চা বিক্রেতাকে পুড়িয়ে হত্যার- চা বিক্রেতাকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে
‘চাইলাম
বিচার, পেলাম লাশ’। ঢাকা মেডিকেল কলেজের লাশঘরের সামনে এমন প্রলাপ বকছিলেন
চা বিক্রেতা বাবুল মাতব্বরের ছেলে রাজু। বুধবার রাতে রাজধানীর শাহআলী থানা
এলাকায় নিজের চায়ের দোকানে আগুনে দগ্ধ হন বাবুল। গতকাল দুপুরে ঢাকা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান তিনি। পরিবারের অভিযোগ,
চাঁদা না পেয়ে স্থানীয় থানা পুলিশ তেলের চুলা ছুড়ে মারায় বাবুল দগ্ধ হন। এ
ঘটনায় চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন
করা হয়েছে। এদিকে গতকাল রাতে বাবুলের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা
হয়েছে।
বাবুলের পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শাহআলী থানার গুদারাঘাট এলাকার কিংশুক সমবায় সমিতি আবাসিক এলাকায় চাঁদা আদায় করতে যান চার পুলিশ সদস্য ও তিন সোর্স। চাঁদা আদায় নিয়ে বিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে স্টোভের চুলার আগুনে দগ্ধ হন বাবুল। সেখান থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় তাকে। আগুনে তার শরীরের ৯৫ ভাগ পুড়ে যায়। ১৬ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা যান তিনি।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শাহআলী থানার কিংশুক সমবায় সমিতি আবাসিক এলাকায় প্রবেশপথে রাস্তার পাশে চা বিক্রি করছিলেন বাবুল মাতুব্বর। অর্ধশত গজ দূরেই পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। ওই এলাকায় প্রতিবেশী পারুল, তার স্বামী আজিজ, শংকর, মনিরসহ বেশ কয়েকজন গাঁজাসহ মাদকদ্রব্য বিক্রি করতো। প্রায় প্রতিদিন বা সপ্তাহে ওই এলাকায় শাহআলী থানা পুলিশের টহল টিম যাওয়া আসা করে। মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের ধারপাকড়ের মাধ্যমে আদায় করে চাঁদা। গত বুধবার দুপুরেও পুলিশ ভ্যান নিয়ে ওই এলাকায় যায়। চাঁদা দাবি করে বাবুলের কাছে। কিন্তু তিনি চাঁদা দেননি। দ্বিতীয়বার যায় রাত সাড়ে নয়টার দিকে। পুলিশ ভ্যানটি পাশে থামিয়ে চার পুলিশ সদস্য গাড়ি থেকে নামেন। তাদের সঙ্গে যায় ওই তিন সোর্স। তারা বাবুলের কাছে গিয়ে বলে ‘রাস্তা দখল করে দোকান করিস। গাঁজা বিক্রি করিস। চাঁদা দিতে হবে।’ তখন বাবুল বলেন, ‘আমি যার জায়গায় বসে দোকান করি, তার অনুমতি নিয়েছি। আমি তো গাঁজা বেঁচি না। আমি কেন টাকা দিবো।’
তখন তারা বলেন, ‘৭ হাজার টাকা দে।’ জবাবে বাবুল বলেন, ‘আমার দোকানে মালামাল আছে ২ হাজার টাকার। ৭ হাজার টাকা কোত্থেকে দিবো।’ এরপর পুলিশ ও সোর্সরা বলেন, ‘তাহলে চল, তোকে ওসি স্যার ডাকছে। গাড়িতে ওঠ।’ এই বলে বাবুলকে ধরে গাড়িতে উঠাতে চাইলে বাবুল বলেন, ‘এর আগেও আমাকে মিথ্যা অভিযোগে ধরে নিয়ে টাকা আদায় করেছেন। আমি যাবো না।’ তখন পুলিশ সদস্য ও সোর্সরা তাকে ধরে গাড়িতে উঠানোর জন্য টানাটানি শুরু করেন। বাবুল তার দোকানের টেবিলের খুুঁটি আঁকড়ে ধরেন। একপর্যায়ে এক সোর্স বলেন, ‘দোকান ভেঙে ফেল, তাহলেই সে যাবে।’ এরপর দু-একজন ঝুপড়ি দোকানটি ভাঙতে শুরু করে। অপর কয়েকজন তাকে টানতে থাকে। একপর্যায়ে তারা বাবুলের শরীরে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। ঝুপড়ি দোকানটি ভাঙার একপর্যায়ে একজন হাতে থাকা লাঠি দিয়ে জ্বলতে থাকা স্টোভটি ছুঁড়ে মারে। এ সময় কেরোসিন ছিটকে পড়ে বাবুলের গায়ে ও আশপাশে। পাশে গিয়ে পড়ে স্টোভটি। জ্বলন্ত স্টোভের আগুন লেগে যায় বাবুলে গায়ে। আগুনে জ্বলতে থাকে বাবুলের পুরো শরীর। জ্বলন্ত অবস্থায় বাবুল একজনের কলার ধরে ফেলেন। এরপর তারা বাবুলের গায়ের জ্বলন্ত আগুন নেভানোর চেষ্টা না করে দাঁড়িয়ে থাকে। খবর পেয়ে বাসা থেকে ছুটে আসেন বাবুলের ছেলে মো. রাজু আহমেদ। ঘটনার কিছুক্ষণ আগে তিনি রাতের খাবার খাওয়ার জন্য বাসায় যান। এসেই এ পরিস্থিতি দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন তিনি। দাঁড়িয়ে দেখতে থাকা এক পুলিশ সদস্যের হাত ধরে বলেন, ‘আপনারা আমার বাবাকে পুড়িয়ে দিলেন।’ এরপর পুলিশ সদস্য ও সোর্সরা আশপাশের লোকজন আসতে দেখে দ্রুত গিয়ে গাড়িতে উঠেন। এরপর পুলিশ ভ্যানটি ওই এলাকা ত্যাগ করে।
স্থানীয়রা জানান, উপস্থিত লোকজন বাবুলের গায়ের আগুন নেভায়। ততক্ষণে বাবুলের শরীরের অধিকাংশই পুড়ে যায়। দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে তাকে থানায় নিয়ে অবস্থা দেখানো হয় পুলিশ কর্মকর্তাদের। রাত সাড়ে ১১টায় ভর্তি করা হয় বার্ন ইউনিটে। সেখানে বাবুল ঘটনার বর্ণনা দেন। রাজধানীর শাহবাগ থানা পুলিশের এক সদস্য মৃত্যুর আগে বাবুলের কথা রেকর্ড করেন বলে জানান স্বজনরা।
নিহত বাবুলের পিতার নাম মৃত ছাদেক মাতুব্বর। তার বাড়ি ভোলা জেলার ভোলা থানার বাঘেরহাটের মুন্সিরচর এলাকায়।
চার পুলিশ প্রত্যাহার, দুই তদন্ত কমিটি: চাঁদা না দেয়ায় চা দোকানিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল এ ঘটনায় শাহআলী থানার দুই উপ-পরিদর্শক (এসআই) মমিনুর রহমান খান ও নিয়াজউদ্দিন মোল্লা, সহকারী উপপরিদর্শক দেবেন্দ্রনাথ ও কনস্টেবল জসিম উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মাসুদ আহমেদকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্য হলেন মিরপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহাবুব হোসেন। তাদের দ্রুত তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে উপ-কমিশনার (ডিসি ডিসিপ্লিন) টুটুল চক্রবর্তীকে ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চা-পান-সিগারেটও খেতেন না বাবুল: বাবুল চা বেচতেন। তবে কেউ কখনও তাকে চা খেতেও দেখেনি। সিগারেট তো দূরের কথা। তিনি কখনও পানও খাননি। প্রতিবাদ করতেন এলাকায় গাঁজা বিক্রির বিরুদ্ধে। গত দু’বছর আগে তার প্রতিবেশি মাদক বিক্রেতা পারুলকে ৯০ কেজি গাঁজাসহ ধরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বও চলছিল। অনেক সময় মাদক বিক্রেতা পারুলের প্ররোচনায় উল্টো বাবুলকে অপদস্থ ও আটক করে হয়রানি করতো বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। রফিকুল ইসলাম নামে বাবুলের এক আত্মীয় বলেন, যে মানুষটি কখনও চা-পান-সিগারেটও খাননি। আপনারা এলাকায় গিয়ে জনে জনে জিজ্ঞেস করে প্রমাণ নিন। তেমন একজন মানুষকে মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারী বানিয়ে চাঁদা আদায় করতে গিয়ে জীবন্ত পুড়িয়েই মারলো। আমরা এর ন্যায় বিচার চাই।
তিন দশক আগে ওই বসতি বাবুলের: তিন দশক আগে ১৯৮৬ সালে পরিবার নিয়ে ওই এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়ায় বসবাস করে আসছিল বাবুল। ছয় ভাইয়ের মধ্যে তার অপর ভাই আবদুল জলিলও একই এলাকায় বসবাস করেন। তার ভাই জলিল বলেন, এক ঘণ্টা আগেই বড় ভাইয়ের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। কেমন আছেন জিজ্ঞেস করেই আমি আমার ভ্যান গাড়ি নিয়ে চলে যাই। ফিরে শুনতে পাই পুলিশ বড়ভাইকে চাঁদার জন্য আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে।
কিছুদিন আগে বাবুলের শরীরে অস্ত্রোপচার হয়। এরপর থেকে আর ভারি কাজ করতে পারতেন না। আগে ভারি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও অস্ত্রোপচারের পর তিনি সবজি দোকান দেন। পরে বাসার কাছেই চায়ের ঝুপড়ি দোকানটি দেন তিনি।
আজ বাবাকে মৃত লিখতে হচ্ছে: ‘আমার বাবা গতকালও জীবিত ছিলেন। আজ তাকে লিখতে হচ্ছে মৃত।’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের কাছে একটি কাগজে পুলিশ স্বাক্ষর গ্রহণের সময় এই কথা বলে কেঁদে উঠেন নিহত বাবুলের ছোট মেয়ে মোছাম্মৎ লাবনী আকতার। এবার তিনি এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। অন্য সন্তানদের পড়াশুনা না করাতে পারার দুঃখ ঘুচাতে চেয়েছিলেন লাবনীকে দিয়ে। তাকে উচ্চ শিক্ষিত করার স্বপ্ন ছিল বাবুলের। এ কথাটি বলে লাবনী বিলাপ করছিল ‘কার মুখে হাসি ফুটানোর জন্য পড়াশুনা করবো। আমি কী আর পরীক্ষা শেষ করতে পারবো। আমাদের সবই তো শেষ হয়ে গেল।’
তড়িঘড়ি করে মামলা: নিহত বাবুল মাতুব্বরের অগ্নিদগ্ধের ঘটনায় শাহআলী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার চার ঘণ্টার মাথায় পুলিশ তড়িঘড়ি করে এই মামলা নথিভুক্ত করে। কিন্তু মামলার আসামির তালিকায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের কারো নাম নেই। মামলা করা হয়েছে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বাঁচাতেই তড়িঘড়ি করে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। একারণে মামলায় পুলিশ সদস্যদের বাদ দিয়ে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের আসামি করা হয়েছে। নিহত বাবুল মাতুব্বরের ছেলে রাজু আহমেদ বলেন, আমার ছোট বোনকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে মামলা নিয়েছে পুলিশ। কাদের আসামি করা হয়েছে তা দেখতে দেয়নি পুলিশ। পুলিশই এজাহার লিখে বোনের স্বাক্ষর নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে শাহআলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম শাহীন মণ্ডল বলেছেন, মামলা যথা নিয়মেই হয়েছে।
সূত্র জানায়, বুধবার রাত ৯টার দিকে শাহআলী থানাধীন গুদারাঘাটে ফুটপাথের চা দোকানী বাবুল মাতুব্বরের কাছে ফুটপাথে ব্যবসা করার জন্য চাঁদা চাইতে যায় শাহআলী থানা পুলিশের একটি দল। চাঁদা না দেয়ায় পুলিশ দোকানের কেরোসিনের স্টোভে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে ওই স্টোভ বিস্ফোরিত হয়ে চা দোকানী বাবুল মাতুব্বরের শরীরের ৯৫ শতাংশ ঝলসে যায়। গতকাল দুপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাবুলের মৃত্যু হয়।
নিহতের মেয়ে লাবনী আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার পর পুলিশ তার বাবাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে না নিয়ে থানায় নিয়ে যায়। পরে তারা চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। জানা গেছে, ওই ঘটনার পর নিজেদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল ওঠার পরপরই তৎপর হয়ে ওঠে শাহ আলী থানা পুলিশ। তড়িঘড়ি করে বাবুল আক্তারের মেয়েকে ডেকে আবার থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে এজাহার তৈরি করে রাখা হয়। এজাহারে কাদের আসামি করা হয়েছে তা না দেখিয়েই বাবুলের মেয়ে রোকসানার স্বাক্ষর নিয়ে নথিভুক্ত করে ফেলেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা। নিহতের মেয়ে লাবনী আক্তার বলেন, ঘটনার পর আমরা থানায় গিয়েছিলাম পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে, কিন্তু পুলিশ নিজেদের নাম বাদ দিয়ে তড়িঘড়ি করে মামলা রেকর্ড করে।
শাহ আলী থানা সূত্র জানায়, মামলায় স্থানীয় পারুল, দেলোয়ার, রবিন, শংকর, দুলাল হাওলাদার এবং পারভীনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে পুলিশ পারুলকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের ভাষ্য, পুলিশ নয়, সোর্স দেখে পালাতে গিয়ে দগ্ধ হন বাবুল মাতুব্বর। এমনকি বাবুল নিজেও মাদক বিক্রেতা ছিলেন বলে পুলিশ দাবি করছে। পুলিশের দাবি, মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী। বাবুলের সঙ্গে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কোন্দল চলছিল। এর জের ধরেই পারভীনের ইন্ধনে দেলোয়ার এবং তার সহযোগীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
পুলিশ এখন নিজেই সন্ত্রাস করছে: বিএনপি
পুলিশ এখন নিজেই সন্ত্রাস করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। মিরপুরে চাঁদা না পেয়ে কেরোসিনের আগুনে চা বিক্রেতাকে হত্যায় ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে দেয়া এক বিবৃতিতে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশবাসী আওয়ামী লীগের দুঃশাসকদের নির্মম, পৈশাচিক ও দুর্ধর্ষ সব সন্ত্রাসী তাণ্ডব দেখে আতঙ্কিত। পুলিশ এখন নিজেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে। তা আরেকবার প্রমাণিত হলো- চা বিক্রেতা বাবুল মাতব্বরের কাছে থেকে চাঁদা না পেয়ে নির্দয়ভাবে কেরোসিনের চুলার আগুন দিয়ে তাকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে। মির্জা আলমগীর বলেন, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন পুলিশের কর্তব্য হলেও তা অনুরসরণ করাকে তারা ঘৃণা করছে। দুষ্টকে দমন না করে বরং পুলিশই এখন চাঁদাবাজির মতো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে দুষ্টদের উৎসাহিত করছে। গরিব মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের মতো অমানবিক ও নির্দয় কর্মকাণ্ড দেখে দেশবাসী এখন হতবাক ও বিস্মিত। গরিব মানুষদের কাছ থেকে পুলিশের চাঁদা আদায়, জুলুমবাজি ও পৈশাচিক কর্মকাণ্ড দেশকে চরম নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অবিলম্বে গরিব চা বিক্রেতা বাবুল মাতব্বরের হত্যাকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
বাবুলের পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শাহআলী থানার গুদারাঘাট এলাকার কিংশুক সমবায় সমিতি আবাসিক এলাকায় চাঁদা আদায় করতে যান চার পুলিশ সদস্য ও তিন সোর্স। চাঁদা আদায় নিয়ে বিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে স্টোভের চুলার আগুনে দগ্ধ হন বাবুল। সেখান থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় তাকে। আগুনে তার শরীরের ৯৫ ভাগ পুড়ে যায়। ১৬ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা যান তিনি।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শাহআলী থানার কিংশুক সমবায় সমিতি আবাসিক এলাকায় প্রবেশপথে রাস্তার পাশে চা বিক্রি করছিলেন বাবুল মাতুব্বর। অর্ধশত গজ দূরেই পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। ওই এলাকায় প্রতিবেশী পারুল, তার স্বামী আজিজ, শংকর, মনিরসহ বেশ কয়েকজন গাঁজাসহ মাদকদ্রব্য বিক্রি করতো। প্রায় প্রতিদিন বা সপ্তাহে ওই এলাকায় শাহআলী থানা পুলিশের টহল টিম যাওয়া আসা করে। মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের ধারপাকড়ের মাধ্যমে আদায় করে চাঁদা। গত বুধবার দুপুরেও পুলিশ ভ্যান নিয়ে ওই এলাকায় যায়। চাঁদা দাবি করে বাবুলের কাছে। কিন্তু তিনি চাঁদা দেননি। দ্বিতীয়বার যায় রাত সাড়ে নয়টার দিকে। পুলিশ ভ্যানটি পাশে থামিয়ে চার পুলিশ সদস্য গাড়ি থেকে নামেন। তাদের সঙ্গে যায় ওই তিন সোর্স। তারা বাবুলের কাছে গিয়ে বলে ‘রাস্তা দখল করে দোকান করিস। গাঁজা বিক্রি করিস। চাঁদা দিতে হবে।’ তখন বাবুল বলেন, ‘আমি যার জায়গায় বসে দোকান করি, তার অনুমতি নিয়েছি। আমি তো গাঁজা বেঁচি না। আমি কেন টাকা দিবো।’
তখন তারা বলেন, ‘৭ হাজার টাকা দে।’ জবাবে বাবুল বলেন, ‘আমার দোকানে মালামাল আছে ২ হাজার টাকার। ৭ হাজার টাকা কোত্থেকে দিবো।’ এরপর পুলিশ ও সোর্সরা বলেন, ‘তাহলে চল, তোকে ওসি স্যার ডাকছে। গাড়িতে ওঠ।’ এই বলে বাবুলকে ধরে গাড়িতে উঠাতে চাইলে বাবুল বলেন, ‘এর আগেও আমাকে মিথ্যা অভিযোগে ধরে নিয়ে টাকা আদায় করেছেন। আমি যাবো না।’ তখন পুলিশ সদস্য ও সোর্সরা তাকে ধরে গাড়িতে উঠানোর জন্য টানাটানি শুরু করেন। বাবুল তার দোকানের টেবিলের খুুঁটি আঁকড়ে ধরেন। একপর্যায়ে এক সোর্স বলেন, ‘দোকান ভেঙে ফেল, তাহলেই সে যাবে।’ এরপর দু-একজন ঝুপড়ি দোকানটি ভাঙতে শুরু করে। অপর কয়েকজন তাকে টানতে থাকে। একপর্যায়ে তারা বাবুলের শরীরে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। ঝুপড়ি দোকানটি ভাঙার একপর্যায়ে একজন হাতে থাকা লাঠি দিয়ে জ্বলতে থাকা স্টোভটি ছুঁড়ে মারে। এ সময় কেরোসিন ছিটকে পড়ে বাবুলের গায়ে ও আশপাশে। পাশে গিয়ে পড়ে স্টোভটি। জ্বলন্ত স্টোভের আগুন লেগে যায় বাবুলে গায়ে। আগুনে জ্বলতে থাকে বাবুলের পুরো শরীর। জ্বলন্ত অবস্থায় বাবুল একজনের কলার ধরে ফেলেন। এরপর তারা বাবুলের গায়ের জ্বলন্ত আগুন নেভানোর চেষ্টা না করে দাঁড়িয়ে থাকে। খবর পেয়ে বাসা থেকে ছুটে আসেন বাবুলের ছেলে মো. রাজু আহমেদ। ঘটনার কিছুক্ষণ আগে তিনি রাতের খাবার খাওয়ার জন্য বাসায় যান। এসেই এ পরিস্থিতি দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন তিনি। দাঁড়িয়ে দেখতে থাকা এক পুলিশ সদস্যের হাত ধরে বলেন, ‘আপনারা আমার বাবাকে পুড়িয়ে দিলেন।’ এরপর পুলিশ সদস্য ও সোর্সরা আশপাশের লোকজন আসতে দেখে দ্রুত গিয়ে গাড়িতে উঠেন। এরপর পুলিশ ভ্যানটি ওই এলাকা ত্যাগ করে।
স্থানীয়রা জানান, উপস্থিত লোকজন বাবুলের গায়ের আগুন নেভায়। ততক্ষণে বাবুলের শরীরের অধিকাংশই পুড়ে যায়। দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে তাকে থানায় নিয়ে অবস্থা দেখানো হয় পুলিশ কর্মকর্তাদের। রাত সাড়ে ১১টায় ভর্তি করা হয় বার্ন ইউনিটে। সেখানে বাবুল ঘটনার বর্ণনা দেন। রাজধানীর শাহবাগ থানা পুলিশের এক সদস্য মৃত্যুর আগে বাবুলের কথা রেকর্ড করেন বলে জানান স্বজনরা।
নিহত বাবুলের পিতার নাম মৃত ছাদেক মাতুব্বর। তার বাড়ি ভোলা জেলার ভোলা থানার বাঘেরহাটের মুন্সিরচর এলাকায়।
চার পুলিশ প্রত্যাহার, দুই তদন্ত কমিটি: চাঁদা না দেয়ায় চা দোকানিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল এ ঘটনায় শাহআলী থানার দুই উপ-পরিদর্শক (এসআই) মমিনুর রহমান খান ও নিয়াজউদ্দিন মোল্লা, সহকারী উপপরিদর্শক দেবেন্দ্রনাথ ও কনস্টেবল জসিম উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মাসুদ আহমেদকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্য হলেন মিরপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহাবুব হোসেন। তাদের দ্রুত তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে উপ-কমিশনার (ডিসি ডিসিপ্লিন) টুটুল চক্রবর্তীকে ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চা-পান-সিগারেটও খেতেন না বাবুল: বাবুল চা বেচতেন। তবে কেউ কখনও তাকে চা খেতেও দেখেনি। সিগারেট তো দূরের কথা। তিনি কখনও পানও খাননি। প্রতিবাদ করতেন এলাকায় গাঁজা বিক্রির বিরুদ্ধে। গত দু’বছর আগে তার প্রতিবেশি মাদক বিক্রেতা পারুলকে ৯০ কেজি গাঁজাসহ ধরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বও চলছিল। অনেক সময় মাদক বিক্রেতা পারুলের প্ররোচনায় উল্টো বাবুলকে অপদস্থ ও আটক করে হয়রানি করতো বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। রফিকুল ইসলাম নামে বাবুলের এক আত্মীয় বলেন, যে মানুষটি কখনও চা-পান-সিগারেটও খাননি। আপনারা এলাকায় গিয়ে জনে জনে জিজ্ঞেস করে প্রমাণ নিন। তেমন একজন মানুষকে মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারী বানিয়ে চাঁদা আদায় করতে গিয়ে জীবন্ত পুড়িয়েই মারলো। আমরা এর ন্যায় বিচার চাই।
তিন দশক আগে ওই বসতি বাবুলের: তিন দশক আগে ১৯৮৬ সালে পরিবার নিয়ে ওই এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়ায় বসবাস করে আসছিল বাবুল। ছয় ভাইয়ের মধ্যে তার অপর ভাই আবদুল জলিলও একই এলাকায় বসবাস করেন। তার ভাই জলিল বলেন, এক ঘণ্টা আগেই বড় ভাইয়ের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। কেমন আছেন জিজ্ঞেস করেই আমি আমার ভ্যান গাড়ি নিয়ে চলে যাই। ফিরে শুনতে পাই পুলিশ বড়ভাইকে চাঁদার জন্য আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে।
কিছুদিন আগে বাবুলের শরীরে অস্ত্রোপচার হয়। এরপর থেকে আর ভারি কাজ করতে পারতেন না। আগে ভারি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও অস্ত্রোপচারের পর তিনি সবজি দোকান দেন। পরে বাসার কাছেই চায়ের ঝুপড়ি দোকানটি দেন তিনি।
আজ বাবাকে মৃত লিখতে হচ্ছে: ‘আমার বাবা গতকালও জীবিত ছিলেন। আজ তাকে লিখতে হচ্ছে মৃত।’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের কাছে একটি কাগজে পুলিশ স্বাক্ষর গ্রহণের সময় এই কথা বলে কেঁদে উঠেন নিহত বাবুলের ছোট মেয়ে মোছাম্মৎ লাবনী আকতার। এবার তিনি এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। অন্য সন্তানদের পড়াশুনা না করাতে পারার দুঃখ ঘুচাতে চেয়েছিলেন লাবনীকে দিয়ে। তাকে উচ্চ শিক্ষিত করার স্বপ্ন ছিল বাবুলের। এ কথাটি বলে লাবনী বিলাপ করছিল ‘কার মুখে হাসি ফুটানোর জন্য পড়াশুনা করবো। আমি কী আর পরীক্ষা শেষ করতে পারবো। আমাদের সবই তো শেষ হয়ে গেল।’
তড়িঘড়ি করে মামলা: নিহত বাবুল মাতুব্বরের অগ্নিদগ্ধের ঘটনায় শাহআলী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার চার ঘণ্টার মাথায় পুলিশ তড়িঘড়ি করে এই মামলা নথিভুক্ত করে। কিন্তু মামলার আসামির তালিকায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের কারো নাম নেই। মামলা করা হয়েছে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বাঁচাতেই তড়িঘড়ি করে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। একারণে মামলায় পুলিশ সদস্যদের বাদ দিয়ে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের আসামি করা হয়েছে। নিহত বাবুল মাতুব্বরের ছেলে রাজু আহমেদ বলেন, আমার ছোট বোনকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে মামলা নিয়েছে পুলিশ। কাদের আসামি করা হয়েছে তা দেখতে দেয়নি পুলিশ। পুলিশই এজাহার লিখে বোনের স্বাক্ষর নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে শাহআলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম শাহীন মণ্ডল বলেছেন, মামলা যথা নিয়মেই হয়েছে।
সূত্র জানায়, বুধবার রাত ৯টার দিকে শাহআলী থানাধীন গুদারাঘাটে ফুটপাথের চা দোকানী বাবুল মাতুব্বরের কাছে ফুটপাথে ব্যবসা করার জন্য চাঁদা চাইতে যায় শাহআলী থানা পুলিশের একটি দল। চাঁদা না দেয়ায় পুলিশ দোকানের কেরোসিনের স্টোভে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে ওই স্টোভ বিস্ফোরিত হয়ে চা দোকানী বাবুল মাতুব্বরের শরীরের ৯৫ শতাংশ ঝলসে যায়। গতকাল দুপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাবুলের মৃত্যু হয়।
নিহতের মেয়ে লাবনী আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার পর পুলিশ তার বাবাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে না নিয়ে থানায় নিয়ে যায়। পরে তারা চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। জানা গেছে, ওই ঘটনার পর নিজেদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল ওঠার পরপরই তৎপর হয়ে ওঠে শাহ আলী থানা পুলিশ। তড়িঘড়ি করে বাবুল আক্তারের মেয়েকে ডেকে আবার থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে এজাহার তৈরি করে রাখা হয়। এজাহারে কাদের আসামি করা হয়েছে তা না দেখিয়েই বাবুলের মেয়ে রোকসানার স্বাক্ষর নিয়ে নথিভুক্ত করে ফেলেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা। নিহতের মেয়ে লাবনী আক্তার বলেন, ঘটনার পর আমরা থানায় গিয়েছিলাম পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে, কিন্তু পুলিশ নিজেদের নাম বাদ দিয়ে তড়িঘড়ি করে মামলা রেকর্ড করে।
শাহ আলী থানা সূত্র জানায়, মামলায় স্থানীয় পারুল, দেলোয়ার, রবিন, শংকর, দুলাল হাওলাদার এবং পারভীনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে পুলিশ পারুলকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের ভাষ্য, পুলিশ নয়, সোর্স দেখে পালাতে গিয়ে দগ্ধ হন বাবুল মাতুব্বর। এমনকি বাবুল নিজেও মাদক বিক্রেতা ছিলেন বলে পুলিশ দাবি করছে। পুলিশের দাবি, মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী। বাবুলের সঙ্গে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কোন্দল চলছিল। এর জের ধরেই পারভীনের ইন্ধনে দেলোয়ার এবং তার সহযোগীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
পুলিশ এখন নিজেই সন্ত্রাস করছে: বিএনপি
পুলিশ এখন নিজেই সন্ত্রাস করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। মিরপুরে চাঁদা না পেয়ে কেরোসিনের আগুনে চা বিক্রেতাকে হত্যায় ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে দেয়া এক বিবৃতিতে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশবাসী আওয়ামী লীগের দুঃশাসকদের নির্মম, পৈশাচিক ও দুর্ধর্ষ সব সন্ত্রাসী তাণ্ডব দেখে আতঙ্কিত। পুলিশ এখন নিজেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে। তা আরেকবার প্রমাণিত হলো- চা বিক্রেতা বাবুল মাতব্বরের কাছে থেকে চাঁদা না পেয়ে নির্দয়ভাবে কেরোসিনের চুলার আগুন দিয়ে তাকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে। মির্জা আলমগীর বলেন, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন পুলিশের কর্তব্য হলেও তা অনুরসরণ করাকে তারা ঘৃণা করছে। দুষ্টকে দমন না করে বরং পুলিশই এখন চাঁদাবাজির মতো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে দুষ্টদের উৎসাহিত করছে। গরিব মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের মতো অমানবিক ও নির্দয় কর্মকাণ্ড দেখে দেশবাসী এখন হতবাক ও বিস্মিত। গরিব মানুষদের কাছ থেকে পুলিশের চাঁদা আদায়, জুলুমবাজি ও পৈশাচিক কর্মকাণ্ড দেশকে চরম নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অবিলম্বে গরিব চা বিক্রেতা বাবুল মাতব্বরের হত্যাকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
No comments