রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ এবার দ. আফ্রিকার
এখনো কি হূৎ স্পন্দন বেড়ে যায় তাঁর? ঘামতে থাকে হাতের তালু? একটু অস্থির অস্থিরও যেন লাগে। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৯৯ রানে তিনি দাঁড়িয়েছেন এ নিয়ে ১০২ বার। হেলমেটের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়া এক জোড়া চোখ যেন কালও একটু অস্থিরই দেখাল। ৯৯-এ দাঁড়িয়ে শচীন টেন্ডুলকার একটি বল খেললেন সতর্কতার চওড়া ব্যাটে। নাগপুরের বিদর্ভ স্টেডিয়ামে তখন বিদীর্ণ চিৎ কার। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হয়ে উঠতে ব্যাকুল দর্শকদের বেশিক্ষণ অপেক্ষায় রাখলেন না। পরের বলটাই ডিপ কাভারে ঠেলে দিয়ে এক রান। সেই চিরচেনা ভঙ্গিতে, স্বর্গত পিতাকে উৎ সর্গ করা সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরি নম্বর ৯৯!
বিশ্বকাপে সব মিলে এটি তাঁর ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। এই বিশ্বকাপে দ্বিতীয়। প্রথমটি করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। স্ট্রোকের বর্ণচ্ছটায় কোনটি এগিয়ে কে জানে। টেন্ডুলকার হয়তো দুটোকেই দেবেন শূন্য নম্বর। একদিনও যে জেতা হলো না তাঁর!
২ বল আর ৩ উইকেট হাতে রেখে জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা। জয় হলো আসলে ক্রিকেট-রোমাঞ্চের। টি-টোয়েন্টির উত্থানের যুগে ৫০ ওভারের ক্রিকেট তার আবেদন হারিয়ে ফেলছিল যখন, সেই সময় এই বিশ্বকাপ হয়ে গেল ওয়ানডে ক্রিকেটে নবযৌবন ফিরিয়ে দেওয়ার। নাগপুরেও কাল প্রতিটা সেকেন্ডে রোমহর্ষক উত্তেজনা। পুলিশের লাঠিগুঁতো খেয়ে টিকিট পাওয়া সার্থক! স্বাগতিক দর্শকদের জন্য শুধু শেষটা প্রত্যাশামতো হলো না। টেন্ডুলকার যে আবারও মুখ কালো করে ছাড়লেন মাঠ!
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেও টেন্ডুলকার সেদিন ম্লান হয়ে গিয়েছিলেন অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের ব্যাটের ছায়ায়। ষাটের দুটো ইনিংস খেলা হাশিম আমলা আর জ্যাক ক্যালিসও কাল তাঁকে আড়াল করার ‘পাঁয়তারা’ করছিলেন। অবশ্য টেন্ডুলকারকে সেঞ্চুরি আনন্দটা বিস্বাদ করে দেওয়ার কাজটি ‘সফলভাবে’ করে রেখেছিলেন তাঁর সতীর্থরাই। কাল চীনের মহাপ্রাচীরের গাঁথুনি নিয়ে শুরু করার ভারতের ইনিংসে শেষ পর্যন্ত সুনামির আঘাত। ৮.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে গেল পাওয়ার প্লেতে রান তোলার তাগিদটা ‘ওশনিক প্লেট’ হয়ে ঠোক্কর খাওয়াতেই। যে ভারতের স্কোর ছিল ১ উইকেটে ২৬৭; তারাই অলআউট ২৯৬ রানে!
জাপানি সুনামির শোক তখন ভারতীয় গ্যালারিতে। ২৯ রানে শেষ ৯ উইকেটের পতন। শেষের দিক দিয়ে এমন ব্যাটিং-ধস ওয়ানডে ইতিহাসে দেখা গেছে মাত্র চারবার।
অথচ ভারত কাল চার-পাঁচ শ রান তুলে ফেলে কি না—এমন আলোচনাও হচ্ছিল একসময়। সেই আলোচনার উপলক্ষ এনে দিয়েছিল বীরেন্দর শেবাগের সঙ্গে টেন্ডুলকারের উদ্বোধনী জুটিতে আসা ১৪২ রান। ওভারপিছু যে জুটি রান তুলেছে আটেরও ওপরে। শেবাগ যথারীতি তাঁর মতোই ছিলেন। প্রথম বলেই চার মেরেছেন। এবার বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচের প্রতিটিতেই শেবাগ শুরু করলেন চার মেরে!
শেবাগ আর টেন্ডুলকারের জুটিটা একসময় হয়ে গিয়েছিল দ্বৈরথ। শেবাগ তাঁর মতো একচুলও পা না নাড়িয়ে সপাটে বল গ্যালারিতে পাঠিয়ে দেন তো খানিক পরে টেন্ডুলকারও বুঝিয়ে দেন শুদ্ধ ব্যাকরণই এখনো শেষ কথা। শেষ পর্যন্ত ফ্যাফ ডু প্লেসিস শেবাগ-ঝড় থামালেও টেন্ডুলকার-রথ ছুটছিলই। এবার গম্ভীরের সঙ্গে ১২৫ রানের জুটি। ১১১ রান করে টেন্ডুলকার ফিরে এলেন যখন, ভারতের হাতে শেষ ১০ ওভারে রানের বন্যা ছুটিয়ে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। সুনামির আঘাত তখনই। যে আঘাত এল ডেল স্টেইনের রূপ ধরে।
কদিন আগে মাইকেল হোল্ডিং তাঁর মন্তব্যে এখনকার বোলারদের মধ্যে কেবল স্টেইনকেই প্রকৃত ফাস্ট বোলারের মর্যাদা দেন। এর পরই এই ম্যাচে স্টেইনের শেবাগ-টেন্ডুলকারের হাতে লাঞ্ছিত হওয়া। ফিরতি স্পেলে এসে স্টেইনের যেন মনে পড়ে গেল, হোল্ডিংয়ের মতো কিংবদন্তির প্রশংসার মান তো রাখতেই হয়। একে একে তুলে নিলেন ৫ উইকেট। শেষ ১১ বলে ভারত উইকেট হারাল চারটি!
শেষের দিকে বোলারদের এই লড়াইয়ে উজ্জীবিত হয়েই রান তাড়া করতে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রান করবেন বলেই নাকি প্রথম চার ম্যাচে মাত্র ২১ রান করেছিলেন ক্যালিস। কাল এসে গিয়েছিল সেই সময়। দ্বিতীয় উইকেটে আমলার সঙ্গে তাঁর ৮৬ রানের জুটি অনেকটা পথ এগিয়ে নিয়েছিল দলকে। আমলার বিদায়ের পর ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গেও গড়েছিলেন ৪৬ রানের জুটি।
কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নেবেন বলেই হয়তো প্রথম চার ম্যাচে ২ উইকেট নিয়েছিলেন হরভজন সিং। কাল তিনিই ম্যাচে ফিরিয়ে আনলেন ভারতকে। আমলা, ডি ভিলিয়ার্স, জেপি ডুমিনি—তিনজনই তাঁর শিকার। ক্যালিসকে রানআউটে ফেরাতে ভূমিকা রাখল ডিপ থেকে তাঁর দুর্দান্ত থ্রোও। দক্ষিণ আফ্রিকার দিক থেকে ম্যাচের কাঁটা সাঁ করে ঘুরে গেল ভারতের দিকে।
ষষ্ঠ উইকেটে আবারও পাল্লাটাকে নিজেদের দিকে টেনে আনলেন ইয়োহান বোথা আর ডু প্লেসিস। বদলি হিসেবে নামা রায়নার দুর্দান্ত ক্যাচ বোথাকে ফিরিয়ে ভাঙল ৩২ রানের জুটি। অথচ আগের দু বলে চার আর ছয় মেরে নাটক জমিয়ে তুলেছিলেন বোথা।
নাটক জমজমাট সমাপ্তির অপেক্ষা নিয়ে গেল শেষ ওভারে। ৬ বলে চাই ১৩ রান। হাতে ৩ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকা পারবে? পারবে ভারতের চেয়েও বড় প্রতিপক্ষ হয়ে আসা মানসিক বাধাটাকে জয় করতে? গ্যালারির দিগন্তে যে উঁকি দিচ্ছে সেই অপশব্দ—চোকার্স! দক্ষিণ আফ্রিকা পারল! পারলেন আসলে রবিন পিটারসন। নেহরার করা শেষ ওভারের প্রথম দু বলে চার-ছয় থেকে ১০ রান! তৃতীয় বলে ২। চতুর্থ বলে? চার!
এই জয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভালোমতোই টিকিয়ে রাখল ‘মৃত্যুকূপ’ হয়ে ওঠা ‘বি’ গ্রুপ থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে। ‘বি’ গ্রুপ আর কত রোমাঞ্চ উপহার দেবে কে জানে!
বিশ্বকাপে সব মিলে এটি তাঁর ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। এই বিশ্বকাপে দ্বিতীয়। প্রথমটি করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। স্ট্রোকের বর্ণচ্ছটায় কোনটি এগিয়ে কে জানে। টেন্ডুলকার হয়তো দুটোকেই দেবেন শূন্য নম্বর। একদিনও যে জেতা হলো না তাঁর!
২ বল আর ৩ উইকেট হাতে রেখে জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা। জয় হলো আসলে ক্রিকেট-রোমাঞ্চের। টি-টোয়েন্টির উত্থানের যুগে ৫০ ওভারের ক্রিকেট তার আবেদন হারিয়ে ফেলছিল যখন, সেই সময় এই বিশ্বকাপ হয়ে গেল ওয়ানডে ক্রিকেটে নবযৌবন ফিরিয়ে দেওয়ার। নাগপুরেও কাল প্রতিটা সেকেন্ডে রোমহর্ষক উত্তেজনা। পুলিশের লাঠিগুঁতো খেয়ে টিকিট পাওয়া সার্থক! স্বাগতিক দর্শকদের জন্য শুধু শেষটা প্রত্যাশামতো হলো না। টেন্ডুলকার যে আবারও মুখ কালো করে ছাড়লেন মাঠ!
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেও টেন্ডুলকার সেদিন ম্লান হয়ে গিয়েছিলেন অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের ব্যাটের ছায়ায়। ষাটের দুটো ইনিংস খেলা হাশিম আমলা আর জ্যাক ক্যালিসও কাল তাঁকে আড়াল করার ‘পাঁয়তারা’ করছিলেন। অবশ্য টেন্ডুলকারকে সেঞ্চুরি আনন্দটা বিস্বাদ করে দেওয়ার কাজটি ‘সফলভাবে’ করে রেখেছিলেন তাঁর সতীর্থরাই। কাল চীনের মহাপ্রাচীরের গাঁথুনি নিয়ে শুরু করার ভারতের ইনিংসে শেষ পর্যন্ত সুনামির আঘাত। ৮.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে গেল পাওয়ার প্লেতে রান তোলার তাগিদটা ‘ওশনিক প্লেট’ হয়ে ঠোক্কর খাওয়াতেই। যে ভারতের স্কোর ছিল ১ উইকেটে ২৬৭; তারাই অলআউট ২৯৬ রানে!
জাপানি সুনামির শোক তখন ভারতীয় গ্যালারিতে। ২৯ রানে শেষ ৯ উইকেটের পতন। শেষের দিক দিয়ে এমন ব্যাটিং-ধস ওয়ানডে ইতিহাসে দেখা গেছে মাত্র চারবার।
অথচ ভারত কাল চার-পাঁচ শ রান তুলে ফেলে কি না—এমন আলোচনাও হচ্ছিল একসময়। সেই আলোচনার উপলক্ষ এনে দিয়েছিল বীরেন্দর শেবাগের সঙ্গে টেন্ডুলকারের উদ্বোধনী জুটিতে আসা ১৪২ রান। ওভারপিছু যে জুটি রান তুলেছে আটেরও ওপরে। শেবাগ যথারীতি তাঁর মতোই ছিলেন। প্রথম বলেই চার মেরেছেন। এবার বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচের প্রতিটিতেই শেবাগ শুরু করলেন চার মেরে!
শেবাগ আর টেন্ডুলকারের জুটিটা একসময় হয়ে গিয়েছিল দ্বৈরথ। শেবাগ তাঁর মতো একচুলও পা না নাড়িয়ে সপাটে বল গ্যালারিতে পাঠিয়ে দেন তো খানিক পরে টেন্ডুলকারও বুঝিয়ে দেন শুদ্ধ ব্যাকরণই এখনো শেষ কথা। শেষ পর্যন্ত ফ্যাফ ডু প্লেসিস শেবাগ-ঝড় থামালেও টেন্ডুলকার-রথ ছুটছিলই। এবার গম্ভীরের সঙ্গে ১২৫ রানের জুটি। ১১১ রান করে টেন্ডুলকার ফিরে এলেন যখন, ভারতের হাতে শেষ ১০ ওভারে রানের বন্যা ছুটিয়ে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। সুনামির আঘাত তখনই। যে আঘাত এল ডেল স্টেইনের রূপ ধরে।
কদিন আগে মাইকেল হোল্ডিং তাঁর মন্তব্যে এখনকার বোলারদের মধ্যে কেবল স্টেইনকেই প্রকৃত ফাস্ট বোলারের মর্যাদা দেন। এর পরই এই ম্যাচে স্টেইনের শেবাগ-টেন্ডুলকারের হাতে লাঞ্ছিত হওয়া। ফিরতি স্পেলে এসে স্টেইনের যেন মনে পড়ে গেল, হোল্ডিংয়ের মতো কিংবদন্তির প্রশংসার মান তো রাখতেই হয়। একে একে তুলে নিলেন ৫ উইকেট। শেষ ১১ বলে ভারত উইকেট হারাল চারটি!
শেষের দিকে বোলারদের এই লড়াইয়ে উজ্জীবিত হয়েই রান তাড়া করতে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রান করবেন বলেই নাকি প্রথম চার ম্যাচে মাত্র ২১ রান করেছিলেন ক্যালিস। কাল এসে গিয়েছিল সেই সময়। দ্বিতীয় উইকেটে আমলার সঙ্গে তাঁর ৮৬ রানের জুটি অনেকটা পথ এগিয়ে নিয়েছিল দলকে। আমলার বিদায়ের পর ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গেও গড়েছিলেন ৪৬ রানের জুটি।
কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নেবেন বলেই হয়তো প্রথম চার ম্যাচে ২ উইকেট নিয়েছিলেন হরভজন সিং। কাল তিনিই ম্যাচে ফিরিয়ে আনলেন ভারতকে। আমলা, ডি ভিলিয়ার্স, জেপি ডুমিনি—তিনজনই তাঁর শিকার। ক্যালিসকে রানআউটে ফেরাতে ভূমিকা রাখল ডিপ থেকে তাঁর দুর্দান্ত থ্রোও। দক্ষিণ আফ্রিকার দিক থেকে ম্যাচের কাঁটা সাঁ করে ঘুরে গেল ভারতের দিকে।
ষষ্ঠ উইকেটে আবারও পাল্লাটাকে নিজেদের দিকে টেনে আনলেন ইয়োহান বোথা আর ডু প্লেসিস। বদলি হিসেবে নামা রায়নার দুর্দান্ত ক্যাচ বোথাকে ফিরিয়ে ভাঙল ৩২ রানের জুটি। অথচ আগের দু বলে চার আর ছয় মেরে নাটক জমিয়ে তুলেছিলেন বোথা।
নাটক জমজমাট সমাপ্তির অপেক্ষা নিয়ে গেল শেষ ওভারে। ৬ বলে চাই ১৩ রান। হাতে ৩ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকা পারবে? পারবে ভারতের চেয়েও বড় প্রতিপক্ষ হয়ে আসা মানসিক বাধাটাকে জয় করতে? গ্যালারির দিগন্তে যে উঁকি দিচ্ছে সেই অপশব্দ—চোকার্স! দক্ষিণ আফ্রিকা পারল! পারলেন আসলে রবিন পিটারসন। নেহরার করা শেষ ওভারের প্রথম দু বলে চার-ছয় থেকে ১০ রান! তৃতীয় বলে ২। চতুর্থ বলে? চার!
এই জয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভালোমতোই টিকিয়ে রাখল ‘মৃত্যুকূপ’ হয়ে ওঠা ‘বি’ গ্রুপ থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে। ‘বি’ গ্রুপ আর কত রোমাঞ্চ উপহার দেবে কে জানে!
No comments