এক বাড়িতেই ছয় মায়ের আহাজারি by রোকনুজ্জামান পিয়াস ও ইসরাইল হোসেন বাবু
তাদের
কত হাত-পায়ে পড়লাম। বললাম ছেলেকে ফেরত এনে দিতে। টাকা চাইলো তাও দিলাম।
কিন্তু ছেলেকে ফেরত দিলো না। বলে তোর ছেলে কুমিরের পেটে। কুমিরের কাছে যা।
নাহলে কোর্টে যা। কোর্টে মামলা করেছিস ছেলেকে ফেরত পেতে এখন আমার কাছে কি?
এর বেশি বলতে পারলেন না নিখোঁজ আমিনুলের মা। শুধু কাঁদলেন, চোখের পানিতে
ভাসালেন বুক। ১৭ বছরের আমিনুল সিরাজগঞ্জ উপজেলার বেলকুচি থানার আজুগড়া
জামতৈল গ্রামের বৃদ্ধ আজিজুল হকের একমাত্র ছেলে। মানব পাচারকারীদের খপ্পরে
পড়ে আমিনুল ২০১৩ সালের ১লা নভেম্বর থেকে নিখোঁজ। তার সঙ্গে নিখোঁজ হয়েছে
আমিনুলের আরও ৫ পড়শী- ইসমাইল, হালিম, খোকন, আবদুল হাবিব, রশিদ। জামতৈল
গ্রামের একই বাড়িতে সন্তানের জন্য আহাজারি করছে ৬ মা। শুধু তারা নয় জেলার
বিভিন্ন উপজেলা থেকে একইপথ ধরে নিখোঁজ রয়েছেন ৩ শতাধিক মানুষ। তাদের কারও
মা শয্যাশায়ী হয়েছেন। কারও স্ত্রী মুর্ছা যাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ
জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৪ হাজার মানুষ পাচার হয়েছে। যাদের মধ্যে
প্রায় ৩শ’ নিখোঁজ রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি নিখোজ রয়েছেন জেলার বেলকুচি ও
এনায়েতপুর এলাকায়। গতকাল সরজমিনে বেলকুচি উপজেলা ও এনায়েতপুর থানার বেশ
কয়েকটি গ্রামে গেলে চোখে পড়ে নিখোঁজদের পরিবারের করুণ চিত্র। প্রায়
প্রত্যেক গ্রাম থেকেই কেউ না কেউ নিখোঁজ রয়েছেন।
আজুগড়া জামতৈল গ্রামের আজিজুল হকের ৬ সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে আমিনুল। ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই ঘর থেকে ছেলের ছবি এনে আমিনুলের মা চোখের পানি ফেলতে থাকেন। বলেন, কাউকে দেখলেই মনে হয় আমার আমিনুল। কেঁদে ওঠেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসের ১ তারিখে নিখোঁজ হয় সে। ৪ তারিখে ট্রলারে ওঠার পর ফোন করে। এ খবর শোনার পর এলাকার চিহ্নিত দালাল রেজাউলের কাছে গিয়ে জানতে চান। রেজাইল স্বীকার করে বলে তাকে ছাড়াতে টাকা লাগবে। তারা বিক্রি হয়ে গেছে। টাকাও দিয়েছেন কিন্তু ফেরত দেয়নি। এ সময় আমিনুলের বাড়িতে হাজির হন তার সঙ্গে সাগরে নিখোঁজ হওয়া আমিনুলের পাশের বাড়ির ইসমাইল, হালিম, আবদুল হাবিব, রশিদের মা-বাবা আর খোকনের মা-ভাই। সেখানে কান্নার রোল পড়ে। একসময় আশে-পাশের মানুষজন জড়ো হয়। তারা অঝোরে ছেড়ে দেয় চোখের পানি। পুত্রশোকে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন আগে মারা গেছেন খোকনের বাবা হযরত। খোকনের ভাই জানান, যেদিন বাবা মারা যান সেদিনও দালালরা টাকা নিতে এসেছিল। তারা জানান, আলী পরিচয় দিয়ে টেকনাফের এক দালাল ৬০ হাজার টাকাও নিয়েছে। আরও টাকা দাবি করেছিল। খোকনের ভাই আরও জানান, যেদিন তার ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয় সেদিন সে বলেছিলে- আমরা এমন এক জায়গায় আছি যেখান থেকে পৃথিবীর কেউই তাদের ফিরিয়ে নিতে পারবে না। একই গ্রামের সাবেক মেম্বার করিম, তার ছেলে রেজাউল, আবদুল লতিফ ও রাজু জড়িত। সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসের স্ত্রী দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আশানুর বিশ্বাসের কাছে অভিযোগ কোন ফল পাওয়া যায়নি। উপরন্তু কোর্টে মামলা করায় দালাল রেজাউল তাদের বলেছে, তোদের ছেলে এখন কুমিরের পেটে। তারা এও বলেছে কোর্টে কেস করেছিল। তোদের ছেলেকে কোর্টেই আছে। গিয়ে নিয়ে আয়।
উল্লেখ্য, দালাল রেজাউল পুলিশের অভিযানে আটক হলেও এক রাত থানায় রেখে ছেড়ে দেয়। নিখোঁজ ওই ৬ জনের পরিবার জানায়, পাশ্ববর্তী আজুগড়া গ্রামের সোবহানের ছেলে আবুল কালাম, আজমতের ছেলে ভাষা ও মান্নান দোকানির ছেলে জাকারিয়া একই সঙ্গে ট্রলারে উঠে নিখোঁজ হয়। এরমধ্যে পুত্র শোকে ঘটনার ১৯ দিনের ব্যবধানে মারা যান সোবহান। একই উপজেলার চরনিশিবয়ড়া গ্রামের নিখোঁজ হয়েছেন তাঁত শ্রমিক আবদুল করিম। তার স্ত্রী মিনা পারভীন বর্তমানে সন্তান সম্ভবা। মিনার বাবা জালাল উদ্দিন, কোরবানি ঈদের ৭ দিন পর নিখোঁজ হন তার মেয়ের স্বামী। এরপর থেকে প্রায়ই মেয়ে জ্ঞান হারান। তিনি আরও বলেন, জামাইয়ের সঙ্গে নাগগাতি গ্রামের একজন ও গাড়ামাসি গ্রামের দু’জন মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ট্রলারের উঠেছিল। বর্তমানে তারা থাইল্যান্ডের জেলে থাকলেও তার জামাইয়ের কোন খোঁজ নেই। উপরন্তু আদাচাকি গ্রামের সহোদর আলতাফ ও আজম দালাল ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পরে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিল।
সরজমিনে দালাল আলতাফ হোসেনের গ্রামে গিয়ে জানা যায়, ওই গ্রাম থেকেও ৪ জন নিখোঁজ হয়েছিল। যারা বর্তমানে থাইল্যান্ডের জেলে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এর মধ্যে তার আপন ভাইপো ডিনারও রয়েছে। নিখোঁজ অন্যরা হলেন, ওই গ্রামের আবু হেলাল, আবদুল আলিম ও আবদুল কাদের। জেলে থাকা অবস্থায় পরিবারের সঙ্গে তাদের কথাও হয়েছে। এজন্য টেকনাফের একটি মোবাইল নম্বরে প্রতিবার ৫শ’ টাকা বিকাশ করতে হয় তাদের।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কড্ডা গ্রামের ইলিয়াছ হোসেন দালালের খপ্পরে পড়ে একই পথে পা বাড়ায় ৭ মাস আগে। তার বাবা ফল ব্যবসায়ী তারা সেখ জানান, বেলকুচির চালা গ্রামের সানোয়ার দালালের মাধ্যমে তার ছেলে এ পথে গিয়েছে। ওই সময় ছেলের বউ অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। সম্প্রতি তিনি একটি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছেন। কিন্ত স্বামী ফিরে না আসায় মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। তারা আরও জানান, ইলিয়াসের মা ছেলের শোকে মাঝে-মধ্যে মাঝরাতে উঠে ছেলের খোঁজে ঘর থেকে বের হয়ে দৌড় মারেন। বিভিন্ন জায়গায় ছেলেকে খোঁজ করে বেড়ান। এ অবস্থায় তিনি এখন মৃত্যু শয্যায়।
এদিকে, বেলকুচি থানার চালাগ্রামে ব্যবসায়ী শরীফ উদ্দিন ও সিরাজগঞ্জ সদরের সারটিয়া গ্রামের আনোয়ারসহ আরও ১৪ জন সম্প্রতি মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য দালালদের সঙ্গে বের হয়। কিন্তু দালালরা তাদের ইন্দোনেশিয়ায় একটি জঙ্গলে তাদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ধরনের আরও কয়েকটি গ্রামে গিয়ে মিলেছে একই চিত্র। তবে এসব ঘটনায় বেলকুচিতে মাত্র ৩টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে ২টিতে চার্জশিট হয়েছে। একটি রয়েছে তদন্তাধীন। এছাড়া কোর্টে মামলা হয়েছে আরও ২টি। অপরদিকে, পার্শ্ববর্তী এনায়েতপুর থানায় মামলাটি। যার মধ্যে ২টি চার্জশিট হয়েছে। বাকি ২টি পুলিশ ও একটি সিআইডি তদন্ত করছে।
আজুগড়া জামতৈল গ্রামের আজিজুল হকের ৬ সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে আমিনুল। ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই ঘর থেকে ছেলের ছবি এনে আমিনুলের মা চোখের পানি ফেলতে থাকেন। বলেন, কাউকে দেখলেই মনে হয় আমার আমিনুল। কেঁদে ওঠেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসের ১ তারিখে নিখোঁজ হয় সে। ৪ তারিখে ট্রলারে ওঠার পর ফোন করে। এ খবর শোনার পর এলাকার চিহ্নিত দালাল রেজাউলের কাছে গিয়ে জানতে চান। রেজাইল স্বীকার করে বলে তাকে ছাড়াতে টাকা লাগবে। তারা বিক্রি হয়ে গেছে। টাকাও দিয়েছেন কিন্তু ফেরত দেয়নি। এ সময় আমিনুলের বাড়িতে হাজির হন তার সঙ্গে সাগরে নিখোঁজ হওয়া আমিনুলের পাশের বাড়ির ইসমাইল, হালিম, আবদুল হাবিব, রশিদের মা-বাবা আর খোকনের মা-ভাই। সেখানে কান্নার রোল পড়ে। একসময় আশে-পাশের মানুষজন জড়ো হয়। তারা অঝোরে ছেড়ে দেয় চোখের পানি। পুত্রশোকে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন আগে মারা গেছেন খোকনের বাবা হযরত। খোকনের ভাই জানান, যেদিন বাবা মারা যান সেদিনও দালালরা টাকা নিতে এসেছিল। তারা জানান, আলী পরিচয় দিয়ে টেকনাফের এক দালাল ৬০ হাজার টাকাও নিয়েছে। আরও টাকা দাবি করেছিল। খোকনের ভাই আরও জানান, যেদিন তার ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয় সেদিন সে বলেছিলে- আমরা এমন এক জায়গায় আছি যেখান থেকে পৃথিবীর কেউই তাদের ফিরিয়ে নিতে পারবে না। একই গ্রামের সাবেক মেম্বার করিম, তার ছেলে রেজাউল, আবদুল লতিফ ও রাজু জড়িত। সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসের স্ত্রী দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আশানুর বিশ্বাসের কাছে অভিযোগ কোন ফল পাওয়া যায়নি। উপরন্তু কোর্টে মামলা করায় দালাল রেজাউল তাদের বলেছে, তোদের ছেলে এখন কুমিরের পেটে। তারা এও বলেছে কোর্টে কেস করেছিল। তোদের ছেলেকে কোর্টেই আছে। গিয়ে নিয়ে আয়।
উল্লেখ্য, দালাল রেজাউল পুলিশের অভিযানে আটক হলেও এক রাত থানায় রেখে ছেড়ে দেয়। নিখোঁজ ওই ৬ জনের পরিবার জানায়, পাশ্ববর্তী আজুগড়া গ্রামের সোবহানের ছেলে আবুল কালাম, আজমতের ছেলে ভাষা ও মান্নান দোকানির ছেলে জাকারিয়া একই সঙ্গে ট্রলারে উঠে নিখোঁজ হয়। এরমধ্যে পুত্র শোকে ঘটনার ১৯ দিনের ব্যবধানে মারা যান সোবহান। একই উপজেলার চরনিশিবয়ড়া গ্রামের নিখোঁজ হয়েছেন তাঁত শ্রমিক আবদুল করিম। তার স্ত্রী মিনা পারভীন বর্তমানে সন্তান সম্ভবা। মিনার বাবা জালাল উদ্দিন, কোরবানি ঈদের ৭ দিন পর নিখোঁজ হন তার মেয়ের স্বামী। এরপর থেকে প্রায়ই মেয়ে জ্ঞান হারান। তিনি আরও বলেন, জামাইয়ের সঙ্গে নাগগাতি গ্রামের একজন ও গাড়ামাসি গ্রামের দু’জন মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ট্রলারের উঠেছিল। বর্তমানে তারা থাইল্যান্ডের জেলে থাকলেও তার জামাইয়ের কোন খোঁজ নেই। উপরন্তু আদাচাকি গ্রামের সহোদর আলতাফ ও আজম দালাল ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পরে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিল।
সরজমিনে দালাল আলতাফ হোসেনের গ্রামে গিয়ে জানা যায়, ওই গ্রাম থেকেও ৪ জন নিখোঁজ হয়েছিল। যারা বর্তমানে থাইল্যান্ডের জেলে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এর মধ্যে তার আপন ভাইপো ডিনারও রয়েছে। নিখোঁজ অন্যরা হলেন, ওই গ্রামের আবু হেলাল, আবদুল আলিম ও আবদুল কাদের। জেলে থাকা অবস্থায় পরিবারের সঙ্গে তাদের কথাও হয়েছে। এজন্য টেকনাফের একটি মোবাইল নম্বরে প্রতিবার ৫শ’ টাকা বিকাশ করতে হয় তাদের।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কড্ডা গ্রামের ইলিয়াছ হোসেন দালালের খপ্পরে পড়ে একই পথে পা বাড়ায় ৭ মাস আগে। তার বাবা ফল ব্যবসায়ী তারা সেখ জানান, বেলকুচির চালা গ্রামের সানোয়ার দালালের মাধ্যমে তার ছেলে এ পথে গিয়েছে। ওই সময় ছেলের বউ অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। সম্প্রতি তিনি একটি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছেন। কিন্ত স্বামী ফিরে না আসায় মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। তারা আরও জানান, ইলিয়াসের মা ছেলের শোকে মাঝে-মধ্যে মাঝরাতে উঠে ছেলের খোঁজে ঘর থেকে বের হয়ে দৌড় মারেন। বিভিন্ন জায়গায় ছেলেকে খোঁজ করে বেড়ান। এ অবস্থায় তিনি এখন মৃত্যু শয্যায়।
এদিকে, বেলকুচি থানার চালাগ্রামে ব্যবসায়ী শরীফ উদ্দিন ও সিরাজগঞ্জ সদরের সারটিয়া গ্রামের আনোয়ারসহ আরও ১৪ জন সম্প্রতি মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য দালালদের সঙ্গে বের হয়। কিন্তু দালালরা তাদের ইন্দোনেশিয়ায় একটি জঙ্গলে তাদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ধরনের আরও কয়েকটি গ্রামে গিয়ে মিলেছে একই চিত্র। তবে এসব ঘটনায় বেলকুচিতে মাত্র ৩টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে ২টিতে চার্জশিট হয়েছে। একটি রয়েছে তদন্তাধীন। এছাড়া কোর্টে মামলা হয়েছে আরও ২টি। অপরদিকে, পার্শ্ববর্তী এনায়েতপুর থানায় মামলাটি। যার মধ্যে ২টি চার্জশিট হয়েছে। বাকি ২টি পুলিশ ও একটি সিআইডি তদন্ত করছে।
No comments