বৃক্ষের শক্তি by আফতাব চৌধুরী
পরিবেশবিদ্যা শিক্ষাদানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের দেশেও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে পরিবেশবিদ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। পরিবেশ-সচেতনতা শিক্ষার এক অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ হতে চলেছে। আগামী দিনে শিক্ষার প্রারম্ভিক স্তর থেকেই এ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘি্নত করার জন্য মানুষই যে একমাত্র দায়ী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই পৃথিবীতে লাখ লাখ প্রাণী ও উদ্ভিদের বসবাস। মানুষ তার মধ্যে একটি। আবার সভ্য মানুষই তার মধ্যে ব্যতিক্রমও বটে। মানুষই একমাত্র প্রজাতি, যে প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সভ্য জীবন যাপন করে। আর সমস্যার সৃষ্টি সেখানেই।
মানবসভ্যতা জন্ম দিয়েছে কৃষি, শিল্প, শহর-নগর ইত্যাদি। অন্যান্য প্রজাতির মোট সংখ্যা থেকে জনসংখ্যা অত্যধিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় প্রকৃতি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। অন্যান্য প্রজাতির কাছে মানুষ সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে অনেক প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের বিলুপ্তি ঘটেছে এবং এখনো ঘটছে। পরিবেশরক্ষায় গাছপালার ভূমিকা যে সর্বাধিক, তা বলাই বাহুল্য। জীবজগতে খাদ্য বা শক্তির জোগান অপরিহার্য। উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে, অন্য কোনো প্রাণী নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। সৌরশক্তি ব্যবহার করে সালোক-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিদ কার্বোহাইড্রেট বা গ্লুকোজ নামক মৌলিক খাদ্য উপাদান প্রস্তুত করে। এরপর পর্যায়ক্রমে তার রূপান্তর ঘটে এক শ্রেণী থেকে অন্য শ্রেণীতে স্থানান্তরিত হয়ে শক্তির জোগান দেয়। প্রত্যেক প্রাণীই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শক্তির জন্য উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল, তা সে মাংসাশী হোক বা নিরামিষাশীই হোক। তাই উদ্ভিদ হলো উৎপাদক আর বাকি সব প্রাণীই ভক্ষক। এককথায়, উদ্ভিদ ছাড়া এই পৃথিবীতে জীবন অকল্পনীয়। পরিবেশরক্ষায় উদ্ভিদের ভূমিকা অত্যন্ত ব্যাপক। উদ্ভিদ বাতাসে বিভিন্ন গ্যাসের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। বাতাসে কার্বন ডাই-অঙ্াইডের মাত্রা অত্যধিক হলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, কারণ ওই গ্যাস তাপ শোষণ করে রাখে। বর্তমানে গ্রিনহাউস এফেক্ট নামে যা সুপরিচিত, সেটা এ কারণেই হয়। উদ্ভিদ বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অঙ্াইড শোষণ করে গ্রিনহাউস এফেক্টের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে বাতাসে অঙ্েিজন যোগ করে বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত বজায় রাখতে সাহায্য করে। এভাবে উদ্ভিদ বায়ুদূষণ কমিয়ে বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখে। উদ্ভিদ বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে। পরিবেশদূষণ কমিয়ে এবং পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে উদ্ভিদ মানুষের শরীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সবচেয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আনন্দের কথা, আজকাল আমাদের দেশে শিক্ষিত, কমশিক্ষিত, এমনকি অশিক্ষিত অনেক মেয়ে নার্সারি এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ব্যবসা করে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গের বেশির ভাগ মেয়ে নার্সারি ব্যবসায় জড়িত। এ ক্ষেত্রে তাদের অবদান পুরুষের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্রেও নারীরা এগিয়ে আসছে। গাছপালা দ্রুত পরিবেশদূষণ সম্পূর্ণ রোধ করতে পারে না ঠিকই, তবে সেটা অনেকটাই কম করতে পারে, এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। আর এ কাজ সাধারণ মানুষের নাগালের একেবারে ভেতরেই। বাড়ি, রাস্তাঘাট, সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ_সর্বত্রই গাছপালা লাগানো সম্ভব। এ ব্যাপারে সবাই আন্তরিক হলে আমাদের পরিবেশ অনেকটাই দূষণমুক্ত ও সবুজ করে তোলা যায়। তবে শুধু গাছ লাগানোই শেষকথা নয়, সেগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাই গাছ লাগাতে হবে মাটির দিকে চেয়ে, ক্যামেরার দিকে নয়।
No comments