তাহলে নিরাপত্তার কি প্রয়োজন! by শামীমুল হক
চক্রান্ত।
ষড়যন্ত্র। দোষারোপ। ঘুরে ফিরে একই বয়ান। একই চিত্র। এসব শব্দের উপর ভর করে
তলিয়ে যায় একের পর এক ঘটনা, দুর্ঘটনা। কোনো কোনো সময় জজ মিয়া নাটকের
মঞ্চায়ন হয়। বর্বররা উল্লাস করে। আনন্দ করে। অপরাধীরা দূরে বসে মুচকি হাসে।
মজা লোটে। দেশের প্রথিতযশা লেখক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধার
সন্তান, বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার পর এমন কাদাছোড়ার
লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ বলছে- এটি বিএনপির চক্রান্ত। বিএনপি বলছে-
এটি আওয়ামী লীগের চক্রান্ত। এসব বলে আগের অনেক আলোচিত ঘটনার মতো এ ঘটনাকেও
হালকা করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে বর্বরদের, হামলাকারীদের, সন্ত্রাসীদের এবং
দেশের শত্রুদের হাতকেই শক্তিশালী করা হচ্ছে। একে অন্যের দিকে তীর ছুড়ে মারা
যেন নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড. জাফর ইকবাল দেশের সম্পদ। পুলিশ প্রহরায় তার
কর্মস্থল শাবির মুক্তমঞ্চে তার ওপর বর্বর এ হামলা চলে। শিক্ষার্থীরা
হামলাকারী ফয়জুর রহমানকে আটকও করেছে। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে হামলাকারী
জানিয়েছে- জাফর ইকবাল ইসলামবিদ্বেষী। তাই তার ওপর হামলা চালানো হয়েছে।
র্যাব জানিয়েছে, তাকে আরো ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার সঙ্গে কারা
জড়িত, কোনো গ্যাং জড়িত কিনা সেটা জানার চেষ্টা চলছে। এ অবস্থায় বড় দুটি
দলের নেতারা একে অন্যের দিকে তীর ছুড়ে মারা কতটুকু যৌক্তিক? চিকিৎসার জন্য
গঠিত পাঁচ সদস্যের মেডিকেল টিম রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে জাফর ইকবালের
বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে তার মাথায় ৪টি,
পিঠের উপরের অংশে একটি ও বাম হাতে একটিসহ মোট ছয়টি আঘাত করা হয়েছে।
আঘাতগুলো স্টিলের ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে করা হয়েছে। আশার কথা- তার অবস্থা
শঙ্কামুক্ত। কথা হলো পুলিশের সামনে এমন বর্বর হামলা কি করে হলো? পুলিশ তখন
কি করছিল। শাবির ছাত্র না হয়েও ফয়জুর কেমন করে অনুষ্ঠানে ঠিক ড. জাফর
ইকবালের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। এমনটা করতে তাকে কে সহযোগিতা করেছে? এ প্রশ্ন
এখন সবার মুখে মুখে। বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলনে সোচ্চার ড. জাফর ইকবাল
উগ্রপন্থি গোষ্ঠীর হুমকি পেয়েছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে তার নিরাপত্তায় পুলিশ
নিয়োগ করা হয়েছিল। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে চলাফেরা
করতেন। ঘটনার সময়ও তার নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ ছিল। বলা হচ্ছে পুলিশি
নিরাপত্তার মধ্যেই যদি বর্বর হামলা হয় তাহলে এমন নিরাপত্তার দরকার কি?
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে এখনই। একে অন্যের ওপর দোষ
চাপিয়ে সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় না দিয়ে, সন্ত্রাস মোকাবিলায় এক টেবিলে বসতে হবে
রাজনীতিকদের। সন্ত্রাস নির্মূলে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে এক সুরে কথা বলার
সময় এসেছে। আর কোনো জাফর ইকবাল যেন এমন বর্বর হামলার শিকার না হন সেদিকে
কড়া নজর রাখতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে দেশের মানুষ শান্তি চায়। তারা
সন্ত্রাসকে ঘৃণা করে। মানুষের প্রত্যাশা জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী
ফয়জুরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে রহস্যের মূল উদ্ঘাটন করা। দোষীকে এমন
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যাতে সন্ত্রাসীরা ভয়ে আঁতকে ওঠে। হামলা
নিয়ে, সন্ত্রাস নিয়ে আর রাজনীতি কাম্য নয়। এ থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি
নেতৃবৃন্দ বিরত থাকবেন বলেই মনে করি।
No comments