ফুটপাতে চাঁদাবাজি-ভুক্তভোগী তো আমজনতাই
প্রতি মাসে রাজধানীর ফুটপাতের ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা চাঁদা ওঠে। টাকার এ পরিমাণই বলে দেয়, ফুটপাতের চাঁদাবাজি কতটা ভয়াবহ পর্যায়ে পেঁৗছেছে। চাঁদার টাকার ব্যবস্থা করতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা হচ্ছে।
ফলে ফুটপাতের চাঁদাবাজির ভুক্তভোগী এক অর্থে সাধারণ নিম্নবিত্তের ক্রেতারাই। বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, রাজধানীর শ্যামপুর থেকে শুরু করে মিরপুর-গাবতলী পর্যন্ত কয়েকশ' লাইনম্যানের মাধ্যমে চাঁদার অর্থ আদায় করা হয়। বিভিন্ন অভিজাত হোটেল ও ফ্ল্যাটবাড়িতে প্রতি রাতে কোটি কোটি টাকার চাঁদা ভাগাভাগি হয়। ফুটপাতের এ চাঁদাবাজি চলে প্রধানত ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের প্রভাবে। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদাবাজরাও পাল্টে যায়। এ চাঁদাবাজির নেতিবাচক দিক অনেক। প্রথমত, চাঁদাবাজদের টাকার জোগান দেওয়ার জন্য জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের আর্থিক ব্যয়ে চাপ বাড়ছে। দ্বিতীয়ত, চাঁদাবাজির নির্ধারিত ভাগ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকে পায়। ফলে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকার ফুটপাতে নিয়মবহির্ভূতভাবে দোকান বসানো হলেও প্রশাসন থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তৃতীয়ত, চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যের কারণে হকাররা ক্ষতিগ্রস্ত। হকার্স ফেডারেশন ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। ফলে কোনো হকার অর্থনৈতিকভাবে বিপদগ্রস্ত হলে হকার্স ফেডারেশন পদক্ষেপ নিতে পারছে না। নেতিবাচক এসব দিক বিবেচনায় রেখে ফুটপাতের চাঁদাবাজি বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। চিঠি ও কাফনের কাপড় পাঠিয়ে বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়ার ঘটনা তো রয়েছেই। ঈদ সামনে রেখে চাঁদাবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সে বিষয়ের দিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত। চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য রুখতে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকার অভাব রয়েছে, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ করতে প্রশাসনকে সক্রিয় হতে হবে। রাজধানীর ব্যস্ততম ফুটপাতে অবৈধভাবে বসানো দোকানগুলোর ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আমরা আশা করি, প্রশাসন ফুটপাতের চাঁদাবাজি রুখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ক্ষমতাসীন দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা যাতে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ফুটপাতের চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত না হতে পারেন, তা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।
No comments