কে হত্যা করেছিল গাদ্দাফিকে?
লিবীয়
নেতা কর্নেল মুয়াম্মার সেই সোনালি পিস্তলটির কথা মনে আছে? লিবিয়ার
বিদ্রোহীরা যখন মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে হত্যার পর উল্লাস করছিল, তখন তাদের
হাতে দেখা গেছে এই পিস্তলটি। বিদ্রোহীদের হাতে হাতে ঘুরছিল এটি। বিজয়ের
প্রতীক হিসেবে হাত উঁচিয়ে গর্বের সঙ্গে সবাইকে দেখাচ্ছিল। লিবিয়ায়
কর্ণেল গাদ্দাফির পতনের পর পেরিয়ে গেছে চার বছর। কিন্তু সেই পিস্তলটি এখন
কোথায়? কার হাতে? বিবিসির সাংবাদিক গ্যাব্রিয়েল গেটহাউস সম্প্রতি
লিবিয়ায় গিয়েছিলেন গাদ্দাফির এই সোনালি পিস্তলের খোঁজে। সেই কাহিনী শোনা
যাক তাঁর কাছেই:
“আমার মোবাইল ফোনে একটা ছবি আছে। এই ছবি আমি তুলি ২০১১ সালের ২০শে অক্টোবর লিবিয়ার সিয়ের্ট শহরে। এক তরুণ, মাথায় তার বেজবল ক্যাপ, পরনে নীল শার্ট। তাকে কাঁধে নিয়ে উল্লাস করছিল সহযোদ্ধারা। এরা সবাই লিবিয়ার মিসরাটা শহর থেকে এসেছে।
কর্ণেল গাদ্দাফি মাত্র ধরা পড়েছেন। বিদ্রোহীরা তাকে হত্যা করেছে। তারপর উল্লাস করছিল তারা। তাদের হাতে হাতে ঘুরছিল এক সোনালি পিস্তল। গাদ্দাফির ব্যক্তিগত পিস্তল।
বিদ্রোহীদের কাছে গাদ্দাফির এই সোনালি পিস্তল হয়ে উঠেছিল তাদের বিজয়ের প্রতীক।
গাদ্দাফির বিদায়ের চার বছর পরও লিবিয়ার অবস্থা টালমাটাল। প্রতিদ্বন্দ্বী মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। লিবিয়ার এক একটি অংশ শাসন করছে এক একটি সরকার।
আদর্শগত এবং ভৌগলিকভাবে খন্ড বিখন্ড হয়ে গেছে লিবিয়া। আর এই সুযোগে গাদ্দাফির নিজের শহর সিয়ের্ট দখল করে নিয়েছে ইসলামিক স্টেট।
এই টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেই আমি মিসরাটায় এসে পৌঁছালাম। ত্রিপলির দুশ কিলোমিটার পূর্বে এই শহর এখন একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দখলে।
“আমার মোবাইল ফোনে একটা ছবি আছে। এই ছবি আমি তুলি ২০১১ সালের ২০শে অক্টোবর লিবিয়ার সিয়ের্ট শহরে। এক তরুণ, মাথায় তার বেজবল ক্যাপ, পরনে নীল শার্ট। তাকে কাঁধে নিয়ে উল্লাস করছিল সহযোদ্ধারা। এরা সবাই লিবিয়ার মিসরাটা শহর থেকে এসেছে।
কর্ণেল গাদ্দাফি মাত্র ধরা পড়েছেন। বিদ্রোহীরা তাকে হত্যা করেছে। তারপর উল্লাস করছিল তারা। তাদের হাতে হাতে ঘুরছিল এক সোনালি পিস্তল। গাদ্দাফির ব্যক্তিগত পিস্তল।
বিদ্রোহীদের কাছে গাদ্দাফির এই সোনালি পিস্তল হয়ে উঠেছিল তাদের বিজয়ের প্রতীক।
গাদ্দাফির বিদায়ের চার বছর পরও লিবিয়ার অবস্থা টালমাটাল। প্রতিদ্বন্দ্বী মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। লিবিয়ার এক একটি অংশ শাসন করছে এক একটি সরকার।
আদর্শগত এবং ভৌগলিকভাবে খন্ড বিখন্ড হয়ে গেছে লিবিয়া। আর এই সুযোগে গাদ্দাফির নিজের শহর সিয়ের্ট দখল করে নিয়েছে ইসলামিক স্টেট।
এই টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেই আমি মিসরাটায় এসে পৌঁছালাম। ত্রিপলির দুশ কিলোমিটার পূর্বে এই শহর এখন একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দখলে।
ওমরান শাবান। গাদ্দাফির পিস্তল হাতে তোলা ছবি |
আমার লক্ষ্য সোনালি পিস্তল হাতে সেই তরুণ আর তার সহযোদ্ধাদেরকে খুঁজে বের করা, যাদের ছবি সেভ করা আছে আমার মোবাইলে।
আনওয়ার সাওয়ান নামে আমার এক পূর্বপরিচিত লোককে খুঁজে বের করলাম। লিবিয়ার যুদ্ধের সময় মিসরাটায় সে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
গাদ্দাফিকে হত্যার পর বিদ্রোহীরা তার লাশ এই আনওয়ার সাওয়ানের কাছেই নিয়ে এসেছিল। আনওয়ার তখন গাদ্দাফির লাশ এক বড় ফ্রিজে গাদ্দাফির লাশ রেখে সেটি যাতে সবাইকে দেখানো যায় সেই ব্যবস্থা করেছিল।
রাতের বেলায় আমরা মিসরাটায় আনওয়ারের আস্তানায় এসে পৌঁছালাম। জায়গাটা খুব একটা বদলায়নি।
আনওয়ার স্বীকার করলো, লিবিয়ার অবস্থা খুব ভালো নয়।
“গাদ্দাফি ছিল সাপের মাথা। আমরা সাপের মাথা কেটেছি, কিন্তু তার জায়গায় এখন হাজারটা সাপের মাথা গজিয়েছে।”
“আমরা এখনো একই জিনিসের জন্য লড়াই করছি- একজন ভালো ন্যায়পরায়ন শাসক খুঁজছি। সমস্যা হচ্ছে লিবিয়ায় সবাই শাসক হতে চায়। সবার হাতে এখন অস্ত্র। কি যে অবস্থা।”
আমি আনওয়ারকে বললাম, কি কাজে আমি লিবিয়ায় এসেছি। গাদ্দাফির সেই সোনালি পিস্তল আমি খুঁজে বের করতে চাই।”
আনওয়ার আমাকে ওমরান শাবান বলে একজনের সন্ধান দিল। গাদ্দাফিকে যারা ধরেছিল, সেই বিদ্রোহীদের একজন ওমরান।
উন্মত্ত জনতা যখন গাদ্দাফিকে হত্যার চেষ্টা করছিল, তখন ওমরান তাদের থামানোর চেষ্টা করছিল। মোবাইলে ধারণ করা একটা ভিডিও দেখে অন্তত তাই মনে হচ্ছে।
ওমরান শাবান ঐ ঘটনার পর রীতিমত নায়কে পরিণত হয়। গাদ্দাফির সোনালি পিস্তল হাতে তাকে ছবির জন্য পোজ দিতে দেখা যায়।
তবে ২০১২ সালে শাবান নিজেই আবার গাদ্দাফির সমর্থকদের হাতে ধরা পড়ে। তার ওপর অনেক নির্যাতন চালানো হয়। পরে সে মারা যায়।
আনওয়ার সাওয়ান আমাকে জানালো, ওমরান শাবান যখন ধরা পড়ে, তখন তার কাছেই সর্বশেষ ঐ পিস্তল ছিল।
আনওয়ার সাওয়ান নামে আমার এক পূর্বপরিচিত লোককে খুঁজে বের করলাম। লিবিয়ার যুদ্ধের সময় মিসরাটায় সে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
গাদ্দাফিকে হত্যার পর বিদ্রোহীরা তার লাশ এই আনওয়ার সাওয়ানের কাছেই নিয়ে এসেছিল। আনওয়ার তখন গাদ্দাফির লাশ এক বড় ফ্রিজে গাদ্দাফির লাশ রেখে সেটি যাতে সবাইকে দেখানো যায় সেই ব্যবস্থা করেছিল।
রাতের বেলায় আমরা মিসরাটায় আনওয়ারের আস্তানায় এসে পৌঁছালাম। জায়গাটা খুব একটা বদলায়নি।
আনওয়ার স্বীকার করলো, লিবিয়ার অবস্থা খুব ভালো নয়।
“গাদ্দাফি ছিল সাপের মাথা। আমরা সাপের মাথা কেটেছি, কিন্তু তার জায়গায় এখন হাজারটা সাপের মাথা গজিয়েছে।”
“আমরা এখনো একই জিনিসের জন্য লড়াই করছি- একজন ভালো ন্যায়পরায়ন শাসক খুঁজছি। সমস্যা হচ্ছে লিবিয়ায় সবাই শাসক হতে চায়। সবার হাতে এখন অস্ত্র। কি যে অবস্থা।”
আমি আনওয়ারকে বললাম, কি কাজে আমি লিবিয়ায় এসেছি। গাদ্দাফির সেই সোনালি পিস্তল আমি খুঁজে বের করতে চাই।”
আনওয়ার আমাকে ওমরান শাবান বলে একজনের সন্ধান দিল। গাদ্দাফিকে যারা ধরেছিল, সেই বিদ্রোহীদের একজন ওমরান।
উন্মত্ত জনতা যখন গাদ্দাফিকে হত্যার চেষ্টা করছিল, তখন ওমরান তাদের থামানোর চেষ্টা করছিল। মোবাইলে ধারণ করা একটা ভিডিও দেখে অন্তত তাই মনে হচ্ছে।
ওমরান শাবান ঐ ঘটনার পর রীতিমত নায়কে পরিণত হয়। গাদ্দাফির সোনালি পিস্তল হাতে তাকে ছবির জন্য পোজ দিতে দেখা যায়।
তবে ২০১২ সালে শাবান নিজেই আবার গাদ্দাফির সমর্থকদের হাতে ধরা পড়ে। তার ওপর অনেক নির্যাতন চালানো হয়। পরে সে মারা যায়।
আনওয়ার সাওয়ান আমাকে জানালো, ওমরান শাবান যখন ধরা পড়ে, তখন তার কাছেই সর্বশেষ ঐ পিস্তল ছিল।
সোনায় মোড়ানো পিস্তলটি গাদ্দাফিকে উপহার দেয় তার এক ছেলে |
তার মানে কি গাদ্দাফির সোনালি পিস্তল এখন গাদ্দাফির সমর্থকদের হাতেই ফিরে গেছে?
আমি আনওয়ার সাওয়ানকে আমার মোবাইলে তোলা ছবিটি দেখালাম। বেজবল ক্যাপ করা সেই তরুণ। ছবি দেখে তাকে চিনতে পারলো একজন। ‘ওর নাম মোহাম্মদ এলবিবি’, জানালো একজন।
আনওয়ার বললো, ও জানে না মোহাম্মদ এলবিবির ভাগ্যে কী ঘটেছে।
আমি আনওয়ার সাওয়ানকে আমার মোবাইলে তোলা ছবিটি দেখালাম। বেজবল ক্যাপ করা সেই তরুণ। ছবি দেখে তাকে চিনতে পারলো একজন। ‘ওর নাম মোহাম্মদ এলবিবি’, জানালো একজন।
আনওয়ার বললো, ও জানে না মোহাম্মদ এলবিবির ভাগ্যে কী ঘটেছে।
তবে অনেক চেষ্টার পর আমি মোহাম্মদ এলবিবির ফোন নম্বর খুঁজে পেলাম।
ফোন করার পর সে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজী হলো।
আমি তাকে আমার ফোনে তোলা ছবিটি দেখালাম।
‘আমি মনে করতে পারছি। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র সতের বছর।’
মোহাম্মদ এলবিবি বললো, গাদ্দাফিকে হত্যার ঘটনায় তার কোন সংশ্রব নেই।
মোহাম্মদ এলবিবির ভাষ্য অনুযায়ী, গাদ্দাফি যখন ধরা পড়লো, তখন সেখানে অনেক হট্টগোল চলছিল। সেখানে গাদ্দাফির পিস্তলটি পড়ে থাকতে দেখে সেটি কুড়িয়ে নেয়।
অন্য বিদ্রোহীরা তার হাতে গাদ্দাফির পিস্তল দেখে ভেবেছিল, সেই বুঝি গাদ্দাফিকে হত্যা করেছে। ঘটনাচক্রে রাতারাতি মোহাম্মদ এলবিবি নায়কে পরিণত হয়।
কিন্তু সেই সোনালি পিস্তলটি এখন কোথায়?
ফোন করার পর সে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজী হলো।
আমি তাকে আমার ফোনে তোলা ছবিটি দেখালাম।
‘আমি মনে করতে পারছি। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র সতের বছর।’
মোহাম্মদ এলবিবি বললো, গাদ্দাফিকে হত্যার ঘটনায় তার কোন সংশ্রব নেই।
মোহাম্মদ এলবিবির ভাষ্য অনুযায়ী, গাদ্দাফি যখন ধরা পড়লো, তখন সেখানে অনেক হট্টগোল চলছিল। সেখানে গাদ্দাফির পিস্তলটি পড়ে থাকতে দেখে সেটি কুড়িয়ে নেয়।
অন্য বিদ্রোহীরা তার হাতে গাদ্দাফির পিস্তল দেখে ভেবেছিল, সেই বুঝি গাদ্দাফিকে হত্যা করেছে। ঘটনাচক্রে রাতারাতি মোহাম্মদ এলবিবি নায়কে পরিণত হয়।
কিন্তু সেই সোনালি পিস্তলটি এখন কোথায়?
মোহাম্মদ এলবিবি স্বীকার করলো, পিস্তলটি এখনো তার কাছেই আছে। মোহাম্মদ আমাকে পিস্তলটি বের করে দেখালো।
নাইন মিলিমিটার ব্রাউনিং হ্যান্ডগান। সোনায় মোড়ানো। তার ওপর নানা রকম ফুলের নকশা।
গাদ্দাফিকে এই পিস্তল নাকি উপহার দিয়েছিল তার এক ছেলে। লিবিয়ায় এক বিপ্লবের মাধ্যমে গাদ্দাফির ক্ষমতায় আসার ৩২তম বার্ষিকীতে। আর এর ঠিক দশ বছর পরে গাদ্দাফির এই পিস্তল হাত বদল হলো আরেক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে।
মোহাম্মদ এই পিস্তল নিয়ে বেশি টেনশনে আছে। গাদ্দাফির সমর্থকরা এখনো আছে, তারা তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।
মোহাম্মদ আমাকে অনুরোধ করলো, সে যে গাদ্দাফিকে হত্যা করেনি, সেটা যেন আমি গোটা বিশ্বকে জানাই।
গাদ্দাফির বিদায়ের পরও যে লিবিয়ার অবস্থা এরকম হবে, সেটা কি মোহাম্মদ ভেবেছিল?
‘না। লিবিয়ার এখনকার অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগে। লিবিয়ানরা এখন লিবিয়ানদের হত্যা করছে। সবাই এখন গাদ্দাফির মত হতে চায়।”
সূত্র : বিবিসি
নাইন মিলিমিটার ব্রাউনিং হ্যান্ডগান। সোনায় মোড়ানো। তার ওপর নানা রকম ফুলের নকশা।
গাদ্দাফিকে এই পিস্তল নাকি উপহার দিয়েছিল তার এক ছেলে। লিবিয়ায় এক বিপ্লবের মাধ্যমে গাদ্দাফির ক্ষমতায় আসার ৩২তম বার্ষিকীতে। আর এর ঠিক দশ বছর পরে গাদ্দাফির এই পিস্তল হাত বদল হলো আরেক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে।
মোহাম্মদ এই পিস্তল নিয়ে বেশি টেনশনে আছে। গাদ্দাফির সমর্থকরা এখনো আছে, তারা তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।
মোহাম্মদ আমাকে অনুরোধ করলো, সে যে গাদ্দাফিকে হত্যা করেনি, সেটা যেন আমি গোটা বিশ্বকে জানাই।
গাদ্দাফির বিদায়ের পরও যে লিবিয়ার অবস্থা এরকম হবে, সেটা কি মোহাম্মদ ভেবেছিল?
‘না। লিবিয়ার এখনকার অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগে। লিবিয়ানরা এখন লিবিয়ানদের হত্যা করছে। সবাই এখন গাদ্দাফির মত হতে চায়।”
সূত্র : বিবিসি
No comments