প্রতিনিধি পরিষদে ভোট-নজরদারির পক্ষে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের রায়
টেলিফোনে আড়িপাতাসংক্রান্ত গোপন গোয়েন্দা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ। জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) গোপন এ কর্মসূচিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উত্থাপিত সংশোধনীর বিপক্ষে ভোট পড়েছে ২১৭টি।
পক্ষে পড়ে ২০৫ ভোট। গত বুধবার এ ভোটাভুটি হয়।মিশিগান অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা জাস্টিন অ্যাম্যাশ এ সংশোধনী উত্থাপন করেছিলেন। এনএসএর এ কর্মসূচি নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ এটিই প্রথম। এ পদক্ষেপ ঘিরে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের মধ্যে অস্বাভাবিক ঐক্য দেখা গেছে। এনএসএর মহাপরিচালক কিথ আলেজান্ডার সংশোধনী প্রস্তাবের কঠোর বিরোধিতা করেন।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সাবেক কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেন মার্কিনিদের ফোনে আড়িপাতাসংক্রান্ত এ কর্মসূচির কথা প্রথম ফাঁস করেন। পাশাপাশি তিনি এনএসএর ইন্টারনেটে গোপন নজরদারির কথাও সামনে টেনে আনেন। এসব গোপন নজরদারিতে মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা (প্রাইভেসি) লঙ্ঘিত হওয়ার অভিযোগ ওঠে। শুরু হয় বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা। এর প্রায় ছয় সপ্তাহ পর এ কর্মসূচির পরিধি সীমিত করা হবে কি হবে না, তার ওপর প্রতিনিধি পরিষদে ভোট হলো।
বুধবার ভোটের আগে জাতীয় নিরাপত্তার নামে গৃহীত এ কর্মসূচি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন আইনপ্রণেতারা। অ্যাম্যাশ সতর্ক করে বলেন, নিরাপত্তাসংক্রান্ত ভীতির দোহাই দিয়ে 'অধিকার লঙ্ঘনকে' বৈধতা দিচ্ছে সরকার। বিপক্ষ অবলম্বনকারীরা টুইন টাওয়ারে হামলাসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী হামলার উদাহরণ টেনে কর্মসূচিটি বহাল রাখার পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন। তাঁদের দাবি অনুযায়ী গোপন নজরদারি কর্মসূচির কারণে বিশ্বের ২০টি দেশের অন্তত ৫০টি সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা বরবাদ করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে ডজনেরও বেশি হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে।
হোয়াইট হাউজ সংশোধনী প্রস্তাবের বিরোধিতা করা সত্ত্বেও প্রতিনিধি পরিষদের অধিকাংশ ডেমোক্র্যাট (১১১ জন) প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। বিপরীতে প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন ৮৩ জন। অন্যদিকে রিপাবলিকানদের মধ্যে অ্যাম্যাশসহ ৯৪ জন আইনপ্রণেতা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। বিরোধিতা করেন ১৩৪ জন।
সংশোধনী প্রস্তাবটি যাতে পাস না হয়, সে জন্য এনএসএর মহাপরিচালক আলেকজান্ডার মঙ্গলবার ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের সঙ্গে আলাদা আলাদা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। আইনপ্রণেতাদের কাছে আড়িপাতাসংক্রান্ত কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি। আইনপ্রণেতারা ছাড়া সাধারণ মার্কিনিদের মধ্যে এ কর্মসূচি নিয়ে রয়েছে বিভক্তি। সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্ট, এবিসি নিউজ ও সিবিএস নিউজের আলাদা জনমত জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষ গোপন এ কর্মসূচির বিরোধী। ওয়াশিংটন পোস্ট ও এবিসির হিসেবে চার ভাগের তিন ভাগ মানুষ তাদের প্রাইভেসি নষ্ট হোক, তা চায় না। সিবিএস নিউজের জরিপ অনুযায়ী ৬৭ শতাংশ মানুষ নজরদারি কর্মসূচির বিপক্ষে মত দিয়েছে। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।
No comments