দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাচনে দিল্লি-বেইজিং by মাসুম খলিলী

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ২০১৮ ও ২০১৯ সাল হলো নির্বাচন ও পরিবর্তনের বছর। বছরের শুরুতে নেপালে নতুন সরকার গঠন করেছে দুই কমিউনিস্ট পার্টি। বছরের মাঝামাঝি ভুটান ও পাকিস্তান এবং শেষার্ধে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হবে ভারতের বহুল আলোচিত নির্বাচন। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও একই বছর অনুষ্ঠিত হবে। আর এ বছরই অনুষ্ঠিত হবে সংসদ নির্বাচন। শ্রীলঙ্কায় ২০২০ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের নতুন দল বিপুলভাবে জয়ী হওয়ার ফলে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি উঠেছে। নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে চীন ভারতের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলোর উন্নয়ন এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চীনের যে ভূমিকা সেটাকে ভারত তার বিদেশনীতি ও নিরাপত্তার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র এবং সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে দেশটির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে আর বিস্তৃত চীনা উপস্থিতি এই অঞ্চলে ভারতের লিভারেজ বা সুবিধাকে কমিয়ে দেয়। এই বিবেচনা থেকে দক্ষিণ এশিয়ার আসন্ন নির্বাচনগুলোতে দিল্লি এই অঞ্চলের চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে সক্রিয়। এতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশের নির্বাচন কেন্দ্র করে চীন ও ভারতের প্রভাব বিস্তারের লড়াই তীব্র হয়ে উঠেছে। নেপালে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নিম্নকক্ষের নির্বাচন হয় ২০১৭ সালের একবারে শেষ পর্যায়ে। উচ্চ কক্ষের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ফেব্রুয়ারির প্রথমে। দেশটিতে জোট সরকার গঠনকারী দুই কমিউনিস্ট পার্টি নেপালি রাজনীতিতে চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত। নতুন সরকার গঠনের পর ধারণা করা হচ্ছে নেপালে চীনের সাথে সহযোগিতার নতুন ধারা শুরু হচ্ছে। এই ধারা নেপালে শত বছরের ভারতনির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। নেপাল এতদিন পর্যন্ত বাণিজ্য ও ট্রানজিট রুটগুলোর জন্য ভারতের ওপরই নির্ভরশীল ছিল। গত তিন বছরে চীনের সাথে সম্পর্ক কিছুটা জোরদার হয়েছে আর বাম জোটের সরকার গঠনে চীনের প্রভাব আরো বাড়বে।
এর মধ্যে চীনা বিনিয়োগে কয়েকটি বড় প্রকল্প পুনরায় শুরু করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কে পি অলি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে চীনের সাথে সম্পাদিত বাণিজ্য ও ট্রানজিট চুক্তি এখন দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। হিমালয়ের নিচ দিয়ে টানেল নির্মাণের উচ্চাভিলাষী প্রকল্পও এবার বাস্তবায়িত হতে পারে। নেপাল বেল্ট এবং রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) অংশগ্রহণের মাধ্যমে চীনের আরো কাছাকাছি চলে আসছে। ভারত কিভাবে এই উদীয়মান পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে এবং নেপালের মধ্যে তার সুফল বজায় রাখবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন। পাকিস্তান ও মালদ্বীপের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ভারতের সামনে আরেক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত গত তিন বছরে উভয় রাষ্ট্রের সাথে তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে কার্যকর অগ্রগতি সাধনে ব্যর্থ হয়েছে আর এটি করতে তাদের খুব আগ্রহী বলেও মনে হয়নি। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এখনো পর্যন্ত কার্যকর সংলাপের আয়োজন নেই। অথচ বিআরআইয়ের প্রকল্প চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের অবিচ্ছেদ্য অংশ ইসলামাবাদ। ভারত বিতর্কিত কাশ্মিরি ভূখণ্ড দিয়ে অতিক্রম করার কথা বলে এর বিরোধিতা করছে। পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা ২০১৮ সালের মাঝামাঝি কোনো একসময়। নানা কারণে জাতীয় নির্বাচন হয়তো সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবর পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে। অবশ্য বর্তমান রাজনৈতিক গতিধারা এবং আদালতের বিরূপ রায়ের ফলে পিএমএল (এন) তাড়াতাড়ি নির্বাচন চাইবে। ‘নির্বাচনী আইন ২০১৭’কে সুপ্রিম কোর্টের অবৈধ ঘোষণা এবং শাসক দলের প্রধান হিসেবে নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণায় সব নির্বাচনী পূর্বাভাস পাল্টে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সিন্ধুর গ্রামীণ এলাকা পিপিপির শক্ত ঘাঁটি হয়ে থাকতে পারে। সেখানে গত কয়েক দশকের সব নির্বাচনে পিপিপি প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। করাচিকেন্দ্রিক দল এমকিউএম-পি এর প্রভাব এখন একেবারে ক্ষয়িষ্ণু। নওয়াজ শরিফের পিএমএল(এন) পাঞ্জাবে সর্বোচ্চ আসন পেয়ে থাকে। ইমরান খানের দল পিআইটি ভালো করে খায়বার পাকতুন খোয়ায়। এই তিন দলের যেকোনোটি আগামী নির্বাচনে প্রধান দল হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। পাকিস্তানে ভারতপন্থী কোনো দল সেভাবে নেই। অন্য দিকে চীনের সাথে সহযোগিতার বিরোধিতা করে এমন রাজনৈতিক দলও সেখানে নেই। ফলে পাকিস্তানের নির্বাচনের হস্তক্ষেপ করার মতো সুযোগ দিল্লির নেই বললেই চলে। অন্য দিকে, গত বছর মালদ্বীপে যে রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয় তাতে সরকারবিরোধী পক্ষের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে দিল্লি। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ সেখানকার পরিস্থিতিতে সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য দিল্লির প্রতি আহ্বান জানালে সরকার চীনের সাহায্য কামনা করে।
এতে ভারতীয় রণতরীর মোকাবেলায় চীনও রণতরী পাঠায়। এর মধ্য দিয়ে ভারত মহাসাগরে চীনা উপস্থিতি নিয়ে ভারতীয় উদ্বেগ আরো বেড়েছে। মালদ্বীপের চীনের সাথে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর ও কয়েকটি দ্বীপ উন্নয়নে চীনা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ায় আগে থেকে উদ্বিগ্ন ভারত। কিন্তু এর মোকাবেলায় সংসদীয় বা বিচার বিভাগীয় অভ্যুত্থান ঘটানোর যে পথ গ্রহণ করা হয় তা দিল্লির জন্য প্রতিকূল অবস্থা নিয়ে এসেছে। এখন জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরো বৃদ্ধির ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টিও কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আগামী ২০ এপ্রিল ভুটান পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ন্যাশনাল কাউন্সিলের (এনসি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভুটানের গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের দশম বছরে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচন এগিয়ে আসার সাথে সাথে ভুটানে রাজনৈতিক দলগুলো চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচন ও ভোটারদের দলে আনার কৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত। এখন পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতায় শামিল হয়েছে নিবন্ধিত পাঁচটি রাজনৈতিক দল : ভুটান কুয়েন-ন্যাম পার্টি (বিকেপি), ডরুক চিরওয়ং টিশোগা (ডিসিটি), ডরুক ন্যামরুম্প টিশোগা (ডিএনটি), ডরুক ফুয়েনস তশোগপা (পিপিটি) ও পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)। বর্তমান দেশটিতে ভারতের প্রতি সহানুভূতিশীল পিডিপি সরকার ক্ষমতায় রয়েছে; কিন্তু নতুন নির্বাচনে বিরোধী দল পিপিটি আবার জয়লাভ করতে পারে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। পিপিটি আগের মেয়াদে সরকারে থাকার সময় চীনের সাথে সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পক্ষপাতী ছিল। দোকলাম সঙ্কটের সময় ভারত-চীন দ্বন্দ্বের মাঝখানে পড়ে যায় ভুটান। এ সময় কার্যক্ষেত্রে ভুটান কোনো পক্ষে একক ভূমিকা পালন করেনি। তবে দোকলাম থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের পর সেখানে দুই দিনের মধ্যে চীন একটি সেনা নিবাস তৈরি করেছে বলে খবর বেরিয়েছে। ভুটানের সাথে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টির নানা ধরনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য যে সংলাপ কাঠামো রয়েছে সেটি এর ভিত্তি রচনা করতে পারে। চলতি মাসে থিম্পুতে ২৫তম রাউন্ডের সীমান্ত আলোচনায় বসতে যাচ্ছে ভুটান ও চীন। দোকলাম সমস্যার কারণে গত বছর এ সীমান্ত আলোচনা বাতিল করা হয়েছিল। আফগানিস্তানে চলতি বছরের জুলাইয়ে সংসদ ও স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এ নির্বাচন আরো তিন মাস পিছিয়ে যেতে পারে বলে দেশটির একজন নির্বাচন কমিশনার জানান। এই নির্বাচনকে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০০১ সালে তালেবান সরকার উৎখাতের পর দেশটিতে যে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলোর নাজুক অবস্থা অনুধাবন করা যায় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের সমস্যা থেকে।
দেশটিতে চীনের প্রভাব এখন ক্রমেই বাড়ছে। এমনকি চীনের বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে আফগানিস্তানের ভেতরে চীনা সহায়তায় একটি সেনা নিবাস স্থাপনের কথাও বলা হচ্ছে। ভারত-চীন প্রতিযোগিতা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বাংলাদেশ। গত তিন বছরে ভারতের সাথে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা সঙ্কট দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের কূটনীতির সীমাবদ্ধতাকেই উন্মুক্ত করে দিয়েছে। চীন সঙ্কট সমাধানের একটি সূত্র নিয়েআসে। অন্য দিকে, ভারত রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য হুমকি নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে আরেকটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে তার ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়। ভারত এখন আরেকটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকারকে নতুন মেয়াদেও ক্ষমতায় রাখার চেষ্টা করছে। গণমাধ্যম ও অন্যান্য সূত্রের পূর্বাভাস অনুসারে, এজন্য উভয়পক্ষ কিছু গোপন শর্তের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে- দিল্লিতে শেখ হাসিনার সফরের সময় স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারককে যথাসম্ভব দ্রুত চুক্তিতে রূপান্তর করা, যার আওতায় বাংলাদেশের সমরাস্ত্রের প্রয়োজন পূরণের জন্য একটি যৌথ সমরাস্ত্র কারখানা স্থাপন করা হবে। এর পাশাপাশি, ভারতকে দেয়া ট্রানজিট কার্যকর করার জন্য আশুগঞ্জ-আগরতলা রেললাইন নির্মাণ করে তা ট্রানজিটের জন্য সংরক্ষণ এবং চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের বিষয়টি কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। একই সাথে ট্রানজিটের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেখানে দিল্লির নৌ উপস্থিতির সুযোগ দেয়া, যার বিপরীতে বিশাখাপত্তমে বাংলাদেশ একই সুবিধা লাভ করবে। এ ছাড়া বাংলদেশে যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হবে সে কাজটি ভারতীয় কনসোর্টিয়ামকে দেয়া হবে। এ ছাড়া বড় কোনো প্রকল্পে চীনা বিনিয়োগ বা সংশ্লিষ্টতার ক্ষেত্রে আলোচনা করে নিতে হবে দিল্লির সাথে। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্রোহ দমনে সহায়তা এবং প্রয়োজনবোধে এজন্য ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর বাংলাদেশের প্রবেশের অনুমতি দেয়ার কথাও বলা হয়।
এই সমঝোতার বিনিময়ে দিল্লি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে আরেক দফায় ক্ষমতায় যেতে সব ধরনের সহায়তা করবে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড প্রদান এবং তার জামিন দানে গড়িমসি আর বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টার পেছনে এ ধরনের সমঝোতার বিষয়টি সক্রিয় রয়েছে। প্রাপ্ত আভাস অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢাকার বর্তমান প্রশাসনকে ক্ষমতায় রাখার ক্ষেত্রে দিল্লি পরিকল্পনার প্রতি সবুজ সঙ্কেত দেয়া হয়েছে। কেবল শর্ত হলো মোটামুটিভাবে অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন নিশ্চিত করা। আর রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমেরিকান স্বার্থ অনুযায়ী কাজ করা। এই ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার অর্থ হলো বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতার পালা পরিবর্তনের সুযোগ এক ধরনের বন্ধ হয়ে যাওয়া। আর বেইজিং ভালো করেই উপলব্ধি করছে যে, দিল্লির শর্ত পূরণে অঙ্গীকারের মাধ্যমে সরকারের আরেক দফা ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে চীনের তিন দশকের বিপুল বিনিয়োগ অর্থহীন হয়ে যাবে এবং এর প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের নিরাপত্তা পরিকল্পনার ওপরও পড়বে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে চীনা কৌশল কী হবে সেটি অনুমান করা কঠিন। তবে ধারণা করা যেতে পারে, দেশটি রাজনৈতিক লিবারেজ বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশ নিয়ে কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। রোহিঙ্গা সঙ্কটকে এর একটি অংশ বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যেই মিয়ানমার সীমান্তে নেপাইডোর বড় আকারের রণসজ্জার খবর আসছে। এমন তথ্যও প্রকাশ হয়েছে যে দেশটি উত্তর কোরিয়া থেকে ব্যালেস্টিক ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ করছে।
অত্যাধুনিক জঙ্গিবিমান জ্যামার সংগ্রহ করছে রাশিয়া ও চীন থেকে। এর বিপরীতে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির তেমন কিছু জানা যায় না। সত্যি সত্যি দুই দেশের মধ্যে সামরিক সঙ্ঘাত সৃষ্টি হলে বৃহৎ শক্তিগুলোর কৌশলগত দ্বন্দ্বের অসহায় শিকার হিসেবে এখন সিরিয়া যেভাবে ধ্বংসপ্রায় এক জনপদে পরিণত হয়েছে সেই একই অবস্থা বাংলাদেশেরও হতে পারে। আর বাংলাদেশ তেমন পরিস্থিতিতে পড়লে এর জন্য দেশের মানুষকে বড় ধরনের মূল্য দিতে হতে পারে। রোহিঙ্গা সঙ্কট, আরসা বিদ্রোহ- এসব এ ধরনের একটি সঙ্ঘাত সৃষ্টির উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোতে বৃহত্তর অর্থনৈতিক সহায়তা, সামরিক স্বার্থ এবং কূটনৈতিক ফোকাসের প্রত্যাশাগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলে। আর চীন এখন দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করার এবং প্রতিরক্ষা সমর্থন প্রদান করার ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে রয়েছে। ভারত এ ক্ষেত্রে অনেক দূরত্বে পেছনে রয়েছে। ফলে এই অঞ্চলে ভারতের প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক দেশ। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপের পর এখন অপেক্ষায় রয়েছে ভুটান ও বাংলাদেশ। ২০১৮ সালেই নির্ধারিত হয়ে যেতে পারে এই দুই দেশের ভাগ্যও। বাংলাদেশ নেতৃত্ব কতটা পরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ণয়ক বিষয়।
mrkmmb@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.