কাবুলে প্রহসন, পাকিস্তানে বিপর্যয় -আফগানিস্তান by তারিক আলী
আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং কারজাইয়ের শাসন বৈধ—কয়েক সপ্তাহ আগে এমন বক্তব্য প্রদান করেন কাবুলে জাতিসংঘের প্রধান কর্তাব্যক্তি। নির্বোধ এই নরওয়েজীয় ভদ্রলোকের ডেপুটি পিটার গলব্রেইথ এতে প্রচণ্ড বিরক্ত হন, জনসমক্ষে তাঁর মতামত তুলে ধরেন। গলব্রেইথ আসলে কাবুলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অনানুষ্ঠানিক প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘে কাজ করছিলেন। একসময় মার্কিনিরাই কারজাইকে সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু আজ তারা কারজাইয়ের ওপর বেশ নাখোশ। প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়ার ফলে গলব্রেইথকে চাকরিচ্যুত
করা হয়।
জাতিসংঘে অনানুষ্ঠানিক মার্কিন প্রতিনিধিদের এমন আচরণের ঘটনা অনেক ঘটেছে। কিন্তু সব গল্পের শেষটা এমন হয় না। সম্প্রতি জাতিসংঘ সমর্থিত আফগান নির্বাচন তদারকি প্রতিষ্ঠান বলেছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে। দ্বিতীয় দফা ভোট নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে তারা। পশতুনদের হাসির শব্দের প্রতিধ্বনি নিশ্চয় শোনা গেছে হিন্দুকুশ পর্বতমালায়।
আফগানিস্তানের জনগণ নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয় না। আর দেশ যখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী ন্যাটোর দখলে, তখন তো গুরুত্ব দেওয়ার কথাও নয়। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা আগের মতো থাকলে কারজাইকে কবে সরিয়ে দেওয়া হতো। তালগোল পাকিয়ে ফেলায় যেমন করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল দক্ষিণ ভিয়েতনামের স্বৈরশাসকদের।
যে দখলদাররা তাঁকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল তারা যেমন, কারজাইও তেমনি এখন এক মস্ত বিপর্যয়ের মুখে। ভুলে ভরা এক যুদ্ধ চলছে; বিরাট এলাকার নিয়ন্ত্রণ এখন বিদ্রোহীদের কবজায়। এমন এক সময়ে কারজাইকে বানানো হচ্ছে বলির পাঁঠা। যে অপকর্মের দায় একচেটিয়াভাবে তাঁর ওপর বর্তায় না, তার জন্য সাজা পেতে হচ্ছে তাঁকেই।
একটি সমাধানের কথা আমরা কল্পনা করতে পারি। সমাধানটি হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা জাতিসংঘ কর্তৃক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া। সে ক্ষেত্রে স্পষ্টই পিটার গলব্রেইথ হবেন সেই পছন্দের ব্যক্তি। এই কাজটা হবে অনেক সোজাসাপ্টা, আর প্রধান নির্বাহী মন্ত্রিসভা নিয়োগ দিতে পারেন। মন্ত্রিসভার দুর্বৃত্ত সদস্যদের থাকবে আফিম ব্যবসার ভাগ-বাটোয়ারার অংশ। দেশের ভেতর জনগণের জন্য খরচের অর্থ কমাবেন তাঁরা। আর এভাবে তাঁরা কারজাই পরিবারের আর্থিক একচেটিয়ার অবসান ঘটাবেন।
অনুগত এক হাতের পুতুলকে জনগণের সামনে এমনভাবে লাঞ্ছিত করার একমাত্র কারণ, দখলদারদের অন্য সব দোসরের সঙ্গে ক্ষমতা ও অর্থ ভাগ করতে কারজাইয়ের অস্বীকৃতি। আমার মনে হয়, তাঁকে ক্ষমতায় থাকতে দিলে তিনি অন্যদের চেয়ে বেশি অংশ দখলদারদের দিতে রাজি থাকবেন। এ এলাকা থেকে ন্যাটোর কোনো নিষ্ক্রমণ-কৌশল না থাকলে এর ফলে অবস্থার কোনো অগ্রগতি ঘটবে না।
কাবুলে যখন প্রহসন চলছে, সেই সময় প্রতিবেশী পাকিস্তানে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জারদারির সরকার (মার্কিন রাষ্ট্রদূত অ্যান ডব্লিউ পেটারসন দক্ষতার সঙ্গে তা পরিচালনা করছেন) আফগান সীমান্তের কাছাকাছি দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান থেকে তালেবান উচ্ছেদ করতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে।
এই অভিযানও ব্যর্থ হবে। নিরপরাধ বহু মানুষ মারা যাবে, আরও অনেক উদ্বাস্তু যোগ হবে বর্তমানে ক্যাম্পে বসবাসরত ২০ লাখ অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর (ইন্টারনালি ডিসপ্রেসড পারসনস) সঙ্গে। পরিণতিতে তিক্ততা সৃষ্টি হবে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তা ছড়াবে; ঘৃণা বাড়বে আর বাড়বে প্রতিশোধমূলক হামলা এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ভেতর আরও অশুভ উত্তেজনা সৃষ্টি হবে।
আফগান যুদ্ধের বিস্তার ঘটিয়ে পাকিস্তান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কারণেই দেশটির সংকট যে তীব্রতর হয়েছে, এটি বুঝতে ব্যর্থ ওবামা প্রশাসনের নির্দেশনা পাকিস্তানের সংকট কেবল বাড়াতেই পারে।
কাউন্টার পাঞ্চ থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ: আহসান হাবীব
তারিক আলী: পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক ও নিউ লেফট রিভিউ-র অন্যতম সম্পাদক।
করা হয়।
জাতিসংঘে অনানুষ্ঠানিক মার্কিন প্রতিনিধিদের এমন আচরণের ঘটনা অনেক ঘটেছে। কিন্তু সব গল্পের শেষটা এমন হয় না। সম্প্রতি জাতিসংঘ সমর্থিত আফগান নির্বাচন তদারকি প্রতিষ্ঠান বলেছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে। দ্বিতীয় দফা ভোট নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে তারা। পশতুনদের হাসির শব্দের প্রতিধ্বনি নিশ্চয় শোনা গেছে হিন্দুকুশ পর্বতমালায়।
আফগানিস্তানের জনগণ নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয় না। আর দেশ যখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী ন্যাটোর দখলে, তখন তো গুরুত্ব দেওয়ার কথাও নয়। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা আগের মতো থাকলে কারজাইকে কবে সরিয়ে দেওয়া হতো। তালগোল পাকিয়ে ফেলায় যেমন করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল দক্ষিণ ভিয়েতনামের স্বৈরশাসকদের।
যে দখলদাররা তাঁকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল তারা যেমন, কারজাইও তেমনি এখন এক মস্ত বিপর্যয়ের মুখে। ভুলে ভরা এক যুদ্ধ চলছে; বিরাট এলাকার নিয়ন্ত্রণ এখন বিদ্রোহীদের কবজায়। এমন এক সময়ে কারজাইকে বানানো হচ্ছে বলির পাঁঠা। যে অপকর্মের দায় একচেটিয়াভাবে তাঁর ওপর বর্তায় না, তার জন্য সাজা পেতে হচ্ছে তাঁকেই।
একটি সমাধানের কথা আমরা কল্পনা করতে পারি। সমাধানটি হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা জাতিসংঘ কর্তৃক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া। সে ক্ষেত্রে স্পষ্টই পিটার গলব্রেইথ হবেন সেই পছন্দের ব্যক্তি। এই কাজটা হবে অনেক সোজাসাপ্টা, আর প্রধান নির্বাহী মন্ত্রিসভা নিয়োগ দিতে পারেন। মন্ত্রিসভার দুর্বৃত্ত সদস্যদের থাকবে আফিম ব্যবসার ভাগ-বাটোয়ারার অংশ। দেশের ভেতর জনগণের জন্য খরচের অর্থ কমাবেন তাঁরা। আর এভাবে তাঁরা কারজাই পরিবারের আর্থিক একচেটিয়ার অবসান ঘটাবেন।
অনুগত এক হাতের পুতুলকে জনগণের সামনে এমনভাবে লাঞ্ছিত করার একমাত্র কারণ, দখলদারদের অন্য সব দোসরের সঙ্গে ক্ষমতা ও অর্থ ভাগ করতে কারজাইয়ের অস্বীকৃতি। আমার মনে হয়, তাঁকে ক্ষমতায় থাকতে দিলে তিনি অন্যদের চেয়ে বেশি অংশ দখলদারদের দিতে রাজি থাকবেন। এ এলাকা থেকে ন্যাটোর কোনো নিষ্ক্রমণ-কৌশল না থাকলে এর ফলে অবস্থার কোনো অগ্রগতি ঘটবে না।
কাবুলে যখন প্রহসন চলছে, সেই সময় প্রতিবেশী পাকিস্তানে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জারদারির সরকার (মার্কিন রাষ্ট্রদূত অ্যান ডব্লিউ পেটারসন দক্ষতার সঙ্গে তা পরিচালনা করছেন) আফগান সীমান্তের কাছাকাছি দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান থেকে তালেবান উচ্ছেদ করতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে।
এই অভিযানও ব্যর্থ হবে। নিরপরাধ বহু মানুষ মারা যাবে, আরও অনেক উদ্বাস্তু যোগ হবে বর্তমানে ক্যাম্পে বসবাসরত ২০ লাখ অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর (ইন্টারনালি ডিসপ্রেসড পারসনস) সঙ্গে। পরিণতিতে তিক্ততা সৃষ্টি হবে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তা ছড়াবে; ঘৃণা বাড়বে আর বাড়বে প্রতিশোধমূলক হামলা এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ভেতর আরও অশুভ উত্তেজনা সৃষ্টি হবে।
আফগান যুদ্ধের বিস্তার ঘটিয়ে পাকিস্তান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কারণেই দেশটির সংকট যে তীব্রতর হয়েছে, এটি বুঝতে ব্যর্থ ওবামা প্রশাসনের নির্দেশনা পাকিস্তানের সংকট কেবল বাড়াতেই পারে।
কাউন্টার পাঞ্চ থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ: আহসান হাবীব
তারিক আলী: পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক ও নিউ লেফট রিভিউ-র অন্যতম সম্পাদক।
No comments