পুলিশের চাঁদার আগুনে প্রাণ গেল চা দোকানির by শহিদুল ইসলাম রাজী
মিরপুরে স্টোভের আগুনে দগ্ধ বাবুলের মৃত্যুর খবর শুনে স্বজনদের আহাজারি। ইনসেটে বাবুল মাতুব্বর : নয়া দিগন্ত |
দুই এসআইসহ ৪ পুলিশ প্রত্যাহার; জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী; বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়িয়েছে : মিজানুর রহমান
পুলিশের
চাঁদার আগুনে এবার প্রাণ গেলো চা দোকানি বাবুল মাতুব্বরের (৫০)। গত বুধবার
রাতে চাঁদা না পেয়ে পুলিশের ছোড়া তেলের চুলা বিস্ফোরণে তিনি দগ্ধ হন বলে
অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় ১৭ ঘণ্টা অসহ্য যন্ত্রণায় মৃত্যুর সাথে লাড়াই করে
অবশেষে হেরে যান বাবুল। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। চাঁদা না দেয়াতেই তার এ করুণ পরিণতি বলে
অভিযোগ স্বজনদের।
এ ঘটনায় স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী, পুলিশের সোর্সসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও এজাহারে নাম নেই অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের। ঘটনার পরপরই থানা পুলিশ দাবি করে আসছে, এ হামলার সাথে পুলিশ জড়িত নয়। তবে পুলিশের বক্তব্যে অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা গেছে। বাবুলের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় জনতা। তারা অভিযুক্ত পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেন বিক্ষোভ মিছিল করে।
ঘটনাটি তদন্তে পুলিশের মিরপুর বিভাগ ও ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতর পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ছাড়া চা-দোকানি বাবুল মাতুব্বরের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল বিকেলে শাহ আলী থানার দুই এসআই মমিনুর রহমান খান, নিয়াজউদ্দিন মোল্লাসহ চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্য দু’জন হলেন ওই থানার এএসআই দেবেন্দ্রনাথ ও কনস্টেবল জসিম উদ্দিন। এ দিকে একের পর এক ঘটনার পরও দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তির ব্যবস্থা না নেয়ায় পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কর্মী, নিহত চা-দোকানির স্বজনরা।
এ দিকে পুলিশের বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়িয়ে গেছে মন্তব্য করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, এসব দোষী পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করে রাখা দরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্তের পর যদি কেউ দায়ী হয় বা দোষী হয় তাহলে অবশ্যই তার শাস্তি হবে।
পরিবার ও প্রত্যদর্শীদের অভিযোগ, বুধবার রাতে মিরপুরের শাহআলী থানাসংলগ্ন কিংশুক মাঠের পাশে অবস্থিত বাবুল মাতুব্বরের চায়ের দোকানে সোর্সসহ চাঁদা চাইতে যায় পুলিশ। বাবুল চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দুই পরে কথোপকথনের একপর্যায়ে কেরোসিনের চুলায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে পুলিশ। পরে স্টোভের আগুন থেকে বাবুলের শরীরে আগুন ধরে যায়। সাপ্তাহিক চাঁদা না দেয়ায় ইচ্ছে করেই এ ঘটনা ঘটানো হয়। এরপর আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাবুলকে বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বেলা ১টা ৪০ মিনিটে মারা যান তিনি। বাবুলের মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে যায়। বাবার নিথর দেহ জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে ছেলে রাজু বলছিলেন, ‘পুলিশ আমার বাপটাকে মারলো। আমাদের এখন কী হবে? কী নিয়ে বাঁচবো আমরা। কাকে বাবা বলে ডাকবো’
বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডাক্তার পার্থ শঙ্কর পাল সাংবাদিকদের বলেন, বাবুল মাতুব্বরের শ্বাসনালীসহ শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
এ দিকে গত রাত থেকে মিরপুর শাহ আলী থানার এসআই উপপরিদর্শক শাহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ হামলার সাথে পুলিশের কোনো সদস্য জড়িত নয়। তবে অভিযুক্ত দেলোয়ার পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে। বাবুল মাতুব্বরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সাথে চাঁদা চাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেছে পুলিশ।
চা-দোকানির ভাতিজা আকাশ জানান, রাতে সোর্সসহ একটি মাইক্রোবাসে শাহ আলী থানার একদল পুলিশ চা-দোকানের সামনে আসে তার চাচার কাছে চাঁদা চায়। চাঁদা না দেয়ায় তাকে ধরে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলতে চায়। এ সময় চাচ্চু দোকানের টেবিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। তখন পুলিশ টেবিলে লাঠি দিয়ে বাড়ি মারলে টেবিলের পাশের চুলার আগুন গায়ে লাগে। তার চিৎকারে লোকজন ছুটে এলে পুলিশ লোকজনকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়।
বাবুলের পুত্রবধূ মণি আক্তার জানান, তারা মিরপুর ১ নম্বর গুদারাঘাটে থাকেন। তার শ্বশুর গুদারাঘাটের কিংশুক সমবায় সমিতির পাশে ফুটপাথে বসে চুলা (স্টোভ) জ্বালিয়ে চা বিক্রি করেন।
তিনি বলেন, কিছু দিন ধরে পুলিশ উত্ত্যক্ত করছিল। ওই দিন দুপুরে একবার পুলিশ সদস্যরা চাঁদার দাবিতে আমার শ্বশুরকে টেনেহিঁচড়ে করতে থাকে। এ সময় আমার অসুস্থ শাশুড়ি চাকু হাতে নিয়ে বলেন, যদি আপনেরা না যান তাহলে কিন্তু আমার জীবন এখন দিয়া দেবো। তখন উনারা চলে যান। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে এসে আবার বলে, ‘এই বাবুল চাঁদা দে, রাস্তার পাশে দোকান দিয়েছো ক্যান। চাঁদা না দিলে দোকান দিতে পারবি না।’ এ সময় তার শ্বশুর বলেন, বেচাকেনাও ভালো নয়। টাকাও তার কাছে নেই। এ কথা শুনে পুলিশ সদস্যরা তাকে টেনেহিঁচড়ে মাইক্রোবাসে ওঠানোর চেষ্টা করে। এ নিয়ে তার শ্বশুরের সাথে ধস্তাধস্তি হয়।
মণি আক্তারের অভিযোগ, একপর্যায়ে একজন পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে তেলের চুলা টেনে তার শ্বশুরের শরীরের ওপর ছুড়ে মারে। চুলাটি বিস্ফোরিত হয়ে শ্বশুরের শরীরে আগুন ধরে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন আগুন নিভিয়ে গুরুতর অবস্থায় বাবুলকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যান।
মামলা হলেও এজাহারে অভিযুক্ত পুলিশের নাম নেই : এ ঘটনায় নিহতের স্বজনরা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। পরে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী পারুল ওরফে পারুলী ও সোর্স দেলোয়ারসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা নেয় পুলিশ। এতে বাদি হন বাবুল মাতুব্বরের বড় মেয়ে রোকসানা।
রোকসানা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, আমার বাবার গায়ে আগুন দিয়ে খুন করার জন্য দায়ী মাদক ব্যবসায়ী পারুলী, পুলিশের সোর্স দেলোয়ার, আইয়ুব আলী ও রবিন এবং পুলিশের এসআই, কনস্টেবলসহ কয়েকজনের নামে মামলা করতে গেলে থানা থেকে মানা করে। তারা বলে পুলিশের বিরুদ্ধে হলে মামলা নেয়া হবে না। তারা বাধ্য করে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না করার জন্য।
শাহ আলী থানার ওসি এ কে এম শাহিন মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত নয়। আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে, আমরা মামলা নিয়েছি। মামলার ১ নম্বর আসামি পারুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামি হচ্ছে- দেলোয়ার, আইয়ুব আলি, দুলাল হাওলাদার, রবিন, শংকর ও পারভিন।
বিচারের দাবি ছেলের : ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিহত বাবুলের লাশের পাশে ছেলে রাজু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে শাহ আলী থানার পুলিশ ও সোর্সরা। আমার বাবার কী অপরাধ? ফুটপাথে চা বিক্রি করেন, পুলিশকে চাঁদা দিতে পারেননি। আমার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শাহ আলী থানার এসআই শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদারের নেতৃত্ব পুলিশ সদস্য ও পুলিশের সোর্স তার গায়ে আগুন দিয়ে তাকে হত্যা করেছে। আর আমরা দুই ভাই ও তিন বোন এতিম হয়ে গেলাম। আমরা এই হত্যা ঘটনায় ন্যায়বিচার চাই।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাজু বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ী পারুল ওরফে পারুলী ও আমরা পাশাপাশি থাকি। পারুলীর অনেক কাস্টমার আমাদের বাসায় এসে গাঁজা কিনতে চান। জিজ্ঞেস করেন, গাঁজা দেন, পারুলী কই? এতে আমরা ক্ষিপ্ত হয়ে পারুলীর ব্যাপারে থানায় মৌখিকভাবে অভিযোগ করি। এ অভিযোগের কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে শাহ আলী থানার এসআই শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদার আরো দুই পুলিশ কনস্টেবল ও সোর্স দেলোয়ারকে নিয়ে আমার বাবার দোকানে যান। এগুলো আমাদের কথা নয়, আমার বাবা মৃত্যুর আগে আমাদের বলে গেছেন। তখন এসআই শ্রীধাম আমার বাবাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। আর বলেন, ফুটপাথে দোকান করিস, চাঁদা দে। পুলিশ সোর্স দেলোয়ার এ সময় আমার বাবার হাত ধরে টানছিলেন। অন্য এক পুলিশ কনস্টেবল জ্বলন্ত স্টোভের চুলায় লাঠি দিয়ে বাড়ি দেন। তখন স্টোভের চুলা ফেটে আমার বাবার গায়ে আগুন ধরে যায়। আগুন ধরা অবস্থায় আমার বাবা এক পুলিশ কনস্টেবলের কলার ধরে বলেন, তুই আমার গায়ে আগুন দিলি। তখন কনস্টেবল বলেন, আমি আগুন দেইনি, এটি একটা দুর্ঘটনা। দ্রুত তারা সেখান থেকে সটকে পড়েন।’
অভিযুক্তের দাবি, তিনি নির্দোষ : অভিযোগের বিষয়ে শাহ আলী থানার এসআই শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ওখানে যাইনি। অযথাই আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’ শাহ আলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম শাহীন মণ্ডল বলেন, ‘এসআই শ্রীধাম ঘটনার সময় ছিলেন না। ঘটনার পর গিয়েছেন। আর মাদকব্যবসায়ী পারুলীকে আটক করেছি। মামলা হয়েছে। পারুলীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হবে।’
ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা: পার্থ শঙ্কর পাল বলেন, ‘বাবুল মাতুব্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আগুনে তার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। বাবুলের সারা শরীর ও শ্বাসনালীও পুড়ে গিয়েছিল। অনেক চেষ্টার পরও তাকে বাঁচানো যায়নি।’
দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন, চার পুলিশ প্রত্যাহার : এ দিকে চাঁদার দাবিতে পুড়িয়ে দেয়া বাবুল মাতব্বর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি পুলিশের মিরপুর বিভাগ ও অন্যটি ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতর থেকে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলেন, মিরপুর জোনের ডিসি কাইমুজ্জামান খানের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ওই পরিবার। ফলে এ ঘটনা তদন্তে বৃহস্পতিবার পুলিশের মিরপুর জোনের এডিসি মাসুদ আহমেদকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্য হলেন- ওই জোনের এসি মাহবুব হোসেন। এ ছাড়া ডিএমপি সদর দফতর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এক সদস্যের ওই কমিটির প্রধান হলেন ডিএমপির উপকমিশনার (শৃঙ্খলা) টুটুল চক্রবর্তী। তাকে এ ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, শাহ আলী থানার দুই এসআই মমিনুর রহমান, নিয়াজউদ্দিন মোল্লা ও এএসআই দেবেন্দ্রনাথ এবং কনস্টেবল জসীমউদ্দীন ওই এলাকার দায়িত্বে ছিলেন। তাই নিরপে তদন্তের স্বার্থে তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্তের পরে যদি কেউ দায়ী হয় বা দোষী হয় তাহলে অবশ্যই তার শাস্তি হবে। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁও আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী, অগ্নিনির্বাপণ ও ভূমিকম্প মহড়া অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। আর তাই যেসব পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ‘তদন্তের পর যদি কেউ দোষী হয় অবশ্যই তার শাস্তি হবে, ব্যবস্থা হবে। তবে এখন আমরা ঘটনাটা জেনে নিই, সেখানে কী ঘটেছিল।’
একের পর এক অভিযোগ আসায় পুলিশ ইমেজ সঙ্কটে পড়ছে কি না তা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই না। আমি মনে করি, পুলিশের ইমেজ আরো বাড়ছে। কারণ পুলিশ সব সময় ভালো কাজ করছে।’
পুলিশের বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়িয়ে গেছে : মিজানুর রহমান
পুলিশের বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এদের চিহ্নিত করে রোখা দরকার বলে মনে করছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। গতকাল বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দগ্ধ বাবুল মাতুব্বরকে দেখতে এসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
রক এখন ভকের ভূমিকায় উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে পুলিশ অবহেলা করছে। পুলিশের এসব কর্মকাণ্ড আগের মতো এবারো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে। তারা যদি ব্যবস্থা না নেন, তবে মানবাধিকার কমিশনের প থেকে উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে। বাবুল মাতব্বরের কাছে কোনো চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসী চাঁদা চাইতে যায়নি। পুলিশ ও পুলিশের সাথে সংশ্লিষ্টরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে নির্যাতনের ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, রাব্বীকে নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা হাইকোর্টের আদেশ ছিল। ওই আদেশের বিরুদ্ধে সরকারের রিট দুঃখজনক। রাষ্ট্র কোনো অপরাধীর প নিতে পারে না।
এ দিকে চা-দোকানির ঘটনার আগে গত রোববার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ ওঠে আদাবর থানার এসআই রতন কুমারের বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগে করা মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া গত জানুয়ারিতে দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী এবং ঢাকা দণি সিটি করপোরেশনের পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাসকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী, পুলিশের সোর্সসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও এজাহারে নাম নেই অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের। ঘটনার পরপরই থানা পুলিশ দাবি করে আসছে, এ হামলার সাথে পুলিশ জড়িত নয়। তবে পুলিশের বক্তব্যে অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা গেছে। বাবুলের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় জনতা। তারা অভিযুক্ত পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেন বিক্ষোভ মিছিল করে।
ঘটনাটি তদন্তে পুলিশের মিরপুর বিভাগ ও ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতর পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ছাড়া চা-দোকানি বাবুল মাতুব্বরের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল বিকেলে শাহ আলী থানার দুই এসআই মমিনুর রহমান খান, নিয়াজউদ্দিন মোল্লাসহ চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্য দু’জন হলেন ওই থানার এএসআই দেবেন্দ্রনাথ ও কনস্টেবল জসিম উদ্দিন। এ দিকে একের পর এক ঘটনার পরও দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তির ব্যবস্থা না নেয়ায় পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কর্মী, নিহত চা-দোকানির স্বজনরা।
এ দিকে পুলিশের বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়িয়ে গেছে মন্তব্য করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, এসব দোষী পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করে রাখা দরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্তের পর যদি কেউ দায়ী হয় বা দোষী হয় তাহলে অবশ্যই তার শাস্তি হবে।
পরিবার ও প্রত্যদর্শীদের অভিযোগ, বুধবার রাতে মিরপুরের শাহআলী থানাসংলগ্ন কিংশুক মাঠের পাশে অবস্থিত বাবুল মাতুব্বরের চায়ের দোকানে সোর্সসহ চাঁদা চাইতে যায় পুলিশ। বাবুল চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দুই পরে কথোপকথনের একপর্যায়ে কেরোসিনের চুলায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে পুলিশ। পরে স্টোভের আগুন থেকে বাবুলের শরীরে আগুন ধরে যায়। সাপ্তাহিক চাঁদা না দেয়ায় ইচ্ছে করেই এ ঘটনা ঘটানো হয়। এরপর আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাবুলকে বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বেলা ১টা ৪০ মিনিটে মারা যান তিনি। বাবুলের মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে যায়। বাবার নিথর দেহ জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে ছেলে রাজু বলছিলেন, ‘পুলিশ আমার বাপটাকে মারলো। আমাদের এখন কী হবে? কী নিয়ে বাঁচবো আমরা। কাকে বাবা বলে ডাকবো’
বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডাক্তার পার্থ শঙ্কর পাল সাংবাদিকদের বলেন, বাবুল মাতুব্বরের শ্বাসনালীসহ শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
এ দিকে গত রাত থেকে মিরপুর শাহ আলী থানার এসআই উপপরিদর্শক শাহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ হামলার সাথে পুলিশের কোনো সদস্য জড়িত নয়। তবে অভিযুক্ত দেলোয়ার পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে। বাবুল মাতুব্বরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সাথে চাঁদা চাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেছে পুলিশ।
চা-দোকানির ভাতিজা আকাশ জানান, রাতে সোর্সসহ একটি মাইক্রোবাসে শাহ আলী থানার একদল পুলিশ চা-দোকানের সামনে আসে তার চাচার কাছে চাঁদা চায়। চাঁদা না দেয়ায় তাকে ধরে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলতে চায়। এ সময় চাচ্চু দোকানের টেবিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। তখন পুলিশ টেবিলে লাঠি দিয়ে বাড়ি মারলে টেবিলের পাশের চুলার আগুন গায়ে লাগে। তার চিৎকারে লোকজন ছুটে এলে পুলিশ লোকজনকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়।
বাবুলের পুত্রবধূ মণি আক্তার জানান, তারা মিরপুর ১ নম্বর গুদারাঘাটে থাকেন। তার শ্বশুর গুদারাঘাটের কিংশুক সমবায় সমিতির পাশে ফুটপাথে বসে চুলা (স্টোভ) জ্বালিয়ে চা বিক্রি করেন।
তিনি বলেন, কিছু দিন ধরে পুলিশ উত্ত্যক্ত করছিল। ওই দিন দুপুরে একবার পুলিশ সদস্যরা চাঁদার দাবিতে আমার শ্বশুরকে টেনেহিঁচড়ে করতে থাকে। এ সময় আমার অসুস্থ শাশুড়ি চাকু হাতে নিয়ে বলেন, যদি আপনেরা না যান তাহলে কিন্তু আমার জীবন এখন দিয়া দেবো। তখন উনারা চলে যান। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে এসে আবার বলে, ‘এই বাবুল চাঁদা দে, রাস্তার পাশে দোকান দিয়েছো ক্যান। চাঁদা না দিলে দোকান দিতে পারবি না।’ এ সময় তার শ্বশুর বলেন, বেচাকেনাও ভালো নয়। টাকাও তার কাছে নেই। এ কথা শুনে পুলিশ সদস্যরা তাকে টেনেহিঁচড়ে মাইক্রোবাসে ওঠানোর চেষ্টা করে। এ নিয়ে তার শ্বশুরের সাথে ধস্তাধস্তি হয়।
মণি আক্তারের অভিযোগ, একপর্যায়ে একজন পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে তেলের চুলা টেনে তার শ্বশুরের শরীরের ওপর ছুড়ে মারে। চুলাটি বিস্ফোরিত হয়ে শ্বশুরের শরীরে আগুন ধরে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন আগুন নিভিয়ে গুরুতর অবস্থায় বাবুলকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যান।
মামলা হলেও এজাহারে অভিযুক্ত পুলিশের নাম নেই : এ ঘটনায় নিহতের স্বজনরা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। পরে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী পারুল ওরফে পারুলী ও সোর্স দেলোয়ারসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা নেয় পুলিশ। এতে বাদি হন বাবুল মাতুব্বরের বড় মেয়ে রোকসানা।
রোকসানা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, আমার বাবার গায়ে আগুন দিয়ে খুন করার জন্য দায়ী মাদক ব্যবসায়ী পারুলী, পুলিশের সোর্স দেলোয়ার, আইয়ুব আলী ও রবিন এবং পুলিশের এসআই, কনস্টেবলসহ কয়েকজনের নামে মামলা করতে গেলে থানা থেকে মানা করে। তারা বলে পুলিশের বিরুদ্ধে হলে মামলা নেয়া হবে না। তারা বাধ্য করে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না করার জন্য।
শাহ আলী থানার ওসি এ কে এম শাহিন মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত নয়। আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে, আমরা মামলা নিয়েছি। মামলার ১ নম্বর আসামি পারুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামি হচ্ছে- দেলোয়ার, আইয়ুব আলি, দুলাল হাওলাদার, রবিন, শংকর ও পারভিন।
বিচারের দাবি ছেলের : ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিহত বাবুলের লাশের পাশে ছেলে রাজু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে শাহ আলী থানার পুলিশ ও সোর্সরা। আমার বাবার কী অপরাধ? ফুটপাথে চা বিক্রি করেন, পুলিশকে চাঁদা দিতে পারেননি। আমার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শাহ আলী থানার এসআই শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদারের নেতৃত্ব পুলিশ সদস্য ও পুলিশের সোর্স তার গায়ে আগুন দিয়ে তাকে হত্যা করেছে। আর আমরা দুই ভাই ও তিন বোন এতিম হয়ে গেলাম। আমরা এই হত্যা ঘটনায় ন্যায়বিচার চাই।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাজু বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ী পারুল ওরফে পারুলী ও আমরা পাশাপাশি থাকি। পারুলীর অনেক কাস্টমার আমাদের বাসায় এসে গাঁজা কিনতে চান। জিজ্ঞেস করেন, গাঁজা দেন, পারুলী কই? এতে আমরা ক্ষিপ্ত হয়ে পারুলীর ব্যাপারে থানায় মৌখিকভাবে অভিযোগ করি। এ অভিযোগের কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে শাহ আলী থানার এসআই শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদার আরো দুই পুলিশ কনস্টেবল ও সোর্স দেলোয়ারকে নিয়ে আমার বাবার দোকানে যান। এগুলো আমাদের কথা নয়, আমার বাবা মৃত্যুর আগে আমাদের বলে গেছেন। তখন এসআই শ্রীধাম আমার বাবাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। আর বলেন, ফুটপাথে দোকান করিস, চাঁদা দে। পুলিশ সোর্স দেলোয়ার এ সময় আমার বাবার হাত ধরে টানছিলেন। অন্য এক পুলিশ কনস্টেবল জ্বলন্ত স্টোভের চুলায় লাঠি দিয়ে বাড়ি দেন। তখন স্টোভের চুলা ফেটে আমার বাবার গায়ে আগুন ধরে যায়। আগুন ধরা অবস্থায় আমার বাবা এক পুলিশ কনস্টেবলের কলার ধরে বলেন, তুই আমার গায়ে আগুন দিলি। তখন কনস্টেবল বলেন, আমি আগুন দেইনি, এটি একটা দুর্ঘটনা। দ্রুত তারা সেখান থেকে সটকে পড়েন।’
অভিযুক্তের দাবি, তিনি নির্দোষ : অভিযোগের বিষয়ে শাহ আলী থানার এসআই শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ওখানে যাইনি। অযথাই আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’ শাহ আলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম শাহীন মণ্ডল বলেন, ‘এসআই শ্রীধাম ঘটনার সময় ছিলেন না। ঘটনার পর গিয়েছেন। আর মাদকব্যবসায়ী পারুলীকে আটক করেছি। মামলা হয়েছে। পারুলীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হবে।’
ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা: পার্থ শঙ্কর পাল বলেন, ‘বাবুল মাতুব্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আগুনে তার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। বাবুলের সারা শরীর ও শ্বাসনালীও পুড়ে গিয়েছিল। অনেক চেষ্টার পরও তাকে বাঁচানো যায়নি।’
দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন, চার পুলিশ প্রত্যাহার : এ দিকে চাঁদার দাবিতে পুড়িয়ে দেয়া বাবুল মাতব্বর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি পুলিশের মিরপুর বিভাগ ও অন্যটি ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতর থেকে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলেন, মিরপুর জোনের ডিসি কাইমুজ্জামান খানের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ওই পরিবার। ফলে এ ঘটনা তদন্তে বৃহস্পতিবার পুলিশের মিরপুর জোনের এডিসি মাসুদ আহমেদকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্য হলেন- ওই জোনের এসি মাহবুব হোসেন। এ ছাড়া ডিএমপি সদর দফতর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এক সদস্যের ওই কমিটির প্রধান হলেন ডিএমপির উপকমিশনার (শৃঙ্খলা) টুটুল চক্রবর্তী। তাকে এ ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, শাহ আলী থানার দুই এসআই মমিনুর রহমান, নিয়াজউদ্দিন মোল্লা ও এএসআই দেবেন্দ্রনাথ এবং কনস্টেবল জসীমউদ্দীন ওই এলাকার দায়িত্বে ছিলেন। তাই নিরপে তদন্তের স্বার্থে তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্তের পরে যদি কেউ দায়ী হয় বা দোষী হয় তাহলে অবশ্যই তার শাস্তি হবে। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁও আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী, অগ্নিনির্বাপণ ও ভূমিকম্প মহড়া অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। আর তাই যেসব পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ‘তদন্তের পর যদি কেউ দোষী হয় অবশ্যই তার শাস্তি হবে, ব্যবস্থা হবে। তবে এখন আমরা ঘটনাটা জেনে নিই, সেখানে কী ঘটেছিল।’
একের পর এক অভিযোগ আসায় পুলিশ ইমেজ সঙ্কটে পড়ছে কি না তা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই না। আমি মনে করি, পুলিশের ইমেজ আরো বাড়ছে। কারণ পুলিশ সব সময় ভালো কাজ করছে।’
পুলিশের বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়িয়ে গেছে : মিজানুর রহমান
পুলিশের বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এদের চিহ্নিত করে রোখা দরকার বলে মনে করছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। গতকাল বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দগ্ধ বাবুল মাতুব্বরকে দেখতে এসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
রক এখন ভকের ভূমিকায় উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে পুলিশ অবহেলা করছে। পুলিশের এসব কর্মকাণ্ড আগের মতো এবারো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে। তারা যদি ব্যবস্থা না নেন, তবে মানবাধিকার কমিশনের প থেকে উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে। বাবুল মাতব্বরের কাছে কোনো চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসী চাঁদা চাইতে যায়নি। পুলিশ ও পুলিশের সাথে সংশ্লিষ্টরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে নির্যাতনের ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, রাব্বীকে নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা হাইকোর্টের আদেশ ছিল। ওই আদেশের বিরুদ্ধে সরকারের রিট দুঃখজনক। রাষ্ট্র কোনো অপরাধীর প নিতে পারে না।
এ দিকে চা-দোকানির ঘটনার আগে গত রোববার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ ওঠে আদাবর থানার এসআই রতন কুমারের বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগে করা মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া গত জানুয়ারিতে দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী এবং ঢাকা দণি সিটি করপোরেশনের পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাসকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে।
No comments