দুই দেশের এক দ্বীপ by সালমান রিয়াজ
ফ্রান্স
ও স্পেন সীমান্তের মধ্যে বহমান বিদাসোয়া নদী। ওই নদীর মাঝে রয়েছে ফিজন্ত
নামের এক দ্বীপ। ছয় মাস অন্তর দ্বীপটি হাতবদল হয়। দ্বীপটি কখনও চলে
ফ্রান্সের শাসনে, আবার কখনও স্পেনের। এ নিয়মেই এবার আগামী সপ্তাহে দ্বীপটির
নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে স্পেন। আবার ছয়মাস পর স্পেন স্বেচ্ছায় তিন হাজার
বর্গমিটার আয়তনের এ দ্বীপ ফ্রান্সকে ফেরত দেবে। সাড়ে তিনশ’ বছরের বেশি সময়
ধরে এভাবেই চলছে দ্বীপটির হাতবদল। বিদাসোয়া নদী দুই প্রতিবেশী স্পেন ও
ফ্রান্সকে আলাদা করেছে। নদীর মাঝখানে অবস্থিত নির্জন, গাছগাছালি ঘেরা সবুজ
ওই দ্বীপটির দখল নিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশ প্রায় তিন দশক ধরে যুদ্ধ করে। পরে
১৬৫৯ সালে একটি ঐতিহাসিক চুক্তিতে উপনীত হয়। এতে দু’দেশের যুদ্ধের সমাপ্তি
ঘটে। তিন মাস ধরে আলোচনার পর উপনীত ওই চুক্তিতে দুই দেশ ফিজন্ত দ্বীপকে
নিরপেক্ষ অঞ্চল হিসেবে মেনে নেয়।
উভয় দিক থেকে দ্বীপটিতে যাওয়ার জন্য কাঠের
তৈরি সেতু বানানো হয়। পরে ‘ট্রিটি অব দ্য পেরেনিজ’ শান্তি চুক্তি অনুযায়ী,
ফিজেন্ত দ্বীপে দুটি স্বাধীন দেশের শাসন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরই
পরিপ্রেক্ষিতে দ্বীপটি অদলবদল হয় এবং নতুন করে এর সীমান্ত নির্ধারণ হয়।
দ্বীপটির তাই দুটি নাম আছে। স্প্যানিশ ভাষায় এর নাম ‘ইসলা দে লস ফাইসানেস’।
ফ্রেঞ্চ ভাষায় এটি ‘ইল দে ফিজো’ নামে পরিচিত। ১৬৬১ সালে ফরাসি রাজা
চতুর্দশ লুই স্পেনের রাজা চতুর্থ ফিলিপের মেয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ
হওয়ার পর ‘ট্রিটি অব দ্য পেরেনিজ’ আরও মজবুত হয়। তখন থেকেই ছয় মাস পরপর
দ্বীপটি হস্তান্তর হওয়া আর দুই দেশের যৌথ শাসনাধীনে থাকার নিয়ম চলে আসছে।
চুক্তি অনুযায়ী, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দ্বীপটি স্পেনের
নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং বাকি সময়ে সেখানে ফরাসি শাসন চলে। দ্বীপটি হাতবদলের
সময় কোনো অনুষ্ঠান করা হয় না। বরং ওড়ানো হয় পতাকা। এ পতাকা দেখেই বোঝা যায়,
কখন দ্বীপটিতে কোন দেশের শাসন চলছে। বিশ্বে একই জায়গায় দুই দেশের যৌথ
শাসনের চুক্তি সফল হওয়ার নজির বিরল। ফিজেন্ত দ্বীপ সেদিক থেকে ব্যতিক্রম।
দ্বীপটি দুই দেশের শাসনাধীনে থাকার সবচেয়ে পুরনো দৃষ্টান্তও। এ দ্বীপে
স্থায়ী কোনো বসতি নেই। বিশেষ অনুমতি ছাড়া দর্শনার্থীদের সেখানে প্রবেশও
নিষিদ্ধ।
No comments