সীমান্তে গরু ব্যবসায়ীদের নির্মম কৌশল- ভারত থেকে গড়িয়ে পড়ছে গরু! by উজ্জ্বল মেহেদী
প্রায় ২০০ ফুট উঁচু পাহাড়। এর ওপর থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় গরু। এত উঁচু থেকে নামতে গিয়ে কোনোটি গড়িয়ে পড়ে, কোনোটি বা পড়ে হোঁচট খেয়ে। পাহাড়ের ও-পার থেকে উঠে এসে এ-পারে গড়িয়ে নেমে আর দাঁড়াতে পারে না। নিরীহ প্রাণীর এই করুণ অবস্থার দিকে বুদ্ধিমান মানুষের নেই কোনোই ভ্রুক্ষেপ।
গরু ব্যবসায়ীদের সময় বাঁচানোর নামে এবার শুরু হয়েছে এমনই নির্মমতা।
এখানেই নির্মমতার শেষ নয়। এ-পারে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে না-পারা গরু টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় নির্ধারিত স্থানে। অবস্থা মরণাপন্ন হলে শেষ রক্ষা হিসেবে জবাই দিয়ে মাংস ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়। কোরবানির পশুর হাট ধরার প্রতিযোগিতায় সময় বাঁচাতে সিলেটের সীমান্তপথ দিয়ে ভারতীয় গরু আমদানিতে এ বছর এই কৌশল অবলম্বন করছেন ব্যবসায়ীরা। সিলেটের পাদুয়া সীমান্তের সোনারহাট, কুলুমছড়া, মনাইকান্দি ও বিছনাকান্দি এলাকায় সরেজমিনে অবস্থান করে দেখা গেছে এই দৃশ্য।
ব্যবসায়ীদের এ কৌশলকে জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় লোকজন অমানবিক আচরণ বলেই শুধু খালাস। এই অপরাধ ঠেকাতে তাঁরা করছেন না কিছুই। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ সম্পর্কে জানলেও এটি ‘সাময়িক’ বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
ভারত থেকে গরু আমদানির ক্ষেত্রে সিলেট সীমান্তে কেবল মৌলভীবাজারের শমশেরনগর বৈধ করিডর হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। শমশেরনগর কাস্টমস কার্যালয় সূত্র জানায়, গরু আমদানির ছাড়পত্রের পর ব্যবসায়ীরা বিজিবির সংশ্লিষ্ট ফাঁড়ি থেকে প্রত্যয়নপত্র পেলে গরুপ্রতি ৫০০ টাকা করে রাখা হয়। কোরবানির হাট সামনে রেখে চলতি সপ্তাহ থেকে আমদানি শুরু হয়েছে।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, ঈদ সামনে রেখে সীমান্তে বৈধ পথে গরু আমদানি শুরু হয় এ মাসের শুরু থেকে। কিন্তু ও-পার থেকে গরু আনতে গিয়ে এ-পারে কারবারিদের প্রায় দু-তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়। বিকল্প পন্থায় ও-পার থেকে উঁচু পাহাড়ে গরু উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ১৫ থেকে ২০টি গরু নামানো সম্ভব হয়। গত এক সপ্তাহে পালা করে সহস্রাধিক গরু পাহাড় গড়িয়ে নামানো হয়েছে।
সরেজমিনে গত মঙ্গলবার দেখা গেছে, সীমান্তের ১২৬৪ থেকে ১২৬৬ পিলার এলাকায় চলছে এই কৌশল। দু-তিনটি করে গরু পাহাড়ের চূড়া থেকে এ-পারে ঢালু পথে নামিয়ে দেওয়া হয়। নামতে গিয়ে এগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কুলুমছড়ায় সকাল সাড়ে আটটা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে দু-তিনটি করে ১৭টি গরু পাহাড় থেকে নামানো হয়। এর মধ্যে ছয়টি জখম হয়। দুটো নেমে এসে আর দাঁড়াতেই পারেনি। এ অবস্থায় উভয় দেশের কারবারিরা গরু দুটো ধরাধরি করে ফাঁড়ি পথ এলাকার নির্ধারিত স্থানে এনে রাখেন। গরু আমদানির বৈধতার বিষয়টি সেখানেই বিছনাকান্দি ও সোনারহাট বিজিবির সদস্যদের নির্ধারণ করতে দেখা যায়।
গড়িয়ে আনা গরুর তদারক করছিলেন বিজিবির একজন সদস্য। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ পথটি (কুলুমছড়া) বৈধ নয়। তবে সময় বাঁচাতে সাময়িক এ পথ ব্যবহার করা। এভাবে আনা গরু আবার পরে বৈধ পথে (বিজিবি ফাঁড়ি) নেওয়ার বিষয়টি তিনি নজরদারি করছেন। তবে কুলুমছড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ কৌশলে যেসব গরু নামানো হয়, তার এক-তৃতীয়াংশও বৈধ পথে নেওয়া হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মনাইকান্দির একজন কারবারি বলেন, ‘হাটে যত তাড়াতাড়ি গরু তোলা যায়, তত ভালা। শেষ টাইমে চালান গেলে লাভ থুইয়া লুকসান গুনতে অইব, হের লাগি তারাই (ও-পারের ব্যবসায়ীরা) এই পথ বাইর করি দিছে। মাতকথা আগেই ঠিক করা (শর্ত)। চালানের দায় তারার। জখমি অইলে গরুর দাবি আর থাকে না, বেশি জখমি অইলে আমরা জবাই দিই।’
সিলেটের ‘আমরা সীমান্তবাসী’ আন্দোলনের উদ্যোক্তা ও সাবেক সাংসদ দিলদার হোসেন বলেন, ‘এটা শুধু পশুর প্রতি অমানবিক আচরণই নয়, একধরনের বর্বরতাও। এ অবস্থায় সীমান্ত পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল ও অরাজক হয়ে ওঠার আশঙ্কাও থাকে। আমরা এটি ও-পারের ব্যবসায়ীদের কৌশল বলে এড়িয়ে যেতে পারি না। বিজিবির সদস্যদের উচিত, দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া।’
বিজিবি ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পাহাড় গড়িয়ে গরু নামানোর কোনো ঘটনা ঘটছে না বলে দাবি করেন। এ-সংক্রান্ত একাধিক আলোকচিত্র রয়েছে বলে জানালে তাঁরা এ ঘটনা ‘বিচ্ছিন্নভাবে ঘটতে পারে’ বলে স্বীকার করেন।
মানবিক-অমানবিক প্রশ্নে সিলেট-৫ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিউল আজম বলেন, ‘এটা আসলে গরু কারবারিদের একান্ত নিজস্ব বিষয়। তাঁদের গরু তাঁরা অক্ষত অবস্থায় আনলেন, নাকি আনলেন না, তা আমাদের দেখার নয়। আমরা শুধু গরু বৈধভাবে আসছে কি না, তা নজরদারি করি। আমরা চাই, আমদানি বেশি হোক। ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা থাকায় এমনটি হলেও তা হয়তো সাময়িক। এতে সীমান্ত পরিস্থিতির ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই।’
এখানেই নির্মমতার শেষ নয়। এ-পারে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে না-পারা গরু টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় নির্ধারিত স্থানে। অবস্থা মরণাপন্ন হলে শেষ রক্ষা হিসেবে জবাই দিয়ে মাংস ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়। কোরবানির পশুর হাট ধরার প্রতিযোগিতায় সময় বাঁচাতে সিলেটের সীমান্তপথ দিয়ে ভারতীয় গরু আমদানিতে এ বছর এই কৌশল অবলম্বন করছেন ব্যবসায়ীরা। সিলেটের পাদুয়া সীমান্তের সোনারহাট, কুলুমছড়া, মনাইকান্দি ও বিছনাকান্দি এলাকায় সরেজমিনে অবস্থান করে দেখা গেছে এই দৃশ্য।
ব্যবসায়ীদের এ কৌশলকে জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় লোকজন অমানবিক আচরণ বলেই শুধু খালাস। এই অপরাধ ঠেকাতে তাঁরা করছেন না কিছুই। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ সম্পর্কে জানলেও এটি ‘সাময়িক’ বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
ভারত থেকে গরু আমদানির ক্ষেত্রে সিলেট সীমান্তে কেবল মৌলভীবাজারের শমশেরনগর বৈধ করিডর হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। শমশেরনগর কাস্টমস কার্যালয় সূত্র জানায়, গরু আমদানির ছাড়পত্রের পর ব্যবসায়ীরা বিজিবির সংশ্লিষ্ট ফাঁড়ি থেকে প্রত্যয়নপত্র পেলে গরুপ্রতি ৫০০ টাকা করে রাখা হয়। কোরবানির হাট সামনে রেখে চলতি সপ্তাহ থেকে আমদানি শুরু হয়েছে।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, ঈদ সামনে রেখে সীমান্তে বৈধ পথে গরু আমদানি শুরু হয় এ মাসের শুরু থেকে। কিন্তু ও-পার থেকে গরু আনতে গিয়ে এ-পারে কারবারিদের প্রায় দু-তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়। বিকল্প পন্থায় ও-পার থেকে উঁচু পাহাড়ে গরু উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ১৫ থেকে ২০টি গরু নামানো সম্ভব হয়। গত এক সপ্তাহে পালা করে সহস্রাধিক গরু পাহাড় গড়িয়ে নামানো হয়েছে।
সরেজমিনে গত মঙ্গলবার দেখা গেছে, সীমান্তের ১২৬৪ থেকে ১২৬৬ পিলার এলাকায় চলছে এই কৌশল। দু-তিনটি করে গরু পাহাড়ের চূড়া থেকে এ-পারে ঢালু পথে নামিয়ে দেওয়া হয়। নামতে গিয়ে এগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কুলুমছড়ায় সকাল সাড়ে আটটা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে দু-তিনটি করে ১৭টি গরু পাহাড় থেকে নামানো হয়। এর মধ্যে ছয়টি জখম হয়। দুটো নেমে এসে আর দাঁড়াতেই পারেনি। এ অবস্থায় উভয় দেশের কারবারিরা গরু দুটো ধরাধরি করে ফাঁড়ি পথ এলাকার নির্ধারিত স্থানে এনে রাখেন। গরু আমদানির বৈধতার বিষয়টি সেখানেই বিছনাকান্দি ও সোনারহাট বিজিবির সদস্যদের নির্ধারণ করতে দেখা যায়।
গড়িয়ে আনা গরুর তদারক করছিলেন বিজিবির একজন সদস্য। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ পথটি (কুলুমছড়া) বৈধ নয়। তবে সময় বাঁচাতে সাময়িক এ পথ ব্যবহার করা। এভাবে আনা গরু আবার পরে বৈধ পথে (বিজিবি ফাঁড়ি) নেওয়ার বিষয়টি তিনি নজরদারি করছেন। তবে কুলুমছড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ কৌশলে যেসব গরু নামানো হয়, তার এক-তৃতীয়াংশও বৈধ পথে নেওয়া হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মনাইকান্দির একজন কারবারি বলেন, ‘হাটে যত তাড়াতাড়ি গরু তোলা যায়, তত ভালা। শেষ টাইমে চালান গেলে লাভ থুইয়া লুকসান গুনতে অইব, হের লাগি তারাই (ও-পারের ব্যবসায়ীরা) এই পথ বাইর করি দিছে। মাতকথা আগেই ঠিক করা (শর্ত)। চালানের দায় তারার। জখমি অইলে গরুর দাবি আর থাকে না, বেশি জখমি অইলে আমরা জবাই দিই।’
সিলেটের ‘আমরা সীমান্তবাসী’ আন্দোলনের উদ্যোক্তা ও সাবেক সাংসদ দিলদার হোসেন বলেন, ‘এটা শুধু পশুর প্রতি অমানবিক আচরণই নয়, একধরনের বর্বরতাও। এ অবস্থায় সীমান্ত পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল ও অরাজক হয়ে ওঠার আশঙ্কাও থাকে। আমরা এটি ও-পারের ব্যবসায়ীদের কৌশল বলে এড়িয়ে যেতে পারি না। বিজিবির সদস্যদের উচিত, দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া।’
বিজিবি ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পাহাড় গড়িয়ে গরু নামানোর কোনো ঘটনা ঘটছে না বলে দাবি করেন। এ-সংক্রান্ত একাধিক আলোকচিত্র রয়েছে বলে জানালে তাঁরা এ ঘটনা ‘বিচ্ছিন্নভাবে ঘটতে পারে’ বলে স্বীকার করেন।
মানবিক-অমানবিক প্রশ্নে সিলেট-৫ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিউল আজম বলেন, ‘এটা আসলে গরু কারবারিদের একান্ত নিজস্ব বিষয়। তাঁদের গরু তাঁরা অক্ষত অবস্থায় আনলেন, নাকি আনলেন না, তা আমাদের দেখার নয়। আমরা শুধু গরু বৈধভাবে আসছে কি না, তা নজরদারি করি। আমরা চাই, আমদানি বেশি হোক। ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা থাকায় এমনটি হলেও তা হয়তো সাময়িক। এতে সীমান্ত পরিস্থিতির ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই।’
No comments