগরিক সমাজ কিংবা
নীতিনির্ধারকরা নন, বাস্তবায়নকারী সংস্থাও যেভাবে গুরুতর জনসংকটটি নিয়ে
চিন্তা-ভাবনা করছে, তা উৎসাহব্যঞ্জক না হয়ে পারে না। আমরা জানি যে, এসব
সুপারিশ বাস্তবায়নে নীতিনির্ধারকদেরই উদ্যোগী হতে হবে। বুধবার সংসদ ভবনে
অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও জানানো হয়েছে যে, সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হবে। আমরা চাই, নিছক
অনুরোধ নয়_ সংসদীয় স্থায়ী কমিটি মন্ত্রণালয়কে জোর তাগিদ দিক। মন্ত্রণালয়
আন্তরিক হলে স্বল্পমেয়াদি সুপারিশগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ অনায়াসেই বাস্তবায়ন
সম্ভব। যেমন রাজপথ থেকে পুরনো গাড়ি সরিয়ে ফেলা কি খুবই কঠিন? এ ক্ষেত্রে
ডিএমপি সদিচ্ছার কথাও আমরা বলতে চাই। মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল,
যেখানে-সেখানে গাড়ি থামানো_ ডিএমপি আন্তরিক হলে এসব অনিয়ম বন্ধ করতে পারে।
নির্দিষ্ট সময়ের আগে নগরের ভেতরে ট্রাক ও লরি ঢুকতে না দিলেও কিন্তু যানজট
অনেক কমে যেতে পারে। অভিযোগ রয়েছে যে, পরিবহন খাতের অনিয়মের সঙ্গে এক
শ্রেণীর পুলিশ কর্মকর্তাও জড়িত। সড়কে অনিয়ম বন্ধ করে ডিএমপি কি সেসব অভিযোগ
মিথ্যা প্রমাণ করতে পারে না? সুপারিশমালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের
ভেতর দিয়ে বাস চলাচলের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা স্বল্পমেয়াদে বাস্তবসম্মত
নয় বলে আমরা মনে করি। ওই দুই ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কে পর্যাপ্ত ফুটওভার
ব্রিজ ও সতর্কতা চিহ্ন নির্মাণের পরই কেবল বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া যেতে
পারে। ব্যস্ত ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে বাস চালানোর ক্ষেত্রে চালক ও সহকারীদের
সতর্কতাও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তা নিশ্চিত না করে বাস চলাচলের অনুমতি
দিলে আরও কিছু মেধাবী প্রাণ হতাহতের ঝুঁকিই কেবল বাড়ানো হবে। শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান ও দাফতরিক সময়সূচির মধ্যে এক ঘণ্টার ব্যবধান রাখার সুপারিশ
সেদিক থেকে স্বল্পমেয়াদে অনেক বেশি কার্যকরী ও বাস্তবায়নযোগ্য।
নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি আমলে নেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। হাতিরঝিল প্রকল্প
থেকে পাওয়া ১১ কিলোমিটার বাড়তি রাস্তা কীভাবে যানজট নিরসনে কাজে লাগানো
যায়, তা নিয়েও চিন্তা-ভাবনা জরুরি। নান্দনিকতা জরুরি বটে, একই সঙ্গে জনবহুল
একটি নগরীর প্রয়োজনীয়তার কথাও ভাবতে হবে। হাতিরঝিলের দুই পাশের সড়ক যদি
দুই লেন করা যায়, তাহলে পুরো নগরের যানজট পরিস্থিতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ওই রাস্তা দুটিতে যাত্রীবাহী মিনিবাসও চালু করা যেতে পারে। ডিএমপির মধ্য ও
দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশগুলো_ যেমন গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ফ্লাইওভার নির্মাণ,
লেভেল ক্রসিংয়ে ওভারব্রিজ নির্মাণ, পোশাকশিল্প ঢাকার বাইরে স্থানান্তর,
পাইকারি বাজার ঢাকার উপকণ্ঠে সরিয়ে ফেলা, বাস র্যাপিড ট্রানজিট চালু,
স্যাটেলাইট সিটি গড়ে তোলা_ বাস্তবায়ন অর্থ ও সামর্থ্যসাপেক্ষ, সন্দেহ নেই।
কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, ইচ্ছা থাকলে উপায় হবেই। সেই সদিচ্ছা যে
সংশ্লিষ্টদের আছে, স্বল্পমেয়াদি সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে আন্তরিকতা দেখিয়ে
তা প্রমাণ করুক ডিএমপি, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা
No comments