সামনে নিউজিল্যান্ড, চোখে স্বপ্ন by নোমান মোহাম্মদ
মাঠ-গ্যালারিতে চোখ জুড়ানো সবুজ। সুদূরে ধূসর পাহাড়ের সারি। ওপরে ঝুলে থাকা সাদা মেঘখণ্ডের সঙ্গে আশ্চর্য সহাবস্থান কালো মেঘদলের। এসবের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দেওয়া নীল আকাশের পাশে উপস্থিত ছোপ ছোপ লালচে আবির।
এমনই হরেক রঙের খেলা ছিল কাল বিকেলে পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের আবহে। বাংলাদেশের জন্য রঙিন এক বিশ্বকাপের পূর্বাভাস ছিল কি তাতে?মাস তিনেক আগে জিম্বাবুয়ে সফর দিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের এই বিশ্বকাপ প্রস্তুতি। চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্বে দল শ্রীলঙ্কায় চলে এসেছে ৯ দিন আগে। আর যে টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে এত কিছু, সেটির উদ্বোধনও ৭২ ঘণ্টা আগের ঘটনা। তবে বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে আজ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে 'গ্রুপ অব ডেথ'-এর অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অভিযান। পারবে বাংলাদেশ?
এই প্রশ্নের উত্তর সময়ের হাতে তোলা। তবে প্রস্তুতি পর্বে চেষ্টার কমতি রাখেনি বাংলাদেশ। তিন মাস ধরে অফিসিয়াল-আনঅফিসিয়াল সব ম্যাচই খেলেছে এই ফরম্যাটে। ঘাম ঝরানোর অনুশীলন তো আছেই। কালও শেষ সময়ে নিজেদের ঝালিয়ে নিতে তামিম-সাকিব-মাশরাফিরা নেটে সময় কাটালেন দীর্ঘক্ষণ। তপ্ত রোদে নেট শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে একপসলা দুষ্টুমিও করে গেলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, 'ভাই, এ রকম ছায়ায় বসে থাকলে হবে? রোদে একটু অনুশীলন করুন না!'
বোঝা যায় যে, বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের কাছে হার চিড় ধরাতে পারেনি আত্মবিশ্বাসে। বরং অনেক দিন ধরে টোয়েন্টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে থাকায় টগবগ করে ফুটছেন তাঁরা। আর প্রতিপক্ষ যখন নিউজিল্যান্ড, তখন সেটির মাত্রা আরো বেড়ে যাওয়ার কথা। হোক না বছর দুয়েক আগের ঘটনা, তবু সেটিই তো কিউইদের বিপক্ষে শেষ মোকাবিলা। সেখানে ওয়ানডে সিরিজে ৪-০ তে হোয়াইটওয়াশের সঞ্জীবনী সুধা এখানে চলে আসতে দোষ কোথায়! সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সেটি এক প্রকার উড়িয়ে দিলেন 'নিউজিল্যান্ডও তো কিছু দিন আগে ভারতকে তাদের মাটিতে হারিয়ে আসা থেকে আত্মবিশ্বাস নিতে পারে' বলে। ঠিক। আবার বাংলাদেশও যে ওই 'বাংলাওয়াশ' থেকে আত্মবিশ্বাসের পারদ উঁচুতে নিতে পারে, তাও ভুল নয়। হয়তো দলকে আত্মতুষ্টি থেকে সতর্ক করার জন্যই অধিনায়কের ওই কৌশল। ৪-০ হোয়াইটওয়াশের এমনই মাহাত্ম্য!
তবে সামর্থ্যের প্রয়োগ করতে পারলে নিউজিল্যান্ড কেন, যেকোনো দলকেই যে হারানোর সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের, দৃপ্ত কণ্ঠে অধিনায়ক দিয়েছেন সে ঘোষণা, 'এই ছোট দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে কোন দল ফেভারিট, সেটি বলা মুশকিল। আমাদের দল ভারসাম্যপূর্ণ। যদি পরিকল্পনা ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারি, তাহলে বিশ্বের যেকোনো দলকে হারানোর সামর্থ্য রাখি। এই বিশ্বাস আমাদের আছে।' এই বিশ্বাসে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে পাল্লেকেলের উইকেট। প্রথাগত উপমহাদেশের মতো স্লো-লো উইকেট নয় এটি। স্পিনার দিয়ে প্রতিপক্ষ ঘায়েলের চিরন্তন কৌশল তাহলে কাজে লাগবে কিভাবে? মুশফিক তবুও আশাবাদী। প্রত্যাশা কেবল ভালো একটা শুরুর, 'এখানে পেসারদের জন্য সহায়তা থাকবে। তার মানে এই নয় যে, এখান থেকে স্পিনাররা কোনো সহায়তা পাবে না। মানিয়ে নিতে পারলে ব্যাটসম্যানরাও ভালো করবে। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভালো একটা শুরু। এরপর সেটি ধরে রাখতে পারলে যেকোনো কিছুই সম্ভব।'
উইকেট অবশ্য রহস্যময়ী হয়ে নেই বাংলাদেশ ক্যাম্পে। শ্রীলঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে মুশফিকুর এখানে খেলে গেছেন দুটো ম্যাচ। তামিম ইকবাল, মাহমুদ উল্লাহরাও অভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে ঠাওরে নিতে পারবেন উইকেটের চরিত্র। তবে ২২ গজী চৌকা আয়তক্ষেত্র যেমনই হোক, শেষ পর্যন্ত তাতে যে বাংলাদেশের তুরুপের তাস হবেন স্পিনাররা, আগের দিন সেটি জানিয়ে গেছেন কোচ রিচার্ড পাইবাস। কাল কিউই অধিনায়ক আলাদা করে বললেন প্রতিপক্ষের বাঁহাতি স্পিনারদের কথা, 'জানি যে, অন্তত ১২ ওভার বাঁহাতি স্পিন আমাদের সামলাতে হবে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।' কাল শেষ বিকেলের গোমড়ামুখো আকাশের সৌজন্যে কাভার দিয়ে ঢাকা উইকেট পেসারদের দিকে বাড়িয়ে দিতে পারে বন্ধুতার হাত। নেটে কাল দীর্ঘ সময় পেসারদের বিপক্ষে খেলে মিলস-ফ্রাঙ্কলিন-সাউদিদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেদের ঝালাই করে নিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
প্রস্তুতি তো সারা। সারা বছরের পড়াশোনা, ক্লাস টেস্ট, টিউটোরিয়াল_এসব শেষ। এবার চূড়ান্ত পরীক্ষা। সেখানে আজ থাকবে ২০১০-এ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পুনরাবৃত্তির প্রচেষ্টা। ওই সিরিজ জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী ডেকে সংবর্ধনা দিয়েছেন বিজয়ী বীরদের। অর্থ পুরস্কার, গাড়ি, প্লট এসেছে দেদার। আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ে এসবের কিছুই হবে না। তবে টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে ওঠার পথে দীর্ঘ এক পদক্ষেপ তো এঁকে দিতে পারবে মুশফিকুর রহিমের দল।
এই প্রাপ্তিও বা কম কিসে!
No comments