দিল্লি সরকার ছাড়ল তৃণমূল
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও খুচরা ব্যবসায় বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগ (এফডিআই) অনুমোদন দেওয়ার প্রতিবাদে ভারতের ক্ষমতাসীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা (ইউপিএ) সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন তৃণমূলের ছয় মন্ত্রী। আগের ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাসভবনে গিয়ে তাঁরা পদত্যাগপত্র দেন। এরপর তাঁরা দলের সমর্থন প্রত্যাহার করে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে চিঠি দেন।
পদত্যাগপত্র দেওয়ার কারণে কেন্দ্রীয় ইউপিএ সরকারের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সোয়া তিন বছরের সম্পর্ক ছিন্ন হলো। তৃণমূলের পদত্যাগকারী মন্ত্রীরা হলেন- মুকুল রায় (রেলমন্ত্রী), সৌগত রায় (নগর উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী), শিশির অধিকারী (গ্রাম উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী), সুলতান আহমেদ (পর্যটন প্রতিমন্ত্রী), চৌধুরী মোহন জাটুয়া (তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী) ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী)।১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর ইউপিএ সরকার ঘোষিত দুটি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মমতা কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। ১৩ সেপ্টেম্বর জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর ১৪ সেপ্টেম্বর ভারতের খুচরা ব্যবসায় বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত দুটি প্রত্যাহার না করায় ১৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভা থেকে মমতা তাঁর দলীয় মন্ত্রীদের পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ইউপিএ সরকারের ওপর থেকে তাঁর দলের সমর্থন প্রত্যাহার করেন।
ভারতের একাধিক অনলাইন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের নয়াদিল্লির বাসভবনে জড়ো হন তৃণমূলের মন্ত্রীরা। সেখান থেকে বিকেল ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাসভবনে যান তাঁরা। এরপর রেলমন্ত্রী মুকুল রায় ও পাঁচ প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর হাতে তাঁদের পদত্যাগপত্র তুলে দেন। তৃণমূলের পদত্যাগী ওই ছয় মন্ত্রী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তাঁরা রাষ্ট্রপতির হাতে ইউপিএ সরকারের ওপর তৃণমূলের সমর্থন প্রত্যাহারের চিঠি দেন।
পদত্যাগের পর মুকুল রায় এফডিআই নিয়ে ফের কেন্দ্রীয় সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেন, সংখ্যালঘু ইউপিএ সরকার খুচরা ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শরিকদের সঙ্গে আলোচনা না করে নেওয়া এ সিদ্ধান্ত অনৈতিক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মুলায়ম ও মায়াবতীর সমর্থন পাচ্ছে ইউপিএ : সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়ম সিং যাদব ও বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতীর সমর্থন পাওয়ায় প্রাথমিক বিপদ কাটিয়ে উঠতে পেরেছে ইউপিএ সরকার। শরিক তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থন প্রত্যাহার করায় চাপে পড়ে ভারতের ক্ষমতাসীন জোট। এরপর কংগ্রেস এ সরকারকে বাঁচানোর লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করে।
মুলায়ম সিং যাদব গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি মন্ত্রিসভায় যোগ দেবেন না, তবে তাঁর দল এ জোটকে সমর্থন দেবে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ক্ষমতার বাইরে রাখার জন্য। আর তৃণমূল যে সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সমর্থন প্রত্যাহার করেছে, তাঁর দলও ওই বিষয়গুলো নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতীও। মন্ত্রিসভায় যোগ না দেওয়ার স্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন, বাইরে থেকে ইউপিএ সরকারে থেকে তিনি সমর্থন জানাবেন।
কংগ্রেস-তৃণমূল কংগ্রেস লড়াই : কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে তৃণমূলের ছয় মন্ত্রীর পদত্যাগের পর পাল্টা জবাব দিতে তৃণমূল নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার থেকে মন্ত্রীদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। ক্ষমতাসীন ইউপিএ সরকারের ওপর থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) সমর্থন প্রত্যাহারের কয়েক দিন পর এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।
আজ শনিবার কংগ্রেসের মন্ত্রীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে দেখা করে বিকেল ৫টায় পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ মুহূর্তে রাজ্য মন্ত্রিসভায় কংগ্রেসের দুই মন্ত্রী ও চার প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। তাঁরা হচ্ছেন- সেচ, বস্ত্রবয়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রী ডা. মানস ভুঁইয়া, মৎস্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণমন্ত্রী আবু হেনা, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী প্রমথনাথ রায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী আবু নাসের খান চৌধুরী, ক্রেতা সুরক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুনীল তিরকে এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন।
পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের রাজ্য কমিটির সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, 'টিএমসি সরকারি দলের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেছে। তাই আমরাও টিএমসি নেতৃত্বাধীন সরকার থেকে আমাদের মন্ত্রীদের সরিয়ে নেব।'
মন্ত্রীরা কখন পদত্যাগ করবেন- এ ব্যাপারে প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, 'আমি এখনো নিশ্চিত নই। কারণ মন্ত্রীদের কয়েকজন এখনো বাইরে আছেন।' সূত্র : এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও বিবিসি নিউজ অনলাইন।
No comments