পশ্চিমবঙ্গে দাদা-বৌদির বাস
স্ত্রী
মিনিবাস ড্রাইভার, স্বামী ওই বাসের হেলপার! প্রতিদিন সকাল-বিকাল ২৭ সিটের
বাসে কলকাতার নিমতা-হাওড়া রুটে যাত্রী নিয়ে ছুটে বেড়ান কত্তা-গিন্নি
শিবেশ্বর ও প্রতিমা পোদ্দার। প্রতিমা যখন স্টিয়ারিং সামলান, শিবেশ্বর তখন
সজাগ চোখে যাত্রীদের প্রশ্ন করেন, ‘দাদা টিকিট? দিদিভাই টিকিটটা?’ একই
সঙ্গে সচেতন চোখ থাকে স্ত্রীর প্রতিও। অন্য পুরুষ ড্রাইভাররা তাদের বাস
ওভারটেক করলে, স্ত্রী যদি বাসের গতি একটু বাড়াতে যান তখনই স্ত্রীর প্রতি
ধেয়ে আসে স্বামীর সতর্ক বার্তা- ‘একদম নয়। ওকে ওভারটেক করতে দাও। তুমি
আস্তে চালাও।’ খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। প্রতিমা বলেন, ‘কী বলব? দুই মেয়ে
নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে মেয়ে দুটো বড় হয়ে গেল, অথচ বাসাতেও যদি কিছু ভুল
করি সেখানেও বরের বকা, আবার বাসেও তাই।’ বলতে গিয়ে একগাল হেসে ফেলেন ৪২
বছরের কলকাতার মহিলা মিনিবাস চালক প্রতিমা। স্বামী-স্ত্রীর এমন সুন্দর
সম্পর্কের বাসে বছর ছয়েক ধরে যাতায়াত করতে করতে হাওড়া-নিমতা রুটের ১৮৫৪
নম্বর মিনিবাসটির নামই হয়ে গেছে ‘দাদা-বউদির বাস’। প্রতিমা জানান, ‘এটা
সম্ভব হয়েছে স্বামীর উৎসাহ আর উদ্দীপনায়। নয়তো স্বপ্নেও ভাবিনি বাস চালাব!
১৯৯৪ সালে যখন ওকে ভালোবেসে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি এলাম, তখন সবে মাধ্যমিক
পাস করেছি। স্বামীর চেষ্টাতেই উচ্চ মাধ্যমিক পাস করি। তখন অভাবই ছিল আমাদের
নিত্যদিনের সঙ্গী।’ প্রতিমা আরও বলেন, ‘২০০৬ সালে স্বামী বিধাননগরে একটা
বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালাত। সেই সময় সে জেদ ধরল, আমাকে গাড়ি
চালানো শেখাবে। সে বলতো- কোনো কাজই ছোট নয়। সেই থেকেই ওর অনুপ্রেরণায় আমার
গাড়ি চালানো শেখা। ২০০৮ সালে একটা পুরনো ট্যাক্সি কিনে দু’জনেই পালা করে
চালাতাম। ধার-দেনা করে ২০১০ সালে এ নতুন বাসটি কিনেছি। প্রথমদিকে আমি
চালাতাম না, ও চালাত। আমি সুপারভাইজারি করতাম। কিন্তু ২০১২ সালে একটা
অ্যাক্সিডেন্টের পর আমি স্টিয়ারিংয়ে বসলাম। মহিলা বাসচালক দেখে অনেকে বাসে
উঠতে চাইতেন না।’ বর্তমানে অবশ্য কেউ হাসেন না, অবাকও হন না ‘দাদা-বউদির’
বাস দেখে। কোনো পুলিশি সমস্যা- প্রশ্ন শেষ হওয়ায় আগেই হেসে ফেলেন প্রতিমা।
বলেন, ‘এই তো সেদিনই রবীন্দ্র ভারতীর সামনে ধরল। কারণ, আমি নাকি খুব আস্তে
গাড়ি চালাচ্ছি, তাই তিনশ’ টাকা ফাইন দিতে হবে! তারপর নিজেই বলল, ঠিক আছে
মহিলা যখন, একশ’ দিন। মহিলা হিসেবে দুইশ’ টাকা বাঁচালাম, এটা ভালো নয় কী?’ এ
দম্পতির দুই মেয়ে রাখী ও সাথী। বড় রাখী সব বিষয়েই লেটার পেয়ে মাধ্যমিক ও
উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে। এখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি থার্ড ইয়ারের
ছাত্রী। সাথী প্রথম হয়ে ক্লাস নাইনে উঠেছে। ইতিমধ্যে দুই বোনই চালাতে শিখে
নিয়েছে চার চাকার গাড়ি।
No comments