ঢাকায় সক্রিয় ৫০ কিশোর গ্যাং by শুভ্র দেব
ক্রমেই
বেপরোয়া হয়ে উঠছে ঢাকায় কিশোর গ্যাং। প্রতিটি এলাকা ভিত্তিক গড়ে উঠছে
আলাদা আলাদা কিশোর গ্যাং। কোনো কোনো এলাকায় একাধিক গ্রুপ গড়ে উঠেছে। এসব
গ্যাং ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তারে মারামারি, খুনখারাবি, মাদক ব্যবসা, মাদক
সেবন, ইভটিজিং সবই করছে। নিজেদের অবস্থান জানান দিতে তারা সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে নানা স্ট্যাটাস দেয়। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমুতে তারা একে
অপরের সঙ্গে ভাব বিনিময় করে। বিপক্ষ গ্রুপকে প্রতিহত করার জন্য প্রকাশ্য
হুমকি-ধমকি দেয়া তাদের নিত্যদিনের কাজ। বুধবার কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য
বিস্তারে মহসিন নামের ১৪ বছরের এক কিশোরের প্রাণহানি ঘটেছে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীতে শতাধিক কিশোর গ্যাং গড়ে উঠলেও সক্রিয় আছে ৫০টি। এসব গ্যাংয়ে অন্তত কয়েক হাজার কিশোর জড়িত। এদের মধ্যে অনেকেই স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেনি। অথচ তারা ভয়ঙ্কর সব অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। র্যাব ও পুলিশের অভিযানে গত এক মাসে অন্তত অর্ধশতাধিক কিশোরকে আটক করে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশেরে উত্তর বিভাগে সবচেয়ে বেশি কিশোর গ্যাং। ওই এলাকায় উল্লেখযোগ্য কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে রয়েছে, পাওয়ার বয়েজ, ডিসকো বয়েজ, বিগ বস, নাইন স্টার ও নাইন এমএম বয়েজ, এনএনএস, এফএইচবি, জিইউ, ক্যাকরা, ডিএইচবি, ব্ল্যাক রোজ, রনো, কেনাইন, ফিফটিন গ্যাং, ডিসকো বয়েজ, পোটলা বাবু, সুজন ফাইটার, আলতাফ জিরো, ক্যাসল বয়েজ, ভাইপার, তুফান, থ্রি গোল গ্যাং। কিশোর গ্যাং দ্বন্দ্বে উত্তরা এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে গেছেন। ডিএমপির উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. কামরুজ্জামান সরদার বলেন, সাইবার ক্রাইম থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অফিসাররা সাইবার প্রেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে কিশোর গ্যাংদের গতিবিধি নজরদারি করে। কোন কোন মোড়ে তারা আড্ডা দেয়, কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়াচ্ছে কিনা। এছাড়া এলাকাভিত্তিক সন্দেহভাজন কিশোরদের ডেকে এনে কাউন্সিল করে ছেড়ে দেয়। অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের ডেকে এনে তাদের জিম্মায় দেই। আর যদি কোনো অপরাধের সঙ্গে কাউকে সম্পৃক্ত পাওয়া যায়। তবে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হয়।
এছাড়া তেজগাঁওয়ে মাঈনুদ্দিন গ্রুপ, মিরপুর-১১তে বিহারি রাসেল গ্যাং, মিরপুর ১২ তে বিচ্চু বাহিনী, পিচ্চি বাবু ও সাইফুলের গ্যাং, সি ব্লকে সাব্বির গ্যাং, ডি ব্লকে বাবু রাজন গ্যাং, চ ব্লকে রিপন গ্যাং,ধ ব্লকে মোবারক গ্যাং। কাফরুলের ইব্রাহিমপুরে নয়ন গ্যাং, তুরাগে তালাচাবি গ্যাং, ধানমণ্ডিতে রয়েছে, নাইন এম এম, একে ৪৭ ও ফাইভ স্টার গ্রুপ, রায়ের বাজারে স্টার বন্ড গ্রুপও মোল্লা রাব্বি গ্রুপ, মোহাম্মদপুরে গ্রুপ টোয়েন্টিফাইভ, লাড়া দে, লেভেল হাই, দেখে ল-চিনে ল, কোপায়ইয়া দে গ্রুপ, দক্ষিণখানে শাহীন-রিপন গ্যাং, উত্তরখানের বড়বাগে নাজিম উদ্দিন গ্যাং, আটি পাড়ার শান্ত গ্যাং, মেহেদী গ্যাং, খ্রিস্টান পাড়ার সোলেমান গ্যাং, ট্র্যান্সমিটার মোড়ের রাসেল ও উজ্বল গ্যাং, হাজারীবাগে বাংলা ও গেণ্ডারিয়ায় লাভলেট, বংশালে জুম্মন গ্যাং, মুগদায় চান-জাদু, ডেভিল কিং ফুল পার্টি, ভলিয়ম টু ও ভাণ্ডারি গ্যাং, চকবাজারে টিকটক গ্যাং, পোঁটলা সিফাত গ্যাং সক্রিয় রয়েছে।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, ২৪ আগস্ট রায়েরবাজার ও মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে স্টার বন্ড গ্রুপের ১৭ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব। পরে তাদেরকে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। এক্ দিন পুরাণ ঢাকার বংশালে জুম্মন গ্রুপের প্রধান জুম্মনসহ ৫ জন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ২৫ আগস্ট মুগদার মাণ্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চান-জাদু গ্রুপে, ডেভিল কিং ফুল পার্টি, ভলিয়ম টু ও ভাণ্ডারি গ্রুপের ২৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১০ আগস্ট মিরপুর -১ নম্বর থেকে কিশোর গ্যাংয়ের ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ৭ আগস্ট রাতে কাওরান বাজার, ফার্মগেট, কলেজগেট, শিশুমেলা, শ্যামলী ও মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-২। তাদের মধ্যে ১১ জনকে রায়েরবাজারে ছিনতাই করার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে ২৮ জুলাই মোহাম্মদপুরে অভিযান চালিয়ে লাড়া দে ও লেভেল হাই গ্রুপের ২ সদস্যকে আটক করে র্যাব। ১৫ জুলাই রাতে তুরাগের বাউনিয়া থেকে নিউ নাইন স্টারের ১১ সদস্যকে আটক করে র্যাব-১।
র্যাব-২ কোম্পানি কমান্ডার ও পুলিশ সুপার মুহম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, মোহাম্মদপুর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের বেশ কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে। তারা এলাকায় ছিনতাই, চুরিসহ নানা অপরাধ করে বেড়ায়। রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবি স্মৃতি সৌধ এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের কারণে দর্শনার্থীরা আসতে পারে না। তারা দর্শনার্থীদের সঙ্গে অপ্রীতিকর আচরণ করে। মারামারি করা তাদের নিয়মিত কাজ। আমরা ইতিমধ্যে অনেক কিশোরকে আটক করেছি। বাকি যারা আছে তাদের নজরদারিতে রেখেছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক মানবজমিনকে বলেন, গ্যাং কালচারের সঙ্গে বাঙ্গালীদের কোনো সম্পর্ক নাই। এটি একটি ইউরোপীয় কালচার। কিন্তু প্রযুক্তির কারণে সেটা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গেছে। টেলিভিশনের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে কিশোর কিশোরীরা। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো কোন ধরণের প্রোগ্রাম দেখাতে পারবে এসব ক্ষেত্রে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। তিনি বলেন, কয়েক দশক আগেও যেমন মা-বাবা তাদের সন্তানদের সঙ্গ দিতেন, সময় ও পরিস্থিতির কারণে এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কেউ কেউ তার সন্তানদের ডে-কেয়ার অথবা গৃহপরিচারিকার কাছে রেখে কাজে যাচ্ছেন। যার কারণে সন্তানের সুস্থ সামাজিকরণ হচ্ছে না। সঠিকভাবে সামাজিক আদব কায়দা, শিষ্টাচার শিখছে না। এর বাইরে আমাদের সমাজে পারিবারিক ভাঙ্গন, পারিবারিক বিচ্ছিন্নতার ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। এসব কারণে শিশুদের ওপর একটা মনস্তাত্তিক প্রভাব পড়ে। তারা এক সময় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে। সঙ্গ খোঁজতে গিয়ে অনেক সময় খারাপ সঙ্গীর সঙ্গে মিশে যায়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজ থেকে যে নৈতিকতার শিক্ষা পেত এখন সেটা পাচ্ছে না। কারণ বেশিরভাগ স্কুল কলেজ এখন বানিজ্যিক দিক দিয়ে বেশি ঝুঁকে পড়েছে। গ্যাং কালচারের থেকে সরিয়ে আনার জন্য কিশোর উন্নয়ণ ও বেড়ে উঠার প্রক্রিয়াগুলোতে সরকারের বিনোয়োগ বাড়াতে হবে। এবং অভিভাবকদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করেন তিনি। সর্বোপরি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরে এসব বিষয়ে নজরদারি থাকতে হবে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম মানবজমিনকে বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসাবে কিশোর গ্যাং দমনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যারা এ ধরনের অপরাধে জড়িত প্রতিটা এলাকা ভিত্তিক তালিকা করেছি। তালিকা ধরে ধরে আমাদের প্রতিটা ব্যাটালিয়ন কাজ করছে। তাদের ওপর নজরদারি রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা অনেক কিশোর অপরাধীদের আটক করেছি। যাদের বয়স কম তাদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠিয়েছি। আর যারা ১৮ বছরের ওপরে তাদের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতায় নিয়ে এসেছি। আশা করছি তাদের তৎপরতা কমে যাবে। কারণ একদিকে আমাদের সাঁড়াশি অভিযান চলছে এছাড়া স্কুল-কলেজের কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের বার্তা দিচ্ছি। যেন তাদের সন্তানদের বেলায় সতর্ক থাকে। তারা কি করছে কোথায় যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীতে শতাধিক কিশোর গ্যাং গড়ে উঠলেও সক্রিয় আছে ৫০টি। এসব গ্যাংয়ে অন্তত কয়েক হাজার কিশোর জড়িত। এদের মধ্যে অনেকেই স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেনি। অথচ তারা ভয়ঙ্কর সব অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। র্যাব ও পুলিশের অভিযানে গত এক মাসে অন্তত অর্ধশতাধিক কিশোরকে আটক করে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশেরে উত্তর বিভাগে সবচেয়ে বেশি কিশোর গ্যাং। ওই এলাকায় উল্লেখযোগ্য কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে রয়েছে, পাওয়ার বয়েজ, ডিসকো বয়েজ, বিগ বস, নাইন স্টার ও নাইন এমএম বয়েজ, এনএনএস, এফএইচবি, জিইউ, ক্যাকরা, ডিএইচবি, ব্ল্যাক রোজ, রনো, কেনাইন, ফিফটিন গ্যাং, ডিসকো বয়েজ, পোটলা বাবু, সুজন ফাইটার, আলতাফ জিরো, ক্যাসল বয়েজ, ভাইপার, তুফান, থ্রি গোল গ্যাং। কিশোর গ্যাং দ্বন্দ্বে উত্তরা এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে গেছেন। ডিএমপির উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. কামরুজ্জামান সরদার বলেন, সাইবার ক্রাইম থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অফিসাররা সাইবার প্রেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে কিশোর গ্যাংদের গতিবিধি নজরদারি করে। কোন কোন মোড়ে তারা আড্ডা দেয়, কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়াচ্ছে কিনা। এছাড়া এলাকাভিত্তিক সন্দেহভাজন কিশোরদের ডেকে এনে কাউন্সিল করে ছেড়ে দেয়। অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের ডেকে এনে তাদের জিম্মায় দেই। আর যদি কোনো অপরাধের সঙ্গে কাউকে সম্পৃক্ত পাওয়া যায়। তবে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হয়।
এছাড়া তেজগাঁওয়ে মাঈনুদ্দিন গ্রুপ, মিরপুর-১১তে বিহারি রাসেল গ্যাং, মিরপুর ১২ তে বিচ্চু বাহিনী, পিচ্চি বাবু ও সাইফুলের গ্যাং, সি ব্লকে সাব্বির গ্যাং, ডি ব্লকে বাবু রাজন গ্যাং, চ ব্লকে রিপন গ্যাং,ধ ব্লকে মোবারক গ্যাং। কাফরুলের ইব্রাহিমপুরে নয়ন গ্যাং, তুরাগে তালাচাবি গ্যাং, ধানমণ্ডিতে রয়েছে, নাইন এম এম, একে ৪৭ ও ফাইভ স্টার গ্রুপ, রায়ের বাজারে স্টার বন্ড গ্রুপও মোল্লা রাব্বি গ্রুপ, মোহাম্মদপুরে গ্রুপ টোয়েন্টিফাইভ, লাড়া দে, লেভেল হাই, দেখে ল-চিনে ল, কোপায়ইয়া দে গ্রুপ, দক্ষিণখানে শাহীন-রিপন গ্যাং, উত্তরখানের বড়বাগে নাজিম উদ্দিন গ্যাং, আটি পাড়ার শান্ত গ্যাং, মেহেদী গ্যাং, খ্রিস্টান পাড়ার সোলেমান গ্যাং, ট্র্যান্সমিটার মোড়ের রাসেল ও উজ্বল গ্যাং, হাজারীবাগে বাংলা ও গেণ্ডারিয়ায় লাভলেট, বংশালে জুম্মন গ্যাং, মুগদায় চান-জাদু, ডেভিল কিং ফুল পার্টি, ভলিয়ম টু ও ভাণ্ডারি গ্যাং, চকবাজারে টিকটক গ্যাং, পোঁটলা সিফাত গ্যাং সক্রিয় রয়েছে।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, ২৪ আগস্ট রায়েরবাজার ও মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে স্টার বন্ড গ্রুপের ১৭ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব। পরে তাদেরকে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। এক্ দিন পুরাণ ঢাকার বংশালে জুম্মন গ্রুপের প্রধান জুম্মনসহ ৫ জন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ২৫ আগস্ট মুগদার মাণ্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চান-জাদু গ্রুপে, ডেভিল কিং ফুল পার্টি, ভলিয়ম টু ও ভাণ্ডারি গ্রুপের ২৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১০ আগস্ট মিরপুর -১ নম্বর থেকে কিশোর গ্যাংয়ের ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ৭ আগস্ট রাতে কাওরান বাজার, ফার্মগেট, কলেজগেট, শিশুমেলা, শ্যামলী ও মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-২। তাদের মধ্যে ১১ জনকে রায়েরবাজারে ছিনতাই করার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে ২৮ জুলাই মোহাম্মদপুরে অভিযান চালিয়ে লাড়া দে ও লেভেল হাই গ্রুপের ২ সদস্যকে আটক করে র্যাব। ১৫ জুলাই রাতে তুরাগের বাউনিয়া থেকে নিউ নাইন স্টারের ১১ সদস্যকে আটক করে র্যাব-১।
র্যাব-২ কোম্পানি কমান্ডার ও পুলিশ সুপার মুহম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, মোহাম্মদপুর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের বেশ কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে। তারা এলাকায় ছিনতাই, চুরিসহ নানা অপরাধ করে বেড়ায়। রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবি স্মৃতি সৌধ এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের কারণে দর্শনার্থীরা আসতে পারে না। তারা দর্শনার্থীদের সঙ্গে অপ্রীতিকর আচরণ করে। মারামারি করা তাদের নিয়মিত কাজ। আমরা ইতিমধ্যে অনেক কিশোরকে আটক করেছি। বাকি যারা আছে তাদের নজরদারিতে রেখেছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক মানবজমিনকে বলেন, গ্যাং কালচারের সঙ্গে বাঙ্গালীদের কোনো সম্পর্ক নাই। এটি একটি ইউরোপীয় কালচার। কিন্তু প্রযুক্তির কারণে সেটা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গেছে। টেলিভিশনের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে কিশোর কিশোরীরা। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো কোন ধরণের প্রোগ্রাম দেখাতে পারবে এসব ক্ষেত্রে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। তিনি বলেন, কয়েক দশক আগেও যেমন মা-বাবা তাদের সন্তানদের সঙ্গ দিতেন, সময় ও পরিস্থিতির কারণে এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কেউ কেউ তার সন্তানদের ডে-কেয়ার অথবা গৃহপরিচারিকার কাছে রেখে কাজে যাচ্ছেন। যার কারণে সন্তানের সুস্থ সামাজিকরণ হচ্ছে না। সঠিকভাবে সামাজিক আদব কায়দা, শিষ্টাচার শিখছে না। এর বাইরে আমাদের সমাজে পারিবারিক ভাঙ্গন, পারিবারিক বিচ্ছিন্নতার ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। এসব কারণে শিশুদের ওপর একটা মনস্তাত্তিক প্রভাব পড়ে। তারা এক সময় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে। সঙ্গ খোঁজতে গিয়ে অনেক সময় খারাপ সঙ্গীর সঙ্গে মিশে যায়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজ থেকে যে নৈতিকতার শিক্ষা পেত এখন সেটা পাচ্ছে না। কারণ বেশিরভাগ স্কুল কলেজ এখন বানিজ্যিক দিক দিয়ে বেশি ঝুঁকে পড়েছে। গ্যাং কালচারের থেকে সরিয়ে আনার জন্য কিশোর উন্নয়ণ ও বেড়ে উঠার প্রক্রিয়াগুলোতে সরকারের বিনোয়োগ বাড়াতে হবে। এবং অভিভাবকদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করেন তিনি। সর্বোপরি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরে এসব বিষয়ে নজরদারি থাকতে হবে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম মানবজমিনকে বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসাবে কিশোর গ্যাং দমনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যারা এ ধরনের অপরাধে জড়িত প্রতিটা এলাকা ভিত্তিক তালিকা করেছি। তালিকা ধরে ধরে আমাদের প্রতিটা ব্যাটালিয়ন কাজ করছে। তাদের ওপর নজরদারি রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা অনেক কিশোর অপরাধীদের আটক করেছি। যাদের বয়স কম তাদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠিয়েছি। আর যারা ১৮ বছরের ওপরে তাদের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতায় নিয়ে এসেছি। আশা করছি তাদের তৎপরতা কমে যাবে। কারণ একদিকে আমাদের সাঁড়াশি অভিযান চলছে এছাড়া স্কুল-কলেজের কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের বার্তা দিচ্ছি। যেন তাদের সন্তানদের বেলায় সতর্ক থাকে। তারা কি করছে কোথায় যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য।
No comments