‘যে কোন আত্মত্যাগে আমি প্রস্তুত’ -সংবর্ধনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী
রাজধানীর
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেয়া নাগরিক সংবর্ধনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা বলেছেন, জাতির জন্য যে কোন আত্মত্যাগে আমি প্রস্তুত। মৃত্যুর ভয়ে
আমি ভীত নই। জন্ম হয়েছে, মরতে তো একদিন হবেই। তিনি বলেন, কি অর্জন করেছি
সেটা বড় কথা নয়, আমাদের আরও অনেক দূর পথ চলতে হবে। আরও সামনে এগিয়ে যেতে
হবে। নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে ভোগ নয়, ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে সবাইকে কাজ করতে
হবে। গতকাল বিকালে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’র উদ্যোগে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে
সভাপতিত্ব করেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত
চুক্তিসহ জাতীয় ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা অবদানের জন্য
প্রধানমন্ত্রীকে এ সংবর্ধনা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি,
শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীসহ বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী অংশ নেন।
সংবর্ধনায় অংশ নিতে দুপুর থেকে দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে থাকেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে নেতাকর্মীদের ভিড় ছড়িয়ে পড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের রাস্তায়। এতে ওইসব রাস্তায় যানজটও দেখা যায়।
বেলা ৪টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোহরাওয়ার্দীর অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছান। এসময় উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে, হাততালি দিয়ে তাকে সম্মান জানান। প্রথমে জাতীয় সংগীত ও পরে পবিত্র কোরআন, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক পাঠের পর অনুষ্ঠানের সভাপতি সৈয়দ শামসুল হক সূচনা বক্তব্য দেন। এরপর তারই রচিত একটি মর্মসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা। এর একটু পরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে সংবর্ধনা স্মারক তুলে দেন সৈয়দ শামসুল হক। সম্মাননা পাঠের মধ্য দিয়ে জাতির পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বক্তব্যের পর অভিনন্দনপত্রের স্মারক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে দেন তিনি। এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা। বক্তৃতা পর্ব চলার ফাঁকে সংগীত পরিবেশন করেন দেশবরেণ্য শিল্পীরা।
নিজেকে দেয়া সংবর্ধনা দেশের মানুষকে উৎসর্গ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার মানুষ আমাদের সুযোগ দিয়েছে বলেই আমরা কাজ করতে পেরেছি। আজকের এ সম্মাননা আমার প্রাপ্য না, এই প্রাপ্য বাংলার মানুষের। আমি এ সংবর্ধনা বাংলার মানুষের জন্য উৎসর্গ করে দিচ্ছি। সীমান্ত চুক্তির বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি করেছিলেন। সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনীতে এর অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘ ৪১ বছর পর ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুমোদন দিয়েছে। এজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। ভারতের পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে এই চুক্তি অনুমোদনের জন্য সংবিধান সংশোধন হয়েছে। ভারত যে বাংলাদেশের বন্ধু তা প্রমাণ হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার নিশ্চয়তা দিতে আমি এসেছি। সরকার গঠনের পর বলেছিলাম, আমি শাসন করতে আসিনি, জনগণের সেবা করতে এসেছি। কারণ, আমি সব সময় আমার পিতার আদর্শ অনুসরণ করি। মানুষকে উন্নত জীবন দিতে হবে, শিক্ষার আলোতে আলোকিত করতে হবে, বেকারত্বের অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শিক্ষা দিতে হবে। তাদেরকে মানসম্মত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যাতে বাঙালি জাতি বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। এটিই আমাদের লক্ষ। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য অবহেলিত মানুষকে টেনে তোলা। সেই আদর্শ বুকে নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।
নিজের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিচারণ করে অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ৬ বছর পর ১৯৮১ সালে আমি দেশে ফিরে এসেছিলাম। সেদিন লাখো মানুষের ভালবাসা পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার চোখ খুঁজে ফিরছিল আমার আপনজনকে। আমার মা, বাবা, ভাই বোনকে। তিনি বলেন, আমি ফিরে এসেছিলাম একটি লক্ষ্য নিয়ে। যে বাংলাদেশ একাত্তরের পর লক্ষ্যচ্যুত হয়েছিল সেই বাঙালি আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। সেই মর্যাদা আবার আমাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে বাংলার দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। আমি আর আমার বোন শেখ রেহানা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক মুক্তির জন্য যা যা করার দরকার তার সবই করবো। শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫-এর পর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ হারিয়েছে। জাতির পিতাকে হত্যা করে খুনিরা বাংলার মানুষের মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করেছিল। সেই মর্যাদাকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, আগে অনেকেই বাংলাদেশকে অবহেলার দৃষ্টিতে দেখতো। অনেকেই বলেছিল বাংলাদেশ বটমলেস বাস্কেট। কিন্তু বাংলাদেশ এখন বটমলেস বাস্কেট নয়। বাস্কেট এখন ভরপুর। ২০২১ সালে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি আমরা পালন করবো। নিজেদের দাবি আদায়ে কোন তৃতীয় পক্ষ কাজ করেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কোন তৃতীয় পক্ষ লাগেনি। প্রতিপক্ষ দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমেই আমরা আমাদের দাবি আদায় করেছি। শুধু স্থলসীমান্ত চুক্তি নয়, আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে এ অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোকে আমি শুধু একটি কথাই বলি- আমাদের প্রধান শত্রু হলো ‘দারিদ্র্য’। এ শত্রুকে আমরা নির্মূল করতে চাই। বক্তব্যে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ চলছে। আপনারা দোয়া করবেন এ বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আমরা কলঙ্কমুক্ত করবো।
ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) আমাদের মর্যাদা দিয়েছেন, মর্যাদাবান করেছেন। তার সবচেয়ে বড় সাফল্য তিনি রাষ্ট্রের মৌলিকত্ব ফিরিয়ে এনেছেন। মুনতাসির মামুন বলেন, এত শ্রদ্ধা ও ভালাবাসা বঙ্গবন্ধুর পরে আর কেউ পাননি। কিন্তু লজ্জার বিষয় হলো তাকে বারবার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি রাষ্ট্র থেকেও তাকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, জয় বাংলা বলে মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করেছি। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে জয় বঙ্গবন্ধু বলে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছি। এখন আমরা জয় শেখ হাসিনা বলে এগিয়ে যাব। অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জমান প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আমরা আজ শুধু আপনাকে সংবর্ধনা জানাতে আসিনি। আপনার প্রতি এ দেশের নাগরিকের অবস্থান জানাতে এসেছি। তিনি বলেন, আমাদের দেশে দারিদ্র্যসীমা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে যে অর্জন তা এশিয়ার অনেক দেশেই নেই। আগামী ১০ বছরের মধ্যে শেখ হাসিনা দারিদ্র্যকে নির্বাসিত করতে পারবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার বিভিন্ন অবদান উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক মুক্তি চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সে লক্ষ্যেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। জাতীয় নাগরিক কমিটির আহবায়ক সৈয়দ শামসুল হক তার বক্তব্যে বলেন, রবীন্দ্রনাথকে বলা হতো মরমের কবি, বঙ্গবন্ধুকে বলা হয় রাজনীতির কবি। আর শেখ হাসিনা হলেন উন্নয়নের কবি। তিনি বলেন, মানুষ গণতন্ত্র চায়। সেই গণতান্ত্রিক ধারা তিনি ফিরিয়ে এনেছেন। দেশে এখন শান্তির সুবাতাস বইছে। এখন থেকে তার নামের আগে দেশরত্ন উপাধি ব্যবহার করবো। আজ থেকে তার নামের আগে দেশরত্ন উপাধি ব্যবহার করতে চাই। এসময় উপস্থিত লোকজন হাততালি দিয়ে তার বক্তব্যকে সমর্থন জানান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেন, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান প্রমুখ। মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ঢাকার দুই মেয়র, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী নেতারাও অনুষ্ঠানে সামনের সারিতে ছিলেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুপুরের আগে থেকেই রাজধানী ও আশপাশের জেলা থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উদ্যানে আসতে শুরু করেন। দুপুর থেকেই শাহবাগ, মৎস্যভবন, হোটেল রূপসী বাংলা ও তার আশপাশ এলাকায় প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি। একসময় যানজট শাহবাগ পার হয়ে বাংলামোটর, কাওরানবাজার হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত বিস্মৃত হয়। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অনুষ্ঠানে অংশ নিলেও আগে থেকে নির্দেশনা দেয়ায় অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে কোন ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে যেতে দেখা যায়নি কাউকে।
সংবর্ধনায় অংশ নিতে দুপুর থেকে দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে থাকেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে নেতাকর্মীদের ভিড় ছড়িয়ে পড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের রাস্তায়। এতে ওইসব রাস্তায় যানজটও দেখা যায়।
বেলা ৪টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোহরাওয়ার্দীর অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছান। এসময় উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে, হাততালি দিয়ে তাকে সম্মান জানান। প্রথমে জাতীয় সংগীত ও পরে পবিত্র কোরআন, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক পাঠের পর অনুষ্ঠানের সভাপতি সৈয়দ শামসুল হক সূচনা বক্তব্য দেন। এরপর তারই রচিত একটি মর্মসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা। এর একটু পরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে সংবর্ধনা স্মারক তুলে দেন সৈয়দ শামসুল হক। সম্মাননা পাঠের মধ্য দিয়ে জাতির পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বক্তব্যের পর অভিনন্দনপত্রের স্মারক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে দেন তিনি। এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা। বক্তৃতা পর্ব চলার ফাঁকে সংগীত পরিবেশন করেন দেশবরেণ্য শিল্পীরা।
নিজেকে দেয়া সংবর্ধনা দেশের মানুষকে উৎসর্গ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার মানুষ আমাদের সুযোগ দিয়েছে বলেই আমরা কাজ করতে পেরেছি। আজকের এ সম্মাননা আমার প্রাপ্য না, এই প্রাপ্য বাংলার মানুষের। আমি এ সংবর্ধনা বাংলার মানুষের জন্য উৎসর্গ করে দিচ্ছি। সীমান্ত চুক্তির বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি করেছিলেন। সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনীতে এর অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘ ৪১ বছর পর ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুমোদন দিয়েছে। এজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। ভারতের পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে এই চুক্তি অনুমোদনের জন্য সংবিধান সংশোধন হয়েছে। ভারত যে বাংলাদেশের বন্ধু তা প্রমাণ হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার নিশ্চয়তা দিতে আমি এসেছি। সরকার গঠনের পর বলেছিলাম, আমি শাসন করতে আসিনি, জনগণের সেবা করতে এসেছি। কারণ, আমি সব সময় আমার পিতার আদর্শ অনুসরণ করি। মানুষকে উন্নত জীবন দিতে হবে, শিক্ষার আলোতে আলোকিত করতে হবে, বেকারত্বের অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শিক্ষা দিতে হবে। তাদেরকে মানসম্মত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যাতে বাঙালি জাতি বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। এটিই আমাদের লক্ষ। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য অবহেলিত মানুষকে টেনে তোলা। সেই আদর্শ বুকে নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।
নিজের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিচারণ করে অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ৬ বছর পর ১৯৮১ সালে আমি দেশে ফিরে এসেছিলাম। সেদিন লাখো মানুষের ভালবাসা পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার চোখ খুঁজে ফিরছিল আমার আপনজনকে। আমার মা, বাবা, ভাই বোনকে। তিনি বলেন, আমি ফিরে এসেছিলাম একটি লক্ষ্য নিয়ে। যে বাংলাদেশ একাত্তরের পর লক্ষ্যচ্যুত হয়েছিল সেই বাঙালি আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। সেই মর্যাদা আবার আমাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে বাংলার দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। আমি আর আমার বোন শেখ রেহানা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক মুক্তির জন্য যা যা করার দরকার তার সবই করবো। শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫-এর পর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ হারিয়েছে। জাতির পিতাকে হত্যা করে খুনিরা বাংলার মানুষের মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করেছিল। সেই মর্যাদাকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, আগে অনেকেই বাংলাদেশকে অবহেলার দৃষ্টিতে দেখতো। অনেকেই বলেছিল বাংলাদেশ বটমলেস বাস্কেট। কিন্তু বাংলাদেশ এখন বটমলেস বাস্কেট নয়। বাস্কেট এখন ভরপুর। ২০২১ সালে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি আমরা পালন করবো। নিজেদের দাবি আদায়ে কোন তৃতীয় পক্ষ কাজ করেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কোন তৃতীয় পক্ষ লাগেনি। প্রতিপক্ষ দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমেই আমরা আমাদের দাবি আদায় করেছি। শুধু স্থলসীমান্ত চুক্তি নয়, আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে এ অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোকে আমি শুধু একটি কথাই বলি- আমাদের প্রধান শত্রু হলো ‘দারিদ্র্য’। এ শত্রুকে আমরা নির্মূল করতে চাই। বক্তব্যে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ চলছে। আপনারা দোয়া করবেন এ বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আমরা কলঙ্কমুক্ত করবো।
ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) আমাদের মর্যাদা দিয়েছেন, মর্যাদাবান করেছেন। তার সবচেয়ে বড় সাফল্য তিনি রাষ্ট্রের মৌলিকত্ব ফিরিয়ে এনেছেন। মুনতাসির মামুন বলেন, এত শ্রদ্ধা ও ভালাবাসা বঙ্গবন্ধুর পরে আর কেউ পাননি। কিন্তু লজ্জার বিষয় হলো তাকে বারবার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি রাষ্ট্র থেকেও তাকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, জয় বাংলা বলে মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করেছি। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে জয় বঙ্গবন্ধু বলে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছি। এখন আমরা জয় শেখ হাসিনা বলে এগিয়ে যাব। অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জমান প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আমরা আজ শুধু আপনাকে সংবর্ধনা জানাতে আসিনি। আপনার প্রতি এ দেশের নাগরিকের অবস্থান জানাতে এসেছি। তিনি বলেন, আমাদের দেশে দারিদ্র্যসীমা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে যে অর্জন তা এশিয়ার অনেক দেশেই নেই। আগামী ১০ বছরের মধ্যে শেখ হাসিনা দারিদ্র্যকে নির্বাসিত করতে পারবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার বিভিন্ন অবদান উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক মুক্তি চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সে লক্ষ্যেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। জাতীয় নাগরিক কমিটির আহবায়ক সৈয়দ শামসুল হক তার বক্তব্যে বলেন, রবীন্দ্রনাথকে বলা হতো মরমের কবি, বঙ্গবন্ধুকে বলা হয় রাজনীতির কবি। আর শেখ হাসিনা হলেন উন্নয়নের কবি। তিনি বলেন, মানুষ গণতন্ত্র চায়। সেই গণতান্ত্রিক ধারা তিনি ফিরিয়ে এনেছেন। দেশে এখন শান্তির সুবাতাস বইছে। এখন থেকে তার নামের আগে দেশরত্ন উপাধি ব্যবহার করবো। আজ থেকে তার নামের আগে দেশরত্ন উপাধি ব্যবহার করতে চাই। এসময় উপস্থিত লোকজন হাততালি দিয়ে তার বক্তব্যকে সমর্থন জানান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেন, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান প্রমুখ। মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ঢাকার দুই মেয়র, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী নেতারাও অনুষ্ঠানে সামনের সারিতে ছিলেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুপুরের আগে থেকেই রাজধানী ও আশপাশের জেলা থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উদ্যানে আসতে শুরু করেন। দুপুর থেকেই শাহবাগ, মৎস্যভবন, হোটেল রূপসী বাংলা ও তার আশপাশ এলাকায় প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি। একসময় যানজট শাহবাগ পার হয়ে বাংলামোটর, কাওরানবাজার হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত বিস্মৃত হয়। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অনুষ্ঠানে অংশ নিলেও আগে থেকে নির্দেশনা দেয়ায় অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে কোন ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে যেতে দেখা যায়নি কাউকে।
No comments