জাপান সম্রাটের অন্য জীবন
সম্রাটের
সব কাজ রাজকীয় হবে, সেটাই স্বাভাবিক। জাপান সম্রাটও বছরজুড়ে দেশের
গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ও আয়োজনের পুরোভাগে থাকেন। তাঁর স্বাক্ষর ছাড়া
প্রধানমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারের সদস্যদের আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন হয় না।
তিনি রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতার প্রধান ব্যক্তি নন বটে, তবে নতুন বছরের
প্রাতরাশ আর শিন্তো প্রার্থনার রীতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় সফর ও
পার্লামেন্টের অধিবেশন উদ্বোধন ছাড়াও জাপানের সম্রাটের রয়েছে বর্ণিল
পেশাদার জীবন। তাঁর এই বৈচিত্র্যময় জীবনের একদিকে যেমন রয়েছে রাজনীতি আর
আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব, তেমনি অন্যদিকে রয়েছে প্রশান্তির কবিতা আর প্রার্থনার
সমন্বয়।
জাতীয় দায়িত্ব
১৯৪৭ সালের যুদ্ধ–পরবর্তী সংবিধান অনুযায়ী জাপান সম্রাটের কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই। কিন্তু দেশটির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বহু দায়িত্ব তাঁকে পালন করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী, সাংসদ ও সুপ্রিম কোর্টের প্রেসিডেন্ট মনোনয়নের যাবতীয় আনুষ্ঠানিক নথিপত্র স্বাক্ষর করতে হয় তাঁকে। প্রতিবছর প্রায় হাজারখানেক নথি স্বাক্ষর করেন সম্রাট। ইম্পিরিয়াল হাউসহোল্ড এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি দরকারি কাগজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে তবেই স্বাক্ষর করেন তিনি।
জাপানের রাষ্ট্রপ্রধান না হয়েও প্রটোকলে মুখ্য ভূমিকা পালন করা, সংসদ অধিবেশন উদ্বোধন করা, আইন এবং চুক্তি জারি করা, সম্মাননা পদক প্রদান এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের কাছ থেকে প্রশংসাপত্র গ্রহণের কাজগুলো তাঁকেই করতে হয়। বাইরে থেকে আসা কোনো অতিথির যদি সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয় থাকে, তবেই সেটা রাষ্ট্রীয় সফর বলে অনুমোদন পায়। বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ভোজও হয় প্রাসাদে।
অভ্যর্থনা ও অনুষ্ঠান
রাজদম্পতি বছরজুড়ে শত শত অনুষ্ঠান, অভ্যর্থনা, বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, সমাবেশ ও ভোজে অংশ নেন। সারা বিশ্বের অনেক রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ রাজপ্রাসাদে অনেক ব্যক্তিকেই অভ্যর্থনা জানান তাঁরা। তবে কথোপকথনে রাজদম্পতিকে বিশেষ সতর্ক অবলম্বন করতে হয়। রাজপরিবারের সদস্যরা এমন কিছু বলতে পারবেন না, যাতে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতির অপব্যাখ্যা করা হয়।
জাপানের প্রাচীন ধর্ম শিন্তোর বেশ কিছু রীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন সম্রাট। সাম্রাজ্যের পূর্বপুরুষ এবং ভালো ফসলের জন্য বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয় রাজপ্রাসাদে।
সফর ও ভ্রমণ
রাজদম্পতি বছরে অন্তত তিনবার অভ্যন্তরীণ সফর করেন। কোথাও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছে ছুটে যান তাঁরা। ২০১১ সালে সুনামির পর থেকে সম্রাট আকিহিতো এই প্রথা চালু করেন। ফুকুশিমা পারমাণবিক চুল্লির তরলীকরণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে ভীতসন্ত্রস্ত জনগণকে শান্ত করতে এগিয়ে আসেন সম্রাট। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সুনামি আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্মরণে বার্ষিক জাতীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রাজদম্পতি।
শিশু, বৃদ্ধ ও বিকলাঙ্গ মানুষের কল্যাণে নির্মিত শত শত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন তাঁরা। প্রতিবছর খেলাধুলা আর পরিবেশ রক্ষার্থে আয়োজিত অসংখ্য জাতীয় উৎসবে সভাপতিত্ব করেন রাজদম্পতি। বয়স যখন তাঁদের আরেকটু কম ছিল, তখন পর্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে দূর–দূরান্তে ভ্রমণ করতেন তাঁরা। কিন্তু সম্প্রতি বার্ধক্যজনিত কারণে বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারগুলো রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন সম্রাট।
ঐতিহ্য ও শখ
সম্রাট এবং সম্রাজ্ঞী দুজনই ‘ওয়াকা’ রচনা করেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজপরিবারের ঐতিহ্যবাহী রূপে লেখা কবিতার নাম ‘ওয়াকা’। প্রতিবছর জানুয়ারিতে রাজপ্রাসাদে ঐতিহ্যবাহী নববর্ষের কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন সম্রাট। রাজপরিবারের সামনে এবং জাতীয় সম্প্রচারকেন্দ্র এনএইচকেতে প্রচারিত এই অনুষ্ঠানে রাজদম্পতি ছাড়াও সাধারণ জনগণের লেখা কবিতা আবৃত্তি করা হয়।
বাবা হিরোহিতোর (রাজত্বের নামানুসারে যিনি মরণোত্তর রাজা শাওয়া উপাধি পান) মতো আকিহিতোও প্রতিবছর গাছ লাগান, রাজকীয় এলাকার মাঠে ফসল ফলান। সামুদ্রিক জীবন সম্পর্কে আগ্রহী সম্রাট একজন নিবেদিতপ্রাণ বিজ্ঞানীও বটে। তার বেশ কিছু সাময়িকীতে নিবন্ধও প্রকাশিত হয়েছে। পিয়ানোবাদক সম্রাজ্ঞী মিশিকো সংগীত খুব ভালোবাসেন। রাজকীয় বাসস্থানের মধ্যেই রেশম পোকার চাষ করেন তিনি। রাজপরিবারের ঐতিহ্যবাহী হস্তনির্মিত ফেব্রিকশিল্প পুনরুদ্ধারে ব্যবহৃত হয় সম্রাজ্ঞীর নিজ হাতে উৎপাদিত রেশম কাপড়।
জাতীয় দায়িত্ব
১৯৪৭ সালের যুদ্ধ–পরবর্তী সংবিধান অনুযায়ী জাপান সম্রাটের কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই। কিন্তু দেশটির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বহু দায়িত্ব তাঁকে পালন করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী, সাংসদ ও সুপ্রিম কোর্টের প্রেসিডেন্ট মনোনয়নের যাবতীয় আনুষ্ঠানিক নথিপত্র স্বাক্ষর করতে হয় তাঁকে। প্রতিবছর প্রায় হাজারখানেক নথি স্বাক্ষর করেন সম্রাট। ইম্পিরিয়াল হাউসহোল্ড এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি দরকারি কাগজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে তবেই স্বাক্ষর করেন তিনি।
জাপানের রাষ্ট্রপ্রধান না হয়েও প্রটোকলে মুখ্য ভূমিকা পালন করা, সংসদ অধিবেশন উদ্বোধন করা, আইন এবং চুক্তি জারি করা, সম্মাননা পদক প্রদান এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের কাছ থেকে প্রশংসাপত্র গ্রহণের কাজগুলো তাঁকেই করতে হয়। বাইরে থেকে আসা কোনো অতিথির যদি সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয় থাকে, তবেই সেটা রাষ্ট্রীয় সফর বলে অনুমোদন পায়। বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ভোজও হয় প্রাসাদে।
অভ্যর্থনা ও অনুষ্ঠান
রাজদম্পতি বছরজুড়ে শত শত অনুষ্ঠান, অভ্যর্থনা, বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, সমাবেশ ও ভোজে অংশ নেন। সারা বিশ্বের অনেক রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ রাজপ্রাসাদে অনেক ব্যক্তিকেই অভ্যর্থনা জানান তাঁরা। তবে কথোপকথনে রাজদম্পতিকে বিশেষ সতর্ক অবলম্বন করতে হয়। রাজপরিবারের সদস্যরা এমন কিছু বলতে পারবেন না, যাতে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতির অপব্যাখ্যা করা হয়।
জাপানের প্রাচীন ধর্ম শিন্তোর বেশ কিছু রীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন সম্রাট। সাম্রাজ্যের পূর্বপুরুষ এবং ভালো ফসলের জন্য বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয় রাজপ্রাসাদে।
সফর ও ভ্রমণ
রাজদম্পতি বছরে অন্তত তিনবার অভ্যন্তরীণ সফর করেন। কোথাও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছে ছুটে যান তাঁরা। ২০১১ সালে সুনামির পর থেকে সম্রাট আকিহিতো এই প্রথা চালু করেন। ফুকুশিমা পারমাণবিক চুল্লির তরলীকরণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে ভীতসন্ত্রস্ত জনগণকে শান্ত করতে এগিয়ে আসেন সম্রাট। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সুনামি আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্মরণে বার্ষিক জাতীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রাজদম্পতি।
শিশু, বৃদ্ধ ও বিকলাঙ্গ মানুষের কল্যাণে নির্মিত শত শত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন তাঁরা। প্রতিবছর খেলাধুলা আর পরিবেশ রক্ষার্থে আয়োজিত অসংখ্য জাতীয় উৎসবে সভাপতিত্ব করেন রাজদম্পতি। বয়স যখন তাঁদের আরেকটু কম ছিল, তখন পর্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে দূর–দূরান্তে ভ্রমণ করতেন তাঁরা। কিন্তু সম্প্রতি বার্ধক্যজনিত কারণে বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারগুলো রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন সম্রাট।
ঐতিহ্য ও শখ
সম্রাট এবং সম্রাজ্ঞী দুজনই ‘ওয়াকা’ রচনা করেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজপরিবারের ঐতিহ্যবাহী রূপে লেখা কবিতার নাম ‘ওয়াকা’। প্রতিবছর জানুয়ারিতে রাজপ্রাসাদে ঐতিহ্যবাহী নববর্ষের কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন সম্রাট। রাজপরিবারের সামনে এবং জাতীয় সম্প্রচারকেন্দ্র এনএইচকেতে প্রচারিত এই অনুষ্ঠানে রাজদম্পতি ছাড়াও সাধারণ জনগণের লেখা কবিতা আবৃত্তি করা হয়।
বাবা হিরোহিতোর (রাজত্বের নামানুসারে যিনি মরণোত্তর রাজা শাওয়া উপাধি পান) মতো আকিহিতোও প্রতিবছর গাছ লাগান, রাজকীয় এলাকার মাঠে ফসল ফলান। সামুদ্রিক জীবন সম্পর্কে আগ্রহী সম্রাট একজন নিবেদিতপ্রাণ বিজ্ঞানীও বটে। তার বেশ কিছু সাময়িকীতে নিবন্ধও প্রকাশিত হয়েছে। পিয়ানোবাদক সম্রাজ্ঞী মিশিকো সংগীত খুব ভালোবাসেন। রাজকীয় বাসস্থানের মধ্যেই রেশম পোকার চাষ করেন তিনি। রাজপরিবারের ঐতিহ্যবাহী হস্তনির্মিত ফেব্রিকশিল্প পুনরুদ্ধারে ব্যবহৃত হয় সম্রাজ্ঞীর নিজ হাতে উৎপাদিত রেশম কাপড়।
No comments