বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা ভিয়েতনামের
চামড়া
খাতের পশ্চাৎ সংযোগ শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি খাত, হার্ডওয়্যার ও বিভিন্ন
ডিভাইস এবং নানা এক্সেসরিজ উৎপাদনে বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে
ভিয়েতনামের উদ্যোক্তাদের। দেশটির প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময় উভয় দেশের
ব্যবসায়ীদের সম্মেলন ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এসব খাতে বিনিয়োগের অনেক কিছুই
চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং তিন
দিনের সফরে গতকাল রোববার ঢাকায় পৌঁছেছেন। তার ১০০ সফর সঙ্গীর মধ্যে ৪৫ জন
উদ্যোক্তা। প্রতিনিধি দলে লোটাস টেলিফোন, ভিটেল গ্রুপ, হ্যাসিসন গ্রুপসহ
বিভিন্ন খ্যাতনামা কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা রয়েছেন। সফরের আগে উভয়
দেশের প্রধান দুই চেম্বারের মধ্যে একাধিক বৈঠকে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে
বিনিয়োগের আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন তারা। এর মধ্যে চামড়া খাতের পশ্চাৎ সংযোগ
শিল্পে ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়টি অনেকটাই
চূড়ান্ত বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বিটিসিএল ও ভিয়েতনামের রাষ্ট্রীয়
প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের বিষয়ে এমওইউ হতে পারে। এফবিসিসিআই সভাপতি
সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন সমকালকে জানান, ভিয়েতনামের উদ্যোক্তারা অবকাঠামো,
কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, তেল ও গ্যাস এবং পর্যটনসহ আরও বেশ কয়েকটি
খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে আসছেন। একই সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বের
ভিত্তিতে তাদের দেশের পোশাক খাতে এখানকার উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের প্রস্তাবও
দেবেন তারা। সফরকালে উভয় দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের নিয়ে এফবিসিসিআই
আগামীকাল মঙ্গলবার 'বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম বিজনেস ফোরাম' আয়োজন করেছে। এতে
ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। বাণিজ্যমন্ত্রী
তোফায়েল আহমেদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং
ভিয়েতনামের পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ ভাইস মিনিস্টার নুগুইয়েন ভান ট্রুনগ
উপস্থিত থাকবেন। এফবিসিসিআই সভাপতি আরও জানান, সফরকালে সম্মেলনে আলোচনা ও
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি দেশটির উদ্যোক্তারা তথ্যপ্রযুক্তি ও
টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতাও খতিয়ে দেখবেন। আর এ সফরের আগে
ভিয়েতনাম চেম্বারের সঙ্গে বৈঠককালে দেশটির উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিক অঞ্চলে
বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন। সফরকালে এ নিয়েও অগ্রগতি হবে বলে আশা করছেন
তিনি। মহিউদ্দিন জানান, বাংলাদেশ কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে পিছিয়ে
রয়েছে।
অংশীদার পেলে সফরকারীরা এ খাতেও বিনিয়োগে বেশ আগ্রহী। তারা একই
সঙ্গে অবকাঠামো সুবিধা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। তিনি
আশা করছেন, এ সফর শুধু কূটনৈতিক বা রাজনৈতিক সফর হবে না। এটি দেশটির বড়
বিনিয়োগ আনার সফর হবে। এফবিসিসিআইর প্রথম সহসভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম জানান,
ভিয়েতনামের উদ্যোক্তাদের এ সফরকে ঘিরে আগের আলোচনায় একটি ওষুধ কোম্পানি
সামুদ্রিক মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণে বড় বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন,
এফবিসিসিআই দেশটির প্রযুক্তি স্থানান্তরে জোর দেবে, যাতে সেখানকার
কোম্পানিগুলো এ দেশে বিনিয়োগে আসে। হার্ডওয়্যারসহ নানা অ্যাক্সেসরিজ
উৎপাদনে পাঁচটি কোম্পানি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের
আইটি ভিলেজ ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য
পরিস্থিতি : এক দশক আগে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল না। যদিও
বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল খুবই কম। তবে বর্তমান পরিস্থিতি পাল্টেছে অনেক।
বাংলাদেশ রফতানিকারক থেকে আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬
কোটি ৬৪ লাখ ডলার রফতানির বিপরীতে ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করে ৪১ কোটি ২২
লাখ ডলার। অথচ ২০০৭-০৮ অর্থবছরে প্রায় দুই কোটি ডলারের রফতানির বিপরীতে
বাংলাদেশ আমদানি করে এক কোটি ডলারের সামান্য বেশি। রফতানির জন্য
উল্লেখযোগ্য হলো- কৃষি, পাট ও চামড়াজাত পণ্য এবং ওষুধ। আর আমদানি হয় মূলত
খনিজ দ্রব্য, বস্ত্র, যন্ত্রপাতি ও পল্গাস্টিকের উপাদান।
No comments