পল্লী বিদ্যুতের দাম ফের বাড়ানোর প্রস্তাব by আরিফুজ্জামান তুহিন

মাস দেড়েকের মধ্যেই পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ৯ শতাংশ হারে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে। যদি প্রস্তাব অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম বাড়ে তাহলে নিম্ন আয়ের মানুষ ও কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হবে।


অব্যাহত লোকসান সামাল দিতেই এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে আরইবির দাবি।
বিইআরসি প্রস্তাবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। প্রতিষ্ঠানটি গত ২০ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল, যা কার্যকর হয়েছে ওই মাসের ১ তারিখ থেকে। সেবারও দাম সব থেকে বেশি বেড়েছিল পল্লী বিদ্যুতের।
সূত্র জানায়, আরইবির ৬৫টি সমিতির মধ্যে ৬৪টিই লোকসানে থাকায় দাম বাড়িয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাইছে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কম্পানিটি। গত ১৫ অক্টোবর দাম বাড়ানোর একটা প্রস্তাব বিদ্যুৎ খাতের মূল্য নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিইআরসির কাছে পাঠানো হয়। একই সময় সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগেও আবেদনটি জমা দেয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ। দাম না বাড়ানো পর্যন্ত সমিতির বার্ষিক ব্যয় নির্বাহের জন্য ৫৩৩ কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গ্রাহকদের নূ্যনতম মাসিক বিল ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সরকারের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ একবার স্থগিত রাখার অনুরোধও করেছে আরইবি।
২০১০-১১ অর্থবছরে আরইবির সমিতিগুলোর লোকসানের পরিমাণ ছিল প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে ৪২ পয়সা। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ষষ্ঠ দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ার পরও আরইবির দাবি, তাদের প্রতি ইউনিটে ঘাটতি ৫০ পয়সা। চলতি অর্থবছরে এ লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ৬৪৫ কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ এই লোকসান কাটিয়ে ওঠার জন্যই প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
আরইবি সূত্র জানায়, তাদের ৯১ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে সেচগ্রাহক দুই লাখ ৬০ হাজার। অন্যরা আবাসিক গ্রাহক। আবাসিক ও সেচগ্রাহকরাই আরইবির বিদ্যুতের ৬২ দশমিক ৫৭ শতাংশ ব্যবহার করেন। আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে ৬৮ লাখ গ্রাহক সরকার ঘোষিত লাইফলাইন শ্রেণীর (০-১০০ ইউনিট ব্যবহারকারী)। আরইবির প্রস্তাব গৃহীত হলে এ শ্রেণীর বিদ্যুতের দাম এক লাফে ৬৫ টাকা থেকে ১০০ টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকিতে আরইবির গ্রাহকরাই লাভবান হয়ে থাকেন। যদি আরইবির বিদ্যুতের দাম বাড়ে তাহলে ধান উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাবে। এতে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর এর প্রভাব পড়বে।
আরইবির গ্রাহকরা বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনেন : বিইআরসি সূত্র জানায়, বরাবরই আরইবির গ্রাহকরা অন্য গ্রাহকদের তুলনায় বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে থাকেন। ষষ্ঠ দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষ বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনছেন। ষষ্ঠ দফায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কম্পানি (ডেসকো) ও পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানির (ওজোপাডিকো) বিদ্যুতের দাম একই রকম রাখা হয়; বৈষম্যের শিকার হয়েছেন শুধু আরইবির গ্রাহকরা। ২০ সেপ্টেম্বর ঘোষিত বিদ্যুতের নতুন মূল্যে দেখা গেছে, প্রথম ধাপেই আরইবির গ্রাহকরা অন্য গ্রাহকদের চেয়ে ৩৩ পয়সা বেশি দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনছেন। নতুন করে আরইবির বিদ্যুতের দাম বাড়লে প্রথম ধাপেই ইউনিটপ্রতি দাম পড়বে ৪ টাকা ৫ পয়সা, যা অন্য কম্পানির দামের চেয়ে ৭২ পয়সা বেশি।
ভোক্তার অধিকার রক্ষা প্রতিষ্ঠান কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, 'বড়লোকের কমে, গরিবের পত্রিকায় (কালের কণ্ঠের প্রতিবেদন উল্লেখ করে) খবর হয়েছে। ধাপ ভেঙে নতুন নিয়ম করায় গতবার ধনীদের বিদ্যুতের দাম কমেছে, বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের বিদ্যুতের দাম।'
অধ্যাপক আলম বলেন, 'এটা অনিয়ম, অবিচার, বড় ধরনের অন্যায়, বৈষম্য। যারা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাঁরা বুঝতে পারছেন না, কত বড় অন্যায় হচ্ছে দেশের মানুষের ওপর।'

No comments

Powered by Blogger.