রাজনীতির বল্গ্যাকহোল by মোয়াজ্জেম হোসেন ভূইয়া
আমরা চাই বা না চাই, আওয়ামী লীগ যে
গাজীপুর নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতির কালো গর্তের দিকে ছুটে চলছে তা আর
বলার অপেক্ষা রাখে না। কেন এমন হলো তা সবারই জানা।
এমনকি
আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীই তা সুন্দরভাবে একের পর এক ব্যাখ্যা দিয়ে
যাচ্ছেন। এই ভরাডুবি কি দলটি আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেটে উঠতে পারবে? আমরা
যদি সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রমনা হই তাহলে এটা মেনে নিতেই হবে যে,
গণতন্ত্রের ফলাফল শুধু জয়-পরাজয়ই নয়, রাজনীতিতে সাফল্যের সঙ্গে টিকে থাকাও
কম নয়। তবে যেটা মেনে নেওয়া যায় না, তাহলো বিজয়ীরা নির্বাচনোত্তর সময়ে যে
তাণ্ডবে মেতে ওঠে, তা নিয়ে ভোটাররা বিশেষভাবে শঙ্কিত। এ দেশের গণতন্ত্রের
স্বার্থে বিজয়ীরা ভবিষ্যতে হয়তো আরও মার্জিত হবেন সেটাই সবার কাম্য।
রাজনৈতিক বল্গ্যাকহোলের কথা বলছিলাম। সবাই বলছেন সরকারের এত কিছু অর্জনের পরও কেন এমনটি হচ্ছে। ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কেন? এটা আজ সবার মুখে মুখে। অনেকগুলো কারণের মধ্যে মাত্র দুটি কারণ তুলে ধরা গেল। প্রথমত উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে 'আন্ডার ডগ' তত্ত্ব নির্বাচনকালীন সময়ে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচলিত। কী সরকার বা কী বিরোধী, সবাই নির্বাচনে 'আন্ডার ডগ' হয়ে থাকতে চায়। এর অর্থ হলো, বিরোধী এবং সরকারি দল উভয়েই ভোটারদের কাছে প্রমাণ করতে চায় যে, তারা খুবই দুর্বল এবং হয়তো নির্বাচনে পরাজয়বরণ করতেও পারেন। ভোটাররা তা যে কোনো দেশেই হোক 'আন্ডার ডগ'কে পছন্দ করে বেশি। তার কারণ হলো সহমর্মিতা বোধ। এ অনুভব সাধারণত বিরোধীদের জন্য বেশি প্রযোজ্য। ভোটারদের সিম্পেথি অর্জনের জন্য সরকারি দলও চেষ্টা করে আন্ডার ডগ হয়ে ভোটারদের সহমর্মিতা আকর্ষণ করতে। কিন্তু আমাদের বেলায় হয় তার উল্টোটি। গত ২০ বছরে দেখা গেছে, যারাই সরকারে থেকেছে, নির্বাচনের সময় তাদের অহমিকার ভার আরও বেড়ে গেছে। এ দেশের ভোটাররা বড় দু'দলের (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) কাউকে পীঠাপীঠি দুই টার্ম দিতে অপারগতা জানায়। আমাদের ভোটাররাও বুঝতে চান না যে, যে কোনো সরকার দুই টার্ম পেলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারে। তবে আমাদের বেলায় কোনটা সঠিক তা বলা বেশ কঠিন। কারণ ভোটাররা মনে করেন, টানা দুই টার্ম বিজয়ী হলে রাজনীতিবিদরা আর ধরাকে সরা জ্ঞান করবে না।
দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আজকাল মানুষের চাহিদা অফুরন্ত। তাই এ চাহিদা মেটানো কোনো সহজ কাজ নয়। এটাও কিন্তু কোনো নতুন তত্ত্ব নয়। অর্থনীতির শাস্ত্রে এ নিয়ে অনেক বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়েছে প্রায় গত ২০০ বছরেরও ওপর। তবে বর্তমানে বিশ্বায়নের জগতে যা দাঁড়িয়েছে, এ অফুরন্ত চাহিদা মেটাতে হবে খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে। ভোক্তা বলেন আর ভোটারই বলেন, এরা এখন কোনো সরকারকেই চাহিদা মেটাতে সময়ের অপচয় সহ্য করে না, তা এখানেই হোক বা উন্নত দেশই হোক। আজকের জগতে সময় হলো বেশি মূল্যবান। এর জন্য দায়ী কিন্তু ভোক্তারা নয়। এ জন্য দায়ী আজকের তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তার (মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি)। মনে রাখতে হবে আমাদের দেশও কিন্তু এসব কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে নেই। গ্রামেগঞ্জে গেলেই তা বোঝা যায়। ফলে এত সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেও বেশ ত্বরিত গতিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে সজাগ এবং উপলব্ধি করেন। বর্তমান বিশ্বে চাহিদার ওপর আর লাগাম টানা সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, এখানে এই চাহিদাগুলোর সার্থক সমন্বয়, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও এর সাফল্য ভোক্তা এবং ভোটারদের দোরগোড়ায় পেঁৗছে দিতে হবে সরকারকে। যে দল এ কাজটি পারবে সাফল্যের সঙ্গে তারাই বিজয়ী হবে। গত ১০ বছর অনেক চেষ্টা করেও কোনো সরকারই মানুষের অনেক চাহিদাকে মেটাতে সমর্থ হয়নি। তাই ভোটাররা আশ্রয় নিয়েছে বিরোধীদের যথাক্রমে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে জয়ী করতে। আমরা এর পরিণাম এখন বুঝতে পারছি, পার্লামেন্টে সরকার-বিরোধীদের অকথ্য বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়া দেখে।
আমার আগের লেখায়ও বলেছি দুই-তৃতীয়াংশ জয় দুই দলের জন্যই (২০০১ এবং ২০০৮) কাল হয়েছে। যাই হোক, আজ আওয়ামী লীগ সরকারকে নির্বাচনী খেলায় ব্যাকফুটেই খেলা বাঞ্ছনীয়। ভোটাররা কিন্তু এর মধ্যে সরকারকে অনেক সিগন্যাল দিয়ে দিয়েছে। ঘরে-বাইরে আওয়ামী লীগের ব্যাকফুটে খেলা এবং আন্ডার ডগের নীতিমালা অনুসরণ করাই হবে বল্গ্যাকহোল থেকে পরিত্রাণের শ্রেষ্ঠ রক্ষাকবচ।
স ড. মোয়াজ্জেম হোসেন ভূইয়া অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী শিক্ষাবিদ ও উন্নয়ন গবেষক
রাজনৈতিক বল্গ্যাকহোলের কথা বলছিলাম। সবাই বলছেন সরকারের এত কিছু অর্জনের পরও কেন এমনটি হচ্ছে। ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কেন? এটা আজ সবার মুখে মুখে। অনেকগুলো কারণের মধ্যে মাত্র দুটি কারণ তুলে ধরা গেল। প্রথমত উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে 'আন্ডার ডগ' তত্ত্ব নির্বাচনকালীন সময়ে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচলিত। কী সরকার বা কী বিরোধী, সবাই নির্বাচনে 'আন্ডার ডগ' হয়ে থাকতে চায়। এর অর্থ হলো, বিরোধী এবং সরকারি দল উভয়েই ভোটারদের কাছে প্রমাণ করতে চায় যে, তারা খুবই দুর্বল এবং হয়তো নির্বাচনে পরাজয়বরণ করতেও পারেন। ভোটাররা তা যে কোনো দেশেই হোক 'আন্ডার ডগ'কে পছন্দ করে বেশি। তার কারণ হলো সহমর্মিতা বোধ। এ অনুভব সাধারণত বিরোধীদের জন্য বেশি প্রযোজ্য। ভোটারদের সিম্পেথি অর্জনের জন্য সরকারি দলও চেষ্টা করে আন্ডার ডগ হয়ে ভোটারদের সহমর্মিতা আকর্ষণ করতে। কিন্তু আমাদের বেলায় হয় তার উল্টোটি। গত ২০ বছরে দেখা গেছে, যারাই সরকারে থেকেছে, নির্বাচনের সময় তাদের অহমিকার ভার আরও বেড়ে গেছে। এ দেশের ভোটাররা বড় দু'দলের (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) কাউকে পীঠাপীঠি দুই টার্ম দিতে অপারগতা জানায়। আমাদের ভোটাররাও বুঝতে চান না যে, যে কোনো সরকার দুই টার্ম পেলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারে। তবে আমাদের বেলায় কোনটা সঠিক তা বলা বেশ কঠিন। কারণ ভোটাররা মনে করেন, টানা দুই টার্ম বিজয়ী হলে রাজনীতিবিদরা আর ধরাকে সরা জ্ঞান করবে না।
দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আজকাল মানুষের চাহিদা অফুরন্ত। তাই এ চাহিদা মেটানো কোনো সহজ কাজ নয়। এটাও কিন্তু কোনো নতুন তত্ত্ব নয়। অর্থনীতির শাস্ত্রে এ নিয়ে অনেক বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়েছে প্রায় গত ২০০ বছরেরও ওপর। তবে বর্তমানে বিশ্বায়নের জগতে যা দাঁড়িয়েছে, এ অফুরন্ত চাহিদা মেটাতে হবে খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে। ভোক্তা বলেন আর ভোটারই বলেন, এরা এখন কোনো সরকারকেই চাহিদা মেটাতে সময়ের অপচয় সহ্য করে না, তা এখানেই হোক বা উন্নত দেশই হোক। আজকের জগতে সময় হলো বেশি মূল্যবান। এর জন্য দায়ী কিন্তু ভোক্তারা নয়। এ জন্য দায়ী আজকের তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তার (মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি)। মনে রাখতে হবে আমাদের দেশও কিন্তু এসব কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে নেই। গ্রামেগঞ্জে গেলেই তা বোঝা যায়। ফলে এত সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেও বেশ ত্বরিত গতিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে সজাগ এবং উপলব্ধি করেন। বর্তমান বিশ্বে চাহিদার ওপর আর লাগাম টানা সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, এখানে এই চাহিদাগুলোর সার্থক সমন্বয়, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও এর সাফল্য ভোক্তা এবং ভোটারদের দোরগোড়ায় পেঁৗছে দিতে হবে সরকারকে। যে দল এ কাজটি পারবে সাফল্যের সঙ্গে তারাই বিজয়ী হবে। গত ১০ বছর অনেক চেষ্টা করেও কোনো সরকারই মানুষের অনেক চাহিদাকে মেটাতে সমর্থ হয়নি। তাই ভোটাররা আশ্রয় নিয়েছে বিরোধীদের যথাক্রমে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে জয়ী করতে। আমরা এর পরিণাম এখন বুঝতে পারছি, পার্লামেন্টে সরকার-বিরোধীদের অকথ্য বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়া দেখে।
আমার আগের লেখায়ও বলেছি দুই-তৃতীয়াংশ জয় দুই দলের জন্যই (২০০১ এবং ২০০৮) কাল হয়েছে। যাই হোক, আজ আওয়ামী লীগ সরকারকে নির্বাচনী খেলায় ব্যাকফুটেই খেলা বাঞ্ছনীয়। ভোটাররা কিন্তু এর মধ্যে সরকারকে অনেক সিগন্যাল দিয়ে দিয়েছে। ঘরে-বাইরে আওয়ামী লীগের ব্যাকফুটে খেলা এবং আন্ডার ডগের নীতিমালা অনুসরণ করাই হবে বল্গ্যাকহোল থেকে পরিত্রাণের শ্রেষ্ঠ রক্ষাকবচ।
স ড. মোয়াজ্জেম হোসেন ভূইয়া অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী শিক্ষাবিদ ও উন্নয়ন গবেষক
No comments