সিরিয়া এখন কবরস্থান
সিরিয়া!
ঘুম ভাঙলেই চোখের সামনে লাশের পাহাড়। স্বজন শোকের বোবা গোঙানি, আর্তনাদ আর
ঘরে-উঠোনে বোমা হামলার আতঙ্ক, মৃত্যুভয়- এসব নিয়েই দিন শুরু।
মধ্যপ্রাচ্যের ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের অন্যতম বৃহত্তম দেশটি আজ পৃথিবীর সব
থেকে বড় ‘কবরস্থান’। প্রতিদিন সরকার-বিদ্রোহীদের গোলার আঘাতে মরছেন হাজার
হাজার বেসামরিক নাগরিক। নারী, শিশু, বয়স্ক কেউ রেহাই পাচ্ছেন না। ক্ষমতা
দখলের এ লড়াইয়ের বলি হচ্ছেন তাজা তাজা প্রাণ। বিমান হামলায় বৃষ্টির মতো
বোমা নিক্ষেপে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে নিষ্পাপ শিশুদের দেহ। নারীহত্যা,
শিশুহত্যা এখান সিরিয়ার প্রতিদিনের ঘটনা। কি অপরাধ এ শিশুদের? অপরাধ
একটাই, তারা সিরিয়ার নাগরিক। শহরের অলিগলিতে সারি সারি লাশ, রক্তের স্রোত।
বাতাসে মৃতের মাংসের বিদঘুটে গন্ধ! সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটসের
(এসএনএইচআর) মতে ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সিরিয়াতে ৫ লাখের উপরে মানুষ
মারা গেছেন। এদের মাঝে ৪ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। ৩০ হাজারের
উপর বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী। ২০ হাজারের কিছু বেশি আসাদ ও তার
মিত্রবাহিনী। সিরিয়ান সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ ও বিবিসির এক গবেষণায় একই
হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। মহিলা ও শিশু মৃতের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারের
কাছাকাছি। গত ৭ বছরে শিশু মারা গেছে ২৪ হাজারের বেশি আর নারী ২৩ হাজার জন
(ইউনিসেফ, এসএনএইচআর, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ)। সিরিয়ার শিশুদের প্রতিদিনের
দুঃখ-দুর্দশার আরেকটি ভিন্নধর্মী পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে ইউনিসেফ। এ
পরিসংখ্যানে ‘সিরিয়াতে প্রতি ১০ হাজার শিশুর ৮ জনের মানবিক সহায়তা
বাধ্যতামূলক। ৪ জন ঘরবাড়ি হারাচ্ছে। ভ্যাকসিন নিতে হচ্ছে ৩ জনকে। শিক্ষা
থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ৫ জন। ৬ শিশুর পরিবার দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে।
২০ জন নিরাপত্তা কেন্দ্রে আশ্রয় নিচ্ছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত
শিশুর সংখ্যা ৮.৪ মিলিয়ন। যা সিরিয়ার পুরো শিশু জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ।’ অপর
একটি প্রতিবেদনে ইউনিসেফ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাস্তুচ্যুত মানুষের হিসাব
তুলে ধরে। যা ১ কোটি ১৩ লাখের ও বেশি। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত
বেসামরিক নাগরিকদের সংখ্যা ৬৫ লাখ। এসব পরিবারের মাঝে শিশু রয়েছে ২৮ লাখ।
সিরিয়ার স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিরিয়ান সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের
গবেষণা থেকে আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে।
গত ৬ বছরে সিরিয়ার কারাগারে
১২ হাজার ৬৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী
ক্ষমতা দখলের এ যুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকেরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গোষ্ঠীর
হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটসের অন্য একটি
প্রতিবেদনে সেই তথ্যও উঠে আসে। এতে বলা হয়েছে, এ ৬ বছরে সিরিয়ান ও ইরানের
সেনাবাহিনীর কবলে পড়ে মারা যান ৯২ শতাংশ বেসামরিক নাগরিক, সংখ্যায় দাঁড়ায় ৪
লাখ ৩২ হাজার ৪০০ জন। রুশ সেনাদের হাতে মারা যান ১.৯৮ শতাংশ অর্থাৎ ৯
হাজার ৩০৬ জন। বিদ্রোহীদের আক্রমণে নিহতের সংখ্যা ১.৮৫ শতাংশ, সংখ্যায় ৮
হাজার ৬৯৫ জন। উগ্রবাদী ইসলামিক সংগঠনের (আইএস ও ফাতেহ-আল-সাম) হাতে মারা
পড়েন ১.৮ শতাংশ, সংখ্যায় ৮ হাজার ৪৬০ জন। অন্যান্য বাহিনীর হাতে ১.৪৯
শতাংশ, সংখ্যায় ৭ হাজার ৩ জন। পশ্চিমা মিত্রগোষ্ঠীর (ইন্টারন্যাশনাল
কোয়ালিশন ফোর্সেস) ০.৪৬ শতাংশ, সংখ্যায় ২ হাজার ৬২ জন ও কুর্দি বাহিনী ০.২৫
শতাংশ, সংখ্যায় ১ হাজার ৭৫ জন। ২০১৮ সালে নতুন করে শুরু হওয়া যুদ্ধে এ
পর্যন্ত বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানি ঘটেছে ১ হাজার ৩৮৯ জনের। এদের মাঝে
সিরিয়া ও ইরানের সেনাবাহিনীর হাতে ১ হাজার ৭৭৩ জন (৭৭.২৫ শতাংশ), ৭৭ জন
(৭.২৫ শতাংশ) রাশিয়ান সেনাদের হাতে, ১০২ জন (৭.৩৪ শতাংশ) ইন্টারন্যাশনাল
কোয়ালিশন ফোর্সেস, ৭৮ জন (৫.৮২ শতাংশ) অন্যান্য দল, ৭৬ জন (২.৯৫ শতাংশ)
উগ্রবাদী ইসলামিক সংগঠন ৪১ জন এদের মধ্যে আবার (২.৫২ শতাংশ) আইএস ও ৩৫ জন
(০.৪৩ শতাংশ) ফাতেহ-আল-সাম, ১২ জন (০.৮৬ শতাংশ) কুর্দি সেনা ও ৬ জন (০.৪৩
শতাংশ) বিদ্রোহীদের হাতে মারা যান। নিহত ৫ লাখের বেশি। শিশু ২৪.০০০। নারী
২৩, ০০০ বেসামরিক নাগরিক ৪,৭০,০০০। আসাদবাহিনী ২২, ০০০। বিদ্রোহী-৩০,০০০।
আহত ১২ লাখের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত শিশু ৮৪ লাখ। যা সিরিয়ার মোট শিশুর ৮০ ভাগ।
বাস্তুচ্যুত ১ কোটি ১৩ লাখ। অভ্যন্তরীণ শরণার্থী ৬৫ লাখ। এর মধ্যে শিশু ২৮
লাখ। কারাগারে মরেছে ১২, ৬৭৯।
No comments