মশার কাছে খোলা চিঠি by নিশাত সুলতানা
প্রিয় মশা
জানি তুমি ভালো আছো। হয়তো ভাবছ, তোমার ভালো থাকার ব্যাপারে আমি এতটা নিশ্চিত হলাম কীভাবে! শুনলে তুমি কিন্তু অবাক হবে না মোটেই। সর্বত্র তোমার এবং তোমার পরিবার-পরিজনের সগর্ব উপস্থিতি সুস্পষ্টভাবেই জানান দিচ্ছে যে তুমি ভালো আছো। এই যে এই মুহূর্তে আমি তোমাকে লিখে চলেছি, এখনো আমাকে ঘিরে রয়েছে তোমার পরিবারের সদস্যরা। তোমরা যে শুধু আমাকে সঙ্গ দিয়ে চলেছ তা কিন্তু নয়, বরং তোমরা আমার সেবায়ও নিয়োজিত আছো। তোমাদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে রাতের ঘুম কোথায় হারিয়ে গিয়েছে আমার! তাই তো মন খুলে লিখতে পারছি তোমায়। এই যে বাড়িতে বাড়িতে ছোট্ট শিশুগুলো ঘুমিয়ে আছে, তারাও তোমাদের আদর থেকে বঞ্চিত নয়। আদরের আতিশয্যে ওদের ছোট্ট দেহগুলো তোমরা তুলে নিয়ে গেলেও আমি অবাক হব না মোটেই। ভাবি, কীভাবে তোমরা এতটা পরাক্রমশালী হয়ে উঠলে! কী সেই মন্ত্র!
মনে পড়ে, অষ্টম কিংবা নবম শ্রেণিতে বাংলা দ্বিতীয় পত্রে আমাদের মুখস্থ করতে হয়েছিল মশার উপদ্রব রোধে পৌরসভা চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি লেখার কথা। তখন এখনকার মতো সৃজনশীল প্রশ্নের চল ছিল না। মুখস্থ করেছিলাম, তুমি নাকি ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গুর মতো রোগ ছড়াও। এখনকার ছেলেমেয়েরা তোমাকে নিয়ে এই চিঠি সৃজনশীল পদ্ধতিতে লেখে কি না আমি জানি না। যদি লেখে, আমি নিশ্চিত, তারা এই তালিকায় চিকুনগুনিয়ার নামটি সংযোজন করে নিয়েছে ইতিমধ্যেই। তাই তুমি আশ্বস্ত থাকতে পারো, ওরা তোমাকে অবমূল্যায়ন করেনি। বাস্তব জীবনে পৌরসভার চেয়ারম্যান মহোদয়কে তোমাকে নিয়ে কখনো সে চিঠি লেখা হয়ে ওঠেনি। ভাগ্যিস লিখিনি! যদি লিখতাম আর দৈবক্রমে তিনি তোমার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতেন, তাহলে আজ হয়তো তোমার এই স্বর্ণযুগের উদয়ে কিছুটা হলেও বাধার সৃষ্টি হতো। কদিন ধরেই দিনে-রাতে তোমার নিরবচ্ছিন্ন সঙ্গলাভে আপ্লুত হয়ে আছি। গতকাল যখন খানিকটা দমকা হাওয়া বইছিল, তখন তোমার জন্য রীতিমতো দুশ্চিন্তা¯হয়েছিল আমার। ভাবছিলাম, তুমি ভালো আছো তো! তোমার কোনো ক্ষতি হবে না তো! কারণ, এই প্রাকৃতিক শক্তিই এখন তোমার সবচেয়ে বড় শত্রু, আমি জানি। ভাবতে ভালো লাগে, পৌরসভা কিংবা সিটি করপোরেশন কর্তৃক ছিটানো ওষুধের শক্তিকে তুমি আজ পরাজিত করেছ। তোমাকে ঘায়েল করার জন্য সিটি করপোরেশন কর্তৃক প্রচণ্ড শব্দে বিষ ছিটানো হয়। সে শব্দে আমাদের শ্রবণশক্তি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু কী আশ্চর্য! তোমার ওপর সেসব কোনো প্রভাব ফেলে না! কথায় বলে, ‘যত গর্জে তত বর্ষে না!’ এই প্রবাদের বাস্তব প্রমাণ দেওয়ার জন্য তোমাকে অভিনন্দিত করব, নাকি সিটি করপোরেশনকে, বুঝে পাই না! তোমার মহাশক্তির কাছে কীটনাশকের কী শোচনীয় পরাজয়! কেউ কেউ তোমার শক্তির প্রতি ঈর্ষাকাতর হয়ে বলেন, ‘দ্রবণে নাকি ভেজাল আছে!’ তুমি কিন্তু এসব কথা মোটেই কানে তুলবে না। কারণ, নিন্দুকেরা নানা কথাই বলে থাকে। গত বছর বার কয়েক মশা মারার সেই কামান দাগানোর শব্দ শুনেছিলাম। তবে তা কতখানি প্রভাব ফেলেছিল তোমার ওপর, মনে করতে পারি না। তবে মনে পড়ে, এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। আজ কত দিন সে শব্দ শুনি না; আর মনে হয় শুনবও না হয়তো কখনো।
জানি তুমি ভালো আছো। হয়তো ভাবছ, তোমার ভালো থাকার ব্যাপারে আমি এতটা নিশ্চিত হলাম কীভাবে! শুনলে তুমি কিন্তু অবাক হবে না মোটেই। সর্বত্র তোমার এবং তোমার পরিবার-পরিজনের সগর্ব উপস্থিতি সুস্পষ্টভাবেই জানান দিচ্ছে যে তুমি ভালো আছো। এই যে এই মুহূর্তে আমি তোমাকে লিখে চলেছি, এখনো আমাকে ঘিরে রয়েছে তোমার পরিবারের সদস্যরা। তোমরা যে শুধু আমাকে সঙ্গ দিয়ে চলেছ তা কিন্তু নয়, বরং তোমরা আমার সেবায়ও নিয়োজিত আছো। তোমাদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে রাতের ঘুম কোথায় হারিয়ে গিয়েছে আমার! তাই তো মন খুলে লিখতে পারছি তোমায়। এই যে বাড়িতে বাড়িতে ছোট্ট শিশুগুলো ঘুমিয়ে আছে, তারাও তোমাদের আদর থেকে বঞ্চিত নয়। আদরের আতিশয্যে ওদের ছোট্ট দেহগুলো তোমরা তুলে নিয়ে গেলেও আমি অবাক হব না মোটেই। ভাবি, কীভাবে তোমরা এতটা পরাক্রমশালী হয়ে উঠলে! কী সেই মন্ত্র!
মনে পড়ে, অষ্টম কিংবা নবম শ্রেণিতে বাংলা দ্বিতীয় পত্রে আমাদের মুখস্থ করতে হয়েছিল মশার উপদ্রব রোধে পৌরসভা চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি লেখার কথা। তখন এখনকার মতো সৃজনশীল প্রশ্নের চল ছিল না। মুখস্থ করেছিলাম, তুমি নাকি ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গুর মতো রোগ ছড়াও। এখনকার ছেলেমেয়েরা তোমাকে নিয়ে এই চিঠি সৃজনশীল পদ্ধতিতে লেখে কি না আমি জানি না। যদি লেখে, আমি নিশ্চিত, তারা এই তালিকায় চিকুনগুনিয়ার নামটি সংযোজন করে নিয়েছে ইতিমধ্যেই। তাই তুমি আশ্বস্ত থাকতে পারো, ওরা তোমাকে অবমূল্যায়ন করেনি। বাস্তব জীবনে পৌরসভার চেয়ারম্যান মহোদয়কে তোমাকে নিয়ে কখনো সে চিঠি লেখা হয়ে ওঠেনি। ভাগ্যিস লিখিনি! যদি লিখতাম আর দৈবক্রমে তিনি তোমার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতেন, তাহলে আজ হয়তো তোমার এই স্বর্ণযুগের উদয়ে কিছুটা হলেও বাধার সৃষ্টি হতো। কদিন ধরেই দিনে-রাতে তোমার নিরবচ্ছিন্ন সঙ্গলাভে আপ্লুত হয়ে আছি। গতকাল যখন খানিকটা দমকা হাওয়া বইছিল, তখন তোমার জন্য রীতিমতো দুশ্চিন্তা¯হয়েছিল আমার। ভাবছিলাম, তুমি ভালো আছো তো! তোমার কোনো ক্ষতি হবে না তো! কারণ, এই প্রাকৃতিক শক্তিই এখন তোমার সবচেয়ে বড় শত্রু, আমি জানি। ভাবতে ভালো লাগে, পৌরসভা কিংবা সিটি করপোরেশন কর্তৃক ছিটানো ওষুধের শক্তিকে তুমি আজ পরাজিত করেছ। তোমাকে ঘায়েল করার জন্য সিটি করপোরেশন কর্তৃক প্রচণ্ড শব্দে বিষ ছিটানো হয়। সে শব্দে আমাদের শ্রবণশক্তি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু কী আশ্চর্য! তোমার ওপর সেসব কোনো প্রভাব ফেলে না! কথায় বলে, ‘যত গর্জে তত বর্ষে না!’ এই প্রবাদের বাস্তব প্রমাণ দেওয়ার জন্য তোমাকে অভিনন্দিত করব, নাকি সিটি করপোরেশনকে, বুঝে পাই না! তোমার মহাশক্তির কাছে কীটনাশকের কী শোচনীয় পরাজয়! কেউ কেউ তোমার শক্তির প্রতি ঈর্ষাকাতর হয়ে বলেন, ‘দ্রবণে নাকি ভেজাল আছে!’ তুমি কিন্তু এসব কথা মোটেই কানে তুলবে না। কারণ, নিন্দুকেরা নানা কথাই বলে থাকে। গত বছর বার কয়েক মশা মারার সেই কামান দাগানোর শব্দ শুনেছিলাম। তবে তা কতখানি প্রভাব ফেলেছিল তোমার ওপর, মনে করতে পারি না। তবে মনে পড়ে, এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। আজ কত দিন সে শব্দ শুনি না; আর মনে হয় শুনবও না হয়তো কখনো।
ঢাকা উত্তরের নগরপিতা আজ
আর আমাদের মাঝে নেই। তাই কি মশা নিধনের শব্দও নেই! মানুষ চিরতরে হারিয়ে
গেলে বুঝি এমনই হয়! কিন্তু তোমার জন্য এটা কিন্তু শাপে বর হয়েছে। তা নিশ্চয়
তুমি জানো। গতকাল সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় এক সহকর্মী রাতে বয়ে যাওয়া
দমকা হাওয়া প্রসঙ্গে বললেন, এই ঝোড়ো হাওয়ায় তোমার নাকি ক্ষতি হবে! আঁতকে
উঠলাম আমি। প্রতীক্ষায় রইলাম সন্ধ্যায় তোমার আগমনের পথ চেয়ে। অভিনন্দন
তোমাকে। কারণ, তুমি আমাকে নিরাশ করোনি। অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামতেই
মাথার ওপর চক্রাকারে তোমরা আমাকে গার্ড অব অনার জানালে। পাশের সহকর্মীটিও
বাদ যাননি। তাঁর মাথার ওপর লক্ষ করলাম ত্রিভুজাকৃতিতে তোমরা তাঁকে অভিবাদন
জানাচ্ছ। শিশুরা আকার-আকৃতির ধারণা যে তোমাদের কাছ থেকে লাভ করতে পারে, কেউ
কি কখনো তোমাকে তা বলেছে? তোমাদের অকুণ্ঠ ভালোবাসায় যে তোমাদের ধন্যবাদ
দেব, সে সাহসও হলো না। মুখ খুললেই যদি তোমরা কেউ একবার মুখে ঢুকে পড়ো, তবে
তা হতে পারে তোমাদের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমি জেনেশুনে তোমাদের এই
ক্ষতি করি কী করে! বেরসিক উবার ড্রাইভার তাগাদা দিল তাড়াতাড়ি গাড়ির দরজা
বন্ধ করতে। ধারণা করে নিলাম, সে হয়তো তোমাদের বিনা পয়সায় পরিবহনসেবা দিতে
আগ্রহী নয়। কিন্তু সে হয়তো জানে না, যানজটে পরিপূর্ণ ঢাকা শহরে তার উবার
গাড়ির গতির চেয়ে অনেক বেশি গতিতে চলার ক্ষমতা তোমার রয়েছে। তাই তুমি নিজের
ওপর আস্থা রাখতে পারো। এক জায়গা থেকে দূরবর্তী আরেক জায়গায় যেতে তুমি একাই
এক শ। উচ্চতাও আজকাল তোমার জন্য তেমন কোনো বড় বাধা বলে মনে হয় না। তাই মশা,
তুমি এগিয়ে চলো দ্বিগুণ শক্তিতে। আমি জানি, তুমি নির্ভীক, তুমি সাহসী,
লড়াকু, তুমি আত্মবিশ্বাসী। তুমি মহাপরাক্রমশালী, তুমি অনন্য, অসাধারণ।
তোমার অভিযোজন ক্ষমতা প্রশ্নাতীত। তাই তোমার জয় হোক। জয় হোক তোমার এই
মহাপরাক্রমশালী হওয়ার পেছনে যারা ভূমিকা রেখেছে, তাদের প্রত্যেকের। পরিশেষে
তোমার ও তোমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুখীও সমৃদ্ধিশালী জীবন কামনা করছি।
প্রিয় মশা, তোমার কাছে আমরা হার মেনেছি। কারণ, এই শহরে তোমার অধিকার
রক্ষায় নগরপিতারা যতটা সক্রিয়, মানুষের শান্তির ব্যাপারে তাঁরা ততটাই
বেখবর।
নিশাত সুলতানা: লেখক ও গবেষক
purba_du@yahoo.com
নিশাত সুলতানা: লেখক ও গবেষক
purba_du@yahoo.com
No comments