‘দালালরা জোর করে নৌকায় তুলে দেয়’
সাগরে
ভাসমান বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান অবশ্যই আগামীকালের
ব্যাংকক বৈঠকে সমাধান করতে হবে। সমুদ্রে ভেসে আছে এমন মানুষকে পুশব্যাক না
করার বিষয়ে সম্মত হতে হবে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াকে। এখনও
যেসব বোট সাগরে ভাসমান রয়েছে তা উদ্ধার করতে হবে। তাতে থাকা মানুষগুলোকে
উদ্ধার করে নিরাপদ থাকার জায়গা দিতে হবে। তাদের অধিকারের প্রতি সম্মান
দেখানো হচ্ছে এটা নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গাদের অধিকার লঙ্ঘন ও তাদের
প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি পরিহার না করলে এ সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হবে
না। একই সঙ্গে মানব পাচার রোধে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক প্রতিবেদনে এসব
কথা লিখেছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের যেসব রোহিঙ্গা ভয়াবহ
যাত্রার মাধ্যমে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া বা মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা
করেছিলেন তাদের সঙ্গে কথা বলে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিউম্যান রাইটস
ওয়াচ। এতে বর্ণিত হয়েছে বেঁচে যাওয়া রোহিঙ্গা মেয়ে ও নারীদের মর্মন্তুদ
কাহিনী। তারা বর্ণনা করেছেন, কিভাবে তাদের মানব পাচারকারীরা জোর করে নিয়ে
গিয়েছিল নৌকায়। জড়োসড়ো হয়ে শতশত মানুষবাহী একেকটি নৌকায় তাদের কয়েক মাস ধরে
থাকার গল্প শুনিয়েছেন। তারা বর্ণনা করেছেন থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার
সীমান্তবর্তী বন্দিশিবিরগুলোতে অত্যাচারের নির্মম অভিজ্ঞতা। ১৩ বছর বয়সী এক
রোহিঙ্গা মেয়ে জানিয়েছে, কিভাবে নিজের পরিবারের সামনে থেকে তাকে কয়েকজন
পুরুষ জোর করে তুলে নিয়ে যায়। তার ভাষ্য, তারা আমাকে টেনেহিঁচড়ে নৌকায়
প্রবেশ করায়। তাদের কাছে লাঠি ছিল। তারা আমাকে মারার হুমকি দেয়। আমি চিৎকার
করে কেঁদেছিলাম। আমার বাবা-মা ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। কিন্তু তারা চেয়ে চেয়ে
দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারেন নি। ১৬ বছর বয়সী আরেক রোহিঙ্গা মেয়ে বলে,
বাংলাদেশের রাখাইন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ৬ জন পুরুষ তাদেরকে জোর করে নৌকায়
তুলে নেয়। তাদের কাছে ছিল ছুরি ও গুলি। নৌকায় তুলে তারা জানিয়ে দেয়, আমি
মিয়ানমার ছেড়ে যাচ্ছি। একটি ছোট্ট নৌকায় আমরা উঠি। আমি একবার পানিতে পড়েও
গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে আরও ১৫ জন রোহিঙ্গা ছিল। তাদের সবাইকেই জোর করে
নৌকায় চড়তে বাধ্য করা হয়। আরেক রোহিঙ্গা মেয়েও জানিয়েছে, নিজের স্বামী ও
সন্তান নিয়ে নৌকায় চড়ার কাহিনী। সে জানায়, আমি ছিলাম আমার শ্বশুর বাড়িতে।
সেখানে আমার স্বামীও ছিলেন। হঠাৎ এক দালাল ও কিছু পুরুষ এসে আমাদের তুলে
নিয়ে যায়। তারা একটি বড় নৌকায় আমাদের উঠায়। নৌকায় মানব পাচারকারীদের ভাষা
আমি বুঝতে পারছিলাম না। আমি বার্মিজ বা রাখাইন ভাষায় কথা বলতে পারি না। আমি
জানতাম না, তারা কারা।
সব নৌকার পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। এক মেয়ে বলে, আমরা একটি নৌকায় প্রায় ২ মাস ধরে ছিলাম। আমি নৌকায় এত ভয়ের মধ্যে ছিলাম যে বুঝাতে পারবো না। এ ছাড়া ছোট ছোট নৌকায় করে বড় নৌকায় মানুষ আসার সংখ্যা কেবল বাড়ছিল। আমরা নারীরা একটা ছোট নৌকায় ছিলাম। নৌকার বাইরে কিছুই দেখতে পেতাম না আমরা। শুধু বুঝতাম নৌকাটি উপর-নীচ করছে। আরেক নারী জানান, আমাদের নৌকার একটি ছোট্ট কক্ষে ১৬ জন মানুষ ছিল। নৌকার দরজা সবসময়ই বন্ধ থাকতো। একটা ছোটো ফাঁকের ভেতর দিয়ে খাবার ও পানি দিয়ে যেত। আমরা কখনই তাদের দেখতে পেতাম না।
অনেকে বর্ণনা করেছে মুক্তিপণ আদায় না করা পর্যন্ত মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন বন্দিশিবিরে থাকার অভিজ্ঞতা। মিয়ানমারের মুয়াঙ্গডু শহরের পাশে বসবাস ছিল ১৩ বছর বয়সী ইয়াসমিনের। সে বলেছে, আমার সারাজীবন কেটেছে গ্রামে। কখনও গ্রামের বাইরে যাইনি আমি। এমনকি স্কুলেও যাইনি। বিকাল ৪টা থেকে কারফিউ থাকার জন্য বাড়ির বাইরে যেতে পারি না। মিয়ানমারের পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে যা পেত তাই নিয়ে যেত। একপর্যায়ে প্রায় ১২ জন পুরুষ আসে আমার বাড়িতে। বলে, তোমার ভাই মালয়েশিয়ায়। তাই তোমাকেও যেতে হবে। এই বলে তারা আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। তাদের কথা না শুনলে হাতে থাকা লাঠি দিয়ে প্রহারের ভয় দেখায়। আমি আর্তনাদ করলাম। কাঁদলাম। আমার পিতামাতা কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। কিন্তু তাদের করার কিছুই ছিল না। ভয়ে তখন গা শিউরে উঠল। যে বোটে নিয়ে আমাকে রাখা হয় তা ছিল ১৫ মিটার লম্বা। এতে ছিল চারটি তলা। প্রতিটি তলা এক মিটার উঁচু। আছে আলাদা আলাদা রুম। নারীদের রাখা হয় এক রুমে। পুরুষদের অন্যটিতে। একেবারে উপরে ডেকে থাকতো শুধু পুরুষরা। এক একটি রুমে রাখা হয়েছিল ১৬ জনকে। সব সময়ই এসব রুম থাকতো তালাবদ্ধ। একটি ছোট্ট গর্ত দিয়ে আমাদেরকে খাদ্য ও পানি দিতো পাচারকারীরা। তারা কারা তা কখনও দেখতে পাইনি। দিনে মাত্র একবার আমাদেরকে টয়লেটে যেতে দেয়া হতো। এ ছাড়া রুম থেকে বের হওয়ার আর কোন সুযোগ থাকতো না। আরেক রোহিঙ্গা নারী জানান, থাইল্যান্ডের একটি বন্দিশিবিরে তিনি আটক ছিলেন। তার আত্মীয়দের মুক্তিপণ দিতে রাজি করাতে তার ওপর চালানো হয় নির্মম অত্যাচার। তিনি জানান, দালালরা আমাদের লাঠি ও বাঁশ দিয়ে মারতো। টাকা দিতে না পারায়, আমাদের পায়ে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিতো। এরকম আরও অনেক রোহিঙ্গার বর্ণনা যুক্ত হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
সব নৌকার পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। এক মেয়ে বলে, আমরা একটি নৌকায় প্রায় ২ মাস ধরে ছিলাম। আমি নৌকায় এত ভয়ের মধ্যে ছিলাম যে বুঝাতে পারবো না। এ ছাড়া ছোট ছোট নৌকায় করে বড় নৌকায় মানুষ আসার সংখ্যা কেবল বাড়ছিল। আমরা নারীরা একটা ছোট নৌকায় ছিলাম। নৌকার বাইরে কিছুই দেখতে পেতাম না আমরা। শুধু বুঝতাম নৌকাটি উপর-নীচ করছে। আরেক নারী জানান, আমাদের নৌকার একটি ছোট্ট কক্ষে ১৬ জন মানুষ ছিল। নৌকার দরজা সবসময়ই বন্ধ থাকতো। একটা ছোটো ফাঁকের ভেতর দিয়ে খাবার ও পানি দিয়ে যেত। আমরা কখনই তাদের দেখতে পেতাম না।
অনেকে বর্ণনা করেছে মুক্তিপণ আদায় না করা পর্যন্ত মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন বন্দিশিবিরে থাকার অভিজ্ঞতা। মিয়ানমারের মুয়াঙ্গডু শহরের পাশে বসবাস ছিল ১৩ বছর বয়সী ইয়াসমিনের। সে বলেছে, আমার সারাজীবন কেটেছে গ্রামে। কখনও গ্রামের বাইরে যাইনি আমি। এমনকি স্কুলেও যাইনি। বিকাল ৪টা থেকে কারফিউ থাকার জন্য বাড়ির বাইরে যেতে পারি না। মিয়ানমারের পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে যা পেত তাই নিয়ে যেত। একপর্যায়ে প্রায় ১২ জন পুরুষ আসে আমার বাড়িতে। বলে, তোমার ভাই মালয়েশিয়ায়। তাই তোমাকেও যেতে হবে। এই বলে তারা আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। তাদের কথা না শুনলে হাতে থাকা লাঠি দিয়ে প্রহারের ভয় দেখায়। আমি আর্তনাদ করলাম। কাঁদলাম। আমার পিতামাতা কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। কিন্তু তাদের করার কিছুই ছিল না। ভয়ে তখন গা শিউরে উঠল। যে বোটে নিয়ে আমাকে রাখা হয় তা ছিল ১৫ মিটার লম্বা। এতে ছিল চারটি তলা। প্রতিটি তলা এক মিটার উঁচু। আছে আলাদা আলাদা রুম। নারীদের রাখা হয় এক রুমে। পুরুষদের অন্যটিতে। একেবারে উপরে ডেকে থাকতো শুধু পুরুষরা। এক একটি রুমে রাখা হয়েছিল ১৬ জনকে। সব সময়ই এসব রুম থাকতো তালাবদ্ধ। একটি ছোট্ট গর্ত দিয়ে আমাদেরকে খাদ্য ও পানি দিতো পাচারকারীরা। তারা কারা তা কখনও দেখতে পাইনি। দিনে মাত্র একবার আমাদেরকে টয়লেটে যেতে দেয়া হতো। এ ছাড়া রুম থেকে বের হওয়ার আর কোন সুযোগ থাকতো না। আরেক রোহিঙ্গা নারী জানান, থাইল্যান্ডের একটি বন্দিশিবিরে তিনি আটক ছিলেন। তার আত্মীয়দের মুক্তিপণ দিতে রাজি করাতে তার ওপর চালানো হয় নির্মম অত্যাচার। তিনি জানান, দালালরা আমাদের লাঠি ও বাঁশ দিয়ে মারতো। টাকা দিতে না পারায়, আমাদের পায়ে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিতো। এরকম আরও অনেক রোহিঙ্গার বর্ণনা যুক্ত হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
No comments