গল্প- 'সুচ' by জাফর তালুকদার

এভাবে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তবুও সেই পথে নেমে পড়ল মন্টু। কবে যেন কার কাছে শুনেছিল কলেজ রোডে বাসা। এইটুকু তথ্য পুঁজি করে পথ হাতড়ানো নেহায়েতই বোকামি।

কিন্তু ভাগ্য বলে কথা। না হলে ছেলেবেলার কুমু চৌধুরীকে এত অনায়াসে খুঁজে বের করবে কী করে!
শহরের এই দিকটা অনেক খোলামেলা।
বিশ্বরোড হয়ে যাবার পর রাতারাতি কদর বেড়ে যায় জায়গাটার। বছর দশকের মধ্যে এর চেহারা পুরোটাই যায় পাল্টে। অসংখ্য ছবির মতো বাড়িঘর দাঁড়িয়ে যায় রাস্তার দু'পাশ ঘিরে। স্কুল, কলেজ, কারখানা, অফিস, খামার, মার্কেট পরিবর্তনের বন্যায় রাতারাতি বদলে যায় শহরের দামি এলাকায়।
কুমুদের বাড়িটা বড় রাস্তা ছেড়ে সামান্য ভেতরে। বাইরে থেকে নব্য ধনীরা এসে ছড়িয়ে দিয়েছে অজস চকচকে বাড়ির কাফেলা। নতুন মাটিতে প্রাণরসে মাতোয়ারা স্বাস্থ্যকর সব গাছ গাছালি। কিছুদূর এগিয়ে পাওয়া গেল নন্দন- ভুবন নামে একটা জায়গা। এটা শিশুদের পার্ক। কিছু রঙিন খেলার সরঞ্জাম। দোলনা। বেঞ্চ। ভেতরের অংশটি সবুজ। সেখানে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে অসংখ্য বাহারি ফুল।
দুটো কিশোর সাইকেল নিয়ে রেস খেলছিল সেখানে। ওরা আজ পাখি হয়ে উড়বে এমনই প্রতিজ্ঞা। বাতাসে সাঁতার কেটে একেকবার হারিয়ে যাচ্ছিল সুদূর। পুনরায় পাঁক খেয়ে খেয়ে ফিরে আসার ভঙ্গিটুকু ভারি সুন্দর।
সকালে বোধ হয় বৃষ্টি হয়েছিল এদিকটায়। বেশ সতেজ স্নান করা একটা ভাব চারিদিকের। এখন আলতো রোদে খুলে দিয়েছে মনোরম চুলের গোছা। চারটা শালিক কিচমিচিয়ে উৎসবে মেতেছে মোড়ের খাটো বাদাম গাছটায়। আজ তাদের বিয়ে হবে কিনা কে জানে।
'কুমু কটেজের' পুরোটাই বাগান ঘেরা। যেন একটুকরো সাজানো গ্রাম কেউ এনে বসিয়ে দিয়েছে সযত্নে। বাড়িটা বাংলো ধরনের। অনেকটা ইউরোপীয় ধাঁচে তৈরি। আজকাল টাকা হলে নাকি রুচিও কেনা যায়। খুলনার কুখ্যাত এরশাদ সিকদারের আলিশান বাড়ি স্বর্ণকমল তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
গাছপালার ব্যাপারটা তাকে কেন যেন একটু আন্দোলিত করে। দারোয়ান ভেতরে চলে যাবার ফাঁকে দুর্লভ গাছগুলো চেনার চেষ্টা করল। একটা অংশে ঔষধি গাছ। বাকিটুকু নানারকম ফলদ গাছের ছড়াছড়ি। বেঁটে বেঁটে আমগাছগুলো নুয়ে পড়ছিল আমের ভারে। দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল।
তাদের বাড়িতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেশ কিছু গাছ আছে আমের। এরকম পরিকল্পিত সাজানো গোছানো নয় মোটেই। ভাল আঁটি পেলেই বাবা সেটা ছড়িয়ে দিতেন বাগানে। কার কী নাম সেটা মনে রাখার বিষয় নয়। এরকম করে করে বারোয়ারি কিসিমের একটা আমের বাগান দাঁড়িয়ে গেল শেষ পর্যন্ত।
সামনের উঠোনে ঘর-ছুঁয়ে যে গাছটা দাঁড়িয়েছিল সেরকম বাহারি নোংরা এখন আর দেখা যায় না। যেমন তার সোয়াদ তেমনি ঘ্রাণ। মার প্রিয় গাছ। নিজের হাতে পুঁতেছিলেন কোত্থেকে যেন এনে। অনেকটা বড় হওয়া অবধি পরিচর্যা করেছেন নিজের হাতে। প্রথম যেবার ফলন হল মা খুশিমনে বিলি করেছিলেন সবাইকে। এই গাছের আমের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছিল গোটা তলস্নাটে। অনেকেই আসত কলম করতে। কেউ চেয়ে নিত দুটো আঁটি। মা কাউকে ফেরাতেন না। আঁটি নয়, দুটো চারটে আমই তুলে দিতেন সানন্দে। বাবা অহংকারের চোখে তাকাতেন মার দিকে। উভয়ের চোখে তৃপ্তির ছায়া। এ এক বিরল দৃশ্য।
গত সিডরে সেই গাছটা হুড়মুড়িয়ে কাত হয়ে পড়ল একটা পেয়ারা গাছের ওপর। অনেক ধরেবেঁধে গাছটা তুলে ঠেকা দেয়া হল বটে, কিন্তু গোড়াটা গেল নড়বড়ে হয়ে। সে এখনও বেঁচে আছে কোঁত মেরে। প্রতি মৌসুমে মুকুর আসে যথারীতি। তবে এর বেশির ভাগই যায় ঝরে। যে দুচারটা আম থাকে শেষাবধি, সেই পুরনো সোয়াদ আর পাওয়া যায় না তাতে।
প্রায় একই সময় স্ট্রোকে পঙ্গু হয়ে যাবার পর মারও হয়েছে একই দশা। মা এত কষ্ট সয়ে বেঁচে আছেন আম গাছটার মতো। কিন্তু আলোটা মরে গেছে।
দারোয়ান সেই যে ভেতরে গেলে আর ফেরার নাম নেই। এই নিঝুম বাড়িটা রহস্যময়। প্রকৃতি ছাড়া বোধ করি কোনো জীবন নেই এখানে। ফুল ফলের ঘ্রাণে অপূর্ব এক মৌতাত তৈরি হয়েছে বাতাসে। বুক ভরে বিশ্বাস নিল ফুসফুসে। কিছুক্ষণ ধরে রেখে ধীরে ধীরে সেটা ছাড়ল। আবার নিল। আবার ছাড়ল। দম নিতে নিতে ভাবল প্রকৃতি থেকে অফুরন্ত প্রাণশক্তি শরীরে প্রবেশ করছে। দম ছাড়ার মুহূর্তে মনে হল শরীরের সকল দূষিত পদার্থ বাতাসের সাথে বেরিয়ে যাচ্ছেঃ।
বাগানের একটা পাথুরে বেঞ্চের ওপর চোখ মুদে বসে আছে মন্টু। পাশের কামিনী গাছটা থেকে অজসআলফা স্টেশন থেকে সে এখন রওনা হয়েছে মনের বাড়ির পথে। শীতল নীল সি্নগ্ধ আলো বর্ষিত হচ্ছে তার ওপর। আলোয় অবগাহন করতে করতে আলোর এক সুন্দর পথে পেঁৗছে যাচ্ছে মনের বাড়িতে। ১৯, ১৮, ১৭, ১৬, ১৫, ১৪, ১৩, ১২, ১১, ১০ ঃ গণনার সঙ্গে এগিয়ে চলছে এই ছন্দময় মধুর যাত্রা।
ছেলেবেলায় তাদের গ্রামের আশেপাশে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ল কলেরা। মানুষ বিছানায় পড়ছে আর মরছে। সে এক নারকীয় অবস্থা। দিশাহারা হয়ে মানুষ পালাচ্ছে যে যেদিকে পারছে।
তাদের স্কুলে ভেকসিন দিতে এল একটা লোক। মহামারির চেয়েও এরকম বড় দুসংবাদ আর হয় না। তখনকার দিনে ইঞ্জেকশনের সুঁচে ভয় পাইনি এমন শিশু বিরল। এই ভয়ের কারণও ছিল যথেষ্ট। আগেরবার বসন্তের যে টীকা দিয়ে গেছে হাতে ফোঁড়ার মতো সেটা চেপে বসেছিল শরীরে। সেই দুটো গোল চাকতির মতো দাগ এখনও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে বাহুতে। ওরকম আবার কিছু ঘটে কি না ভেবে স্কুলের বেড়া ভেঙে পালিয়ে তবে শান্তি। ভয় আর কাকে বলে!
কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়। ইঞ্জেকশনের ফাঁড়া থেকে মাফ পেলেও মেরাজ স্যারের চোখকে ধুলো দেবার সাধ্য ছিল না। এক অপূর্ব উপায়ে তিনি শাস্তির ব্যবস্থা করলেন ফাঁকিবাজদের। থানা থেকে যে হেলথ-অ্যাসিসট্যান্ট এসেছিলেন ওনি বেশ কিছু ভ্যাকসিন রেখে গেছেন গ্রামের লোকদের দেবার জন্য। এখন এই পবিত্র দায়িত্বটি বহন করতে হবে মন্টুকে।
মেরাজ স্যার তার হাতে সুঁচ ফুঁড়ে প্রথম ভয়টা ভাঙালেন। এরপর তাকেই ভার দিলেন অন্যদের দেবার।
এই ধরনের মহাদায়িত্ব পেয়ে বেশ একটু গুরুত্বপূর্ণ মনে হল নিজেকে। ছেলেবেলায় অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকত তার। বছর ওয়ারি পাকা বন্দোবস্তু। পর পর দুবার টাইফয়েড হবার খেসারত এখনও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে শরীরে। ডাক্তার হিসেবে যতিন বিশ্বাসের তখন বেজায় নাম। গেলেই চোখের পাতা আর জিভ বের করে দেখতেন। পেটে দুটো গুঁতো মারতেন আঙ্গুল দিয়ে। শেষে সেই বিষাক্ত মুত্রের মতো হাতে বানানো দগি-কাটা সিরাপ। সঙ্গে নাড়ি উপড়ানো ক্যাস্টার অয়েল। এবং অবধারিতভাবে এক ফাইল ইঞ্জেকশন। অতএব এসব কাজে যে একেবারেই অভিজ্ঞহীন তা তো নয়। বরং দায়িত্বটা পেয়ে নিজেকে ডাক্তার যতীন্দ্রনাথ বিশ্বাস এলএমএফ-এর এক ক্ষুদ্র সংস্করণ ভেবে বুকের ছাতি দ্বিগুণই হয়ে গেল।
ক্লাসের অলি আর মুকুন্দ দুই সাগরেদকে কম্পাউন্ডার বানিয়ে পুরোদমে শুরু হল ভ্যাকিসন অভিযান। তার দলটি হঠাৎ কোনো বাড়িতে উপস্থিত হলে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হত সবার মনে। মন্টু গম্ভীর মুখে এ সময় কলেরার প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে একটু লেকচার দিত। তার বিদ্যার ঘট সামান্য। পাবলিকের হাতে সুঁচ ফোটানোর সময় অকারণই বুক ধড়াস ধড়াস করত।
এর পেছনে অবশ্য সঙ্গত দুটো কারণ ছিল। কিছুটা পুঁচকে বয়সে ডাক্তারি বিদ্যা ফলাতে গিয়ে দারুণ ভোগান্তিতে ফেলে দিয়েছিল হাবলুকে। তখন বসন্তের টীকা দেয়া হয়ে গেছে। ব্যাপারটা দারুণ দগি কাটল মনে। এটা অন্যের ওপর প্রয়োগ না করা পর্যন্ত মনে শান্তি হচ্ছিল না। বোঝো কান্ড!
একটা পাটকাঠির ভেতর গোটা তিনেক বাবলা কাঁটা ভরে তৈরি হল সুঁচ। ওষুধ বানানো হল সাবান গোলা পানি দিয়ে। এবার হাবলুকে পটিয়ে সেটা পরীক্ষা করা হল ওর হাতে। সঙ্গে সঙ্গে একটু রক্তমুখ হয়ে গেল জায়গাটা। রক্ত দেখে ভ্যা করে কেঁদে ফেলল হাবলু। পরে ইনফেকসন টিনফেকসন হয়ে ভারি এক কেলেংকারি হয়ে গেল। বাবা ওষুধ-টষুধ কিনে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন বটে, কিন্তু তার কানটা মুচড়ে আর আস্ত রাখেননি।
ছোট মামার ব্যাপারটা একটু অন্যধরনের। কী একটা অসুখের কারণে তার ইঞ্জেকশন নেবার কথা। তখন তো আর আশেপাশে কম্পাউন্ডার পাওয়া যেত না। এই কাজটা বড়রা কেউ করতেন। শিখে নয়, এক্ষেত্রে আন্দাজই ছিল বড় ভরসা।
বড় মামা গোঁয়ার-গোবিন্দ মানুষ। একটু নাটুকে স্বভাব ছিল তার চরিত্রে। ছেলেবেলায় শাজাহান চরিত্রে তার অভিনয় দেখে বুক ভেঙে গেছল। সবসময় একটা তেজ নিয়ে কথা বলতেন। স্বর ছিল গম গমে। হাঁটার ভঙ্গিটি রাজকীয়। কিন্তু এমন একজন দাপুটে মানুষ কি না সুঁচটা ফুটাতে গিয়ে একেবারে হারাধন প্রজা সেজে বসলেন। সেই মহা ভুলের খেসারত প্রায় জীবন দিয়ে গুণতে হয়েছিল ছোট মামাকে। পচে গর্ত হয়ে গেছল তার হাত। গজ দুয়েক ব্যান্ডেজ গর্তের ভেতর ঢুকে যেত অনায়াসে। সবাই ধরে নিয়েছিল হাতখানা কেটে ফেলতে হবে। অনেক ভুগে সে যাত্রা অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়ে যান তিনি।
তাদের চিকিৎসক দলটি ঘুরতে ঘুরতে একদিন হাজির হল কুমুদের বাড়ি। এই এলাকায় চৌধুরীদের প্রবল প্রভাব প্রতিপত্তি। জমিদারীয় ঢঙের দোতলা দালান। মোটা খাম্বা। খিলান। লোহার পঁ্যাচানো সিঁড়ি। রেলিং। সামনে দুকামরার পাকা কাচারি। মাথার ওপর টানা পাখা। তখন অবশ্য এসব ক্ষয়াটে হয়ে গেছে অনেকটা। আগের সেই মানুষগুলোও আর নেই। কিন্তু অতীতের ভূতটা ছায়া হয়ে ঘুরছে এখনও। নদী মরে গেলেও তার দাগটা থেকে যায় সাক্ষী হিসেবে।
কুমু পড়ত তার এক ক্লাস নিচে।
বেনী দোলানো ডাগর চোখের একহারা মেয়েটি। টুকটুকে ফর্শা রঙ। ফোপানো গালে একটু টোকা দিলেই যেন রক্ত চলকে উঠবে।
ছোট বোন টুলুর সঙ্গে ভারি খাতির ছিল কুমুর।
দোতলা দালানের বারান্দায় খুব জম্পেস করে ক্যারম খেলা হত তখন। খেলা নিয়ে নানারকম বাজি হত। কুমুদের বাড়িতে আত্মীয় স্বজনের অন্ত ছিল না। গুচ্ছের লোকজনে সারাক্ষণ মেতে থাকত বাড়িটা। ক্যারম, লুডু, ফুটবল, ব্যাটমিন্টন-একেবারে আসর বসে যেত খেলাধুলার। কুমুর ঝোঁক ছিল ক্যারামে। চমৎকার নিশানা। মন্টু প্রায়ই হেরে যেত ওদের দলের সঙ্গে। কিন্তু লক্ষ্য করে দেখেছে যখন একান্তে কেবল দুজন প্রতিপক্ষ হয়ে খেলেছে অনায়াসে হারটা চলে গেছে কুমুর ভাগ্যে। এই হারের চালটা সে ঠিক ধরতে পারত না মোটা মাথায়। কুমু একটুও লজ্জা না পেয়ে, খুশি মনে ওর লুকানো তহবিল থেকে একটা আচারের বড়ি তুলে দিত সযত্নে-'হেরেছি বেশ করেছি, এই নাও তোমার পুরস্কার'।
আসলে সে নিজেই ছিল বোকার হদ্দ।
এর উত্তরে কোনো কথা সহজে খেলত না তার মুখে। বরং এমনতর আপ্যায়নে চট করে পানি এসে যেত চোখে। মনে মনে আউড়ে বলত, তুই এত ভাল কেন রে কুমু?
কুমু ওর চোখে তাকিয়ে হাসত। প্রজাপতি রঙ ধরে উড়ত। সে তার আশ্চর্য অক্ষমতা নিয়ে কেবলই ছটফট করেছে বামনের মতো। উড়ন্ত প্রজাপতি ছুঁতে গেলে নিজেকে আকাশের মতো উঁচু করে তুলতে হয়। এক অসম্ভব ক্ষুদ্রতা তাকে কেবলই খর্ব করে রেখেছে। এই অপূর্ণতার দুঃখ সে কখনই ভুলতে পারবে না।
'এই, ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?
'কে?'
দেখইনা চোখ মেলে।'
'আমি যে চোখ খুলতে পারছি না।'
'কী আশ্চর্য, তুমি অন্ধ নাকি!'
'তা হব কেন, এই তো দিব্যি জেগে ছিলাম একটু আগে, কামিনীর ঘ্রাণে কেমন চোখ জড়িয়ে গেল।'
'বেশ, ঘুমাও তাহলে। তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব বহুদিন ধরে ভেবেছি। আচ্ছা অই যে তুমি কলেরা-ভ্যাকসিন দিতে গেলে আমাদের বাড়িতে। তা সবাইকে দিলে, আমাকে দিলে না কেন?'
'ওষুধ ফুরিয়ে গেছল।'
'মিছে কথা। সত্যি কথাটা বল।'
'তুমি ব্যথা পাবে বলে তোমার হাতে সুচ ফোটাতে চাইনি।
'সত্যি'
'কেন, তোমার বিশ্বাস হয় না?'
'এ কথাটা একবারও তো মুখ ফুটে বললে না!'
'কী কথা!'
'অই যে ব্যথাঃ।'
'সব কথা কী মুখ ফুটে বলা যায়!'
'তা যায় না, কিন্তু যে কষ্টের কারণে তুমি আমার শরীরে সুচ ফোটাওনি, এখন অজস হলে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে আমার শরীর। তুমি কী আমার কষ্ট দূর করতে পেরেছে?
কানের কাছে কেমন একটা চাপা আওয়াজে হঠাৎ ধড়মড়িয়ে উঠে বসল মন্টু। লজ্জিত চোখে তাকিয়ে দেখল একজন বলিষ্ঠ, চওড়া কাঁধের পর্বত-উঁচু লোক দাঁড়িয়ে আছে চোখ সরু করে-'কী চাই?
মন্টু সসভ্রমে দ্রুত দাঁড়িয়ে বলল, 'আমাকে ঠিক চিনবেন না। আমি এসেছি সোনাপুর থেকে। কুমু চৌধুরীর সঙ্গে একটু দেখা করতে চাই।
'সরি, উনি অসুস্থ। এখন দেখা হবে না। মকবুল, গেট বন্ধ করে দাও।'
মন্টু ফিরে যায়।
সুঁচ না ফোঁড়ানোর সেই পুরনো ব্যথটা দ্রুত উঠে আসে বুকের কাছে।
=============================
গল্প- 'বাসস্ট্যান্ডে যে দাঁড়িয়েছিল' by ঝর্না রহমান  গল্প- 'গন্না' by তিলোত্তমা মজুমদার  গল্প- 'ঘুড়িয়াল' by শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়  গল্প- 'প্রক্ষেপণ' by মোহিত কামাল  গল্প- 'গন্তব্য বদল' by রফিকুর রশীদ  গল্প- 'ঝড়ের রাতে' by প্রচেত গুপ্ত  গল্প- 'শুধু একটি রাত' by সাইপ্রিয়েন এক্ওয়েন্সি। অনুবাদ বিপ্রদাশ বড়ুয়া  গল্প- 'পিতা ও কুকুর ছানা' by হরিপদ দত্ত  স্মরণ- 'শওকত ভাই : কিছু স্মৃতি' by কবীর চৌধুরী  সাহিত্যালোচনা- 'রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পালাকারের নাটক  স্মরণ- 'আবদুল মান্নান সৈয়দ : কবি ও প্রাবন্ধিক' by রাজু আলাউদ্দিন  স্মরণ- 'সিদ্ধার্থ শংকর রায়: মহৎ মানুষের মহাপ্রস্থানে by ফারুক চৌধুরী  গল্প- 'ফাইভ স্টার' by সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম  গল্প- 'নূরে হাফসা কোথায় যাচ্ছে?' by আন্দালিব রাশদী  গল্প- 'হার্মাদ ও চাঁদ' by কিন্নর রায়  গল্প- 'মাটির গন্ধ' by স্বপ্নময় চক্রবর্তী  সাহিত্যালোচনা- 'কবি ওলগা ফিওদোরোভনা বার্গলজ'  গল্পিতিহাস- 'বালিয়াটি জমিদারবাড়ির রূপগল্প' by আসাদুজ্জামান  ফিচার- ‘কাপ্তাই লেক:ক্রমেই পতিত হচ্ছে মৃত্যুমুখে' by আজিজুর রহমান


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্য
লেখকঃ জাফর তালুকদার


এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.