তত্ত্বাবধায়ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মাঠে নামছে বিএনপি by মোশাররফ বাবলু ও শফিক সাফি
১০ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত তিন বিভাগীয় শহর সিলেট, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ এবং পাঁচ স্থানে জনসভা করার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। রোডমার্চ শুরু হবে ঢাকা থেকে। গত মঙ্গলবার কর্মসূচি ঘোষণার পর গতকাল বুধবার থেকে বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে কেন্দ্র। রোডমার্চ কর্মসূচি পালনের জন্য টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। তাদের মূল লক্ষ্য দলকে সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী করা। সরকারকে আর ছাড় দিতে নারাজ বিএনপি। সরকারের সঙ্গে মূল লড়াই হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে মঙ্গলবার মহাসমাবেশ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গতকাল ঢাকা ও আশপাশের জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
আগামী জনসভাগুলোয় কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার, তার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে বক্তব্য দেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন। তিন বিভাগে সফলভাবে রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ করতে পারলে কোরবানির ঈদের পর আবারও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তিনি। তবে রোডমার্চ কর্মসূচি পালনে সরকারের পক্ষ থেকে বাধা এলে তাৎক্ষণিকভাবে হরতালের ডাক দেওয়া হবে বলে দলের একাধিক সিনিয়র নেতা জানান।
সূত্রে জানা যায়, প্রথম পর্যায়ে সিলেট, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম_এই তিন বিভাগে রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ হলে বরিশাল, খুলনা ও রংপুর বিভাগ অভিমুখে আরো তিনটি রোডমার্চ করবে বিএনপি। ঈদের পর দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন নেতারা। ঘোষিত রোডমার্চে চারদলীয় জোটের শরিক ও সমমনা দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকার পাশাপাশি জনসভায় বক্তব্য দেবেন।
রোডমার্চের কর্মসূচি সফল করার জন্য তিন বিভাগের যেসব জেলায় নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে, তা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রোডমার্চের পথে প্রতিটি জেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় পথসভা করবেন খালেদা জিয়া। ১৮ অক্টোবর রাজশাহী যাওয়ার পথে বগুড়ায় এবং ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে ফেনীতে রাত কাটাবেন। রাতে জেলা নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে। এর আগে ১০ অক্টোবর সিলেট যাবেন, তবে কোথাও রাতে বিরতি নেবেন না। সিলেট পেঁৗছে রাতে নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন, পরের দিন জনসভায় বক্তব্য দেবেন।
গতকাল থেকেই বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে দলের হাইকমান্ড থেকে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রে জানা যায়। রোডমার্চ কর্মসূচি সফল করতে সিনিয়র নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠনেরও উদ্যোগ চলছে। শিগগির খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে সিনিয়র নেতাদের বৈঠক বসবে। বৈঠকে কর্মসূচি সফল করার বিষয়ে আলোচনা হবে। রোডমার্চ কর্মসূচি সফলের জন্য জোটের শরিক দলের নেতাদের মধ্যেও আলোচনা হবে।
মির্জা ফখরুল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সরকারের প্রতি ধিক্কার জানিয়েছে দেশের মানুষ। মঙ্গলবারের জনসভা অবশেষে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। জনগণকে অভিনন্দন জানাই। আমাদের নেত্রী তিন বিভাগীয় শহরে রোডমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। ঘোষিত কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে চাই। আশা করি, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা আসবে না।'
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'অতীতের চেয়ে বর্তমানে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী। দলের মধ্যে কোনো গ্রুপিং নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি সফল করতে মাঠে নামব। রোডমার্চ কর্মসূচির মাধ্যমে দল সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আমাদের এখন একটাই দাবি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এ দাবি নিয়েই জনগণের কাছে যাব। রোডমার্চ ও জনসভা করব। বাধা এলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।'
স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, 'মঙ্গলবার অনেক দিন পর বিএনপির একটা জনসভা হয়েছে। গত ২৭ মাসে আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেশের কোনো উন্নয়ন করেনি সরকার। নির্বাচনী ওয়াদার একটিও পূরণ করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দেশের মানুষ দিশেহারা।'
এম কে আনোয়ার বলেন, দেশে যত উন্নয়নকাজ হয়েছে, সবই বিএনপির আমলে হয়েছে। বর্তমান সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে সর্বস্তরের মানুষ জনসভায় যোগ দিয়েছে। এ জন্যই জনসভা শেষ পর্যন্ত মহাসমাবেশে পরিণত হয়েছে। বস্তাভর্তি টাকা এনে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, '১০ অক্টোবর থেকে পর্যায়ক্রমে সিলেট, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগ অভিমুখে আমাদের রোডমার্চ শুরু হচ্ছে।' রোডমার্চের জন্য উলি্লখিত রুট বেচে নেওয়া হলো কেন_জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'প্রথম রোডমার্চ হবে সিলেট অভিমুখে। আমাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে। এবার হজরত শাহ জালাল (রহ.)-এর পুণ্যভূমি সিলেট থেকে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলন শুরু হবে। রোডমার্চের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানিসহ সব ধরনের তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং দেশের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরবেন খালেদা জিয়া। রোডমার্চের মাধ্যমে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী হবে। তিন বিভাগীয় শহরের সাংগঠনিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।' শুভবুদ্ধির উদয় হয়ে থাকলে সরকার এ কর্মসূচিতে কোনো বাধা দেবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা ও আশপাশের জেলা নেতাদের সঙ্গে খালেদার বৈঠক : ঢাকা মহানগর, ঢাকা জেলা ও আশপাশের জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে গতকাল রাতে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৈঠকে দলীয় নেতা-কর্মীদের সংগঠনের নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলার কড়া নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি হয়। বৈঠকে সিলেট, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরে রোডমার্চ ও জনসভা কর্মসূচি পালন সম্পর্কিত কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন নেতারা। এসব সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরে বৈঠক করবেন চেয়ারপারসন। ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চারদলীয় জোটের মহাসমাবেশ সফল করায় দলীয় নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানান খালেদা।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ঢাকা জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান, টাঙ্গাইল জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এম ইলিয়াস আলী, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক উইং কমান্ডার (অব.) হামিদুল্লাহ খান বীরপ্রতীক, মহানগর সদস্যসচিব আবদুস সালাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী সোহেল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মুন্সীগঞ্জ জেলা সভাপতি আবদুল হাই, মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক এস এ খালেক, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপুসহ অর্ধশতাধিক নেতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
No comments