হরিণ হত্যা-মায়াও মায়া জাগাল না!
মায়া হরিণের টানা টানা মায়াবী চোখের চাহনি কোনো আবেশ ধরাতে পারেনি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আশপাশের কিছু মানুষের। হয়তো হরিণের সুস্বাদু মাংসই তার জানি দুশমন_ এ সত্যই মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক প্রাণসংহারি ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হলো।
গত শনিবার সমকালে 'লোকালয়ে গিয়ে প্রাণ হারাল তিনটি মায়া হরিণ' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে তিনটি হরিণ বেরিয়ে লোকালয়ে চলে আসে। আইন অনুযায়ী এ সম্পর্কে এলাকাবাসীর সংশ্লিষ্ট বন বিভাগকে জানানোর কথা। যথাসময়ে খবর পেলে বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হরিণ তিনটিকে উদ্ধার করে তাদের সংরক্ষিত বনে রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারতেন। কিন্তু এলাকাবাসীর মধ্যে কেউই এ সম্পর্কে যথাসময়ে বন বিভাগের কাছে সংবাদ পেঁৗছানোর ব্যবস্থা করেননি। তারা বিলম্বে সংবাদটি অবশ্য পেঁৗছান। কিন্তু ততক্ষণে প্রায় সব শেষ। ইত্যবসরে কতিপয় লোভী-নির্দয় মানুষের মাংসবিলাসের উপলক্ষ হয়েছে একটি হরিণ। আরেকটি হরিণকে জবাই করা অবস্থাতেই উদ্ধার করেন বন বিভাগের কর্মকর্তা। তৃতীয় হরিণটিও জখম অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অথচ যারা হরিণগুলো মেরে মাংস ভক্ষণের আয়োজন করেন তারা জানতেন, আইন অনুযায়ী হরিণ মারা দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু কেউই এ জন্য হরিণ তিনটির প্রাণ রেয়াত করার কথা ভাবেননি; বরং কী করে এগুলো জবাই করে মাংস ভক্ষণ করা যাবে এবং বিধিবদ্ধ শাস্তি এড়ানো যাবে, সে চিন্তা করেছেন। নির্দয়-নিষ্ঠুর-বিবেকহীন মানুষ আর যা-ই হোক, মানবজাতির সুকৃতির স্মারক নয়। সুন্দর মায়া হরিণের অপরূপ সৌন্দর্য এই মানুষের মনে সৌন্দর্যবোধকে জাগ্রত না করে মাংস ভক্ষণের দানবীয় লোভকে উস্কে দেয়। অথচ মানব মনের এই সৌন্দর্যবোধ ও বিবেকবোধ মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্যের অন্যতম নির্ণায়ক। কমলগঞ্জ উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে বেরিয়ে আসা হরিণ তিনটির মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া গেলে ভবিষ্যতে হরিণ-মাংসে লোভাতুররা তাদের জিহ্বাকে সংযত রাখতে বাধ্য হবেন।
No comments