সংসদে শোক প্রস্তাবের আলোচনা: এরশাদকে নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক কিছু বলার থাকলেও গণতন্ত্রের স্বার্থে অনেক কিছু
হজম করে এগিয়ে যাচ্ছি। দেশের উচ্চ আদালত মার্শাল ল’ দিয়ে জিয়াউর রহমান ও
এইচ এম এরশাদের ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। এই রায়ের পর এ দু’জনকে
(জিয়া ও এরশাদ) আর রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করা যায় না। তবে জেনারেল এরশাদ
সাহেব অমায়িক ছিলেন, মানুষের প্রতি তার দরদ ছিল।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রোববার সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিন প্রয়াত বিরোধী দলের নেতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুতে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, দোষে গুণে মানুষ। আমাদেরও অনেক কিছুই বলার আছে। কারণ আমরাই সব চেয়ে বেশি ভূক্তভোগী। তারপরও দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে অনেক কিছু হজম করে যাচ্ছি। তিনি প্রয়াত বিরোধী দলের নেতা এইচ এম এরশাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের নেতা যিনি ছিলেন, সেই জেনারেল এরশাদ এক সময় যখন পাকিস্তান থেকে ফিরে আসেন, তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তাঁকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করান। একসময় তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান হন। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল, সেই নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী ছিলেন বিচারপতি সাত্তার। তাকে কিন্তু সেনাপ্রধান হিসেবে সাত্তারকে প্রার্থী করেছিলেন জেনারেল এরশাদ। একটি বিদেশী পত্রিকায় তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন বিচারপতি সাত্তার সাহেব তার প্রার্থী! সেখানেই আমরা আপত্তি তুলেছিলাম। বিচারপতি সাত্তার সাহেবকে বলেছিলাম, এ ধরণের প্রার্থী হওয়া উচিত না। বরং নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে হতে দেন, গণতান্ত্রিক ধারা যেন বজায় থাকে। কিন্তু তারা তা করেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরফলে ফলাফল এটাই হয়েছিল যে তখন বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু রাজনীতিতে আসেনি। কিন্ত পরবর্তিতে রাজনীতিতে না আসলেও হঠাৎ করে বিচারপতি ছাত্তার সাহেবের বিরুদ্ধে একটা স্টেটমেন্ট দেন। বিচারপতি ছাত্তার সাহেব ছিল তখন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তখন খালেদা জিয়া তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বিদায় দেয়ার জন্য স্টেটমেন্ট দেয়। তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে এরশাদ সাহেব যে ক্ষমতা দখল করেছিল, সেই ক্ষমতা দখলের সুযোগটা কিন্তু খালেদা জিয়াই করে দিয়েছিলেন। করে দিয়েছিল হয়তো একারনেই যে, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে শুধু দুটি বাড়িই নয়, নগদ ১০ লাখ টাকাসহ অনেক সুযোগ সুবিধা জেনারেল এরশাদ দিয়েছিলেন। যে কারণে জিয়া হত্যার ব্যাপারে যে মামলা হয়েছিল চট্টগ্রামে, সে মামলা কিন্তু বিএনপি কখনো চালায়নি। তিনি বলেন, বহুবছর পরে ১৯৯৪ সালের দিকে এক সময়ে বা বহু বছরপর এসে জেনারেল এরশাদকে তাঁর স্বামী হত্যার জন্য দায়ী করেছেন খালেদা জিয়া। এরপূর্বে কখনো দায়ী করেননি। এগুলো ইতিহাসের একটা অংশ যে, ক্ষমতাটাকে তুলে দেয়া বা সুযোগ করে দেয়া। তবে এর বিরুদ্ধে আমরাই প্রতিবাদ করেছি। কারন আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দল প্রতিবাদ করেছিলাম এই জন্যই যে, আমরা চেয়েছিলাম গণতন্ত্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। অর্থাৎ এক সামরিক শাসকের ক্ষমতা থেকে আরেক সামরিক শাসকের ক্ষমতা আসুক, এটা কখনো আমাদের জন্য কাম্য ছিল না। সংসদ নেতা বলেন, অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমাকে চলতে হয়েছে। আমি দেশে ফিরে আসার পরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের আমাদের বাড়িতে জেনারেল জিয়াকে আমাকে ঢুকতেই দেয়নি। এটাও বাস্তবতা। তিনি বলেন, প্রথমে মার্শাল ল জারি করে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করে। এরপর নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করে নেয়। এই ক্ষমতা দখল প্রথমে জিয়াউর রহমান করে। জাতির পিতাকে হত্যার পর ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। এরপর জেনারেল এরশাদও নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চ আদালত জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদের এই ক্ষমতা দখলটাকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। উচ্চ আদালত অবৈধ যখন ঘোষণা করেছে, তখন আর এই দুইজনের কেউ আর সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে কিন্তু থাকে না। তাদের রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লে¬খ করাও হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী বৈধ নয়, বরং সেটা করা যায় না। কারণ একটা রায়ের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের ধারাটা অব্যাহত রাখার সুযোগ হয়েছে। জেনারেল এরশাদ সাহেব অমায়িক ছিলেন এবং মানুষের প্রতি তাঁর দরদ ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা সাভার স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তিতে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসে। জেনারেল জিয়া কিন্তু নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিলেও কখনো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়নি। যেটা করেছেন জেনারেল এরশাদ সাহেব। তিনি আসার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অসমাপ্ত কাজ বা সাভার স্মৃতিসৌধের অসমাপ্ত কাজ বা মুজিব নগরের স্মৃতিসৌধ সেগুলো তৈরি করেছেনে- এতে কোন সন্দেহ নাই। তিনি বলেন, কেউ যদি ভাল কাজ করে নিশ্চয়ই আমরা তা বলব। তাছাড়া আর একটি কাজ এরশাদ সাহেব করেছিলেন। নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে যখন জেনারেল এরশাদের সঙ্গে সংলাপ করি আমাদের ১৪ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে জিয়ার আমলে জারিকৃত মৃত্যুর পরোয়ানা প্রত্যাহারের জন্য এবং তাদের মুক্তি দেয়ার জন্য। তাছাড়া অনেকেই তখন গ্রেপ্তার হয়ে বন্দী ছিলেন। এরশাদ সাহেব সকলকে মুক্তি দিয়েছিলেন। এই মুক্তি দেয়ার মধ্য থেকে তিনি এক একটা পরিবারকে রক্ষা করেছিলেন। অতীতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময় (এরশাদের শাসনামল) অনেকবার আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়, কারাবরণ করি। আমাদের একেক সময় গ্রেপ্তার কখনো সাব জেলে রাখা হয়, আবার কখনো গৃহবন্দী করা হয়। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি লালদীঘির ময়দানে আমাদের সভা করতে বাধা দেয়া হয়। সরাসরি গুলি ছোঁড়া হয়, সেখানে প্রায় ৩০ জনের মতো মানুষ মারা যায়। এগুলো কিন্তু এরশাদের শাসনামলেই হয়েছিল। সংসদ নেতা বলেন, আমরা সব সময় গণতন্ত্র চেয়েছি, যেন গণতন্ত্র অব্যহত থাক। যে কারণে অনেক প্রতিকুল অবস্থায়ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম ১৯৮৬ সালে, যদি সেই নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে হতো, তাহলো হয়তো তাকে (এরশাদ) এই ধরনের বিতর্কিত হতে হতো না। একটি গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠিত হতো। যদিও নির্বাচনের পর কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়। কারণ জেনারেল জিয়ার আমলে প্রতি রাতে কারফিউ ছিল। তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালের নির্বাচন যেটা হয় সেটাও বলতে গেলে কোন দল অংশগ্রহণ করেনি। এরপর আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করেছিলেন খালেদা জিয়া, তখনও কিন্তু কোন দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নাই। আন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়া মাত্র দেড়মাসের মধ্যে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন। সেটাও জনগণের রুদ্ররোষে। অর্থাৎ জনসমর্থন না থাকলে নির্বাচন নিয়ে যে যত বিতর্কিত হোক, যে কথাই বলুক না কেন, যদি জনসমর্থন না থাকে তবে সে নির্বাচেন যদি সত্যিকার ভোট দিয়ে না থাকে তাহলে সেই নির্বাচনে কেউ টিকে থাকতে পারে না। তার প্রমান খালেদা জিয়ার ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও জনগণ ভোট দিয়েছে বলেই বিএনপির আন্দোলনের ডাকে দেশের জনগণ সাড়া দেয়নি। যদি নির্বাচনে জনগণ ভোট দিত, তবে তারা আন্দোলন করে আমাদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারতো। তাই অনেক চরাই উৎরাই পার হয়েই আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রোববার সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিন প্রয়াত বিরোধী দলের নেতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুতে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, দোষে গুণে মানুষ। আমাদেরও অনেক কিছুই বলার আছে। কারণ আমরাই সব চেয়ে বেশি ভূক্তভোগী। তারপরও দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে অনেক কিছু হজম করে যাচ্ছি। তিনি প্রয়াত বিরোধী দলের নেতা এইচ এম এরশাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের নেতা যিনি ছিলেন, সেই জেনারেল এরশাদ এক সময় যখন পাকিস্তান থেকে ফিরে আসেন, তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তাঁকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করান। একসময় তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান হন। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল, সেই নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী ছিলেন বিচারপতি সাত্তার। তাকে কিন্তু সেনাপ্রধান হিসেবে সাত্তারকে প্রার্থী করেছিলেন জেনারেল এরশাদ। একটি বিদেশী পত্রিকায় তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন বিচারপতি সাত্তার সাহেব তার প্রার্থী! সেখানেই আমরা আপত্তি তুলেছিলাম। বিচারপতি সাত্তার সাহেবকে বলেছিলাম, এ ধরণের প্রার্থী হওয়া উচিত না। বরং নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে হতে দেন, গণতান্ত্রিক ধারা যেন বজায় থাকে। কিন্তু তারা তা করেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরফলে ফলাফল এটাই হয়েছিল যে তখন বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু রাজনীতিতে আসেনি। কিন্ত পরবর্তিতে রাজনীতিতে না আসলেও হঠাৎ করে বিচারপতি ছাত্তার সাহেবের বিরুদ্ধে একটা স্টেটমেন্ট দেন। বিচারপতি ছাত্তার সাহেব ছিল তখন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তখন খালেদা জিয়া তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বিদায় দেয়ার জন্য স্টেটমেন্ট দেয়। তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে এরশাদ সাহেব যে ক্ষমতা দখল করেছিল, সেই ক্ষমতা দখলের সুযোগটা কিন্তু খালেদা জিয়াই করে দিয়েছিলেন। করে দিয়েছিল হয়তো একারনেই যে, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে শুধু দুটি বাড়িই নয়, নগদ ১০ লাখ টাকাসহ অনেক সুযোগ সুবিধা জেনারেল এরশাদ দিয়েছিলেন। যে কারণে জিয়া হত্যার ব্যাপারে যে মামলা হয়েছিল চট্টগ্রামে, সে মামলা কিন্তু বিএনপি কখনো চালায়নি। তিনি বলেন, বহুবছর পরে ১৯৯৪ সালের দিকে এক সময়ে বা বহু বছরপর এসে জেনারেল এরশাদকে তাঁর স্বামী হত্যার জন্য দায়ী করেছেন খালেদা জিয়া। এরপূর্বে কখনো দায়ী করেননি। এগুলো ইতিহাসের একটা অংশ যে, ক্ষমতাটাকে তুলে দেয়া বা সুযোগ করে দেয়া। তবে এর বিরুদ্ধে আমরাই প্রতিবাদ করেছি। কারন আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দল প্রতিবাদ করেছিলাম এই জন্যই যে, আমরা চেয়েছিলাম গণতন্ত্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। অর্থাৎ এক সামরিক শাসকের ক্ষমতা থেকে আরেক সামরিক শাসকের ক্ষমতা আসুক, এটা কখনো আমাদের জন্য কাম্য ছিল না। সংসদ নেতা বলেন, অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমাকে চলতে হয়েছে। আমি দেশে ফিরে আসার পরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের আমাদের বাড়িতে জেনারেল জিয়াকে আমাকে ঢুকতেই দেয়নি। এটাও বাস্তবতা। তিনি বলেন, প্রথমে মার্শাল ল জারি করে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করে। এরপর নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করে নেয়। এই ক্ষমতা দখল প্রথমে জিয়াউর রহমান করে। জাতির পিতাকে হত্যার পর ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। এরপর জেনারেল এরশাদও নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চ আদালত জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদের এই ক্ষমতা দখলটাকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। উচ্চ আদালত অবৈধ যখন ঘোষণা করেছে, তখন আর এই দুইজনের কেউ আর সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে কিন্তু থাকে না। তাদের রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লে¬খ করাও হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী বৈধ নয়, বরং সেটা করা যায় না। কারণ একটা রায়ের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের ধারাটা অব্যাহত রাখার সুযোগ হয়েছে। জেনারেল এরশাদ সাহেব অমায়িক ছিলেন এবং মানুষের প্রতি তাঁর দরদ ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা সাভার স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তিতে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসে। জেনারেল জিয়া কিন্তু নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিলেও কখনো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়নি। যেটা করেছেন জেনারেল এরশাদ সাহেব। তিনি আসার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অসমাপ্ত কাজ বা সাভার স্মৃতিসৌধের অসমাপ্ত কাজ বা মুজিব নগরের স্মৃতিসৌধ সেগুলো তৈরি করেছেনে- এতে কোন সন্দেহ নাই। তিনি বলেন, কেউ যদি ভাল কাজ করে নিশ্চয়ই আমরা তা বলব। তাছাড়া আর একটি কাজ এরশাদ সাহেব করেছিলেন। নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে যখন জেনারেল এরশাদের সঙ্গে সংলাপ করি আমাদের ১৪ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে জিয়ার আমলে জারিকৃত মৃত্যুর পরোয়ানা প্রত্যাহারের জন্য এবং তাদের মুক্তি দেয়ার জন্য। তাছাড়া অনেকেই তখন গ্রেপ্তার হয়ে বন্দী ছিলেন। এরশাদ সাহেব সকলকে মুক্তি দিয়েছিলেন। এই মুক্তি দেয়ার মধ্য থেকে তিনি এক একটা পরিবারকে রক্ষা করেছিলেন। অতীতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময় (এরশাদের শাসনামল) অনেকবার আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়, কারাবরণ করি। আমাদের একেক সময় গ্রেপ্তার কখনো সাব জেলে রাখা হয়, আবার কখনো গৃহবন্দী করা হয়। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি লালদীঘির ময়দানে আমাদের সভা করতে বাধা দেয়া হয়। সরাসরি গুলি ছোঁড়া হয়, সেখানে প্রায় ৩০ জনের মতো মানুষ মারা যায়। এগুলো কিন্তু এরশাদের শাসনামলেই হয়েছিল। সংসদ নেতা বলেন, আমরা সব সময় গণতন্ত্র চেয়েছি, যেন গণতন্ত্র অব্যহত থাক। যে কারণে অনেক প্রতিকুল অবস্থায়ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম ১৯৮৬ সালে, যদি সেই নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে হতো, তাহলো হয়তো তাকে (এরশাদ) এই ধরনের বিতর্কিত হতে হতো না। একটি গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠিত হতো। যদিও নির্বাচনের পর কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়। কারণ জেনারেল জিয়ার আমলে প্রতি রাতে কারফিউ ছিল। তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালের নির্বাচন যেটা হয় সেটাও বলতে গেলে কোন দল অংশগ্রহণ করেনি। এরপর আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করেছিলেন খালেদা জিয়া, তখনও কিন্তু কোন দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নাই। আন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়া মাত্র দেড়মাসের মধ্যে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন। সেটাও জনগণের রুদ্ররোষে। অর্থাৎ জনসমর্থন না থাকলে নির্বাচন নিয়ে যে যত বিতর্কিত হোক, যে কথাই বলুক না কেন, যদি জনসমর্থন না থাকে তবে সে নির্বাচেন যদি সত্যিকার ভোট দিয়ে না থাকে তাহলে সেই নির্বাচনে কেউ টিকে থাকতে পারে না। তার প্রমান খালেদা জিয়ার ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও জনগণ ভোট দিয়েছে বলেই বিএনপির আন্দোলনের ডাকে দেশের জনগণ সাড়া দেয়নি। যদি নির্বাচনে জনগণ ভোট দিত, তবে তারা আন্দোলন করে আমাদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারতো। তাই অনেক চরাই উৎরাই পার হয়েই আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে।
No comments