চরাচর-পর্যটন দিবস by বিশ্বজিৎ পাল বাবু
বাংলাদেশ হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত সমৃদ্ধ এক জনপদ। ভাটিয়ালি-ভাওয়াইয়ার সুর আর ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবনধারা আমাদের সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ। সংস্কৃতির এ স্বকীয় ধারা পর্যটনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছে। পর্যটন শিল্পে এ দেশের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা।
বর্তমানে বাংলাদেশে সাড়ে সাত শর ওপর পর্যটন স্পট রয়েছে। এর মধ্যে ২০-২৫টিতে মানুষ যাতায়াত করে।আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস। দিবসটার বয়স ৩২ হলো। পর্যটন শিল্পের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অবদান ও গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে ১৯৮০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরের দিনটিকে 'পর্যটন দিবস' হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। সেই থেকে সভা, সেমিনারসহ নানা আয়োজনে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল ১০টি পর্যটন মার্কেটের একটি হিসেবে ভাবা হচ্ছে। এক হিসাব থেকে দেখা যায়, ১৯৫০ সালে বাংলাদেশে পর্যটকের সংখ্যা ছিল ২৫ মিলিয়ন ডলার, আয় ছিল দুই বিলিয়ন ডলার। ৬০ বছর পর ২০১০ সালে বাংলাদেশ ঘুরে গেছে তিন লাখ তিন হাজার ৩৮৬ জন পর্যটক। তাঁরা খরচ করেছে ৫৫৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৯০ কোটি। ধরা হচ্ছে, ২০২০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬০ কোটি। পর্যটক বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বিপুলসংখ্যক পর্যটকের প্রায় ৭৩ শতাংশ ভ্রমণ করবে এশিয়ার দেশগুলোতে। বাংলাদেশ যদি এ বিশাল বাজার ধরতে পারে, তাহলে পর্যটনের হাত ধরে বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনীতি। পর্যটনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রতি আগত পর্যটকের ইতিবাচক ধারণা জন্মে। এতে পর্যটকের কাছে দেশটির ভাবমূর্তি যেমন বাড়ে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে দেশটি ব্যাপক লাভবান হয়। আমাদের দেশে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটলেও পর্যটন শিল্পে এখনো অনেক পিছিয়ে। আমাদের পাশের অনেক দেশ যখন পর্যটনকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধন করছে, তখন বাংলাদেশের অবস্থা মোটেও সন্তোষজনক নয়।
পর্যটনকে কেন্দ্র করে অর্থনীতির বিকাশ ঘটিয়ে এরই মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ প্রমাণ করেছে, 'পর্যটন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তি'। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার হিসাব মতে, সিঙ্গাপুরের জাতীয় আয়ের ৭৫ শতাংশই আসে পর্যটন খাত থেকে। তাইওয়ানের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ জাতীয় আয়ের ৬৫ শতাংশ, হংকংয়ে ৫৫ শতাংশ, ফিলিপিন্সে ৫০ শতাংশ, থাইল্যান্ডের ক্ষেত্রে প্রায় ৩০ শতাংশ। মালদ্বীপের অর্থনীতির প্রায় পুরোটাই পর্যটন খাতের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পর্যটন শিল্প রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কেননা পর্যটন শিল্পে আমাদের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। রয়েছে সুন্দরবন, কঙ্বাজার, কুয়াকাটা, সিলেটের চা বাগান, পার্বত্য অঞ্চলসহ অনেক পর্যটন স্পট। পর্যটকের সংখ্যা বাড়াতে এসব স্পটে ভ্রমণে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা এবং বিনোদন নিশ্চিত করতে হবে। সরকার এ বিষয়ে আশু পদক্ষেপ নেবে বলেই সবার আশা।
বিশ্বজিৎ পাল বাবু
No comments