সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়-সমালোচনা আমলে নিলে সবারই মঙ্গল
গণতন্ত্র সুসংহত করায় স্বাধীন গণমাধ্যম অপরিহার্য_ এ নিয়ে দ্বিমত করার অবকাশ নেই। বুধবার সংবাদপত্র সম্পাদকদের সঙ্গে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর মতবিনিময়ে এ প্রসঙ্গ বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে।
সরকারের সঙ্গে গণমাধ্যমের সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হলে এ প্রক্রিয়া নিশ্চিতভাবেই বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। 'টেলিভিশন টক শো বন্ধ করে দেওয়া হবে'_ এমন গুজব ছড়িয়ে পড়া এবং মন্ত্রীসহ সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, এমনকি শীর্ষ নেতা-নেত্রীদের গণমাধ্যমের সংবাদ, আলোচনা-সমালোচনা সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য আসার পর এই গুজব ডালপালা মেলে। সাংবাদিকদের তুচ্ছ কারণে হুমকি প্রদান এবং তাদের ওপর হামলার ঘটনাও উদ্বেগের। সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী এ প্রশ্নের সদুত্তর দিতে চেষ্টা করেছেন। তিনি গণতন্ত্র শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে সরকার ও গণমাধ্যমের মধ্যকার সুসম্পর্ককে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। প্রকৃতপক্ষে গণমাধ্যম যদি সরকার এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ক্ষমতাশালীদের কর্মকাণ্ডের বিশ্লেষণ না করে, তাহলে তারা ভুল করছেন কি শুদ্ধ করছেন, তা নির্ণয় করবেন কী করে? তদুপরি যাদের আমজনতা বলা হয় এবং যারা প্রধানত কারা সরকার গঠন করবে_ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তা নির্ধারণ করে, তাদের অধিকার কোথাও লঙ্ঘিত হচ্ছে কি-না, মানবাধিকার রক্ষিত হচ্ছে কি-না, তাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে কি-না, এসব বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমকে সদা সক্রিয় থাকতে হয়। এ জন্যই তো গণমাধ্যমকে গণতন্ত্রে 'ফোর্থ এস্টেট' বলা হয়। গণমাধ্যমের খবর বা বিশ্লেষণ কারও কারও মনঃক্ষুণ্নম্ন হওয়ার কারণ হতেই পারে। কিন্তু এটাকে আত্মোপলব্ধির উপায় হিসেবে গ্রহণ করলে দেশ ও সমাজ উপকৃত হয়। এমনকি যার সমালোচনা করা হলো, তিনি বা তারা এই প্রক্রিয়ায় আত্মোপলব্ধি পেয়ে উপকৃত হতে পারেন। বিষয়টি যে তথ্যমন্ত্রী উপলব্ধি করেন, তার বক্তব্যে এমনটিই মনে হয়েছে। তবে সমালোচনা, যুক্তি এবং সঠিক তথ্য-উপাত্তনির্ভর হওয়ার আবশ্যকতাও তিনি তুলে ধরেছেন। আর এ বিষয়টি সংবাদসেবীরাও স্বীকার করেন এবং মানেনও। প্রেস কাউন্সিল শক্তিশালী করার তাগিদ জোরালোভাবে আসার কারণ এটাই। এ জন্যই সম্পাদকদের সঙ্গে তথ্যমন্ত্রীর বুধবারের বৈঠকটি আনুষ্ঠানিক হলেও খোলামেলা ও প্রাণবন্ত হতে পেরেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রশিল্পের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড, অন্তর্বর্তীকালীন মহার্ঘভাতা নিয়ে মন্ত্রী সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। পত্রিকাশিল্পের সংকট দূর করার জন্য নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার, সরকারি বিজ্ঞাপনের পরিমাণ ও হার বৃদ্ধি এবং প্রদত্ত বিজ্ঞাপনের অর্থ দ্রুত পরিশোধের মতো বিষয়গুলো মন্ত্রী জরুরি ভিত্তিতে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসব সমস্যা দূর করা গেলে পত্রিকাগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে এবং সেগুলো বিরাজমান সংকট থেকে রক্ষা পাবে। সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড সুবিধা কার্যকর করার সঙ্গে পত্রিকাগুলোর আয় বৃদ্ধির প্রশ্ন রয়েছে। সরকারি বিজ্ঞাপনের পরিমাণ ও মূল্যবৃদ্ধি এ ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ অবদান রাখবে। নতুন ওয়েজ বোর্ড প্রদানের বিষয়টি জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি সামাল দেওয়া এবং এই পেশাকে মেধাবীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করার জন্যই প্রয়োজন। তাই গোটা সংবাদপত্রশিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে সম্পাদকদের সঙ্গে তথ্যমন্ত্রীর যে দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা হয়েছে, তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা আশা করি, তথ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সুযোগ-সুবিধা আরও সম্প্রসারিত হবে, সরকার-গণমাধ্যম সম্পর্কে টানাপড়েন থাকবে না এবং সংবাদপত্রে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
No comments