গল্প- 'নদীর নাম চিলমারী' by নীলু দাস (অগ্রন্থিত গল্প)
[ষাটের দশকের কথাশিল্পী নীলু দাস। আজকের প্রজন্মের কাছে অপরিচিত নাম। তিনি একটি দশক লেখালেখি করে হঠাৎ লেখালেখি থেকে দূরে সরে গিয়ে ছিলেন। কিন্তু এক দশক কাল পরিধিতে বিভিন্ন পত্রিকায় ষাটের অধিক প্রকাশিত গল্পে রেখেছেন তার মেধা ও মননের পরিচয়।
তিনি ১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার নীচতুলন্দর গ্রামে। মৃতু্যবরণ করেন ১০ ডিসেম্বর ২০০৩ সালে। কবি আমিনুর রহমান সুলতান নীলু দাসের ১২টি গল্প বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করে প্রকাশ। সম্প্রতি নীলু দাসের আরও একটি গল্প সংগ্রহ করেছেন তিনি সওগাত পত্রিকা থেকে। গল্পটির প্রকাশ কাল ভাদ্র ১৩৭০, ৪৬শ বর্ষ, ১০ সংখ্যায়। গল্পটি অগ্রন্থিত বলে এখানে ছাপা হল। ]
নীল জলের বুক থেকে অবিকল ডানা মেলা পাখীর মতো ভোরের সূর্যটা পূর্ব আকাশে উঁকি দেয়। রক্তলাল আলোর একটা ঝলক নীলাভ ঢেউ-এর চূড়ায় চূড়ায় মায়ামায় রঙের বাহার ছড়াতে ছড়াতে তীক্ষ্ন সে াতের টানে টানে প্রবল বেগে ছুটে যেতে থাকে ভাঁটার দিকে। রঙে রঙে তখন একাকার হয়ে ওঠে চিলমারীর বুকটা। প্রতি মুহূর্তে আবর্ত আর ঘূর্ণির মাঝে পড়ে বিচূর্ণ ঢেউ-এর কণাগুলো গাঙ্গচিলের মতো ছিটকে ওপরে ওঠে ঝিলমিল মতির মালার মতো কুয়াশার ফাঁকে ফাঁকে ঝর ঝর করে ঝরে পড়তে থাকে। ময়ূরের পাখা মেলা রূপের পেখম মেলে অবাক চিলমারীর ফুলে ওঠা বুকটা ওখন খিল খিল হাসির গমকে অকারণ কৌতুকে থর থর করে কাঁপতে থাকে।
ঢেউ-এর দোলায় কাঁপতে থাকা ডিঙ্গি নৌকার ওপর দাঁড়িয়ে প্রতিটি মাঝি তখন স্থির নিষ্পলক দৃষ্টি দিয়ে 'বেড়ের' মাঝে অদ্ভুত কৌশলে পাতা গোলাকার জালের দিকে চেয়ে থাকে। রাত্রির অন্ধকারে একরে পর এক মাছের ঝাঁক সে াতের টানে টানে 'বেড়ের' মাঝে এসে আশ্রয় নেয়। বৃত্তের আকারে পাতা জালের মাঝে ছড়িয়ে রাখা পচা কাঠের টুকরো আর ঝাউ পাতার ফাঁকে ফাঁকে নরম নির্লিপ্ত মন নিয়ে সারারাত ঘুরে বেড়ায় প্রতিটি মাছ। কিন্তু ভোরের রং করা অথৈ পানির বুকে সমুদ্র নীল ঢেউ-এর ঝাপটায় এক লহমায় ওদের স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। চোখের পলকে প্রতিটি মাছ তখন মুক্তির উদগ্র বাসনায় একদিক থেকে আরেক দিকে ছুটে যেতে থাকে। সাথে কৌশলী মানুষের নির্মম জালের বন্ধনগুলো কঠিন থেকে কঠিন হয়ে ওদের সারা দেহে লতার মতো জড়িয়ে যেতে থাকে। অবিরাম ছটছট শব্দে জালসুদ্ধ 'বেড়ের' কাঠিগুলো তখন থর থর করে কাঁপতে থাকে। ঠিক তখনই প্রাণপণ শক্তিতে থাবা জালটাকে টেনে তুলতে হয় নৌকার পাটাতনের ওপর। নদীর তোড়ের একটানা কল কল ছল ছল সুরের সাথে জাল টানার ছক ছক শব্দটা মিশে মিশে চিলমারী চরের ভোরের বাতাস তখন গমগম করে হাসতে থাকে। ঝিকমিকে স্বর্ণ গলা ঢেউ-এ অাঁকা চিলমারীর বুকের দিকে দৃষ্টি ফেরালে তখন দেখা যায় প্রতিটি 'বেড়ের' মাঝে এক ছন্দে জাল টানতে টানতে গলা ছেড়ে চিৎকার করছে উলস্নসিত প্রতিটি মাঝি।
সাবাস বাই,
হেই ও।
জুরসে টান্,
হেইও।
ভাদ্রমাস,
হেইও।
রূপার বাটার,
হেইও।
দিব পান,
হেইও।
খাইব বন্ধু,
হেইও।
মুখ লাল,
হেইও।
আরে সাবাস সাবাস সাবাস বাই।
নদীর জলে কলস ডুবিয়ে এক ঝটকায় কাঁখে তুলতে গিয়ে হঠাৎ থেমে যায় ঘাটপাড়ের মেয়েরা। প্রাণের ছোঁয়ায় ছোঁয়ায় ভরা বিচিত্র এক সুরের নেশায় কেমন যেন বিভোর হয়ে যায় ওরা। ভরা কলসগুলো মাটিতে সাজিয়ে রেখে স্বপ্নমাখা দৃষ্টি দিয়ে চিলমারীর বুকের ওপর মনের মানুষের দিকে ওরা ছুঁড়ে দেয় দিনের প্রথম হাসির উপঢৌকন। সকলের সামনে এগিয়ে গিয়ে ফেটে পড়া যৌবনময় দেহটাকে অপূর্ব কায়দায়
দুলিয়ে দুলিয়ে মুখে রাসু গলা ছেড়ে বলে ওঠে, সাবাস বাই।
সাথে সাথে নৌকা থেকে মাথা দুলিয়ে মাঝিরা সায় দেয়, আরে হেইও।
নাচের ভঙ্গিতে হাত তুলে আবার তাহাইদের রাসু, সাবাস বাই ভাদ্র মাস।
মিলিত কণ্ঠে জেলে মাঝিরা হাত উচিয়ে জবাব দিয়ে বসে, আইব বন্ধু চিন্তা নাই। সাবাস সাবাস বাই।
ইংগিত-মুখর জবাবের অর্থটা বুঝতে পেরে ঘাট-পাড়ের প্রতিটি মেয়েই মুখ টিপে হাসতে থাকে। খিল খিল হাসির গমকে সবাঙ্গ কাঁপিয়ে একেবারে ঢলে পড়ে যেতে চায় রাসু। পেছন থেকে রাসুর গায়ে একটা চিমটি কেটে ধমক দিয়ে ওঠে চামেলী, সর মুখপুড়ি, অত আসিডা কিয়ের? হেই দিগে চাইয়া দেখছছ, তর মানুষটা যে একলা একলা জাল টানতে টানতে গাইম্মা উঠতাছে।
হাসতে হাসতেই জবাব দেয় রাসু, গাইম্মা উটতাছেত আমি কি করবাম। আমিত একদিন কইছিলামই, মানুষ যহন রাখতা পার না আমাকেই রাহ, তুমার লগে জাল টাইন্যা দিয়াম। কই খুশী অইব আমার কথা হুইনা তানা রাইগা এক্কেবারে টং অইয়া গেল।
হাসতে হাসতে চামেলী বলে, তর মতন বুদ্ধি নাই যে হের লাইগ্যাই রাইগ্যা টং অইছিল। অইছে নে, তুই আর ঢং করিছ না। একটানে কলসাটাকে কাঁখে তুলে নিয়ে আবার বলে রাসু, ল' তাড়াতাড়ি যাইগা, রাইনদা বাইড়্যা ফির্যায় গাড আড়ন লাগবো।
হেত আহন লাগবই, বেহেই যহন মাছ বেচত যাইব গা হেই সম তুই গাড না আইলে নিতাইদার লগে ফস্টি নস্টি করব কেডা।
কলসটা কাঁখে নিয়েই ঘুরে দাঁড়ায় রাসু। চিক চিকে হাসিমুখে চমৎকার কৌতুকে চামেলীর চিবুকটা ধরে একটা নাড়া দিয়ে বলে ওঠে, ফষ্টি নষ্টি আমি করি, আর তুই বুজি করছ না, হুদাই তর শইলডা রাঙা অইয়া উটতাছে।
আমিত আমার জামাইর লগে ফষ্টি নষ্টি করি, তুথ করছ কার লগে?
আমি করি তর হতীনের লগে, তর অত জ্বলে কেরে? কথাটা বলে নিজের রঙে নিজেই হেসে ওঠে রাসু। আশ্চার্যের ধাক্কার চামেলীর দৃষ্টিটা তখন হতবাক হয়ে যায়। হাসির গমকে নদীর ঢেউ-এর মতো কাঁপতে থাকা রাসুর দেহটা। মনের ভেতরে কোথায় যেন জ্বালা ধরিয়ে দেয়। ভরা কলস থেকে এক অাঁজলা জল নিয়ে রাসুর মুখের ওপর ছিটিয়ে দিয়ে চামেলী বলে বসে, দুর পুড়ামুখী এমুন সর্বনাশা আসি আসিস না।
হুঁ, কি আসি। হঠাৎ থেমে গিয়ে পর মুহূর্তে কথাটার অর্থ বুঝতে পেরে একেবারে বন্যার জলের মতো উছল হাসির তালে দুলতে দুলতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে রাসু। পেছনে স্বর্ণ সূর্যের আরো তখন ওদের লুটিয়ে পড়া অাঁচলে ঝিকমিক রঙের বাহারে সূক্ষ্ম কণার মতো ঝরে পড়তে থাকে।
রক্তলাল সূর্যটা আগুনের রং নিতে নিতে যখন এক থাক আকাশের ওপর এসে দাঁড়ায় জালটানায় গতিবেগটা তখন দ্বিগুণ বেড়ে যায়। রোদের তাপ বাড়ার সাথে সাথে জালে আটকানো মাছগুলো প্রাণপণ শক্তিতে ছুটাছুটি করতে থাকে। অনেক সময় জাল ছিঁড়ে বড় বড় মাছগুলো গভীর জলে ছিটকে পড়ে পালিয়ে যায়। খুব দ্রুত গতিতে জালটানা শেষ করে নৌকার পাটাতনের নীচে মাছগুলোকে বাছাই করে পারি জমাতে হয় গঞ্জের হাটে দিকে। ভোর না হতেই দালালের কলরবে গঞ্জের হাটটা মুখর হয়ে ওঠে। কাজ শেষ করে যত আগে যাওয়া যায় ততই ভালো দামে মাছ বিক্রি করা যায়।
সবার আগে নিতাইর জালটানা শেষ হয়ে যায়। মৎস্যবিহীন শূন্য একটা জাল এক তাল হাতের টানে টানে পাটাতনের ওপর ওঠে আসে। আড়কাঠির ফাঁকে ফাঁকে সমস্ত জালটা তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখে নিতাই একটা মাছের চিহ্ন পর্যন্ত নেই সারাটা জালে। নিষ্পলক করুণ দৃষ্টি মেলে স্থির নিতাই মাঝি চেয়ে থাকে ঢেউ জাগা চিলমারীর বুকের দিকে। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ঢেউ-এর ওপর দিয়ে তখনও একটানা ভেসে আসছে বলিষ্ঠ ছেলে-মাঝিদের প্রাণখোলা জালটানার সুর। কুয়াশার স্তরে স্তরে কেমন যেন আচ্ছন্ন হয়ে যায় নিতাইর দৃষ্টি। আশ্চর্য। মাত্র পাঁচ বছর আগেও দুপুর পর্যন্ত জাল টানায় মগ্ন থাকতে হতো নিতাইকে। কঠিন পরিশ্রম আর আনন্দের ধাক্কায় ধাক্কায় অবশ হয়ে যেত তখন নিতাই মাঝির সারা দেহমন। গর্বের হাসি হেসে নিতাইর বাবা তখন বলে ওঠতো, সাবাস বেডা, এই রহম না অইলে মাঝি কি। মাছত মাছ, গাঙের বুহের মইধ্যে কি আছে হেইডা বিছরাইয়া বাইর করতে না পারলে মাঝির নামই মিছা।
অবাক নিষ্পলক দৃষ্টি মেলে নিতাই চেয়ে থাকে চিলমারীর দক্ষিণ বাঁকের শ্মশানটার দিকে। উঁচু থেকে ঢালু সবুজ দুর্বা। ছড়ানো বড় একটা চত্বর। চত্বরটায় চারদিকে সারি সারি দীর্ঘ সবুজ ঝাউগাছ। ঝাউগাছের পাতার আড়ালে হঠাৎ যেন প্রশান্ত হাসিতে ভরা একটা মুখ ভেসে ওঠে। নরসিংহ সর্দার। সত্যি তার বাবা নরসিংহ ছিলো। কালো আবলুস কাঠের মতো চিকচিকে বলিষ্ট পেশীবহুল দেহ। ভয়শূন্য উদার অতলান্ত দুই চোখের দৃষ্টি। অক্ষত অনমনীয় আশ্চর্য তার ব্যক্তিত্বের কাছে মাথা নত করে নিতো আশেপাশের চার চারটা গ্রামের সকল জেলে মাঝি। জলের ছোঁয়ায় ছোঁয়ায় নিতাইর দৃষ্টিটা ক্রমে ক্রমে ফোঁটায় ফোঁটায় গলে পড়তে থাকে। বুকের ভেতর গভীর একটা দীর্ঘনিশ্বাস খসে পড়ে মিলে যায় চিলমারীর বাতাসের সাথে।
নিজের অজ্ঞাতেই নিতাইর মনটা চলে যায় পাঁচ বছর আগের আশ্চর্য একটা দিনের মাঝে। হঠাৎ একদিন পঞ্চায়েত ডেকে আশ্চর্য ধৃষ্টতায় অগি্নপরীক্ষায় সাফল্য লাভের আশায় মরিয়া হয়ে ওঠেছিলো গঙ্গা মাঝি। অর্থের বলে বলীয়ান গঙ্গা মাঝি সেদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে চেয়েছিল নরসিংহ সর্দারের সামনে। ইজ্জতকে সে কিনে নিতে চেয়েছিলো অর্থের দম্ভ দিয়ে।
নির্ভয় চিত্তে দৃপ্ত কণ্ঠে নরসিংহ সেদিন পঞ্চায়েতের সামনে দাঁড়িয়ে বলে ওঠেছিলো: কিরে, 'হুনলাম তরা নাহি আমারে সর্দার মানতে চাছ না।' বালা কথা, তরা না মানলে আমিও সর্দারী চাই না। ক' কেডা কেডা আমারে মানতে চাছ না। গমগমে সেই কণ্ঠের আওয়াজ শুনে সবাই সেদিন পুতুলের মতো নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিলো।
ক' মুখ খুইল্যা, কেডা আমারে মানছ না। একজন বলেছিলো, তুমারে মানি না এইডা কি কইছি আমরা?
তরা কছনাই ঠিক, কিন্তুক বাইরে থাইক্যা কেডা যে কওয়াইত চায় হেইডা আমি জানি।
অপমানে গঙ্গার চোখ-মুখ সেদিন লাল হয়ে গিয়েছিলো। বিজয়ীর বেশে হাসিমুখে সেদিন ফিরে এসেছিলো নরসিংহ সর্দার।
ভাবতে ভাবতে নিতাইর দুই চোখের ঢল ঢলে দৃষ্টি চিলমারীর ফুলে ওঠা জলের মাঝে একাকার হয়ে লেপটে যায়। মনে পড়ে একটা নির্মম অভিশাপের টানে টানে সেদিন যেন ঝিরঝিরে বৃষ্টির মাঝে নদীর বুকে ডিঙ্গি ভাসিয়েছিলো নরসিংহ সর্দার। কোঁচ নিয়ে মাছ ধরতে ধরতে পড়ন্ত বেলায় শ্মশানের পাশে ওই বাঁকটার মুখে আসতেই দেখা হয় গিয়েছিলো গঙ্গার সাথে। পাশাপাশি দুটি নৌকায় পাঁচ-সাতজন মিলে ধীরে ধীরে উজান বাঁকে এগিয়ে যাচ্ছিলো ওরা। বৈঠার লম্বা একটা টান দিয়ে গঙ্গার নৌকাটাকে পাশ কাটিয়ে যেতে গিয়ে হঠাৎ থেমে গিয়েছিলো নরসিংহ। কে একজন বলে ওঠেছিলো, সর্দার যায়রে।
বিকৃত মুখে নিদারুণ অবজ্ঞায় গঙ্গা বলে ওঠেছিলো, সর্দারত, এই রহম সর্দার আমি চাইর পাঁচটা কিইন্যা রাখতাম পারি।
নৌকাটা থামিয়ে হাসিমুখে জবাব দিয়েছিলো নরসিংহ, টেহা থাকলেই কি বেক কাম করণ যায়রে গঙ্গা, সর্দারী করতে গেলে মানইজ্জতের কাম লাগে। জলের নীচে বৈঠাকে শক্ত করে চেপে ধরে কঠিন কণ্ঠে বলে ওঠেছিলো গঙ্গা। মান ইজ্জতের বড়াই আর যেই করক, তার মুহে হেইডা সাজে না। ভূতের মুহে রাম নাম বালা হুনায় না।
আগুনের আভায় নরসিংহ সর্দারের চোখে দুটি জ্বলে ওঠেছিলো। আড় করে বৈঠাকে চেপে ধরে কর্কশ কণ্ঠে বলে ওঠেছিলো, মুখ সামলাইয়া কথা কইছ গঙ্গা, পশু দিন চাইর পইসার পুডিমাছ বেচ্ছছ, ইজ্জতের তুই কি বুজবে। টেহার গরমে কারে কি কছ দিশা পাছ না বুজি।
নৌকার ওপর দাঁড়িয়ে বুক উঁচিয়ে চিৎকার করে ওঠেছিলো গঙ্গা, আমি পুডিমাছ বেচতাম হের লাইগ্যা তর জ্বলে কেরে। পুডিমাছ বেচলে ইজ্জত যায়, আর যার বৌ আরেক বেডার কাছে যাইত হের ইজ্জত বুজি বাড়ছে।
বজে র মতো হুংকার দিয়ে ওঠেছিলো নরসিংহ, সাবধান গঙ্গা কথাবার্তা টিক কইরা কইছ। আরে কইছি কইছি, আর চিলস্নাইছ না। যে বেডা বৌ-এর মন বরাইতে পারে না, হে একটা পুরুষ, তার ফিরার ইজ্জত। থু থু, ছেব ফালাই এমুন ইজ্জতের মুহ।
লোহার মতো শক্ত হাত দিয়ে কোঁচটাকে চেপে ধরে কাঁপতে কাঁপতে নরসিংহ বলেছিলো, সাবধান গঙ্গা, অহন কইতাছি, আর কথা কইছ না।
কেরে কইতাম না, তর ডরে নাহি। তর বৌত মইর্যা গেছে কিন্তুক গাঁওর মানুষত আছে, হেরার কাছে তুই মুখ দেখাছ কুন লাজে। তর বৌঃ
আর বলবার সুযোগ পায়নি গঙ্গা। অর্ধসমাপ্ত কথাতেই থেমে গিয়েছিলো তা কণ্ঠস্বর। লম্বা কোঁচটা উঁচিয়ে ধরে এক লাফে নৌকার ওপর ওঠে এসে গঙ্গার বুকের মাঝে দীর্ঘ কোঁচের ফলাগুলো আমুল বসিয়ে দিয়েছিলো নরসিংহ সর্দার। চিলমারীর ফটিকের মতো জল সেদিন খুনের রঙে রাঙা হয়ে ওঠেছিলো।
সে আজ কতদিনের পুরানো ইতিহাস। জলের ধারায় ধারায় সবার মন থেকেই মুছে গিয়েছে সেদিনের কাহিনী। শুধু অতন্দ্র প্রহরীর মতো একটা দুঃস্বপ্নকে অাঁকড়ে ধরে রেখেছে গঙ্গার ছেলে পচু। সমস্ত কিছু পেয়েও প্রচুর প্রতিরোধ স্পৃহা এতটুকু কমেনি। দিনের পরদিন আশ্চর্য কৌশলে নিষ্ঠুরের মতো নিতাইর বুকে আঘাত হেনেছে পচু। অথচ আশ্চার্য। উদভ্রান্ত দিশেহারা নিতাই ব্যথার যাতনায় যতবার লুটিয়ে পড়েছে ঠিক ততবার শুকতারার সি্নগ্ধ রূপ নিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে রাসু। পাচুর বোন রাসু। উজ্জ্বল হাসি দিয়ে সমস্ত ব্যর্থতাকে আড়াল করে অনুপম লাবণ্যের মায়ায় নিজেকে করুণ করে সামনে এসে দাঁড়াত রাসু।
ব্যাকুল আগ্রহে জিজ্ঞেস করত নিতাই, তুমার দাদার লগে আমার শত্রুতা কিন্তুক তুমি রুজ রুজ আমার কাছে আইও কেরে?
আমি আই দেইখ্যাই বুঝি তুমার রাগ?
না, না রাসু। গভীর আবেগে রাসুর একটা হাত চেপে ধরত নিতাই, তুমি আছ দেইখ্যাই আমি আইজও এই গাঁও আছি, না অইলে কুনদিন আমায় যাওন লাগত গা।
আশ্চার্য ক্ষোভে ফুঁসতে ফুঁসতে রাসু বলে ওঠতো, আমার দাদা যা করে তাই তুমি মাইন্যা নেও কেরে?
তুমি বেডার মতন হের সামনে খাড়াইতা পার না। অত বড় যোয়ান, তেও দাদারে ডরাও?
করুণ হাসি হেসে নিতাই রাসুর মুখের দিকে অপলক চেয়ে থাকতো। দীর্ঘ নিঃশ্বাসের সাথে সাথে বলে ওঠতো, যুয়ান অইলেই মাইনষের লগে লড়ন যায় না রাসু। তুমার দাদা অহন গাঁওর সরদার, বেহেই হেয় কতায় উডে আর বয়, কয়জনের লগে আমি লড়বার রাসু।
বেদনার ভারে কম্পিত দুটি চোখের স্থির দৃষ্টি নিয়ে বোবার মতো অসহায় নিতাইর দিকে চেয়ে থাকত রাসু।
কিন্তু পচুর শেষ আঘাতটায় নিতাইর চেয়ে বেশী ভেঙ্গে গিয়েছিলো রাসু। শংখিনীর মতো ফুলে ওঠে বলেছিলো, তুমি ডরাও কেরে, দাদার টেহা আছে দেইখ্যাই এমুন কাম করবোঃ তুমি লাডি ধরতা পর না।
লাডি! কার লগে, তুমার দাদার লগে। ব্যথার ভারে থেমে গিয়েছিলো নিতাইর কণ্ঠ। নিজের মাঝে ডুব দিয়ে একটা বীভৎস প্রতিচ্ছবির দিকে চেয়ে অন্তর থেকে কেঁপে ওঠেছিলো নিতাই। এত বড় বেঈমানী কোনোদিন কল্পনাও করেনি নিতাই। নির্দয় ওই পচু অমানুষিক কৌশলে স্মিত হাসিমুখে নিতাই চরম সর্বনাশটাকেই অবলীলায় নিজের হাতে তুলে দিয়ে ছিলো।
পচুর আস্ফালন, সারা গাঁশুদ্ধ মানুষের হূদয়হীন অবজ্ঞা সবকিছু সয়েও নিজের 'বেড়ে'র মাঝে প্রতিদিন জাল টেনে অন্ধকার রাতের নিঃসঙ্গ ছিপ নৌকার মতো সে াতের টানে টানে কূলে ভিড়বার চেষ্টা করছিলো নিতাই। কিন্তু একটা দিনের মাঝে প্রচুর আঘাতে সবকিছু বানের জলের মতো ভেসে গেল। নিতাইর 'বেড়ের' ঠিক আগে এবং পেছনে রাতারাতি দুটি 'বেড়' তৈরি করে নিয়েছিলো পচু। অর্থটা একেবারে জলের মতো পরিষ্কার। দু'দিকের 'বেড়' ডিঙ্গিয়ে মাঝখানে নিতাইর 'বেড়ে' একটি মাছও পড়বে না। দিনের পর দিন শূন্য জাল টেনে টেনে অর্থের অভাবে পচুর চোখের সামনে ঘুরে বেড়াবে এককালের সর্দারের ছেলে কাঙ্গাল নিতাই।
রাসু বলেছিলো, এইডাত নিয়ম না, এক 'বেড়ের' পঁচিশ গজের মইধ্যে আরেক 'বেড়' কেউ বানাইতে পারে না, তুমি মামলা কর।
মামলা! হেসে ওঠেছিলো নিতাই। মামলা করার তেজ তার অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে। শুধু নিয়ম নিয়ে চলে না। আইনকে যাচাই করতে গেলে চাই অনেক টাকা। সে সুযোগ নিতাই কোনোদিন পাবে না এটা সকলের আগে জানতে পেরেছিলো পচু।
হঠাৎ একটা গাঙচিলের কর্কশ চিঁ চিঁ শব্দ শুনে চমক ভেঙ্গে যায় নিতাইর। সামনে পেছনে 'বেড়'গুলো জনহীন নীরবতায় ঢেউএর দোলায় দোলায় কাঁপছে। সকাল বেলার সূর্য রং বদল করে একেবারে মাথার ওপর এসে দাঁড়িয়েছে। মাছ নিয়ে সকল জেলে-মাঝি কোন্ সময় যে ডিঙ্গি নৌকা বেয়ে গঞ্জের হাটে চলে গেছে একটুও টের পায়নি নিতাই। ছল ছল চিলমারীর বুকের দিকে এতক্ষণ চেয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত ঘাটের দিকে বৈঠা টানতে যাবে নিতাই। চিলমারীর সকল জেলেই মাছ নিয়ে গঞ্জের হাটে যাবে। শুধু সর্বহারা নিতাই চিরদিনের জন্য বঞ্চিত হয়েছে স্ফটিক স্বচ্ছ মাছের কান্তা ধরে দালালের সাথে দর কষাকষি করার ভাগ্য থেকে।
সামনের বাঁকটা পেরিয়ে নদীর বুকে হেলে পড়া বড় হিজল গাছটার কাছাকাছি যেতেই একটা চিকন কণ্ঠস্বর ফুটে যাওয়া ঢেউ-এর ফাঁকে ডুব দিয়ে ছল ছল করে ওঠে, হেই নিতাইদা।
গাছটার নীচে গিয়ে এক হাতে একটা ডাল ধরে নিতাই প্রশ্ন করে, এমুন কইর্যা চিলস্নাও কেরে?
মুক্তোর মতো এক পাটি দাঁত বের কের হাসতে হাসতে রাসু বলে, চিলস্নাই কি আর সাদে, কুমইড়ে দরছে যে!
কুমইড়ে নেয় না কেরে, নিলেইত আর দরনের চিন্তা করন লাগে না। বড় বড় চোখ দুটি পাকিয়ে রাসু বলে ওঠে, নিব কেম্নে, সইল যে অল্দি মাহা।
তুমার অলদি লইয়া তুমি থাহ, আমি যাই।
আরে যাই কি, আমারে লইয়া যাইবা না?
আশ্চর্য হয়ে নিতাই প্রশ্ন করে, তুমারে কই লইয়া যাইয়াম?
চিকন হাসিতে ভরে ওঠে রাসুর মুখ, ডর নাই, বেশি দূর নয় এই গাড থাইক্যা, নিসুন্দির গাড লইয়া যাইবা।
কেরে, নিসুন্দির গাড তুমি আইট্যা যাইতা পার না?
আইট্যা যাইতাম পারলে আর তুমার বাঙ্গা নাও ওঠতাম চাই। আন, এই দিগে আন একটু নাওডা।
না রাসু, কেউ দেখরে কত ছিু কইব।
কইব ঘোড়ার ডিম, তুমি নাও আন।
না রাসু, আর একদিন। বৈঠার একটা টান দিয়ে নৌকাটাকে দূরে সরিয়ে নেয় নিতাই। সাথে সাথে জলের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাসু। অবলীলায় সাঁতার কেটে নৌকাটার কাছে গিয়ে গলুইর মাঝে দু'হাত দিয়ে চেপে ধরে সে াতের টানে ভাসমান ভেলার মতো ভাসতে থাকে রাসু। শেষ পর্যন্ত অন্য কোনো উপায় না পেয়ে দু'হাত দিয়ে জলের বুক থেকে রাসুর ভিজে কাপড়ে লেপটে যাওয়া দেহটাকে নৌকার ওপর টেনে তুলে নিতাই। পাটাতনের ওপর বসে অকারণে খিল খিল করে হাসতে হাসতে একেবারে লুটিয়ে পড়ে রাসু। নিতাইর অচঞ্চল স্থির দৃষ্টির সামনে একটা জীবন্ত রূপের বন্যা যেন অবিকল চিলমারীর ঢেউ-এর মতো কাঁপতে কাঁপতে গড়িয়ে যেতে থাকে। বিমুগ্ধ নিতাই সে াতের টানে নৌকাটিকে ছেড়ে দিয়ে বিস্ময়ের ধাক্কায় নিস্পলক পাথরের মূর্তির মতো রাসুর মুখের দিয়ে চেয়ে থাকে।
হাসি থামিয়ে হঠাৎ রাসু বলে ওঠে, অইছে আর চাই থাহন লাগত না, নজর লাগব।
বৈঠাটায় একটা টান দিয়ে কথাটার জবাব দিতে গিয়ে রাসুর দিকে চেয়ে একেবারে নির্বাক হয়ে যায় নিতাই। অপূর্ব রঙ নিয়ে বসে থাকা রাসু আচমকা নৌকার পাটাতনের ওপর শুয়ে পড়ে কালো জালটা পিঠের ওপর বিছিয়ে দেয়। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাঁ করে একটা নৌকা নিতাইর নৌকাটাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। এইবার সব কিছু জলের মতো সহজ হয়ে ওঠে নিতাইর কাছে। তীর বেগে এগিয়ে যাওয়া নৌকার গলুইর ওপর বসে দুহাতে বৈঠা টানছে পচু। বাঁকের মুখে নৌকাটা মিলিয়ে যেতেই নিতাই বলে বসে, আগেইত কইছিলাম হগল সম' এইতা বালা না। তুমার দাদা যদি দেখত, তা অইলে কেমুন অইত?
একটুক্ষণ চুপ করে থেকে রাসু বলে, যা অউনের তা অইয়া গেছে। আমি পলাইলে কি অইব, দাদা আমারে ঠিকই দেখছে।
দেখছে! কেমন যেন মস্নান হয়ে যায় নিতাই। ক্ষোভের স্বরে বলে, বেশ অইছে, অহন বুইজ্যা নাও উডনের মজাডা!
নিতাইর গম্ভীর মুখের দিকে চেয়ে ফিক করে হেসে ফেলে রাসু, বলে মজা যে রহমেই অউক, কাইলও আমি আইয়াম নাও উডনের লাইগ্যা।
নিতাইর গম্ভীর মুখটা মেঘের মতো আরো ঘন হয়ে ওঠে। চিলমারীর জলের রেখায় রেখায় অাঁকা-বাঁকা এই রাসুর জীবন। স্ফীতা চিলমারীর উদ্দাম বুকের মতো সুন্দর আর বক্র ঢেউয়ের মতো ছলছল নির্ভয়। অনেক আনন্দ আর বেদনার মাঝ দিয়ে নিতাই চিনেছে রাসুকে। রূপবতী এই রাসু নির্লিপ্ত অবহেলায় অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারে।
নিসুন্দির ঘাটে রাসুকে নামিয়ে দিয়ে বাড়ির ঘাটে যেতে যেতে আবার সব কিছু ভুলে যায় নিতাই। আশ্চর্য এই রাসু। তারও চেয়ে আশ্চর্য পচু। নির্মম প্রতিশোধের নেশায় নিষ্ঠুর থেকে নিষ্ঠুর হয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ায় পচু। বেদনায় ভারাক্রান্ত তীব্র দহনে বিপর্যয় জ্বলে-পোড়া নিতাইর মস্নান দেহটার দিকে চেয়ে ওই নিষ্ঠুর মানুষটার একটুও মায়া হয় না। উছন বান ডাকা রাসু বেদনা ছাড়া কিছুই পাবে না। ব্যর্থ মাথা খুঁড়ে কেঁদে কেঁদে লুটিয়ে পড়বে রাসুর প্রাণভরা ভালবাসা। প্রচুর নির্দয় ওই বুকটাকে রাসুর চোখের জল একটুও টলাতে পারবে না।
নিতাই।
ঘাটের মাঝে নৌকাটা লাগাতে গিয়ে হঠাৎ চমক খেয়ে থেমে যায় নিতাই। সামনের দিকে চেয়ে বিস্ময়ের ভারে ভারে ওর চোখ দুটি গোল হয়ে যায়। ঘাট থেকে একটু দূরে বালুর চরার ওপর বৈঠাটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পচু। সমস্ত ব্যাপারটাই এক লহমায় আন্দাজ করে নেয় নিতাই। খুঁটির সাথে নৌকাটা বেঁধে সামনে এসে দাঁড়াতেই বিনা ভূমিকায় সোজা প্রশ্ন করে বসে পচু, দেখছিলাম গাঙ নাও বাইতাছিলি।
হেসে ওঠে নিতাই, এই কতাডা জিগানির লাইগ্যা কি গাড আইয়া খাড়ইয়া রইছ!
চাপা কণ্ঠে পচু বলে, দেখলাম খুব আরাম কইরা নাও বাইতাছিলি।
কি করবাম ক', গরীব মানুষ গাঙ জাজ চালানির খমতা নাই, তাই নাওই বাই।
স্থির চোখে নিতাইর মুখের দিকে চেয়ে থেকে উপহাস তরল কণ্ঠে পচু বলে ওঠে, কিন্তুক আদার বেপারী অইয়া অনেকেই জাজের খবর রাখত চায়। কঠিন হতে গিয়েও অবাকভাবে হেসে ওঠে নিতাই, কি করবে ক', জাজের খবর রাখা যার স্বভাব হে আদার বেপারী অইলেও রাহে চাউলের বেপারী অইলেও রাহে।
এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না পচু। উত্তেজিত কণ্ঠে প্রায় চিৎকার করে ওঠে, আমি কি কইতাম চাই হেইডা অহনও বুজতে পারছ নাই? খুব পারছি।
আমি তবে সাবধান কইর্যা দিয়া যাই।
দীর্ঘ বাহু দিয়ে লম্বা বৈঠাটা খুব জোরে চেপে ধরে নিষ্পলক চোখে নিতাই চেয়ে থাকে পচুর মুখের দিকে, যে সাবধান অইয়া আছে তারে আর সাবধান করণ লাগে যে পচু। একটা কতা মনে রাহিছ, আতী মইর্যা গেলেও লাখ টেহা দাম আছে।
তীব্র একটা অন্তর্জ্বালায় পচুর ভেতরটা আগুনের দাহ নিয়ে জ্বলে ওঠতে থাকে। থাব থাব ওর বুকের মাংসপেশীগুলো নিশ্বাসের সাথে সাথে স্পষ্ট হয়ে ওপর দিকে ভেসে ওঠতে থাকে। স্থির অটল দেহ নিয়ে নিতাই চেয়ে থাকে পচুর রুক্ষ কঠিন মুখটার দিকে। লোমশ বিস্তৃত নিতাইর বুকটা পাষাণের মতো যে কোনো আঘাতের জন্যে তৈরি হয়ে থাকে। শেষ পর্যন্ত নিজেকে সংযত করে নেয় পচু। অনেক চেষ্টা করে কণ্ঠ স্বরটাকে সহজ করে বলে, আইচ্ছা, বাইচ্যা থাকলে দেখবাম মরা আততী কয় টেহা বিহায়।
নির্ভয় নিতাইর দৃষ্টির সামনে বৈঠাটা কাঁধের ওপর তুলে নিয়ে বালুর চরার মাঝ দিয়ে হন হন করে ছুটে যায় পচু।
পরদিন বেড়ের মাঝে জালটানা শেষ করার সাথে সাথে সেই পুরোনো ব্যথা হাহাকারটা শূন্যতার ভারে চারে নিতাইর চার পাশের বাতাসকে আবার ভারী করে দেয়। প্রতিটি বেড়ের মাঝি উলস্নাস ফেটে পড়ে জালে আবদ্ধ মাছের একেকটা ঝাঁককে নৌকার ওপর টেনে তুলছে। নিষ্পলক শূন্য জালটার দিকে চেয়ে নিতাইর দুচোখের দৃষ্টি ব্যর্থ আক্রোশে আগুনের রঙ নিয়ে দপ দপ করে জ্বলতে থাকে। পাশের 'বেড়' থেকে বড় একটা মাছের কান্তায় হাত দিয়ে ওপর দিকে তুলে ধরে গলা ছেড়ে বলে ওঠে পচু, মাছ কি, মনে অয় গাঙে র পরী। নিজের রসিকতায় টেনে টেনে হাসতে থাকে পচু। হঠাৎ হাসি থামিয়ে নিতাইর দিকে আড়চোখে একটু চেয়ে অদ্ভুত ভঙ্গি করে ওঠে পচু, থুথু। মুখের থুথু মাছটার চিকচিকে গায়ে ছিটিয়ে দিয়ে বলে বসে, সাবধান পাহিছরে, নজর লাগব, মাইনষের চোখ বালা না!
পচুর দেয়া আঘাতটা সহ্য করতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ ঢেউএর মতো নিতাইর ভেতরটা ক্ষোভে-দুঃখে অসহ্য জ্বালায় থর থর করে কাঁপতে থাকে। একটানে জালটা কাঁধে নিয়ে একটা দুর্জয় প্রতিজ্ঞার মতো নৌকা থেকে লাফিয়ে পড়ে ঝাউবনে ঘেরা উঁচু পাড়টার দিকে ছুটে যেতে থাকে নিতাই। পেছনে পচুর কণ্ঠস্বর ঠিক তেমনি উচ্ছ্বাসময় হাসির রোলে রোলে সি্নগ্ধ বাতাসের বুকটাকে আঘাতে আঘাতে ছিন্নভিন্ন করতে থাকে।
নিসুন্দির বাঁক ছাড়িয়ে বেতঝোপের আড়ালে শ্মশানটার সামনে গিয়ে স্থির পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে পড়ে নিতাই। আস্তে আস্তে একটা স্নেহমাখা হাত নিতাইর কোমরটাকে বেষ্টন করে পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। একটু চমকে ওঠে নিতাই। জোর নিয়ে বলে ওঠে, আইজেই আমি এইহান থাইক্যা যাইয়ামগা রাসু।
কেরে, আমার লগে রাগ কইর্যা!
তুমার লগে রাগ! ফিরে দাঁড়ায় নিতাই। ওর উচ্ছল দৃষ্টি রাসুর মস্নান মুখের ওপর ঝরে পড়ে। যাওন আমার লাগবই রাসু, আমার বেড় মাছ উডে না, এইহান থাকলে আমার না খাইয়া মরণ লাগব। প্রবল একটা ধাক্কা খেয়ে একেবারে সাদা হয়ে যায় রাসুর মুখটা। কি একটা কথা বলতে গিয়ে ওর ঠোঁট দুটো কাঁপতে কাঁপতে আবার নিশ্চল হয়ে যায়।
রাসু!
নিজেকে সামলে নিয়ে এইবার হেসে ওঠে রাসু, কেডা কইছে তুমার বেড় মাছ উডত না, কাইলেই মাছ উডব।
হেসে ফেলে নিতাই। হাসির ধাক্কায় ওর চোখ দুটি চিকচিক করে ওঠে, মাছের পাখ নাই রাসু, হেরা উড়ত জানে না!
উইড়্যাই আইব। আমার কতা রাইখ্যা আর একটা দিন দেহ। চিকণ হাসিতে মুখ ভরিয়ে রাসু বলে ওঠে, ডরাইও না, আমার কতা ঠিক অইব, আমি যাদু জানি।
সত্য যাদু জানে রাসু। পরদিন জাল টানতে গিয়ে আশ্চর্যের ধাক্কায় একেবারে বিবর্ণ হয়ে যায় নিতাই। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে জালটা টান দেয়ার সাথে সাথে ঝাঁক ঝাঁক মাছের ছুটো-ছুটিতে গম গম করে ওঠে বেড়টা। আশ্চর্য মনে হয় যেন অঝোর বৃষ্টিধারার মতো মাছের একেকটা ঝাঁক আকাশ থেকে ঝরে পড়েছে নিতাইর ছোট্ট বেড়াটির মাঝে। কিন্তু ওদিকে স্থির গম্ভীর হয়ে ওঠেছে পচুর থমথমে মুখ। সারা রাত্রির সে াতের টানে টানে একটি মাছও পচুর বেড়ে আটকা পড়েনি। একদিন দুদিন, তিন দিনের দিন ছুটে আসে পচু, কিরে নিতাই বেপারডা কি, দুইদিগে আমার বেড়, মাছ তর বেড়ে যায় কেমনে।
সহজ কণ্ঠে নিতাই বলে, কেরে জানছ না, আইজ কাইল মাছের পাহা অইছে, উইড়্যা উইড়্যা আইয়া পড়ে।
নিশ্চুপ পচু জ্বলন্ত দুটি চোখ নিয়ে অদ্ভুতভাবে চেয়ে থাকে নিতাইর ভাব লেশহীন মুখের দিকে। দাঁত দিয়ে নীচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে বৈঠাটায় জোরে একটা টান দেয় পচু, আইচ্ছ্যা, কার পাহা অইছে এইডা ধরতে বেশীদিন লাগত না, তহন বুজা যাইব।
প্রতিদিন জাল পাহারা দেবার জন্যে বেড়ের মাঝে নৌকার ওপর রাত কাটাতে হয় জেলে মাঝিদের। নদীর বুকে ছেলেদের কারো প্রতি বিশ্বাস নেই। গভীর রাতে এক বেড়ের মাঝি নিস্তব্দ গতিতে অন্য বেড়ের কাছে গিয়ে হাত দিয়ে টিপে টিপে বাঁশের কাঠগুলোকে একটুখানি ফাঁক করে দেবে। গোল করে পেতে রাখা জালটাকে একটু ওপরে তুলে দিয়ে আবার নিঃশব্দে চলে আসবে নিজের বেড়ে। ছড়িয়ে রাখা জালের বেষ্টনীর মাঝে ওই এতটুকু ফাঁক পেয়ে মুক্তির আনন্দে চোখের পলকে বেড়ের বাইরে ছুটে যাবে সকল মাছ।
রাত্রির অন্ধকারে তেল চটচটে বালিশের ওপর অতন্দ্র প্রহরীর মতো জেগে থাকে পচু। অন্ধকার নক্ষত্র খচিত আকাশ। ছল ছল ঢেউ ওঠা চিলমারীর বুকের সাথে আকাশ আর মাটি নিঃসীম অন্ধকারে একাকার হয়ে মিশে গেছে। ঢেউ-এর দোলায় দোলায় আস্তে আস্তে দুলতে থাকে পচুর নৌকাটা। কিন্তু আজ আর যম নয়। ব্যাকুল প্রতীক্ষার হাত ধরে স্থির চোখে পচু চেয়ে থাকে সামনের দিকে। প্রায় এক প্রহর রাত্রির পর ভাঁজ করা জলের বকে ঢেউ ভাঙ্গার অসপষ্ট একটা শব্দ শুনে মাথা তুলে নৌকার ওপর ওঠে দাঁড়ায় পচু। স্পষ্ট বোঝা যায় ডুব সাঁতার দিয়ে ধীরে ধীরে একটা মানুষ বেড়ের কাছে এগিয়ে আসছে। অন্ধকারের বুকে তারার মতো উজ্জ্বল হয়ে পচুর চোখ দুটি জ্বলতে থাকে। বৈঠাটা হাতের মুঠোয় তুলে নিয়ে নিষ্পলক পচু ভেতর থেকে দারুণ উত্তেজনায় ফুলে ফুলে ওঠতে থাকে। আস্তে আস্তে বাঁশের কাঠিগুলো নড়ে ওঠতে থাকে। গোলাকার জালটা নড়ে ওঠার সাথে সাথে স্থির লক্ষ্যে লম্বা বৈঠাটা দিয়ে প্রবল বেগে আঘাত করে বসে পচু। এক মুহূর্তে আর্ত একটা চিৎকারে কেঁপে ওঠে চিলমারীর বাতাস।
তন্দ্রার মাঝে ডোবে থাকা নিতাই হঠাৎ চমক খেয়ে নৌকার ওপর ওঠে দাঁড়ায়। নির্ভুলভাবে নিতাই বুঝতে পারে কার কণ্ঠস্বর এমন চিৎকারের রূপ নিয়ে এক লহমায় হাউই বাতির মতো আকাশে মিলিয়ে গেল। চোখের পলকে নৌকার ওপর থেকে জলের বুকে লাফিয়ে পড়ে নিতাই। অন্ধকার কালো জলের মাঝে জমাট বাঁধা গাঢ় অাঁধারে রূপ নিয়ে সে াতের টানে টানে ভেসে যাচ্ছে একটা দেহ। দুর্বল হাতে ঢেউ কাটার চেষ্টা করে বার বার ঝাপটার নীচে তলিয়ে গিয়ে আবার ওপর দিকে ভেসে ওঠছে। প্রাণপণে ঢেউ কেটে তীরের মতো ডুব সাঁতার দিয়ে গড়িয়ে যাওয়া দেহটাকে বুক দিয়ে জড়িয়ে ধরে নিতাই। তারপর নিসুন্দি ঘাটের কাছাকাছি গিয়ে কোনো রকমে এলিয়ে পড়া দেহটাকে চিলমারীর বুক থেকে চরার ওপর টেনে তুলে। উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে চিৎকার করে ওঠে নিতাই, রাসু।
নিতাইদা। অস্পষ্ট কণ্ঠে একটি মাত্র শব্দ করে নিতাইর বুকের ওপর ঢলে পড়ে রাসু। গভীর আলিঙ্গনে রাসুর ভিজে লেপটে যাওয়া দেহটাকে বুকের মাঝে চেপে ধরে নিতাই বলে ওঠে, রাসু, তুমি এইডা কি করলা, আমার লাইগ্যা তুমি জীবন দিতা গেলা।
উজান বাঁক থেকে চার পাঁচটা মশাল নিয়ে সাত আটজন জেলে মাঝির সাথে কাছে এগিয়ে আসতে থাকে। পচু। দূর থেকেই পচু বলতে থাকে, মাছের বুলে আইজকাইল পাহা অইছে। দেইখ্যা আই পাহা ভাঙছে কি না?
কিন্তু কাছে এসে মশালটা উঁচিয়ে ধরেই পাথরের মতো স্থির হয়ে যায় পচু। নিতাইর প্রশান্ত বুকের মাঝে অবিকল লতার মতো এলিয়ে পড়ে আছে রাসু। মাথার মাঝ থেকে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসছে ঝলক ঝলক রক্ত। রক্তের ধারায় ধারায় ভেসে যাচ্ছে রাসুর অপূর্ব সুন্দর মুখ চোখ।
রাসু বলিষ্ঠ পচুর কণ্ঠস্বরটা হঠাৎ যেন থেকে থেকে ভেঙে যায়। রাসু তুই এইডা করলে কি?
নিতাইয়ের বুক থেকে একটানে রাসুর দেহটাকে কাঁধের ওপর তুলে পচু বলে ওঠে, তরা কেউ একজন কৈলাশ কাহার কাছে যা, খুব তাড়াতাড়ি লইয়া আইবে। বালুর চরার উপর দিয়ে নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের মাঝে রক্তাক্ত রাসুকে নিয়ে ছুটে যেতে থাকে পচু। পেছনে কল্পিত মাটির বুকে দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করতে করতে চিকচিকে শীতল বালুর বুকের ওপর ঢলে পড়ে নিতাই।
শিশুর মতো রাসুকে বুকের মাঝে টেনে নিয়ে চিৎকার করে ওঠে পুতুল বৌ, আমার রাসুরে এমুন করছে কেডা?
ভেঙে পড়া কণ্ঠে উত্তর দেয় পচু, আমি।
তুমি!
নিতাইয়ের জালে মাছ উডে না। হের লাইগা রাসু আমার বড় মাছ চুরি করতে গেছিল, আমি না জাইনা এই বৈডা দিয়া-
চেষ্টা করেও কথাটাকে শেষ করতে পারে না পচু। শুধু আগুনের মতো লাল ওর দুটি চোখ জলের রেখায় চিকচিক করতে থাকে।
কুন চিন্তা নাই বৌ, কবিরাজ অহনই আইতাছে। আমি একটু গাঙের পাড় থাইক্যা আই। বজ মুষ্টিতে বেড়ার সাথে ঠেস দেওয়া বৈঠাটা চেপে ধরে বাইরে ছুটে যেতে চায় পচু। পেছন থেকে বাধা দেয় পতুল বৌ, গাঙের পাড় কিয়ের লাইগ্যা যাইবা?
অদ্ভুত উজ্জ্বল দৃষ্টি দিয়ে পুতুল বৌর মুখের দিকে চেয়ে থেকে নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে পচু, দেহি, একবার নিতাইরে দেইখ্যা আই। একটা বজ পাতের মতো ঘরটা যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। বিস্ময়ের ধাক্কায় বোবা হয়ে যায় পুতুল বৌ।
দাদা! পচুর সামনে এসে টলতে টলতে ওই নির্মম বুকটার ওপর ঢলে পড়ে যায় রাসু। দাদা হেরে মাপ কইরা দেও, হের কোন দুষ নাই। আর দুইদিন পড়ে হে এমনেই গাঁও ছাইড়্যা যাইব গা। কান্নার আবেগে রাসুর দেহটা ফুলে ফুলে কাঁপতে থাকে।
রাসু অনেক চেষ্টা করেও চোখ দুটিকে শুষ্ক রাখতে পারে না পচু। দু'হাত দিয়ে রাসুকে জড়িয়ে ধরে বিক্ষত কণ্ঠে পচু বলতে থাকে, তুই আমার মা মরা বইন, তর লাইগ্যা আমি কিনা করছি, আর আইজ তুই আমার শত্রুর লাইগ্যা নিজের জীবন দিতে গেছলে!
দাদা!
হে আমার অত বড় শত্রু এইডা জাইন্যাও কি তারে যাওনের দেওন যায় রাসু! তুই আমার ছাইড়্যা দে রাসু, হেরে আমি ধইর্যা না আইন্যা ছাড়তাম না।
দাদা গো!
এইবার চোখের জলে হেসে ওঠে পচু, তর লইগ্যাই আমি আইরা গেলাম, ডর নাই রাসু, নিতাই যাতে গাঁও ছাইড়্যা না যাইত পারে হের লাইগ্যাই তারে ধইর্যা আইন্যা তর কাছে দিয়াম। হের লাইগ্যাইত তর মাতা বাঙ্গছে। অহন সারাজীবন হে আইয়া তর মাতা পাহারা দেউক।
দাদা! বন্যার মতো চোখের জল নিয়ে ছোটবেলার মতো অসীম আবদারে পচুর বুকটাকে জড়িয়ে ধরে রাসু।
যা, তর বৌদির কাছে যা, আমি অহনেই আইতাছি।
দুইজোড়া চোখের স্বপ্নমাখা দৃষ্টির ওপর দিয়ে বালুর চরার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে পচু। চিলমারীর পূর্বের আকাশটা তখন রাত্রিশেষ রঙমাখা সূর্যের আলোর কুয়াশার ফাঁকে ফাঁকে চিকচিক করতে থাকে। নদীর বুকে ধীরে জেগে উঠতে থাকে উলস্নসিত জেলেমাঝিদের চিরদিনের চেনা সেই প্রাণখোলা কণ্ঠস্বর।
================================
গল্প- 'লাউয়ের ডগা' by নূর কামরুন নাহার গল্প- 'অপূর্ব সৃষ্টি' by পারভীন সুলতানা গল্প- 'ঊনচলিস্নশ বছর আগে' by জামাল উদ্দীন গল্প- 'সুচ' by জাফর তালুকদার গল্প- 'বাসস্ট্যান্ডে যে দাঁড়িয়েছিল' by ঝর্না রহমান গল্প- 'গন্না' by তিলোত্তমা মজুমদার গল্প- 'ঘুড়িয়াল' by শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় গল্প- 'প্রক্ষেপণ' by মোহিত কামাল গল্প- 'গন্তব্য বদল' by রফিকুর রশীদ গল্প- 'ঝড়ের রাতে' by প্রচেত গুপ্ত গল্প- 'শুধু একটি রাত' by সাইপ্রিয়েন এক্ওয়েন্সি। অনুবাদ বিপ্রদাশ বড়ুয়া গল্প- 'পিতা ও কুকুর ছানা' by হরিপদ দত্ত স্মরণ- 'শওকত ভাই : কিছু স্মৃতি' by কবীর চৌধুরী সাহিত্যালোচনা- 'রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পালাকারের নাটক স্মরণ- 'আবদুল মান্নান সৈয়দ : কবি ও প্রাবন্ধিক' by রাজু আলাউদ্দিন স্মরণ- 'সিদ্ধার্থ শংকর রায়: মহৎ মানুষের মহাপ্রস্থানে by ফারুক চৌধুরী গল্প- 'ফাইভ স্টার' by সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম গল্প- 'নূরে হাফসা কোথায় যাচ্ছে?' by আন্দালিব রাশদী গল্প- 'হার্মাদ ও চাঁদ' by কিন্নর রায় গল্প- 'মাটির গন্ধ' by স্বপ্নময় চক্রবর্তী সাহিত্যালোচনা- 'কবি ওলগা ফিওদোরোভনা বার্গলজ' গল্পিতিহাস- 'বালিয়াটি জমিদারবাড়ির রূপগল্প' by আসাদুজ্জামান ফিচার- ‘কাপ্তাই লেক:ক্রমেই পতিত হচ্ছে মৃত্যুমুখে' by আজিজুর রহমান
দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্য
লেখকঃ নীলু দাস
এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
গল্প- 'লাউয়ের ডগা' by নূর কামরুন নাহার গল্প- 'অপূর্ব সৃষ্টি' by পারভীন সুলতানা গল্প- 'ঊনচলিস্নশ বছর আগে' by জামাল উদ্দীন গল্প- 'সুচ' by জাফর তালুকদার গল্প- 'বাসস্ট্যান্ডে যে দাঁড়িয়েছিল' by ঝর্না রহমান গল্প- 'গন্না' by তিলোত্তমা মজুমদার গল্প- 'ঘুড়িয়াল' by শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় গল্প- 'প্রক্ষেপণ' by মোহিত কামাল গল্প- 'গন্তব্য বদল' by রফিকুর রশীদ গল্প- 'ঝড়ের রাতে' by প্রচেত গুপ্ত গল্প- 'শুধু একটি রাত' by সাইপ্রিয়েন এক্ওয়েন্সি। অনুবাদ বিপ্রদাশ বড়ুয়া গল্প- 'পিতা ও কুকুর ছানা' by হরিপদ দত্ত স্মরণ- 'শওকত ভাই : কিছু স্মৃতি' by কবীর চৌধুরী সাহিত্যালোচনা- 'রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পালাকারের নাটক স্মরণ- 'আবদুল মান্নান সৈয়দ : কবি ও প্রাবন্ধিক' by রাজু আলাউদ্দিন স্মরণ- 'সিদ্ধার্থ শংকর রায়: মহৎ মানুষের মহাপ্রস্থানে by ফারুক চৌধুরী গল্প- 'ফাইভ স্টার' by সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম গল্প- 'নূরে হাফসা কোথায় যাচ্ছে?' by আন্দালিব রাশদী গল্প- 'হার্মাদ ও চাঁদ' by কিন্নর রায় গল্প- 'মাটির গন্ধ' by স্বপ্নময় চক্রবর্তী সাহিত্যালোচনা- 'কবি ওলগা ফিওদোরোভনা বার্গলজ' গল্পিতিহাস- 'বালিয়াটি জমিদারবাড়ির রূপগল্প' by আসাদুজ্জামান ফিচার- ‘কাপ্তাই লেক:ক্রমেই পতিত হচ্ছে মৃত্যুমুখে' by আজিজুর রহমান
দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্য
লেখকঃ নীলু দাস
এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%B2%E0%A7%81_%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B8
ReplyDelete