উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন কমাবেন না by আবদুদ দাইন

বাংলাদেশসহ অধিকাংশ দেশে নানা কারণে এক বিশাল জনগোষ্ঠীর পক্ষে নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অকালে ঝরে পড়ার কারণে জনগোষ্ঠীর অনেকেই কর্মজীবন তথা চাকরি, ব্যবসা বা সুবিধামতো পেশায় ঢুকে অর্থ উর্পাজনে নিয়োজিত হয়।
কর্মজীবনে প্রবেশ করলেও চাকরির পদোন্নতি, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি বা জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজনে তারা উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী। এজন্যই ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য সর্বক্ষেত্রে শিক্ষার বিস্তার ঘটানো। এই পদ্ধতিতে সারাদেশের জেলা, উপজেলা পর্যায়ে টিউটোরিয়াল কেন্দ্র ও পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। একইসঙ্গে দূরশিক্ষণ পদ্ধতি চালু করে রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ২০০০ সাল থেকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ বছর মেয়াদি ডিগ্রি কোর্স চালু করা হয়, যা ছিল শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। শিক্ষা বিকেন্দ্রীকরণের এই পদক্ষেপটি ছিল গ্রামগঞ্জের উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত গরিব শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এ সুযোগ পেয়ে গ্রামগঞ্জের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা ২০১০ সাল পর্যন্ত ডিগ্রিতে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করে আসছিল। বর্তমানে সারাদেশের জেলা, উপজেলায় ১৯৫টি ডিগ্রি টিউটোরিয়াল কেন্দ্র রয়েছে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন পদ্ধতিতে পড়াশোনার জন্য ২০টি কোর্স চালু রয়েছে। এর মধ্যে ডিগ্রি কোর্সটি ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ডিগ্রি পড়ার সুযোগ পাওয়ায় গ্রামাঞ্চলের অভিভাবকরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ।
কিন্তু হঠাৎ করে ২০১১ সালের মার্চে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি কোর্সকে ৪ বছর মেয়াদি করে সারাদেশে মাত্র ৩টি স্থানে ভর্তির স্থান নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আসনসংখ্যা রাখা হয়েছে এক হাজার। ঢাকায় ৫০০, রাজশাহীতে ২৫০, চট্টগ্রামে ২৫০ জন। ভর্তির আবেদনের যোগ্যতা জিপিএ-২.৫, যা কি-না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি সম্মান শ্রেণীতে ভর্তির যোগ্যতার সমপর্যায়ের। পূর্বের বিধান চালু থাকলে এ বছর সারাদেশে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেত। শিক্ষা বিস্তারের এই পদ্ধতিকে গলাটিপে ধরে সারাদেশের জেলা, উপজেলা পর্যায়ে স্থাপিত চলমান ডিগ্রি পর্যায়ের সমস্ত টিউটোরিয়াল কেন্দ্র গুটিয়ে খুবই সীমিত করে সারাদেশের মাত্র ৩টি বিভাগীয় শহরে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও মূল নীতিমালাসম্পন্ন পরিপন্থী। ফলে মাত্র ৩টি বিভাগীয় শহরের গুটি কয়েক শিক্ষার্থী পড়াশেনার সুযোগ পাবে। বাকি গ্রামগঞ্জের গরিব শিক্ষার্থী যারা সাংসারিক বা পেশাগত কাজ করেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছিল, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তুঘলকি সিদ্ধান্তের কারণে তারা পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। বিষয়টি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সরকারের শিক্ষা সংশিল্গষ্ট নীতিনির্ধারক ও শিক্ষামন্ত্রী অবশ্যই ভেবে দেখবেন বলে আশা করছি।
সহকারী অধ্যাপক
dainsanthia@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.