তুলে ধরার আয়োজন অপ্রতুল by ওমর কায়সার
নব্য প্রস্তর যুগে অস্ট্রো এশিয়াটিক জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল চট্টগ্রামে। ক্রিস নামের যে স্থানের বিবরণ দিয়েছেন গ্রিক ভৌগোলিক প্লিনি, ঐতিহাসিক নলিনী কান্ত ভট্টশালীর মতে সেটি বর্তমানের সন্দ্বীপ। পণ্ডিতদের মতে, প্লিনির উল্লিখিত পেন্টাপোলিশ আসলে চট্টগ্রামেরই আদিনাম। আরাকানের চন্দ্রবংশীয় রাজা সু লা তাইং সন্দয়া ৯৫৩ সালে চট্টগ্রামে এসে তৈরি করেছিলেন এক স্তম্ভ, যেখানে লেখা ছিল ‘চেৎ-ত-গৌঙ্গ’, যার অর্থ যুদ্ধ করা অনুচিত। ঐতিহাসিকদের ধারণা, সেই শব্দগুলো বিবর্তিত হয়ে চট্টগ্রাম নামটির উৎপত্তি। পাহাড়-সমুদ্র ও নদীঘেরা এই শহরের ইতিহাস তাই হাজার বছরেরও বেশি। মুর পরিব্রাজক ইবনে বতুতা চট্টগ্রামকে উল্লেখ করেছেন সোদাকাওয়াঙ নগর হিসেবে।
১৩৪৬ খ্রিষ্টাব্দে যে চট্টগ্রামের বর্ণনা তিনি দিয়েছেন, তা ছিল একটি আধুনিক সমৃদ্ধ বন্দর নগর। বহু শতাব্দী ধরে চট্টগ্রামে আরব, আরাকান, মোগল, পর্তুগিজ ও ইংরেজরা এসেছে। বহু রক্তের স্রোত এসে মিশেছে এই ভূখণ্ডে। এদের নানা কীর্তি আজও ছড়িয়ে আছে এই নগরে। চট্টগ্রামের সৌন্দর্যের মাঝে তাই যোগ হয়েছে অন্য এক গভীরতা। এ কারণে চট্টগ্রাম দেশের অন্য সব অঞ্চল থেকে স্বতন্ত্র। তবে এত কিছু নিয়েও চট্টগ্রামের বলার কথা যেন সামান্যই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ঐতিহাসিক এই শহরকে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরার আয়োজনের অপ্রতুলতা আমাদের হতাশ করে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরে পর্যটনশিল্প বিকাশের কোনো উদ্যোগ নেই। দু-একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাঝেমধ্যে পর্যটকদের নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও ব্যাপারটি তাদের প্রতিদিনের রুটিনের অন্তর্ভুক্ত নয়।
থাইল্যান্ডের নাগরিক ভিরাওয়াত পেশাগত কারণে চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন বেশ কয়েক বছর। চট্টগ্রামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ এই বিদেশি উচ্ছ্বসিত হয়ে প্রায়ই বলেন, ‘প্রকৃতি তোমাদের দেশটাকে কী অসাধারণভাবে সাজিয়েছে। অথচ এই সৌন্দর্য কাজে লাগানোর আয়োজন কোথায়?’
সীতাকুণ্ডের পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা স্বতঃস্ফূর্ত ঝরনার জল, দিগন্তবিস্তৃত পাহাড়ের ঢেউ দেখলে ভিরাওয়াতের উক্তির সত্যতা মেলে। একবার তিনি বলেছিলেন, ‘এ রকম একটা সীতাকুণ্ড যদি আমার দেশে থাকত, তবে সেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসত। আমাদের দেশে এর চাইতে কম সুন্দর জায়গায় প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক বেড়াতে যায়।’
চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে দূরের দিকে আঙুল তুলে ভিরাওয়াত বলেছিলেন, ‘এই যে পাহাড়ের পর পাহাড় অনাবাদি পড়ে আছে, এটা তো কোনো কাজে লাগছে না। এখানে অন্তত দু-একটি রোপওয়ে বানিয়ে এক পাহাড়ের সঙ্গে আরেক পাহাড়ের সংযোগ তৈরি করলেই পর্যটকের ভিড় লাগত। তাতে দেশের লাভ ছাড়া ক্ষতি তো নেই।’
শুধু ভিরাওয়াত নন, বাইরে থেকে চট্টগ্রামে এসে অনেকেই এ রকম কথা বলেন। চট্টগ্রামকে দেখার কিংবা বোঝার, এর ঐতিহ্যকে জানার তৃষ্ণা তাঁদের মেটেই না।
সত্যিকার অর্থে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান থেকে শুরু করে বাংলাদেশের কোথাও পর্যটনবান্ধব পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। চট্টগ্রাম শহরটা ঘুরে দেখতে চাইলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যানবাহন ভাড়া করে দেখা ছাড়া অন্য ভালো কোনো উপায় নেই।
অথচ শুধু এই চট্টগ্রাম শহর এবং এর শহরতলিতে রয়েছে কত কী দেখার। ফয়’স লেক, বাটালি পাহাড়, কর্ণফুলী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত, প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদার সৌন্দর্য দেখে যে কেউ মোহিত হন। চট্টগ্রাম শহর ও জেলার বাইরে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, কাপ্তাই, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, সীতাকুণ্ড, বাঁশখালী তো আছেই।
যদি কোনো পর্যটক ইতিহাস ও ঐতিহ্য খুঁজে বেড়ান, তাঁর জন্য রয়েছে বহু স্থাপনা, ইতিহাসে নীরব সাক্ষী—ওয়ার সিমেট্রি, আদালত ভবন, চেরাগী পাহাড়, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন, পাথরঘাটা গির্জা, চন্দনপুরা মসজিদ, পিকে সেন ভবন, রেলওয়ে কার্যালয় (সিআরবি ভবন), পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবসহ আরও অনেক পুরোনো নিদর্শন।
কিন্তু এসব দেখানোর জন্য কিংবা ঐতিহাসিক স্থানগুলো দেখিয়ে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য চট্টগ্রামে কোনো পর্যটন বাস নেই। নেই নগর জাদুঘর। অথচ আমাদের পাশের দেশ ভারতের প্রায় প্রতিটি শহরে পাওয়া যায় শহর ঘুরে দেখার পর্যটন বাস, সঙ্গে থাকেন ট্যুরিস্ট গাইড। সেখানকার তরুণেরা এটিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। চট্টগ্রামেও এই পেশার এবং এই পর্যটন ব্যবসার প্রসার ঘটতে পারত। সামান্য উদ্যোগে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের এই পথটি আরও প্রশস্ত হতে পারত।
প্রকৃতি যা দিয়েছে, তা রক্ষণাবেক্ষণের যেমন প্রয়োজন, তেমনি এর যথাযথ ব্যবহারও প্রয়োজন। আর এই যথাযথ ব্যবহারই সম্ভাবনাময় পর্যটনশিল্পকে সামনে এগিয়ে নেবে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরে পর্যটনশিল্প বিকাশের কোনো উদ্যোগ নেই। দু-একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাঝেমধ্যে পর্যটকদের নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও ব্যাপারটি তাদের প্রতিদিনের রুটিনের অন্তর্ভুক্ত নয়।
থাইল্যান্ডের নাগরিক ভিরাওয়াত পেশাগত কারণে চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন বেশ কয়েক বছর। চট্টগ্রামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ এই বিদেশি উচ্ছ্বসিত হয়ে প্রায়ই বলেন, ‘প্রকৃতি তোমাদের দেশটাকে কী অসাধারণভাবে সাজিয়েছে। অথচ এই সৌন্দর্য কাজে লাগানোর আয়োজন কোথায়?’
সীতাকুণ্ডের পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা স্বতঃস্ফূর্ত ঝরনার জল, দিগন্তবিস্তৃত পাহাড়ের ঢেউ দেখলে ভিরাওয়াতের উক্তির সত্যতা মেলে। একবার তিনি বলেছিলেন, ‘এ রকম একটা সীতাকুণ্ড যদি আমার দেশে থাকত, তবে সেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসত। আমাদের দেশে এর চাইতে কম সুন্দর জায়গায় প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক বেড়াতে যায়।’
চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে দূরের দিকে আঙুল তুলে ভিরাওয়াত বলেছিলেন, ‘এই যে পাহাড়ের পর পাহাড় অনাবাদি পড়ে আছে, এটা তো কোনো কাজে লাগছে না। এখানে অন্তত দু-একটি রোপওয়ে বানিয়ে এক পাহাড়ের সঙ্গে আরেক পাহাড়ের সংযোগ তৈরি করলেই পর্যটকের ভিড় লাগত। তাতে দেশের লাভ ছাড়া ক্ষতি তো নেই।’
শুধু ভিরাওয়াত নন, বাইরে থেকে চট্টগ্রামে এসে অনেকেই এ রকম কথা বলেন। চট্টগ্রামকে দেখার কিংবা বোঝার, এর ঐতিহ্যকে জানার তৃষ্ণা তাঁদের মেটেই না।
সত্যিকার অর্থে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান থেকে শুরু করে বাংলাদেশের কোথাও পর্যটনবান্ধব পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। চট্টগ্রাম শহরটা ঘুরে দেখতে চাইলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যানবাহন ভাড়া করে দেখা ছাড়া অন্য ভালো কোনো উপায় নেই।
অথচ শুধু এই চট্টগ্রাম শহর এবং এর শহরতলিতে রয়েছে কত কী দেখার। ফয়’স লেক, বাটালি পাহাড়, কর্ণফুলী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত, প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদার সৌন্দর্য দেখে যে কেউ মোহিত হন। চট্টগ্রাম শহর ও জেলার বাইরে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, কাপ্তাই, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, সীতাকুণ্ড, বাঁশখালী তো আছেই।
যদি কোনো পর্যটক ইতিহাস ও ঐতিহ্য খুঁজে বেড়ান, তাঁর জন্য রয়েছে বহু স্থাপনা, ইতিহাসে নীরব সাক্ষী—ওয়ার সিমেট্রি, আদালত ভবন, চেরাগী পাহাড়, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন, পাথরঘাটা গির্জা, চন্দনপুরা মসজিদ, পিকে সেন ভবন, রেলওয়ে কার্যালয় (সিআরবি ভবন), পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবসহ আরও অনেক পুরোনো নিদর্শন।
কিন্তু এসব দেখানোর জন্য কিংবা ঐতিহাসিক স্থানগুলো দেখিয়ে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য চট্টগ্রামে কোনো পর্যটন বাস নেই। নেই নগর জাদুঘর। অথচ আমাদের পাশের দেশ ভারতের প্রায় প্রতিটি শহরে পাওয়া যায় শহর ঘুরে দেখার পর্যটন বাস, সঙ্গে থাকেন ট্যুরিস্ট গাইড। সেখানকার তরুণেরা এটিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। চট্টগ্রামেও এই পেশার এবং এই পর্যটন ব্যবসার প্রসার ঘটতে পারত। সামান্য উদ্যোগে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের এই পথটি আরও প্রশস্ত হতে পারত।
প্রকৃতি যা দিয়েছে, তা রক্ষণাবেক্ষণের যেমন প্রয়োজন, তেমনি এর যথাযথ ব্যবহারও প্রয়োজন। আর এই যথাযথ ব্যবহারই সম্ভাবনাময় পর্যটনশিল্পকে সামনে এগিয়ে নেবে।
No comments