এরশাদের জাপায় সবকিছু বেশি বেশি by সোহরাব হাসান
হুসেইন
মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিতে সবকিছুই বেশি বেশি। এই দলের সভাপতিমণ্ডলীর
সদস্যসংখ্যা ৩৭। বাংলাদেশের আর কোনো রাজনৈতিক দলে এত বিপুলসংখ্যক
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আছেন বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যের
সংখ্যা ১৫। বিএনপিতে সভাপতিমণ্ডলী নেই। স্থায়ী কমিটির সদস্যসংখ্যা ১৯।
জাতীয় পার্টিতে যুগ্ম মহাসচিবের সংখ্যাও ওই বড় দুই দলের চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলীয় প্রধানই সংসদীয় দলের প্রধান হন। কিন্তু জাতীয় পার্টিতে দুই পদে দুজন। এরশাদ দলের প্রধান, আর তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদ সংসদীয় দলের প্রধান তথা বিরোধী দলের নেতা। আরও কৌতূহলোদ্দীপক হলো, এই দুই প্রধান নিজ নিজ এখতিয়ারে সভা ডাকলে অপরজন আসেন না। কয়েক দিন আগে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে সংসদীয় দলের যে সভা ডেকেছিলেন, সেই সভায় এরশাদ ও তাঁর অনুসারীরা অনুপস্থিত ছিলেন। আবার গত সোমবার এরশাদ যে সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক করেছেন, এতে রওশনপন্থীদের কেউ ছিলেন না। গত সপ্তাহে এরশাদ ও রওশন একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আলাদা বিমানে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা ধরনের গুঞ্জন রয়েছে।
এরশাদ রংপুরে একক কর্তৃত্বে ছোট ভাই মোহাম্মদ গোলাম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান এবং জিয়াউদ্দিন বাবলুর স্থলে রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব করলে দলে ছোটখাটো ঝড় দেখা দেয়। নানামুখী তৎপরতা সত্ত্বেও সেই ঝড় থেমেছে বলে মনে হয় না। রওশনপন্থীরা মনে করেন, মহাসচিব পদে হঠাৎ রদবদলের পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই জাতীয় পার্টিতে দুই ধারা চলছিল। ওই সময় যাঁরা এরশাদের নির্দেশ মেনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন, তাঁদের আম-ছালা দুই-ই খোয়াতে হয়। আর যাঁরা তাঁর নির্দেশ উপেক্ষা করে মনোনয়নপত্র বহাল রেখেছিলেন, তাঁরাই সাংসদ-মন্ত্রী হয়েছেন। আরও রহস্যজনক হলো দলীয় প্রধান এরশাদ নেতা-কর্মীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বললেও নিজে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হন। রওশন এরশাদ ও তাঁর অনুসারীরা শুরু থেকেই নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন। দলের সদ্যবিদায়ী মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু দলে আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত। সে কারণেই কি তাঁকে মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো? বলা হয়েছে, তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। কিন্তু পদ থেকে সরানোর আগে কি তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল? হয়নি। কেননা জাতীয় পার্টিতে এরশাদ যা বলেন, সেটাই আইন, সেটাই গঠনতন্ত্র।
এরশাদ ও তাঁর অনুসারীরা দলের বর্তমান বেহাল অবস্থার জন্য জাতীয় পার্টির তিন নেতা মন্ত্রিসভায় থাকাকে দায়ী করেছেন এবং সভাপতিমণ্ডলীর সর্বশেষ সভায় তাঁদের মন্ত্রিসভা ছাড়ারও পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, এতে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। কিন্তু বিরোধী পক্ষ মনে করছে, মন্ত্রিসভায় যাওয়া নয়, এরশাদের স্ববিরোধী কথাবার্তা ও ভূমিকাই দলকে সংকটে ফেলেছে। এরকম চলতে থাকলে, দলের অবস্থান আরও নাজুক হবে। তাঁদের মতে, জাতীয় পার্টিকে সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসানোর কৃতিত্ব রওশনের, এরশাদের নয়।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এরশাদের সভাপতিত্বে সভাপতিমণ্ডলীর সভায় জাতীয় পার্টির নেতাদের মন্ত্রিত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত হলেও রওশনপন্থীরা সেটিকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কেননা দুই বছর ধরেই এরশাদ দলীয় নেতাদের মন্ত্রিত্ব ছাড়ার কথা বললেও নিজে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে ঠিকই বহাল রয়েছেন। তবে রওশনের অনুসারীরা মনে করেন, পদত্যাগ নিয়ে এরশাদ যতই হম্বিতম্বি করুন না কেন, তিনি নিজে পদত্যাগ করছেন না।
সম্প্রতি জাতীয় পার্টির পদপদবি নিয়ে যে ক্যাচাল লেগেছে, সেটি কীভাবে মিটবে বলা কঠিন। দলটিতে এখন যে কোন্দল তার মূলে কোনো আদর্শ নেই। আছে সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া না-পাওয়ার হিসাব-নিকেশ। এরশাদ কেবল প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হননি, সরকারকে সমর্থন করার বিনিময়ে বেসরকারি ব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকও হয়েছেন।
সব রাজনৈতিক দলে একজন মুখপাত্র থাকেন। এরশাদের দলে এখন দুজন মুখপাত্র। দলের কো-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গোলাম কাদের এবং দলের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। এখন থেকে তাঁরাই দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল কি তা মেনে নেবে? তাঁরা মনে করেন, সংসদের বাইরে যেহেতু দলের তেমন তৎপরতা নেই, সেহেতু সংসদীয় দলের প্রধান বা বিরোধী দলের নেতা রওশন যা বলবেন, সেটাই হবে চূড়ান্ত। সেই চূড়ান্ত কথা জনগণকে জানাতে নিশ্চয়ই দলে আরেকজন মুখপাত্রের প্রয়োজন হবে। তাহলে ক্ষীয়মাণ জাতীয় পার্টিতে তিনজন মুখপাত্র হবেন। এরশাদের দলে আগে বান্ধবীর সংখ্যা বেশি ছিল। এখন মুখপাত্রের সংখ্যা বাড়ছে। এটা সুলক্ষণই বলতে হবে!
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলীয় প্রধানই সংসদীয় দলের প্রধান হন। কিন্তু জাতীয় পার্টিতে দুই পদে দুজন। এরশাদ দলের প্রধান, আর তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদ সংসদীয় দলের প্রধান তথা বিরোধী দলের নেতা। আরও কৌতূহলোদ্দীপক হলো, এই দুই প্রধান নিজ নিজ এখতিয়ারে সভা ডাকলে অপরজন আসেন না। কয়েক দিন আগে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে সংসদীয় দলের যে সভা ডেকেছিলেন, সেই সভায় এরশাদ ও তাঁর অনুসারীরা অনুপস্থিত ছিলেন। আবার গত সোমবার এরশাদ যে সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক করেছেন, এতে রওশনপন্থীদের কেউ ছিলেন না। গত সপ্তাহে এরশাদ ও রওশন একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আলাদা বিমানে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা ধরনের গুঞ্জন রয়েছে।
এরশাদ রংপুরে একক কর্তৃত্বে ছোট ভাই মোহাম্মদ গোলাম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান এবং জিয়াউদ্দিন বাবলুর স্থলে রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব করলে দলে ছোটখাটো ঝড় দেখা দেয়। নানামুখী তৎপরতা সত্ত্বেও সেই ঝড় থেমেছে বলে মনে হয় না। রওশনপন্থীরা মনে করেন, মহাসচিব পদে হঠাৎ রদবদলের পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই জাতীয় পার্টিতে দুই ধারা চলছিল। ওই সময় যাঁরা এরশাদের নির্দেশ মেনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন, তাঁদের আম-ছালা দুই-ই খোয়াতে হয়। আর যাঁরা তাঁর নির্দেশ উপেক্ষা করে মনোনয়নপত্র বহাল রেখেছিলেন, তাঁরাই সাংসদ-মন্ত্রী হয়েছেন। আরও রহস্যজনক হলো দলীয় প্রধান এরশাদ নেতা-কর্মীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বললেও নিজে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হন। রওশন এরশাদ ও তাঁর অনুসারীরা শুরু থেকেই নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন। দলের সদ্যবিদায়ী মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু দলে আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত। সে কারণেই কি তাঁকে মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো? বলা হয়েছে, তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। কিন্তু পদ থেকে সরানোর আগে কি তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল? হয়নি। কেননা জাতীয় পার্টিতে এরশাদ যা বলেন, সেটাই আইন, সেটাই গঠনতন্ত্র।
এরশাদ ও তাঁর অনুসারীরা দলের বর্তমান বেহাল অবস্থার জন্য জাতীয় পার্টির তিন নেতা মন্ত্রিসভায় থাকাকে দায়ী করেছেন এবং সভাপতিমণ্ডলীর সর্বশেষ সভায় তাঁদের মন্ত্রিসভা ছাড়ারও পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, এতে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। কিন্তু বিরোধী পক্ষ মনে করছে, মন্ত্রিসভায় যাওয়া নয়, এরশাদের স্ববিরোধী কথাবার্তা ও ভূমিকাই দলকে সংকটে ফেলেছে। এরকম চলতে থাকলে, দলের অবস্থান আরও নাজুক হবে। তাঁদের মতে, জাতীয় পার্টিকে সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসানোর কৃতিত্ব রওশনের, এরশাদের নয়।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এরশাদের সভাপতিত্বে সভাপতিমণ্ডলীর সভায় জাতীয় পার্টির নেতাদের মন্ত্রিত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত হলেও রওশনপন্থীরা সেটিকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কেননা দুই বছর ধরেই এরশাদ দলীয় নেতাদের মন্ত্রিত্ব ছাড়ার কথা বললেও নিজে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে ঠিকই বহাল রয়েছেন। তবে রওশনের অনুসারীরা মনে করেন, পদত্যাগ নিয়ে এরশাদ যতই হম্বিতম্বি করুন না কেন, তিনি নিজে পদত্যাগ করছেন না।
সম্প্রতি জাতীয় পার্টির পদপদবি নিয়ে যে ক্যাচাল লেগেছে, সেটি কীভাবে মিটবে বলা কঠিন। দলটিতে এখন যে কোন্দল তার মূলে কোনো আদর্শ নেই। আছে সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া না-পাওয়ার হিসাব-নিকেশ। এরশাদ কেবল প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হননি, সরকারকে সমর্থন করার বিনিময়ে বেসরকারি ব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকও হয়েছেন।
সব রাজনৈতিক দলে একজন মুখপাত্র থাকেন। এরশাদের দলে এখন দুজন মুখপাত্র। দলের কো-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গোলাম কাদের এবং দলের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। এখন থেকে তাঁরাই দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল কি তা মেনে নেবে? তাঁরা মনে করেন, সংসদের বাইরে যেহেতু দলের তেমন তৎপরতা নেই, সেহেতু সংসদীয় দলের প্রধান বা বিরোধী দলের নেতা রওশন যা বলবেন, সেটাই হবে চূড়ান্ত। সেই চূড়ান্ত কথা জনগণকে জানাতে নিশ্চয়ই দলে আরেকজন মুখপাত্রের প্রয়োজন হবে। তাহলে ক্ষীয়মাণ জাতীয় পার্টিতে তিনজন মুখপাত্র হবেন। এরশাদের দলে আগে বান্ধবীর সংখ্যা বেশি ছিল। এখন মুখপাত্রের সংখ্যা বাড়ছে। এটা সুলক্ষণই বলতে হবে!
No comments