ভোটকেন্দ্রে কথা বলতে পারবেন না সাংবাদিকরা -ইসির নির্দেশনা by সিরাজুস সালেকিন
পুলিশের
বাধার পর এবার ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে নানা শর্ত দিয়েছে নির্বাচন
কমিশন। মাগুরার উপ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বুধবার রিটার্নিং অফিসারদের
চিঠির মাধ্যমে সাংবাদিকদের প্রবেশের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে
ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের কথা বন্ধ ও কোন কিছু স্পর্শ না করাসহ ৯টি বিষয়ে
নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক আরাফাত আরা
স্বাক্ষরিত চিঠিতে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে সাংবাদিকদের এসব নির্দেশনা মেনে
চলতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও এ নির্বাচনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা
প্রজ্ঞাপনে রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া প্রিজাইডিং অফিসারকে
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।
ইসির চিঠিতে রিটার্নিং অফিসারের কাছে ৯টি শর্ত দিয়ে বলা হয়েছে, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পূর্বে প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া কোন ভোটকক্ষে প্রবেশ করা যাবে না, এক সঙ্গে ৫ জনের বেশি সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবেন না, ১০ মিনিটের বেশি কেন্দ্রে অবস্থান করতে পারবেন না, ভোটকক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ কারো সঙ্গে আলাপ করতে পারবেন না, সাংবাদিকগণ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না, কোন প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করা থেকে বিরত থাকবেন, প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে কোন ধরনের কর্মকাণ্ড হতে বিরত থাকবেন; সংবিধান, নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন, এবং সাংবাদিক পরিচয়পত্রের উল্টো পিঠের সকল নির্দেশনা মেনে চলবেন। এ নির্দেশনা জারির পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পত্রে বলা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া ভোটকেন্দ্রে কোন প্রিজাইডিং অফিসার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। এতে সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় চাইলে অনেক কিছুই বলতে পারেন। কিন্তু সাংবাদিকদের নির্দেশনা দেয়া যুক্তিসঙ্গত হবে কি-না এটা চিন্তার বিষয়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইতে পারে। কিন্তু সাংবাদিকদের হাত-পা বেঁধে দেয়াটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। তবে সাংবাদিকদের সুবিধার্থেই এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সাংবাদিকদের সুবিধার্থেই একটি গাইড লাইন তৈরি করা হয়েছে। এটা কোন নীতিমালা বা নির্দেশনা নয়। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো পুলিশ যাতে সাংবাদিকদের সমস্যা না করে সেই জন্য মাগুরা উপ-নির্বাচনে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা জানান, গত এপ্রিলে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অধিকাংশ কেন্দ্রে অনুমোদিত সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়া ও নাজেহালের ঘটনা ঘটে। সেসময় বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রে বাধা এসেছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। প্রকৃত বিষয় উদঘাটনে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ইসি কর্মকর্তার সমন্বয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে। উক্ত কমিটি প্রকৃত ঘটনা ও সুপারিশসহ ইসিতে প্রতিবেদন দেয়ার কথা রয়েছে। সিটি নির্বাচনে সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা ও নাজেহালের ঘটনার প্রকৃত চিত্র উদঘাটনের আগেই স্বয়ং নির্বাচন কমিশনই ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে এ কড়াকড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করলো। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহের কাজটিকে আরো জটিল করলো ইসি। আগামী ৩০শে মে মাগুরা-১ উপ-নির্বাচনেই নতুন এ নির্দেশনা চালু করা হচ্ছে। সিটি নির্বাচনে নানা ধরনের অনিয়মে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সাংবাদিকদের ওপরই এমন তৎপরতা দেখাচ্ছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। আর এ তৎপরতায় ভবিষ্যৎ নির্বাচনে ভোটাররা অনুৎসাহিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বলেন, এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বলা হতে পারে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসার প্রয়োজন নেই। নির্বাচন কমিশন নিজেরাই একটা ফল তৈরি করে ঘোষণা দিতে পারে। এরকম কিছু হলে আমরা অবাক হব না।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা দৃশ্যমান রাখতে সাংবাদিকদের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। সাংবাদিকরা ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং কেন্দ্রে তাদের প্রবেশে কোন বাধা দেওা যাবে না। প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহের স্বার্থে তারা কেন্দ্রে প্রবেশ করবেন।
ইসির চিঠিতে রিটার্নিং অফিসারের কাছে ৯টি শর্ত দিয়ে বলা হয়েছে, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পূর্বে প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া কোন ভোটকক্ষে প্রবেশ করা যাবে না, এক সঙ্গে ৫ জনের বেশি সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবেন না, ১০ মিনিটের বেশি কেন্দ্রে অবস্থান করতে পারবেন না, ভোটকক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ কারো সঙ্গে আলাপ করতে পারবেন না, সাংবাদিকগণ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না, কোন প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করা থেকে বিরত থাকবেন, প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে কোন ধরনের কর্মকাণ্ড হতে বিরত থাকবেন; সংবিধান, নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন, এবং সাংবাদিক পরিচয়পত্রের উল্টো পিঠের সকল নির্দেশনা মেনে চলবেন। এ নির্দেশনা জারির পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পত্রে বলা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া ভোটকেন্দ্রে কোন প্রিজাইডিং অফিসার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। এতে সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় চাইলে অনেক কিছুই বলতে পারেন। কিন্তু সাংবাদিকদের নির্দেশনা দেয়া যুক্তিসঙ্গত হবে কি-না এটা চিন্তার বিষয়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইতে পারে। কিন্তু সাংবাদিকদের হাত-পা বেঁধে দেয়াটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। তবে সাংবাদিকদের সুবিধার্থেই এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সাংবাদিকদের সুবিধার্থেই একটি গাইড লাইন তৈরি করা হয়েছে। এটা কোন নীতিমালা বা নির্দেশনা নয়। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো পুলিশ যাতে সাংবাদিকদের সমস্যা না করে সেই জন্য মাগুরা উপ-নির্বাচনে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা জানান, গত এপ্রিলে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অধিকাংশ কেন্দ্রে অনুমোদিত সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়া ও নাজেহালের ঘটনা ঘটে। সেসময় বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রে বাধা এসেছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। প্রকৃত বিষয় উদঘাটনে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ইসি কর্মকর্তার সমন্বয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে। উক্ত কমিটি প্রকৃত ঘটনা ও সুপারিশসহ ইসিতে প্রতিবেদন দেয়ার কথা রয়েছে। সিটি নির্বাচনে সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা ও নাজেহালের ঘটনার প্রকৃত চিত্র উদঘাটনের আগেই স্বয়ং নির্বাচন কমিশনই ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে এ কড়াকড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করলো। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহের কাজটিকে আরো জটিল করলো ইসি। আগামী ৩০শে মে মাগুরা-১ উপ-নির্বাচনেই নতুন এ নির্দেশনা চালু করা হচ্ছে। সিটি নির্বাচনে নানা ধরনের অনিয়মে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সাংবাদিকদের ওপরই এমন তৎপরতা দেখাচ্ছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। আর এ তৎপরতায় ভবিষ্যৎ নির্বাচনে ভোটাররা অনুৎসাহিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বলেন, এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বলা হতে পারে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসার প্রয়োজন নেই। নির্বাচন কমিশন নিজেরাই একটা ফল তৈরি করে ঘোষণা দিতে পারে। এরকম কিছু হলে আমরা অবাক হব না।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা দৃশ্যমান রাখতে সাংবাদিকদের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। সাংবাদিকরা ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং কেন্দ্রে তাদের প্রবেশে কোন বাধা দেওা যাবে না। প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহের স্বার্থে তারা কেন্দ্রে প্রবেশ করবেন।
No comments