ওরে, মরি মরি মুরগি! by অর্ণব সান্যাল
এ
দেশে এখন রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখা যায় ফাস্ট ফুডের দোকান। এসব দোকানে দুটি
পদ বেশ সহজলভ্য। তা হলো একধরনের আলু ভাজা (ফ্রেঞ্চ ফ্রাই) ও মুরগির বুক বা
রানের ফ্রাই! ফাস্ট ফুডের দোকানে প্রিয়জনদের সঙ্গে আড্ডা চলবে, আর তার
সঙ্গে ব্রয়লার মুরগির পায়ে এক-আধটা কামড় হবে না, তা কী করে হয়!
ব্রয়লার মুরগির এই জনপ্রিয়তা কিন্তু দেশে-বিদেশে সমান। বার্ড ফ্লুর দৌরাত্ম্যের কারণে ব্রয়লার মুরগির বিকিকিনি কিছুদিন খারাপ ছিল বটে, তবে তুলনামূলকভাবে কম টাকায় মাংসের চাহিদা পূরণে এখনো ব্রয়লার মুরগিই থাকে পছন্দের তালিকায়। আমাদের দেশের বাজারে নিখাদ দেশি জাতের মুরগি খুঁজে পাওয়াও কঠিন; খাওয়া তো পরের কথা।
ব্রয়লার বা ফার্মে লালন-পালন করা মুরগি কিন্তু প্রথমে জনপ্রিয় হয়েছে বিদেশের মাটিতে। পশ্চিমা দেশে এখনো ব্রয়লার মুরগির বিকল্প খুঁজে পাওয়া ভার। সাম্প্রতিক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকা-ইউরোপের ধনী দেশগুলোতেও মুরগির কাছে হার মেনে নিচ্ছে গরু ও শূকর। ওই সব দেশে মাংসের চাহিদা মেটাতে মুরগি খাওয়ার পরিমাণ অনেক এবং দিনের পর দিন তা বাড়ছে বৈ কমছে না।
ইউনিভার্সিটি অব লেস্টারের গবেষক ক্যারিস বেনেট সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি গবেষণা করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, সারা পৃথিবীতে খামারে পালন করা মোট প্রাণীর সংখ্যা ৩০ বিলিয়ন। এর মধ্যে মুরগির সংখ্যাই ২৩ বিলিয়ন! আর বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ মুরগি লালন-পালন করা হয়, তা পৃথিবীর অন্যান্য জাতের পাখির মোট সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ এই গ্রহে থাকা পাখিগুলোর মধ্যে এখন মুরগির সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
কিন্তু মুরগির জনপ্রিয়তা এত বেশি কেন? কারণ, মুরগি দামে সস্তা ও এর মাংস সুস্বাদু। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে এক পাউন্ড ওজনের মুরিগর দাম পড়ে মাত্র ১ ডলার ৯২ সেন্ট। বাংলাদেশি টাকায় মোটে ১৬০ টাকার মতো। অর্থাৎ এই কয়টি টাকা খরচ করেই যে–কেউ তাঁর দৈনিক মাংসের চাহিদা পূরণ করে নিতে পারছেন।
ইউরোপ-আমেরিকায় অবশ্য অনেক আগে থেকেই খামারের মুরগির জনপ্রিয়তা বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ১৯৪০-এর দশকে আমেরিকায় এ জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছিল। কৃষকদের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ প্রতিযোগিতার। একই সঙ্গে চলেছে মুরগির উন্নত জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা। ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টার গবেষক মার্টিন জুইডহফের গবেষণায় দেখা গেছে, ধীরে ধীরে মুরগির আকার বড় হয়েছে। ১৯৫৭ সালে যেখানে উন্নত জাতের একটি ব্রয়লার মুরগির গড় ওজন ছিল ৯০০ গ্রাম, সেখানে ২০০৫ সালে নতুন জাতের মুরগির ওজন হয়ে যায় চার কেজিরও বেশি। আর যত বেশি ওজন, তত বেশি মাংস। এতে মুরগি লালন-পালনে চাষির লাভের অঙ্কও বড় হতে থাকে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ১৯৮৫ সালে এক কেজি ওজনের হৃষ্টপুষ্ট একটি মুরগি পেতে আড়াই কেজি শস্যদানা খাওয়াতে হতো। এখন খাবারের পরিমাণ নেমে এসেছে ১ কেজি ৩০০ গ্রামে। অর্থাৎ কম খাবার খাইয়েই পাওয়া যাচ্ছে মাংস ভরা ভালো মুরগি। এতে মুরগির খামারিদের উৎপাদন খরচ কমে গেছে। অন্যদিকে, বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিকের উপযুক্ত ব্যবহারের কারণে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন বেড়েছে। খামারিদের এখন আর মুরগির দেখভালের জন্য বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ছোট ছোট খোলা স্থানে মুরগি লালন-পালন করা হতো। কিন্তু এখন মুরগি রাখা হয় গাদাগাদি করে—আগের চেয়ে তুলনামূলক আবদ্ধ স্থানে। এভাবে রাখার কারণে মুরগিগুলো চলাচলও করতে পারে কম। এতে মুরগির কম খেলেও এখন চলে!
মুরগির মাংস স্বাস্থ্যকর হওয়ায় এটিকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তা বাড়তি ভূমিকা রেখেছে। গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে চিকিৎসকেরা গরু ও শূকরের মাংসের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। গরু ও শূকরের মাংসে ক্ষতিকর চর্বির প্রাধান্যের কথা সর্বজনবিদিত, এতে করে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ইদানীং নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, ‘রেড মিট’ খেলে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। অন্যদিকে, মুরগির মাংসে এত সব স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কিছুই নেই। ফলে, পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোয় মুরগির মাংস জনপ্রিয় হতে খুব একটা সমস্যা হয়নি।
তবে শুধু উন্নত ধনী দেশগুলোতেই মুরগি জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তা কিন্তু নয়; ক্রমাগত আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল ও বিভিন্ন অনুন্নত রাষ্ট্রেও সাধারণ মানুষের মাংসের চাহিদা বেড়ে চলেছে। আর সস্তায় সেই চাহিদা পূরণে মুরগির মাংস এক আদর্শ উপায় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও এই চিত্র ভিন্ন নয়। প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, শুরুর দিকে পোলট্রিশিল্পের উন্নয়ন ছিল ৫ থেকে ১০ শতাংশ। ২০০৭ থেকে ২০১৭—এই ১০ বছরে পোলট্রিশিল্পের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশের বেশি।
পোলট্রিশিল্প যেমন বিশ্বজনীন হয়েছে, তেমনি দেশভেদে মুরগির দেহের বিভিন্ন অংশের মাংসের চাহিদায় রকমফেরও আছে। ইকোনমিস্ট বলছে, পশ্চিমা দেশগুলোয় মুরগির দেহের অপেক্ষাকৃত সাদা রঙের মাংসের কদর বেশি। তাই আমেরিকায় মুরগির লেগ পিসের চেয়ে বুকের মাংস ৮৮ শতাংশ বেশি দামি। অন্যদিকে, ইন্দোনেশিয়াতে তা আবার উল্টোভাবে ১২ শতাংশ সস্তা। মুরগির পা বেশি বিক্রি হয় চীনে। দেশটি প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ টন পায়ের আঙুল আমদানি করে থাকে।
যদিও মুরগির ব্যবসা ভালো থাকলে তা ভোক্তাদের জন্য সুখের সংবাদ, কিন্তু প্রাণীর কল্যাণে নিয়োজিত কিছু প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। প্রাণীর কল্যাণে নিয়োজিত কিছু পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বলছে, আধুনিক মুরগির বেঢপ আকারই সবচেয়ে বড় সমস্যার সৃষ্টি করছে। ব্রয়লার মুরগিগুলোর মাংস বেশি থাকায় তাদের হাড় এর চাপ নিতে পারছে না। কিছু ক্ষেত্রে ব্রয়লারের মুরগিগুলোয় প্রাণচাঞ্চল্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। বিশাল আকার মুরগিগুলোর বংশবিস্তারের প্রক্রিয়াতেও নেতিবাচক প্রভাব রাখছে।
ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোয় সম্প্রতি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগির লালন-পালনের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। ভোক্তারা এখন চাইছেন, মুরগিগুলো যেন ভালো পরিবেশে বড় করে তোলা হয়। এ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে নানা ধরনের আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ডিম পাড়া মুরগির জন্য ব্যাটারিচালিত খাঁচার ব্যবহার এখন সেখানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পশ্চিমের উন্নত ও ধনী দেশগুলোর খামারিরাও এখন এ বিষয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করছেন।
ইদানীং অবশ্য বিশ্বজুড়েই নিরামিষভোজী হওয়ার দিকে আগ্রহ বেড়ে গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে করে মুরগি খাওয়া উল্লেখযোগ্য হার কমে যাওয়ার লক্ষণ খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। কারণ, মানুষ যতই শাক–সবজিতে নজর দিক না কেন, ‘সস্তা’ মুরগিকে তারা সত্যিই খুব ভালোবাসে!
ব্রয়লার মুরগির এই জনপ্রিয়তা কিন্তু দেশে-বিদেশে সমান। বার্ড ফ্লুর দৌরাত্ম্যের কারণে ব্রয়লার মুরগির বিকিকিনি কিছুদিন খারাপ ছিল বটে, তবে তুলনামূলকভাবে কম টাকায় মাংসের চাহিদা পূরণে এখনো ব্রয়লার মুরগিই থাকে পছন্দের তালিকায়। আমাদের দেশের বাজারে নিখাদ দেশি জাতের মুরগি খুঁজে পাওয়াও কঠিন; খাওয়া তো পরের কথা।
ব্রয়লার বা ফার্মে লালন-পালন করা মুরগি কিন্তু প্রথমে জনপ্রিয় হয়েছে বিদেশের মাটিতে। পশ্চিমা দেশে এখনো ব্রয়লার মুরগির বিকল্প খুঁজে পাওয়া ভার। সাম্প্রতিক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকা-ইউরোপের ধনী দেশগুলোতেও মুরগির কাছে হার মেনে নিচ্ছে গরু ও শূকর। ওই সব দেশে মাংসের চাহিদা মেটাতে মুরগি খাওয়ার পরিমাণ অনেক এবং দিনের পর দিন তা বাড়ছে বৈ কমছে না।
ইউনিভার্সিটি অব লেস্টারের গবেষক ক্যারিস বেনেট সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি গবেষণা করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, সারা পৃথিবীতে খামারে পালন করা মোট প্রাণীর সংখ্যা ৩০ বিলিয়ন। এর মধ্যে মুরগির সংখ্যাই ২৩ বিলিয়ন! আর বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ মুরগি লালন-পালন করা হয়, তা পৃথিবীর অন্যান্য জাতের পাখির মোট সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ এই গ্রহে থাকা পাখিগুলোর মধ্যে এখন মুরগির সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
কিন্তু মুরগির জনপ্রিয়তা এত বেশি কেন? কারণ, মুরগি দামে সস্তা ও এর মাংস সুস্বাদু। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে এক পাউন্ড ওজনের মুরিগর দাম পড়ে মাত্র ১ ডলার ৯২ সেন্ট। বাংলাদেশি টাকায় মোটে ১৬০ টাকার মতো। অর্থাৎ এই কয়টি টাকা খরচ করেই যে–কেউ তাঁর দৈনিক মাংসের চাহিদা পূরণ করে নিতে পারছেন।
ইউরোপ-আমেরিকায় অবশ্য অনেক আগে থেকেই খামারের মুরগির জনপ্রিয়তা বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ১৯৪০-এর দশকে আমেরিকায় এ জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছিল। কৃষকদের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ প্রতিযোগিতার। একই সঙ্গে চলেছে মুরগির উন্নত জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা। ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টার গবেষক মার্টিন জুইডহফের গবেষণায় দেখা গেছে, ধীরে ধীরে মুরগির আকার বড় হয়েছে। ১৯৫৭ সালে যেখানে উন্নত জাতের একটি ব্রয়লার মুরগির গড় ওজন ছিল ৯০০ গ্রাম, সেখানে ২০০৫ সালে নতুন জাতের মুরগির ওজন হয়ে যায় চার কেজিরও বেশি। আর যত বেশি ওজন, তত বেশি মাংস। এতে মুরগি লালন-পালনে চাষির লাভের অঙ্কও বড় হতে থাকে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ১৯৮৫ সালে এক কেজি ওজনের হৃষ্টপুষ্ট একটি মুরগি পেতে আড়াই কেজি শস্যদানা খাওয়াতে হতো। এখন খাবারের পরিমাণ নেমে এসেছে ১ কেজি ৩০০ গ্রামে। অর্থাৎ কম খাবার খাইয়েই পাওয়া যাচ্ছে মাংস ভরা ভালো মুরগি। এতে মুরগির খামারিদের উৎপাদন খরচ কমে গেছে। অন্যদিকে, বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিকের উপযুক্ত ব্যবহারের কারণে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন বেড়েছে। খামারিদের এখন আর মুরগির দেখভালের জন্য বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ছোট ছোট খোলা স্থানে মুরগি লালন-পালন করা হতো। কিন্তু এখন মুরগি রাখা হয় গাদাগাদি করে—আগের চেয়ে তুলনামূলক আবদ্ধ স্থানে। এভাবে রাখার কারণে মুরগিগুলো চলাচলও করতে পারে কম। এতে মুরগির কম খেলেও এখন চলে!
মুরগির মাংস স্বাস্থ্যকর হওয়ায় এটিকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তা বাড়তি ভূমিকা রেখেছে। গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে চিকিৎসকেরা গরু ও শূকরের মাংসের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। গরু ও শূকরের মাংসে ক্ষতিকর চর্বির প্রাধান্যের কথা সর্বজনবিদিত, এতে করে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ইদানীং নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, ‘রেড মিট’ খেলে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। অন্যদিকে, মুরগির মাংসে এত সব স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কিছুই নেই। ফলে, পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোয় মুরগির মাংস জনপ্রিয় হতে খুব একটা সমস্যা হয়নি।
তবে শুধু উন্নত ধনী দেশগুলোতেই মুরগি জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তা কিন্তু নয়; ক্রমাগত আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল ও বিভিন্ন অনুন্নত রাষ্ট্রেও সাধারণ মানুষের মাংসের চাহিদা বেড়ে চলেছে। আর সস্তায় সেই চাহিদা পূরণে মুরগির মাংস এক আদর্শ উপায় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও এই চিত্র ভিন্ন নয়। প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, শুরুর দিকে পোলট্রিশিল্পের উন্নয়ন ছিল ৫ থেকে ১০ শতাংশ। ২০০৭ থেকে ২০১৭—এই ১০ বছরে পোলট্রিশিল্পের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশের বেশি।
পোলট্রিশিল্প যেমন বিশ্বজনীন হয়েছে, তেমনি দেশভেদে মুরগির দেহের বিভিন্ন অংশের মাংসের চাহিদায় রকমফেরও আছে। ইকোনমিস্ট বলছে, পশ্চিমা দেশগুলোয় মুরগির দেহের অপেক্ষাকৃত সাদা রঙের মাংসের কদর বেশি। তাই আমেরিকায় মুরগির লেগ পিসের চেয়ে বুকের মাংস ৮৮ শতাংশ বেশি দামি। অন্যদিকে, ইন্দোনেশিয়াতে তা আবার উল্টোভাবে ১২ শতাংশ সস্তা। মুরগির পা বেশি বিক্রি হয় চীনে। দেশটি প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ টন পায়ের আঙুল আমদানি করে থাকে।
যদিও মুরগির ব্যবসা ভালো থাকলে তা ভোক্তাদের জন্য সুখের সংবাদ, কিন্তু প্রাণীর কল্যাণে নিয়োজিত কিছু প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। প্রাণীর কল্যাণে নিয়োজিত কিছু পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বলছে, আধুনিক মুরগির বেঢপ আকারই সবচেয়ে বড় সমস্যার সৃষ্টি করছে। ব্রয়লার মুরগিগুলোর মাংস বেশি থাকায় তাদের হাড় এর চাপ নিতে পারছে না। কিছু ক্ষেত্রে ব্রয়লারের মুরগিগুলোয় প্রাণচাঞ্চল্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। বিশাল আকার মুরগিগুলোর বংশবিস্তারের প্রক্রিয়াতেও নেতিবাচক প্রভাব রাখছে।
ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোয় সম্প্রতি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগির লালন-পালনের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। ভোক্তারা এখন চাইছেন, মুরগিগুলো যেন ভালো পরিবেশে বড় করে তোলা হয়। এ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে নানা ধরনের আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ডিম পাড়া মুরগির জন্য ব্যাটারিচালিত খাঁচার ব্যবহার এখন সেখানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পশ্চিমের উন্নত ও ধনী দেশগুলোর খামারিরাও এখন এ বিষয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করছেন।
ইদানীং অবশ্য বিশ্বজুড়েই নিরামিষভোজী হওয়ার দিকে আগ্রহ বেড়ে গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে করে মুরগি খাওয়া উল্লেখযোগ্য হার কমে যাওয়ার লক্ষণ খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। কারণ, মানুষ যতই শাক–সবজিতে নজর দিক না কেন, ‘সস্তা’ মুরগিকে তারা সত্যিই খুব ভালোবাসে!
No comments